somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ শতকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিয়েছিল একমাত্র বাংলাদেশই

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ শতকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিয়েছিল একমাত্র বাংলাদেশই


পৃথিবীতে দুটি দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল_ একটি যুক্তরাষ্ট্রের, আরেকটি বাংলাদেশের৷ কথাটি অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন’ ঠিক ৩৫ বছর আগে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷
সেই সরকার একটি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল এবং সেই সরকারই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে৷ কিন’ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংক্রানত্ম রচনাবলিতে মুজিবনগর প্রায় অস্পষ্ট, নির্বস’ক বস’৷ মুক্তিযুদ্ধ যেমন, এখনো তেমন আমাদের জাতীয় জীবন থেকে এর সংশ্লিষ্টতা খাটো করে দেখার উপায় নেই৷
মুজিবনগর সরকার ছিল ধারাবাহিকতার ফসল৷ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রকাশ্যে বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে৷ সে সময় এ ধরনের একটি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানের প্রয়োজন ছিল মানুষের মনোবল অটুট রাখা ও প্রবাসী সরকারের অসত্মিত্ব জ্ঞাপনের জন্য৷ ব্যারিস্টার আমির”ল ইসলাম মুজিবনগর সরকারের পতন থেকে এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন, প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে৷ এ সম্পর্কে তার কাছে কিছু জানতে চেয়েছিলাম৷ তিনি জানালেন, ৪ এপ্রিল ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদ ও তার সাক্ষাত্‍কারের পর সরকার গঠনের কথা তারা বিশেষভাবে উপলব্ধি করেন৷ ‘কেননা ভারত সরকারের সঙ্গে একটি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের কথা বলা উচিত৷’ এদিকে সরকার গঠনের জন্য বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে চাপ আসা অব্যাহত রয়েছে৷
সরকার গঠনের ব্যাপারে ঠিক হয়েছিল বঙ্গবন্ধু যে ৫ জনকে নিয়ে হাইকমান্ড গঠন করেছিলেন, প্রথম মন্ত্রিসভায় তারাই থাকবেন৷ সে পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজর”ল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়৷ এ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল৷ কিন’ ১০ এপ্রিল ঘোষণার পর এসব বিষয় নিয়ে আর উচ্চবাচ্য হয়নি৷ কিন’ এটি হচ্ছে পরের ঘটনা৷ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাজউদ্দীন আহমদের মনে এ ধারণা দৃঢ় হয় যে, সরকার একটি গঠন করতে হবে এবং তাড়াতাড়ি না করলে স্বাধীনতার কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে৷ ঐ দুএক দিনের কথা জানেন ব্যারিস্টার আমির”ল ইসলাম; কারণ তিনিই তখন ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে৷ সে সময়ের ঘটনা তিনি বিবৃত করেছেন তার বই ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি’তে৷ লিখেছেন তিনি ‘তারপর কথা উঠলো দেশের নাম কি হবে? আমি বললাম, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ৷’ তাজউদ্দীন ভাইয়ের পছন্দ হলো৷ নামটি ঠিক করার সময় আমাদের মাথায় গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কথা মনে হচ্ছিল৷ এ সময় সরকারি কাগজপত্রে ব্যবহারের জন্য একটি মনোগ্রাম ঠিক করা দরকার৷ মনোগ্রাম আমাদেরই ঠিক করতে হবে৷ বর্তমানে বাংলাদেশের যে মনোগ্রাম সরকারি কাগজপত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা আমার হাতে অাঁকা৷ চারপাশে গোলাকৃতি লালের মাঝখানে সোনালি রঙের মানচিত্র৷ মনোগ্রাম দেখে তাজউদ্দীন ভাই পছন্দ করলেন৷ শুধু তাই নয়, সঙ্গে সঙ্গে তিনি তা অনুমোদনও করেন৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম সরকারি অনুমোদন৷’
এরপর তাজউদ্দিনের বক্তৃতা৷ ইংরেজি খসড়াটি করেন রেহমান সোবহান৷ লিখেছেন ব্যারিস্টার ইসলাম_ ”তার ইংরেজি খসড়ার একটা অংশ আমাদের খুব ভালো লেগেছিল৷ সেটা ছিল ‘Pakistan is dead and buried under mountain of corpses,বাংলায় এর অনুবাদ করি_ পর্বত প্রমাণ লাশের নিচে পাকিসত্মানের কবর রচিত হয়েছে৷”
এ পর্বের পর টেপকৃত বক্তৃতা প্রচারের প্রসঙ্গ৷ টেপে তাজউদ্দিনের বক্তৃতা টেপ হলো, ঠিক হলো ১০ তারিখ শিলিগুড়ির জঙ্গল থেকে প্রচারিত হবে৷ টেপ দিয়ে দেওয়া হলো বিএসএফের গোলক মজুমদারকে৷ ১০ তারিখ তা প্রচারিত হবে৷ ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা প্রচারিত হলো৷ সারা বিশ্ববাসী শুনলো স্বাধীন বাংলা সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বেতার বক্তৃতা৷ আমাদের সংগ্রামের কথা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়লো৷’ ১০ এপ্রিল স্বাধীনতা ঘোষণার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে আরো দুবার স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল৷ ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়, যার প্রথম লাইন ছিল_ ÔThis may be my last message, from today Bangladesh is independent’
২৭ মার্চ, অর্থাত্‍ পরদিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান ঘোষণা করেন_ ‘Major Zia, Provisional Commander-in Chief of Bangladesh Liberation Army, hereby Proclaims, on behalf of Sheikh Mujibur Rahman, the independence of Bangladesh.’ এখানে উল্লেখযোগ্য বাক্যটি হলো, শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে৷ এর দুসপ্তাহ পর দেওয়া হয় মুজিবনগর ঘোষণা৷ এখানে আরো উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিষয়ক ৩টি ঘোষণাই ইংরেজিতে৷ যদিও এরা সবাই ছিলেন বাঙালি৷
মুজিবনগর ঘোষণাটি গুর”ত্বপূর্ণ এ কারণে যে, একটি সরকার এ ঘোষণা দিয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধ সেই সরকারের কর্তৃত্বেই পরিচালিত হয়েছে৷ ঘোষণাটি ২৪ অনুচ্ছেদের৷ ঘোষণায় মূলত যে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছিল, তাহলো_ ১৯৭০ সালের যুক্ত নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েছিলেন দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য৷ ১৬৯ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা ছিল ১৬৭৷ এ কারণে জেনারেল ইয়াহিয়া ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন; কিন’ পরে বেআইনি ও একতরফাভাবে তা স্থগিত রাখা হয়৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং বাংলাদেশের মানুষকে বাংলাদেশের সম্মান ও সংহতি রক্ষার আহ্বান জানান৷ এ পটভূমিকায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণাকে অনুমোদন করছে৷
ঘোষণাটি আইনের ভাষায় রচিত এবং তা রচনা করেছিলেন ব্যারিস্টার আমির”ল ইসলাম৷ এ ঘোষণায় গুর”ত্বপূর্ণ দুটি বাক্য হচ্ছে_
১. ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য বিবেচনা করে আমরা বাংলাদেশকে সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপানত্মরিত করার সিদ্ধানত্ম ঘোষণা করছি এবং এতদ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি৷’ ২. বাংলাদেশের মানুষের শৃঙ্খলাপূর্ণ ও ন্যায়মূলক সরকার প্রদানের (জন্য) যা যা করা দরকার তা করবেন৷
এ ঘোষণায়ই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের তারিখ ঘোষিত হয় যা নিয়ে এখনো হাস্যকর সব বিতর্ক হয়৷ মুজিবনগর ঘোষণায় পরিষ্কারভাবে লেখা আছে_ ‘আমরা আরো সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করছি যে, আমাদের স্বাধীনতার এ ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে৷’
এই তারিখে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজর”ল ইসলাম ‘অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আইন বলবত্‍করণ আদেশ জারি’ করেন৷ এ আদেশের বলে বাংলাদেশের ওপর অস্থায়ী সরকারের আইনগত কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়৷ শেষ হয় মুজিবনগর সরকার গঠনের প্রথম পর্যায়৷ এর পরের পর্যায় হলো সরকার গঠন, শপথ ও কার্যক্রম পরিচালনা৷ ১১ তারিখ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের একটি দীর্ঘ ভাষণ প্রচার করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র৷ বক্তৃতার উপসংহারে তিনি যা বলেছিলেন ঠিক তাই ঘটেছিল মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে৷ এ ভাষণটির কথা অনেকের মনে নেই; কারণ কোথাও এর উল্লেখ নেই৷ উপসংহারে যে মনত্মব্যগুলো করেছিলেন তার মধ্যে গুর”ত্বপূর্ণ_ ১. আমাদের যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে আমাদের স্থির বিশ্বাস৷ ২. আমাদের মুক্তিবাহিনীর হাতে শেষ পরাজয় মেনে নেওয়ার আগে শত্র”রা আরো অনেক রক্তক্ষয় ও ধ্বংসলীলা সৃষ্টি করবে৷ ৩. এ যুদ্ধ গণযুদ্ধঃএ যুদ্ধ বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের যুদ্ধ৷
১৩ এপ্রিলের মধ্যে হাইকমান্ডের সদস্যরা মন্ত্রিসভা গঠন চূড়ানত্ম করলেন৷ আপাতত অনত্মর্দ্বন্দ্ব সবাই ভুলে গেলেন৷ ১৪ এপ্রিল ঠিক হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে৷ কিন’ হয়তো পাকিসত্মানিদের কাছে সে খবর পেঁৗছে গেলো৷ ১৪ তারিখ চুয়াডাঙ্গায় সাংঘাতিকভাবে বোমাবর্ষণ করা হলো৷ তারপর মেরেপুরের বৈদ্যনাথতলায় ঠিক হয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে৷ এবার আর কাউকে জানানো হলো না কোথায় শপথ হবে৷ ১৭ তারিখ কলকাতা প্রেসক্লাব থেকে সাংবাদিকদের নিয়ে আমির”ল ইসলাম পেঁৗছেন বৈদ্যনাথতলায়৷ ১১টার দিকে তারা সেখানে পেঁৗছান৷ মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম ছিলেন ঝিনেদার এসডিপিও৷ যুদ্ধ করতে করতে তিনি তখন সীমানত্মের কাছাকাছি৷ তিনি জানিয়েছেন, তৌফিক-ই-ইলাহী তাকে খবর পাঠান দ্র”ত বৈদ্যনাথতলায় পেঁৗছতে হবে৷ সেখানে পেঁৗছে তিনি দেখেন নিরাভরণ একটি মঞ্চ৷ তাকে জানানো হয়, মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করবে এবং গার্ড অফ অনারের বন্দোবসত্ম তাকে করতে হবে৷ তিনি আশপাশে আনসার পুলিশ যাদের পেলেন তাদের নিয়েই গার্ড অফ অনার দিলেন৷ কর্নেল (অঃ) আবু ওসমান চৌধুরী আমাকে বলছেন, ‘শপথ গ্রহণের আগে গার্ড অফ অনার হয় কীভাবে? সত্যিকার গার্ড অফ অনার দেওয়া হয় পরে এবং তখন আমি সেখানে ছিলাম৷’
ব্যারিস্টার ইসলাম লিখেছেন_ ‘কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুর” হলো৷ একটি ছোট মঞ্চে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ, ওসমানী, আবদুল মান্নান ও আমি৷ আব্দুল মান্নান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন৷ ইউসুফ আলী স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন৷ সৈয়দ নজর”ল ইসলাম শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন৷ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন৷ একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এই স্থানের নাম ‘মুজিবনগর’ নামকরণ করেন৷ ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যনত্ম মুজিবনগর ছিল অস্থায়ী সরকারের রাজধানী৷’ তৌফিক-ই-ইলাহী বলেছেন, ‘নিজেকে মনে হচ্ছিল ধাত্রীর মতো৷ একটি দেশের জন্ম হচ্ছে৷ প্রত্যক্ষ করছি৷’ আবেগে তার গলা বুজে আসে৷ সেই আমবাগানে হাজার হাজার লোকের ভিড়, জানিয়েছেন আমির”ল ইসলাম, আর চারদিকে মুখরিত স্লোগান ‘জয়বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর৷’ প্রকাশ্যে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পর ১৭ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ দীর্ঘ এক প্রেস স্টেটমেন্ট প্রদান করেন, যার শিরোনাম ছিল ‘টু দি পিপল অফ দি ওয়ার্ল্ড’৷
দীর্ঘ এ প্রেস স্টেটমেন্টে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার পটভূমি বর্ণিত হয়েছে৷ এর মূল সূত্রগুলো ছিল এ রকম_
১. পশ্চিম পাকিসত্মানের ঔপনিবেশিক নির্যাতনের বির”দ্ধে স্বাধিকার রক্ষার জন্য জাতীয় স্বাধিকার সংগ্রামের পথ বেছে নিতে হয়েছে৷ ২. পাকিসত্মান কাঠামোর ভেতর বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসনের জন্য ছয় দফা দেওয়া হয়েছিল এবং ১৯৭০ নির্বাচনের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছিল৷ ৩. এর আগে তার কোনো দাবির প্রতি মানুষ এমন ব্যাপক সমর্থন জানায়নি৷ সিন্ধু ও পাঞ্জাবে যেখানে ভুট্টোর পাকিসত্মান পিপলস পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল সেখানে ছয় দফার কথা নির্বাচনের সময় উল্লেখ করা হয়নি৷ বালুচিসত্মানে যেখানে ন্যাপ সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে তারা ছয় দফার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ৷ উত্তর-পশ্চিম সীমানত্ম প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদে ন্যাপ সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানেও অধিকমাত্রায় স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়েছিল৷ ৪. ইয়াহিয়া-ভুট্টোর ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও পিপলস পার্টি ছাড়া পশ্চিম পাকিসত্মানের অন্য নির্বাচিত সদস্য পূর্ব পাকিসত্মানে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস’তি নিয়েছিলেন৷ কিন’ ইয়াহিয়া অ্যাডমিরাল আহসানকে বরখাসত্ম করেন৷ যাকে মডারেট মনে করা হতো৷ মন্ত্রিসভায় বাঙালি সদস্যদের বরখাসত্ম করা হয়৷ যাতে ক্ষমতা একমাত্র পশ্চিম পাকিসত্মানের সামরিক জানত্মার হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে৷ ৫. ইয়াহিয়া-ভুট্টোর সঙ্গে অাঁতাত করে এগুলো করেছেন, কারণ তারা চাননি পাকিসত্মানের পার্লামেন্টই ক্ষমতার আসল উত্‍স হয়ে উঠুক৷ ৬. এসব কারণে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হয়েছিল৷ ৭. অসহযোগ আন্দোলনের সময় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশ দ্ব্যর্থহীনভাবে সমর্থন জানিয়েছিল শেখ মুজিবকে এবং নিজেদের স্থাপন করেছিল তার কতর্ৃত্বের অধীনে৷ ৮. এ পরিপ্রেক্ষিতে অসহযোগ আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ বাধ্য হয়ে অর্থনীতি ও প্রশাসন সচল রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷ শুধু মানুষ নয়, প্রশাসন ও ব্যবসায়িক সমপ্রদায়ও শর্তহীনভাবে সমর্থন দিয়েছে৷ তারা আওয়ামী লীগের নির্দেশ মেনে চলেছে এবং নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আওয়ামী লীগকেই একক কতর্ৃত্ব হিসেবে মেনে নিয়েছে৷ ৯. ইয়াহিয়া ৬ মার্চ এক প্ররোচনামূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং তিনি আশা করেছিলেন ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা আসবে৷ ১০. যদিও মানুষ স্বাধীনতা চাচ্ছিল; কিন’ শেখ মুজিব আবারও রাজনৈতিক সমাধানের পথে যেতে চেয়েছিলেন৷ তাজউীদ্দন এরপর ২৫ মার্চ পর্যনত্ম ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেছেন, ‘লাশের পাহাড়ের নিচে পাকিসত্মান এখন মৃত ও কবরস্থ এবং এসব ঘটনাবলি প্রমাণ করে যে ইয়াহিয়া ও তার সমর্থকরা অনেক আগে থেকেই দুই দেশের তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিল৷’
তাজউদ্দীন সবশেষে আশা ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল দেশ এবং এর একমাত্র উদ্দেশ্য হবে ছাই থেকে এক নতুন দেশ গড়ে তোলা৷ তাই ছোট-বড়ো সকল শক্তির সহযোগিতা তার কাম্য৷
স্বাধীনতার ঘোষণা ও তাজউদ্দীন আহমদের বক্তব্যে এ কথাটিই ধ্বনিত হয়েছিল যে, বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে সমতা, মানবিক ও সামাজিক ন্যায় বিচার রক্ষাকল্পে এবং ন্যায়মূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য৷ আদর্শগুলো প্রতিফলিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে৷ শাসনতন্ত্রের চারটি মূল বৈশিষ্ট্যই ছিল_ জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র৷ সে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এটিই বিবেচনা করা হতো যে, সমাজতন্ত্র মানুষের সাম্য প্রতিষ্ঠা করে ও মানুষের সম্মান নিশ্চিত করে৷ ন্যায়মূলক সরকার হিসেবে বিবেচনা করা হতো সংসদীয় গণতন্ত্রকে৷ এ সমসত্ম আদর্শ রক্ষা করা যাবে যদি কোনো শক্তির লেজুড় না হওয়া যায়৷ এবং কোনো জোটে আবদ্ধ না হওয়া যায়৷ যে কারণে বাংলাদেশ সরকার জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিল৷

মুনতাসীর মামুন : অধ্যাপক, লেখক, ইতিহাসবিদ৷


-------------------------------------------------------------------------


ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বিবরণ

মুজিবনগর, বাংলাদেশ

তারিখ: ১০ এপ্রিল ১৯৭১

যেহেতু ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল; এবং

যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল;

এবং

যেহেতু জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সনের ৩রা মার্চ তারিখে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন আহ্বান করেন; এবং

যেহেতু তিনি আহূত এই অধিবেশন স্বেচ্ছার এবং বেআইনীভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন; এবং

যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করার পরিবর্তে বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারষ্পরিক আলোচনাকালে ন্যায়নীতি বহির্ভূত এবং বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করেন; এবং

যেহেতু উল্লিখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান; এবং

যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং এখনও বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে; এবং

যেহেতু পাকিস্তান সরকার অন্যায় যুদ্ধ ও গণহত্য এবং নানাবিধ নৃশংস অত্যাচার পরিচালনার দ্বারা বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের পক্ষে একত্রিত হয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব কে তুলেছে; এবং

যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপর তাদের কার্যকরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে;

সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আমাদের সমবায়ে গণপরিষদ গঠন করে পারষ্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে

বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি এবং এর দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি; এবং

এতদ্বারা আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; এবং

রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন; এবং

তাঁর কর ধার্য ও অর্থব্যয়ের ক্ষমতা থাকবে; এবং

বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য আইনানুগ ও নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতারও তিনি অধিকারী হবেন।

বাংলাদেশের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, কোন কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান না থাকেন অথবা যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাজে যোগদান করতে না পারেন অথবা তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে যদি অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রপ্রধান প্রদত্ত সকল দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পালন করবেন। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, বিশ্বের একটি জাতি হিসাবে এবং জাতিসংঘের সনদ মোতাবেক আমাদের উপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তেছে তা যথাযথভাবে আমরা পালন করব। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য আমরা অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলীকে যথাযথভাবে রাষ্ট্রপ্রধান ও উপ-রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য দায়িত্ব অর্পণ ও নিযুক্ত করলাম।

স্বাক্ষর: অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলী

বাংলাদেশ গণপরিষদের ক্ষমতা দ্বারা

এবং ক্ষমতাবলে যথাবিধি সর্বাধিক ক্ষমতাধিকারী।
১৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×