গত শতকে বিশ্বের প্রথম গণহত্যা ঘটিয়েছিল তুরস্ক। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তুরস্ক প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করেছে—এখন পর্যন্ত যার বিচার হয়নি। আর্মেনিয়ার মানুষ প্রায় ১০০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিচার দাবি করে আসছে। এখনো তুরস্ক নির্বিচারে কুর্দিদের হত্যা করছে।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক ও বিচারাধীন গোলাম আযমকে ‘মৃত্যুদণ্ড’ না দেওয়ার জন্য তুরস্কের রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ গুলের অনুরোধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
আজ শুক্রবার নির্মূল কমিটির সভাপতি বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে তাঁরা গোলাম আযমের মামলার রায় ও শাস্তি সম্পর্কে তুরস্কের অনুরোধকে আপত্তিকর আখ্যায়িত করে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগীরা দেশে-বিদেশে যে অপতত্পরতা চালাচ্ছে, এটি তার সর্বশেষ নমুনা। এ ধরনের অনুরোধ কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি গোলাম আযমের মামলার রায় ঘোষণার আগেই এ বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা গণহত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণের ও আদালতের প্রতি অনাস্থা প্রকাশেরও শামিল।
বিবৃতিদাতারা বলেন, গত শতকে বিশ্বের প্রথম গণহত্যা ঘটিয়েছিল তুরস্ক। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তুরস্ক প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করেছে—এখন পর্যন্ত যার বিচার হয়নি। আর্মেনিয়ার মানুষ প্রায় ১০০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিচার দাবি করে আসছে। এখনো তুরস্ক নির্বিচারে কুর্দিদের হত্যা করছে। এহেন গণহত্যাকারী তুরস্ক অন্য দেশের গণহত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তির বিরুদ্ধে কথা বলবে—এটাই স্বাভাবিক।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বিচারের নামে প্রহসন করে ফাঁসিতে ঝোলানোর উদাহরণ তুরস্কের মতো আর কোনো দেশের নেই। সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ঢোকার জন্য তুরস্ক মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলোপ করলেও প্রধানমন্ত্রী এরদোগান আবার মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে জনমত গঠন করছেন।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘আমরা মনে করি বাংলাদেশ যেভাবে নিজস্ব আইন ও দেশীয় আদালতে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা সফল হলে গণহত্যার শিকার অন্য দেশও অনুপ্রাণিত হবে। উদ্যোগী হবে এসব অপরাধের বিচার করতে। তুরস্কের ভয় সেখানেই।’
বিবৃতিতে তুরস্কের রাষ্ট্রপতির সমালোচনা করে বলা হয়, গুলের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছে কামাল আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কের বিরোধিতা করে। তাঁর দল মুসলিম ব্রাদারহুড অন্যান্য মৌলবাদী সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত—যারা মনে করে ইসলামের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করা বৈধ।
বিবৃতিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘কোনো দেশ যদি আমাদের স্বাধীন বিচারব্যবস্থা বা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কথা বলে, তা মর্যাদা ও দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিহত করুন। সব বাধা মোকাবিলা করে দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করুন।’

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



