ইসলামে জঙ্গিবাদ(সন্ত্রাসবাদ) সম্পূর্ন নাজায়িজ ও হারাম।
জিহাদ ইসলামী শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জিহাদ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ-এ একাধিক আয়াত শরীফ ও ছহীহ হাদীছ শরীফ-এ একাধিক হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। ফিক্বাহের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহেও জিহাদের গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত, হুকুম-আহকাম বিস্তারিতভাবে বর্ণিত রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সীরাতগ্রস্থসমূহে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিটি জিহাদ মুবারক-এর বর্ণনা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে।
অথচ এ জিহাদ সম্পর্কে আজ খোদ মুসলমানদের মধ্যেই রয়েছে নানা প্রকার বিভ্রান্তি। বিশেষ করে কাফির-মুশরিকগুলো এ পবিত্র জিহাদকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ! উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদের থেকে জিহাদের গুরুত্ব তুলে দেয়া।
মূলত ইসলামী জিহাদ আর জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ কখনোই এক বিষয় নয়। বরং সম্পূর্ণ আলাদা দুটি বিষয়। কারণ, ইসলামী জিহাদ হচ্ছে ক্ষেত্র বিশেষে ফরযে কিফায়া। আবার ক্ষেত্র বিশেষে ফরযে আইন। আর জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। তাই মুসলমান যাতে ইসলামী জিহাদের গুরুত্ব ও আহকাম সম্পর্কে জানতে পারে, পাশাপাশি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কুফল সম্পর্কে জেনে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সমূলে উৎখাত করতে পারে সে লক্ষ্যেই ব্লগে জিহাদ সম্পর্কিত বিষয়ে তুলে ধরার এবং বিভ্রান্ত নিরসনের লক্ষে এ প্রয়াস।
জিহাদের শাব্দিক ও শরয়ী অর্থ কি?
জিহাদ আরবী জাহদুন বা জুহদুন শব্দমূল হতে নির্গত। এর শাব্দিক অর্থ হলো চেষ্টা, প্রাণান্ত প্রচেষ্টা, সশস্ত্র লড়াই, মুসলমানদের দ্বীনীযুদ্ধ।
সমস্ত ফিকাহবিদ উনাদের মতে, শরীয়তের পরিভাষায় জিহাদ বলা হয় আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় সশস্ত্র যুদ্ধ এবং তার জন্য সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করাকে।
আমাদের হানাফী মাযহাব মতে জিহাদের সংজ্ঞা হলো- আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় সশস্ত্র যুদ্ধে স্বীয় জান, মাল, যবান এবং অন্যান্য জিনিস দ্বারা প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালানো । (বাদায়িউছ ছানায়ে)
ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব ফতহুল ক্বাদীর-এ উল্লেখ আছে, জিহাদের অর্থ কাফিরদেরকে দ্বীনে হক্ব বা ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া এবং তা যদি তারা গ্রহণ না করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা।
মালিকী মাযহাব মতে জিহাদের সংজ্ঞা হলো- জিহাদের অর্থ মুসলমানদেরকে যালিম কাফিরদের বিরুদ্ধে ইসলামের ঝান্ডা বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করা। (শরহুছ ছগীর)
শাফিয়ী মাযহাব মতে জিহাদের সংজ্ঞা হলো-শরীয়তের দৃষ্টিতে জিহাদের অর্থ কাফিরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নিজের সমস্ত শক্তি ব্যয় করা। (ফতহুল বারী)
হাম্বলী মাযহাব মতে জিহাদের সংজ্ঞা হলো- কাফিরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা। (মাতালিবে আদলাননুহা)
জিহাদ কত প্রকার?
কাফিরের বিরুদ্ধে জিহাদ দুই প্রকার। যথা- (১) ইক্বদামী বা আক্রমণাত্মক জিহাদ। (২) দিফায়ী বা প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ।
ইক্বদামী বা আক্রমণাত্মক জিহাদ হলো, কাফিরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের নিজ উদ্যোগে যুদ্ধ করা। আর এটা যদি হয় ওই সমস্ত কাফিরদের বিরুদ্ধে, যাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছেছে, তাহলে আক্রমণের পূর্বে তাদেরকে দাওয়াত দেয়া মুস্তাহাব। আর যদি দাওয়াত না পৌঁছে থাকে, তাহলে প্রথমে দাওয়াত দেয়া হবে। যদি গ্রহণ না করে, তাহলে জিযিয়া চাওয়া হবে। যদি জিযিয়া দিতে অস্বীকার করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা হবে।
ইক্বদামী জিহাদ বা আক্রমণাত্মক যুদ্ধের তাৎপর্য হলো, যে সকল কুফরী শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণের চিন্তা রাখে, তাদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত রাখা ও তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বাঁধা প্রদান করা এবং ইসলামের দাওয়াত পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছিয়ে দেয়া ও দাওয়াতের রাস্তা থেকে সব ধরনের বাঁধা দূর করা। উল্লেখ্য, ইক্বদামী জিহাদ করা ফরযে কিফায়ার অন্তর্ভুক্ত।
ফরযে কিফায়ার অর্থ হলো, যদি কিছু সংখ্যক মুসলমান ওই ফরযকে আদায় করে, তাহলে সকলের পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে যায়। আর যদি কেউ আদায় না করে, তাহলে সকলেই গুনাহগার হয়।
তবে জিহাদের ক্ষেত্রে কিফায়ার অর্থ হলো, এই পরিমাণ মুসলমান ওই ফরযকে আদায় করা, যাতে ইসলামের পতাকা সমুন্নত থাকে। অন্যথায় সকলেই গুনাহগার হবে।
স্মর্তব্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক যামানার অধিকাংশ জিহাদ ছিলো ইক্বদামী। কুরআন শরীফ-এও আল্লাহ পাক তিনি মুসলমানদেরকে ইক্বদামী জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যদি ইক্বদামী জিহাদ জারী থাকে, তাহলে দিফায়ী জিহাদের প্রয়োজনই হবে না। কিন্তু যখন মুসলমান ইক্বদামী জিহাদের ফরয পালনে গাফলতী করে, তখন তাদের দিফায়ী বা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদে বাধ্য হতে হয়। যেমনটি এ যুগে হচ্ছে।
আর দিফায়ী বা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ হলো- স্বদেশের উপর আক্রমণকারী কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ করা। এটা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরয বিধান।
কোন কোন অবস্থায় জিহাদ ফরযে আইন হয়?
(১) যখন কুফরী শক্তি মুসলমানদের কোনো শহর, জনপদ বা কোনো গ্রামের উপর আক্রমণ করে বা দখল করে নেয়।
(২) যখন কুফরী শক্তি মুসলমানদের কিছু সংখ্যক লোককেও গ্রেফতার করে নেয়।
(৩) একজন মুসলমান নারীও যদি কাফিরদের হাতে গ্রেফতার হয়ে যায়, তাহলে ওই মুসলমান নারীকে কাফিরদের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য জিহাদ করা পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর সকল মুসলমানের উপর ফরয হয়ে যায়।
(৪) যখন ইমাম বা আমীরুল মুমিনীন সমস্ত দেশবাসী বা কিছুসংখ্যক ব্যক্তিকে জিহাদের জন্য বের করেন।
(৫) যখন মুসলমান ও কাফির পরস্পর মুখোমুখি হয়ে যায় এবং জিহাদ শুরু হয়ে যায় তখন জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়।
জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার অর্থ হলো- ওই জিহাদে সকলেই অংশগ্রহণ করবে। এমনকি ছেলে- মাতা-পিতার অনুমতি ব্যতীত, স্বামী- স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত, ঋণী- পাওনাদারের অনুমতি ব্যতীত জিহাদে অংশগ্রহণ করবে এবং গোলাম- মালিকের অনুমতি ব্যতীত জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। অর্থাৎ প্রথমত ওই এলাকার মুসলমানদের উপর জিহাদ ফরয হয়, যাদের উপর আক্রমণ করা হয়। যদি তারা কাফিরদের আক্রমণ প্রতিহত করতে অক্ষম হয়। কিংবা অলসতা করে। তবে তাদের পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসলমানদের উপর জিহাদ ফরয হয়ে যায়। আর তারাও যদি যথেষ্ট না হয় বা শিথিলতা প্রদর্শন করে, তাহলে তাদের পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসলমানদের উপর জিহাদ ফরয হয়। এভাবে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম জাতির উপর জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়।
অর্থাৎ প্রথমত পুরুষরা জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। যদি শুধুমাত্র পুরুষদের পক্ষে কাফিরদেরকে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হয় তখন প্রয়োজনে মহিলারাও জিহাদে অংশগ্রহণ করবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



