somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিয়া যে এতো নিষ্ঠুর ছিল তা জানতাম না :লুৎফা তাহের ittefaq 2010/08/27/

২৭ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জিয়া যে এতো নিষ্ঠুর ছিল তা জানতাম না :লুৎফা তাহের




তারা গ্রামের বাড়ির তিন মাইল দূরে লাশ ফেলে চলে যায়


মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল (অবঃ) আবু তাহেরের (বীর উত্তম) স্ত্রী লুৎফা তাহের বলেছেন, জিয়াউর রহমান কর্নেল আবু তাহেরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জিয়াউর রহমান বন্দী হলে তার মুক্তির জন্য কর্নেল তাহেরকে ফোন করেছিলেন। ৭ নভেম্বর সিপাহীদের সহায়তায় কর্নেল তাহের জিয়াকে মুক্ত করেন। তাহের জিয়াউর রহমানের জীবন রক্ষা করলেও তিনি চরম বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়ে তাহেরকে হত্যা করেছেন। শুধু তাই নয়, হত্যাকাণ্ডের পর তাহেরের কবরে পর্যন্ত সেনা পাহারার ব্যবস্থা করেছিলেন জিয়া। তবে আমরা কখনো ভাবিনি, কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হবে। আমাদের ধারণা ছিল তাকে সাজা দেয়া হতে পারে। কিন্তু জেনারেল জিয়া যে এতো নিষ্ঠুর ছিল তা জানতাম না।

গতকাল ইত্তেফাকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। লুৎফা তাহের বলেন, ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানের নায়ক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহ-সভাপতি কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে ঢাকা কেন্দ ীয় কারাগারে ফাঁসি দেয়া হয়। এটি ছিল ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাযজ্ঞ। সশস্ত্র বাহিনীতে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে তাহেরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের কথিত অভিযোগ আনা হয়েছিল। জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে কথিত অভিযোগে তাহেরসহ জাসদের ৩৩ জন নেতা-কর্মীকে গোপন বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করান। তড়িঘড়ি করে ৩৩ জন জাসদ নেতা-কর্মীর বিচার শুরু করেন।

এতোদিন পর রিট কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হঠাৎ করেই কর্নেল তাহেরের বিচার চাওয়া হয় নি। কর্নেল তাহের পরিবার, জাসদ ও কর্নেল তাহের সংসদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ফাঁসির নামে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিচারের নথিপত্র চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আমাদের আবেদনে সরকার সাড়া দেয়নি। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে কর্নেল তাহেরের প্রহসনের বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ বন্ধ হয়েছিল।

তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীতে অস্থিরতা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ১৯৭৫ সালের ২৪ নভেম্বর কর্নেল তাহেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে কোথায় রাখা হয় তার কোন খবর ছিল না আমাদের কাছে। ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই তার ফাঁসির রায় দেয়া হয়। ১৯ জুলাই বেলা ২টার দিকে কারাগারে তাহেরের সাথে দেখা করার জন্য পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়া হয়। বিকাল ৩টায় কারাগারের ৮ নম্বর সেলে আমাদের সাথে তার শেষ দেখা করানো হয়। এসময়ে তাকে স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনো বিচ্ছিন্ন রাজনীতি করিনি। ক্ষুদিরামের পর আমি অপরাজনীতির শিকার। যে জিয়াকে আমিবাঁচিয়ে ছিলাম সেই আমার সঙ্গে বেঈমানি করেছে।’ শেষ মুহূর্তে সন্তান নিতু, যিশু ও মিশুর খোঁজ নিয়েছিলেন তিনি।

১৯৭৬ সালের ভয়াল ২১ জুলাইয়ের কথা স্মরণ করে তাহেরের স্ত্রী বলেন, ২১ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টায় মোহাম্মদপুরে তাহেরের বড় ভাই আরিফুর রহমানের বাসায় ছিলাম। কারাগার থেকে ফোন করে কর্নেল তাহেরের লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়। উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা জেল গেটে গিয়ে তার লাশ গ্রহণ করে। তবে আমাদের ইচ্ছা ছিল ঢাকার কোন জায়গায় কর্নেল তাহেরকে সমাধি করা হোক। সরকারের কাছে এ ইচ্ছা প্রকাশ করলে তারা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। একটি এম্বুলেন্সে তাহেরের লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হলো। আর আমাদের একটি মাইক্রোবাসে পাঠিয়ে দেয়া হলো। নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার কাজলা গ্রামে বাড়ির ৩ মাইল দূরে শ্যামগঞ্জে লাশ ফেলে রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চলে যান। তখন গ্রামে কোন রাস্তা ছিল না। লাশের জন্য সরকার আলাদা কোন কফিনের ব্যবস্থা করেনি। কারাগারের চাদর দিয়ে ঢাকা অবস্থায় ৩ মাইল লাশ কাঁধে নিয়ে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এমনকি লাশ দাফনের ২১ দিন পর্যন্ত তাহেরের কবর পাহারা দেয়া হয়েছিল।

তাহেরকে আপাদমস্তক দৃঢ়চেতা সাহসী মানুষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণেই পরিবারের পক্ষ থেকে চাপ দেয়ার পরও রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী না হয়ে বরং উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, 'নিঃশঙ্কচিত্তের চেয়ে জীবনের মূল্যবান সম্পদ আর কিছু নেই। কোন অবস্থাতেই তিনি কারো কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হবেন না। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য পরিবার এমনকি তার মা আশরাফুন্নেসার পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তিনি একবারের জন্যও সে পথে পা বাড়াননি; বরং তিনি নিজের সাহসী সিদ্ধান্তের কথা বলেছেন অকপটে। তিনি বলেছিলেন, ‘মৃত্যুতে বিন্দুমাত্র ভয় নেই, ইতিহাস একদিন তাকে মূল্যায়ন করবেই। আর এ কারণেই বিপ্লবী তাহের দৃঢ়তার সঙ্গে নিজ হাতে ফাঁসির দড়ি গলায় পরে সারাবিশ্বে মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল (অব আবু তাহেরকে (বীর উত্তম) গোপন বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেয়া হয়। গত ২৩ আগস্ট গোপন বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেয়া ও সামরিক ফরমান জারি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তার কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সামরিক আদালতের গোপন বিচারের নথি তলব করেছে হাইকোর্ট। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র সচিব এবং কারা মহাপরিদর্শককে নথি আদালতে জমা দেয়ার
নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Click This Link

------------------------------------------------------------------------------


কর্নেল তাহের ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেলেন জীবনের জয়গান :কালের কন্ঠ ২১ জুলাই ২০১০
Click This Link

জিয়া যে এতো নিষ্ঠুর ছিল তা জানতাম না :লুৎফা তাহের ittefaq 2010/08/27/
Click This Link

বিদেশি বন্ধুর চোখে কর্নেল তাহের
Click This Link

কর্নেল তাহের: এক অমীমাংসিত চরিত্র
Click This Link

হ্যাঁ আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি নুরুজ্জামান মানিক
Click This Link


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৩:২৯
২০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×