১২ হাজার বাংলাদেশী তালেবানের সন্ধানে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা। বড় ধরনের নাশকতা ও আধুনিক যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী আফগানফেরত এই তালেবান যোদ্ধারা সরাসরি কাজ করছে আল-কায়েদা ও তালেবানদের সঙ্গে। এ কারণে তাদের বর্তমান অবস্থান এবং কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।
ধারাবাহিক.
দ্বিতীয় পর্বঃ
১৯৯৮ সালে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ওহাবী মাওলানা আবদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি বাসায় জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) আত্মপ্রকাশ করে। ওহাবীবাদী ওই সংগঠনেও প্রচুর আফগানফেরত মুজাহিদ যোগ দেয়। এ সংগঠনের সদস্যদের মার্শাল আর্ট, বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ ছাড়াও নানা ধরনের গোয়েন্দা কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, বিএনপি-জামাত জোটের কানেকশনে ২০০১ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহ বিস্তার ঘটে। কিছু আফগানফেরত যোদ্ধা ‘জাগো মুজাহিদ’ নামে একটি সংগঠন করে। অফিস খোলা হয় ঢাকার খিলগাঁওয়ের তালতলায়। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে যশোরে এক অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা, ২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের চারটি স্থানে বোমা হামলা, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বোমা হামলা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) সিরিজ বোমা হামলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক নাশকতামূলক কার্যক্রম চালায় সন্ত্রাসবাদীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে কওমী মাদরাসা গড়ে তুলে ঘাঁটি হিসেবে। বিগত বিএনপি-জামাত সরকারের শেষের দিকে চাপে পড়ে তৎকালীন সরকার সন্ত্রাসবাদীদের ব্যাপারে অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হয়। গ্রেফতার করে ওহাবী মাওলানা আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাসন্ত্রাসীসহ কিছু শীর্ষ নেতাকে। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার রামকাশিব গ্রিন ক্রিসেন্ট নামের কওমী মাদরাসা থেকে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
এদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসবাদী নেতা ভারতীয় নাগরিক মাওলানা মনসুর আলী, মুফতে হান্নান, মাওলানা আবদুস সালাম, ড. ওবায়দুল্লাহ সোহেল গ্রেফতার হওয়ার পর গোয়েন্দাদের জানায়, লস্কর-ই তৈয়্যবা (এলইটি) ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশে তৎপর রয়েছে। আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়া ভারতীয় সন্ত্রাসী সংগঠন এলইটি-এর যোদ্ধারা হুজি ও জেএমবি’র সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ইসলামের দোহাই দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত একটি রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরেই সন্ত্রাসবাদীদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। তারা গোয়েন্দাদের আরও জানায়, মুফতে হান্নান, ওহাবী মাওলানা আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাসন্ত্রাসীর পরামর্শে সুনামগঞ্জ জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার পেছনে, নাইক্ষ্যংছড়ি, হিমছড়ি, বিলাইছড়ি, খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া, লালখানবাজার, সিলেট ও কক্সবাজারের উখিয়াসহ আশপাশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মাদরাসার নামে ১৫টি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব পালন করে মুফতে হান্নান, মুফতে মাওলানা আবদুস সালাম, ওহাবী মাওলানা আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাসন্ত্রাসী, ভারতীয় সন্ত্রাসবাদী নেতা মুফতে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ও মাওলানা হাবিবুল্লাহ। এলইটি-এর শীর্ষ নেতা আমির রেজা খান, খুররম খৈয়াম ওরফে শাহজাহান, মাওলানা আকরাম, মাওলানা আবু খালেক, মাওলানা জালাল উদ্দিনসহ শীর্ষ সন্ত্রাসবাদী নেতারা বহুবার এসব ট্রেনিং ক্যাম্প পরিদর্শন করে। ক্যাম্পেই অনুষ্ঠিত বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে কর্মীদের মাঝে সনদও বিতরণ করে তারা।
প্রথম পর্বে যা ছিলো।
সূত্র : দৈনিক আল ইহসান।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৩