somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৬ আগস্ট বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোয় বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার খবর বেরোয়, তবে তাঁর পরিবারের সদস্যসহ অন্যদের হত্যার বিষয়টি চেপে যাওয়া হয়।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৬ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে দৈনিক বাংলায় বড় শিরোনামে ছাপা হয়, 'খন্দকার মোশতাক নয়া রাষ্ট্রপতি।' এর নিচে ছোট শিরোনামে লেখা হয়, 'শেখ মুজিব নিহত: সামরিক আইন ও সান্ধ্য আইন জারি: সশস্ত্র বাহিনীসমূহের আনুগত্য প্রকাশ।' এর সঙ্গে তৎকালীন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেনের কাছ থেকে মোশতাক আহমেদের শপথ নেওয়ার ছবি ছাপা হয়।


কালের কণ্ঠ ডেস্ক
Click This Link
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার খবর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। ওই দিন শুধু বেতারে মেজর শরিফুল হক ডালিমের একটি ঘোষণা এসেছিল, " 'স্বৈরাচারী মুজিবকে' উৎখাত করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি ইসলামি রাষ্ট্র।" এরপর আরো অনেকবার তার এ ভাষণ প্রচারিত হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়টি বলা হয়নি। পরিবার ও আত্দীয়স্বজনের হত্যার কথাও বলা হয়নি। আরো কিছু পরে রেডিওতে খবর দেওয়া হয়, খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে।
১৫ আগস্ট ভোরে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হওয়ায় ওইদিন স্থানীয় পত্রপত্রিকায় খবরটি প্রকাশের সুযোগ ছিল না।

১৬ আগস্ট বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোয় বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার খবর বেরোয়, তবে তাঁর পরিবারের সদস্যসহ অন্যদের হত্যার বিষয়টি চেপে যাওয়া হয়। নিউইয়র্ক টাইমস ১৫ আগস্টেই বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান ও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর ছাপায়। কিন্তু তারাও অন্য ২০ জনকে হত্যার বিষয়ে কোনো সংবাদ ছাপেনি। ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের অন্য বিখ্যাত পত্রিকাগুলোর সংবাদ পরিবেশন ছিল এ রকমই।
১৬ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে দৈনিক বাংলায় বড় শিরোনামে ছাপা হয়, 'খন্দকার মোশতাক নয়া রাষ্ট্রপতি।' এর নিচে ছোট শিরোনামে লেখা হয়, 'শেখ মুজিব নিহত: সামরিক আইন ও সান্ধ্য আইন জারি: সশস্ত্র বাহিনীসমূহের আনুগত্য প্রকাশ।' এর সঙ্গে তৎকালীন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেনের কাছ থেকে মোশতাক আহমেদের শপথ নেওয়ার ছবি ছাপা হয়।
১৬ আগস্ট ইত্তেফাকের মূল শিরোনাম ছিল, 'খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর শাসনক্ষমতা গ্রহণ।' এতে লেখা হয়, '...শাসনভার গ্রহণকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান স্বীয় বাসভবনে নিহত হইয়াছেন।'
মনে করা হয়, স্থানীয় পত্রিকাগুলো সামরিক সরকারের চাপে হত্যাকাণ্ডের খবরটি গুরুত্বহীনভাবে ছাপে।
ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের ১৬ আগস্টের সংখ্যায় ১৫ আগস্টের ডেটলাইনে লেখে, 'ইসলাম ও পশ্চিমাদের সমর্থক একটি সেনা সমর্থিত সরকার ভোরে এক রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর আজ বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।' প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, 'উৎখাতের সময় বামপন্থী রাষ্ট্রপতি মুজিবুর রহমানের প্রাণ গেছে...।'
নিউইয়র্ক টাইমস ১৫ আগস্ট এ বিষয়ে দুটি প্রতিবেদন ছাপে। প্রথমটি সংক্ষিপ্ত, ভেতরের পাতায় ছাপানো এ খবরের শিরোনাম ছিল, 'বাংলাদেশে অভ্যুত্থানে মুজিব ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার খবর।' নয়াদিলি্ল থেকে পাঠানো ৩৪৩ শব্দের এ প্রতিবেদনে পশ্চিমা কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে বলা হয়, 'সশস্ত্র বাহিনী আজ ভোরে এক অভ্যুত্থান করে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে...।' এতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যারই কোনো খবর নেই। দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপানো হয়। শব্দসংখ্যা এক হাজার ৬২। এর শিরোনাম, 'বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে মুজিব উৎখাত ও নিহত; দীর্ঘদিনের সহযোগী ও মন্ত্রিসভার সদস্য আহমেদ নতুন প্রেসিডেন্ট; মুজিব নিহত, ঢাকা রেডিওর খবর।' এতে হত্যাকাণ্ডের বিশালতার ব্যাপারে কোনো খবর বা ইঙ্গিত ছিল না।
পরদিন ১৬ আগস্ট নিউইয়র্ক টাইমস বাংলাদেশ নিয়ে ছয়টি প্রতিবেদন ছাপে। প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপানো হয় একটি। এর শিরোনাম, 'বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থা সংহত করার উদ্যোগ অভুত্থানের নেতাদের; অধিকাংশ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন; অনির্দিষ্টকালের জন্য সামরিক আইন ও কার্ফ্যু জারি...।' এতে নতুন সরকার অত্যন্ত দ্রুত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় ছাপানো সংবাদটির শিরোনাম, 'বাংলাদেশের নতুন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ।' এ পৃষ্ঠায় 'এক নজরে বাংলাদেশ' শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ-সম্পর্কিত সাধারণ তথ্যাবলি উল্লেখ করা হয়। তৃতীয় পৃষ্ঠায় ছাপানো হয় দুটি প্রতিবেদন। একটি শিরোনাম, 'ঢাকার সরকারের প্রস্তাবের অপেক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র।' অন্যটির শিরোনাম, 'বাঙালিদের মুক্ত করতে মুজিবের নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াই।' ১৮ নম্বর পৃষ্ঠায় 'বাংলাদেশে অভ্যুত্থান' শিরোনামে শিশু রাষ্ট্রটির ট্র্যাজেডি বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।
নিউইয়র্ক টাইমসে ২৫ আগস্ট দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় ছাপা হয়, 'মুজিবের অনুগতরা প্রতিশোধ নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে' শিরোনামে। ব্যাংকক থেকে পাঠানো এক হাজার ২৫৭ শব্দের এ প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বাংলাদেশ সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার আরেকটি ধাপে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। দেশটির নিহত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের গোঁড়া অনুসারীরা গোপনে জোট বাধতে শুরু করেছে।' ২৭ আগস্ট দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় 'ঢাকা অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়া শান্ত হয়ে আসছে' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ক্যুদেতার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত চরম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। কিন্তু এখন তাদের অবস্থান ম্রিয়মান হয়ে আসছে। এর পরের দিনই প্রকাশিত হয়, 'বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীকে ভারতের স্বীকৃতি।' এতে বলা হয়, 'ভারত মোশতাক সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে।'
১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট রবিবার (ডেটলাইন ঢাকা, বাংলাদেশ, ৩০ আগস্ট) নিউইয়র্ক টাইমস ১০৯ শব্দের একটি প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ শেখ মুজিবের একক দল নিষিদ্ধ করেছে। এর প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়, 'রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ আজ দেশটির একমাত্র রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে।...'
১ সেপ্টেম্বর, ঢাকা ডেটলাইনে ভারতীয় পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, ভারতের কয়েক দিন পরই সোভিয়েত ইউনিয়ন স্বীকৃতি দেয়। এর পর পরই স্বীকৃতি দেয় চীন।
১৫ আগস্টের ঘটনার পরদিন সোভিয়েত পত্রিকা ইজভেসতিয়া খবরটি ভেতরের পাতায় কোনো মন্তব্য ছাড়াই চাপে। এতেও হত্যাকাণ্ডের বিশালতার ব্যাপারে কোনো তথ্য ছিল না। সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র প্রাভদাতেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু ছাপা হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×