ব্লগার নেক্সাস তিনি একজন মিথ্যাবাদী
৩০. ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:১২
নেক্সাস বলেছেন: ২৫ মার্চ রাত ১১টায় অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জানজুয়া (পাকিস্তানি) জিয়াউর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরে যাওয়ার জন্য। আকস্মিক ও রহস্যজনক এই নির্দেশের অর্থ তাঁর বোধগম্য হয়নি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে জানজুয়া নিজে এসে তাঁকে নৌবাহিনীর একটি ট্রাকে তুলে ষোলশহর থেকে বন্দরে দিকে রওনা দেন।
জিয়াউর রহমানকে রাস্তার ব্যারিকেড সরিয়ে সরিয়ে যেতে হয়। আগ্রাবাদে একটি বড় ব্যারিকেডের কারণে আবার তাঁর ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ে। এ সময় পেছন থেকে ছুটে আসে একটি ডজ গাড়ি। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী ওই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে যান জিয়াউর রহমানের কাছে। হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যান রাস্তার ধারে।
খালেকুজ্জামান জিয়াকে বলেন, পশ্চিমারা গোলাগুলি শুরু করেছে। শহরের বহু লোক হতাহত। তাঁর উত্তেজিত কণ্ঠস্বর থেকে আরেকটি কথা ঝরে পড়ে। ‘কী করবেন জিয়া ভাই এখন?’ খালেকুজ্জামানের কথা শুনে গভীর চিন্তায় তলিয়ে যান জিয়া। তারপর বজ্রনির্ঘোষে বলে ওঠেন: ‘উই রিভোল্ট।’
জিয়াউর রহমান সঙ্গে সঙ্গে খালেকুজ্জামানকে ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্সে ফিরে যেতে বলেন। তিনি তাঁর মাধ্যমে অলি আহমদকে নির্দেশ পাঠান ব্যাটালিয়নের সব বাঙালি সেনাকে প্রস্তত করতে। একই সঙ্গে আরও নির্দেশ পাঠান ব্যাটালিয়নের সব পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের।
খালেকুজ্জামান যাওয়ার পর জিয়াউর রহমান ফিরে যান ট্রাকে। ট্রাকে তাঁর সঙ্গে ছিল একজন পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তা। তাকে তিনি বলেন, হুকুম বদলে গেছে। বন্দরে যেতে হবে না। আর বাঙালি সেনা যাঁরা তাঁর সঙ্গে যাচ্ছিলেন, তাঁদের ইশারায় বলেন অস্ত্র লোড রাখতে। প্রয়োজন হতে পারে।
তাঁরা ফিরে যান ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্সে। সেখানে পৌঁছেই সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তা ও নৌসেনাদের জিয়াউর রহমান আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। হকচকিত পাকিস্তানি সবাই আত্মসমর্পণ করে। এরপর তিনি একাই একটি গাড়ি নিয়ে ছুটে যান কমান্ডিং অফিসার জানজুয়ার বাড়িতে।
কলবেল টিপতেই ঘুম ভেঙে উঠে আসে জানজুয়া। তাঁকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে। কেননা তার ধারণা ছিল, পরিকল্পনা অনুযায়ী জিয়া বন্দরে বন্দী হয়েছেন। জানজুয়াকে আটক করে জিয়া তাকে ষোলশহরে নিয়ে যান।
এরপর জিয়া টেলিফোনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাঁদের কাউকে না পেয়ে তিনি টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ফোন করেন। অপারেটরকে বলেন সবাইকে ফোন করে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের বিদ্রোহ ঘোষণার কথা জানাতে। অপারেটর সানন্দে তাঁর নির্দেশ পালনে রাজি হন। এভাবে শুরু হয়ে যায় তাঁর মুক্তিযুদ্ধ।
জিয়াউর রহমান এর পর আর পেছন ফিরে তাকাননি। চট্টগ্রাম এলাকায় প্রতিরোধ যুদ্ধকালে তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
আপনার চট্টগ্রাম অংশে এই বিষয়টা আসলে লিখাটা অনেক বেশী সুন্দর ও বস্তুনিষ্ঠ হত। ধন্যবাদ আপনাকে
Click This Link
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
--------------------------------------------
মূল প্রথম আলো
Click This Link
News Details - Full Banner_Above
বীর মুক্তিযোদ্ধা
তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
| তারিখ: ২৯-১২-২০১২
৫ মন্তব্য
প্রিন্ট
ShareThis
Share on Facebook
prothom-alojobs news details small ad
« আগের সংবাদ পরের সংবাদ»
জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম
জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম
৬১১
স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন।
জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা অসামান্য
জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড -ইন-কমান্ড ছিলেন। এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে ওই রাতেই তিনি বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
২৭ ও ২৮ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এ ঘোষণায় বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন মুক্তিযোদ্ধাসহ সবার মনে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করে।
জিয়াউর রহমান প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে ১ নম্বর সেক্টর, পরে ১১ নং সেক্টর এলাকার অধিনায়ক এবং পরবর্তীকালে ‘জেড’ ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সার্বিক নেতৃত্ব ও পরিচালনায় বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বড় বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে কামালপুর, ছাতক, ধলই বিওপি ও রাধানগরের যুদ্ধ অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি সিলেট এলাকায় ছিলেন।
২৫ মার্চ রাত ১১টায় অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জানজুয়া (পাকিস্তানি) জিয়াউর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরে যাওয়ার জন্য। আকস্মিক ও রহস্যজনক এই নির্দেশের অর্থ তাঁর বোধগম্য হয়নি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে জানজুয়া নিজে এসে তাঁকে নৌবাহিনীর একটি ট্রাকে তুলে ষোলশহর থেকে বন্দরে দিকে রওনা দেন।
জিয়াউর রহমানকে রাস্তার ব্যারিকেড সরিয়ে সরিয়ে যেতে হয়। আগ্রাবাদে একটি বড় ব্যারিকেডের কারণে আবার তাঁর ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ে। এ সময় পেছন থেকে ছুটে আসে একটি ডজ গাড়ি। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী ওই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে যান জিয়াউর রহমানের কাছে। হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যান রাস্তার ধারে।
খালেকুজ্জামান জিয়াকে বলেন, পশ্চিমারা গোলাগুলি শুরু করেছে। শহরের বহু লোক হতাহত। তাঁর উত্তেজিত কণ্ঠস্বর থেকে আরেকটি কথা ঝরে পড়ে। ‘কী করবেন জিয়া ভাই এখন?’ খালেকুজ্জামানের কথা শুনে গভীর চিন্তায় তলিয়ে যান জিয়া। তারপর বজ্রনির্ঘোষে বলে ওঠেন: ‘উই রিভোল্ট।’
জিয়াউর রহমান সঙ্গে সঙ্গে খালেকুজ্জামানকে ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্সে ফিরে যেতে বলেন। তিনি তাঁর মাধ্যমে অলি আহমদকে নির্দেশ পাঠান ব্যাটালিয়নের সব বাঙালি সেনাকে প্রস্তত করতে। একই সঙ্গে আরও নির্দেশ পাঠান ব্যাটালিয়নের সব পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের।
খালেকুজ্জামান যাওয়ার পর জিয়াউর রহমান ফিরে যান ট্রাকে। ট্রাকে তাঁর সঙ্গে ছিল একজন পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তা। তাকে তিনি বলেন, হুকুম বদলে গেছে। বন্দরে যেতে হবে না। আর বাঙালি সেনা যাঁরা তাঁর সঙ্গে যাচ্ছিলেন, তাঁদের ইশারায় বলেন অস্ত্র লোড রাখতে। প্রয়োজন হতে পারে।
তাঁরা ফিরে যান ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্সে। সেখানে পৌঁছেই সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তা ও নৌসেনাদের জিয়াউর রহমান আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। হকচকিত পাকিস্তানি সবাই আত্মসমর্পণ করে। এরপর তিনি একাই একটি গাড়ি নিয়ে ছুটে যান কমান্ডিং অফিসার জানজুয়ার বাড়িতে।
কলবেল টিপতেই ঘুম ভেঙে উঠে আসে জানজুয়া। তাঁকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে। কেননা তার ধারণা ছিল, পরিকল্পনা অনুযায়ী জিয়া বন্দরে বন্দী হয়েছেন। জানজুয়াকে আটক করে জিয়া তাকে ষোলশহরে নিয়ে যান।
এরপর জিয়া টেলিফোনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাঁদের কাউকে না পেয়ে তিনি টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ফোন করেন। অপারেটরকে বলেন সবাইকে ফোন করে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের বিদ্রোহ ঘোষণার কথা জানাতে। অপারেটর সানন্দে তাঁর নির্দেশ পালনে রাজি হন। এভাবে শুরু হয়ে যায় তাঁর মুক্তিযুদ্ধ।
জিয়াউর রহমান এর পর আর পেছন ফিরে তাকাননি। চট্টগ্রাম এলাকায় প্রতিরোধ যুদ্ধকালে তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ০৩।
জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার পর পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধান ছিলেন। ১৯৭৫ সালে সামরিক আইন জারির পর প্রথমে উপপ্রধান ও পরে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। সেনাপ্রধান ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি থাকাবস্থায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে সেনা বিদ্রোহের ঘটনায় তিনি নিহত হন। তাঁর জন্ম বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম এম মনসুর রহমান, মা জাহানারা খাতুন। স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁদের দুই ছেলে।
সূত্র: মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, নবম খণ্ড।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
ৎashedtৎ@pৎothom-alo.info
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



