somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বালক যেভাবে প্রমান করল যে সে আসলে লুল না!!:|:|:|

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন বহুদিন পর সেই বালকের সাথে নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানে দেখা হল।আমি ভেবেছিলাম,বালক বোধহয় বিষ খেয়ে মারা গিয়েছে।কিন্তু বালককে দেখলাম,বহাল তবিয়তে বইয়ের দোকানদারের সাথে ঝগড়া করছে।প্রথমে চিনতে পারিনি।কিন্তু পরে তাকে চিনতে পেরে পুরোনো কথা মনে পরে আমার হাসিতে ফেটে পড়ার দশা।আমাক্র সাথে চোখাচোখি হতেই দেখলাম,বালক না চেনার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।আমি তাকে বললাম, “খবর কি?আছো কেমন?”সে আমাকে কেবল “ভাল আছি” বলেই ফুড়ুত করে পালিয়ে গেল।আমি আবার একটু হেসে নিলাম।
বালক আর আমি একই সাথে ভার্সিটি এডমিশনের জন্য কোচিং করতাম।ক্লাসে দুই ধরনের ছেলে-মেয়ে ছিল।এক ধরনের ছেলেমেয়ের কাজ ছিল শুধু আসানং আর যাওয়ানং।তারা সেইরকমের স্মার্ট।ক্লাসে বসেই ছেলে-মেয়ে সব একত্র হয়ে হৈ-হল্লা শুরু করে,টিচার কিছু বললেও কানে দেয় না,ক্লাস শেষ হলে পাশের ফাস্টফুডের দোকানে বসে আড্ডা মারে,এইসব আরকি!আরেক দল ছিল-ভীষন আনস্মার্ট।চেহারায় সবসময় আতংকিত একটা ভাব।দেখলে মনে হয়,ভার্সিটি এডমিশন না,তারা আসলে পুলসেরত পার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে!
যাই হোক,বালক ছিল,প্রথম দলভুক্ত।সবসময় কুচপরোয়া নেহি ধরনের ভাব নিয়ে তার চলাফেরা।আমাদের মত ক্ষ্যাত পোলাপানদের নিয়ে আবার একটু ইয়ার্কি না মারলে চলেই না।দেখলেই মেজাজ খিচড়ে ওঠে।
যাই হোক,একদিন অন্যমনস্ক থাকার কারণে টিচার যে আমার রোল কল করে চলে গিয়েছে,তা খেয়াল করিনি।একটু পর লাফ দিয়ে উঠে বললাম, “স্যার আমি প্রেসেন্ট দিতে পারিনি!”
স্যার খুব রাগী চেহারা নিয়ে বললেন, “কেনো?যখন রোল কল করছিলাম তখন কি করছিলেন?”
আমি বললাম, “স্যার অন্যমনস্ক ছিলাম।”
আমার কথা শুনে স্যার হেসে আমার প্রেসেন্ট দিয়ে দিলেন।স্যার একটু রাগী ছিলেন।সচরাচর হাসতেন না।আমার দিকে তাকিয়ে হাসাটাই যেন কাল হল।ঐ দিন ছুটির সময় ফাজিল বালক আমার পথ রোধ করে বলল, “কি ব্যাপার,স্যার তোমার দিকে তাকায়ে এত মিষ্টি করে হাসি দেয় ক্যান?”
পাশ থেকে মিলা নামে আমার এক কলেজ ফ্রেন্ড যে কিনা কোচিং-এ এসে এই ফাজিল বালকের প্রিয় বন্ধুতে পরিণত হয়েছে,সে আমাকে টিপ্পনি কেটে বলল, “মনে হয়,স্যাররে ও তাবিজ খাওয়াইছে,এই কারনে স্যার ওর দিকে তাকায়ে হাসি মারে!”
আমি তাদের কথায় বিব্রত বোধ করলেও কিছু না বলে চলে আসলাম।তার পরদিন থেকে প্রতিদিন ঐ ফাজিল বালকের একই কথা।আমি নাকি স্যারকে তাবিজ করেছি।প্রতিদিন এক কথা শুনতে শুনতে আমি খুবই বিরক্ত।একদিন যেই বলল, “স্যার কেন আমার দিকে তাকিয়ে হাসে” অমনি আমি বালকের উপর ঝাপিয়ে পড়লাম।বললাম, “এতই যদি তোমার ইচ্ছা হয় যে স্যার তোমার দিকে তাকায়ে হাসবে,তাইলে চিড়িয়াখানায় বান্দরের খাচায় ঢুইকা স্যাররে ইনভাইট কইরো।তুমি যে তামশা কর,তাতে তোমারে ঐখানেই ভালো মানায়।”

বালক সম্ভবত আমাকে খুব সুশীল নারী ভেবেছিল।কিন্তু আমার এহেনো ভয়াবহ চেহারা লুকিয়ে আছে তা সে ভাবতেও পারেনি।আমার কথা শুনে বালক একদম চুপসে গেল।ঐদিন রাতে কেবল পড়তে বসেছি তখনি দেখি আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।ফোন রিসিভ করে ঐ পাশের ব্যক্তির পরিচয় শুনে খানিকটা অবাক হলাম।সেই বালক আমার কাছে মাফ চাইতে ফোন দিয়েছে।নাম্বার কই পেয়েছে কে জানে?আমি তাকে তাড়াতাড়ি মাফ করে দিলাম যাতে তার সাথে বেশি কথা বলতে না হয়।কিন্তু বালক খাজুইড়া আলাপ বন্ধই করে না।আমিও কিছুক্ষণ ভদ্রতার খাতিরে চুপচাপ তার কথা শুনলাম।শেষে বললাম, “আমার নাম্বার কই পাইছো?”
সে আমাকে জানালো আমার সেই মিলা বান্ধবি তাকে আমার নাম্বার দিয়েছে।যাই হোক,সেদিনের মত সে ফোন রেখে দিল।কিন্তু প্রতিদিন সে ফোন দিতেই লাগল।প্রতিদিনই সে ক্লাসে কি পড়ানো হয়েছে তা জানতে ফোন দেয়।অথচ সে প্রতিটা ক্লাসে উপস্থিত থাকে।আমি একদিন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি ক্লাসে থেকেও পড়া বোঝোনা কেনো?” সে আমার কথা শুনে আমাকে উলটা ঝাড়ি দিয়ে বলল, “আমি কি তোমাদের মত আতেল নাকি যে মনযোগ দিয়ে ক্লাস করব?”আমি আর কথা বাড়ালাম না।ওদিকে একদিন মিলা আমাকে ফোন দিয়ে আবার টিপ্পনি কেটে বলল, “ঐ রাব্বির সাথে কি তোর প্রেম হইছে নাকি?তোদের মধ্যে নাকি মাঝে মাঝেই ফোনে কথা হয়?”এই কথা শুনে আমার মাথায় আগুন ধরে গেল।আমি আর ঐ বালকের ফোন ধরি না।তার তিন চার দিন পর রোজার ঈদ এসে পড়ল।ওদিকে বালকও আমি ফোন ধরিনা দেখে ম্যাসেজের পর ম্যাসেজ পাঠিয়েই চলেছে।অবশেষে তার ফোন ধরলাম।সে ফোন ধরতেই বলল, “এই চল আশুলিয়া থেকে ঘুরে আসি”।আমি বালকের সাহস দেখে হতভম্ব।কত্ত বড় সাহস।আবার আমি তাকে আক্রমন করলাম।বললাম, “দেখো রাব্বি,তুমি আমার এমন কোনো ভাল বন্ধু না যে তুমি বলবা আর আমি লাফাইতে লাফাইতে তোমার সাথে আশুলিয়ার বাতাস খাইতে যাবো।আর কোনো দিন তুমি আমারে ফোন দিবানা।খবরদার!”বালক আমার কথা শুনে ফোন কেটে দিল।একটু পর মিলা ফোন দিয়ে আমাকে জেরা করা শুরু করল যে কেনো আমি এত ভালো একটা ছেলের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি!আমি বললাম, “ইচ্ছা হইছে তাই খারাপ ব্যবহার করছি!”আমার কথা শুনে মিলাও ফোন কেটে দিল।
তারপর বালক আর ফোন দেয় নি।কোচিং-এ দেখা হলেও আর আগের মত ফাজলামি করে না।আবার মিলাও আমার সাথে একটু মুড নিয়ে থাকে।আমি তার প্রিয় বন্ধুর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি কিনা!কিন্তু কিছুদিনের মাথায় আমাকে অবাক করে দিয়ে মিলা আমার কাছে ফোন করে ঐ বালকের নামে নানান বাজে কথা আমাকে বলতে শুরু করল।তার ভাস্যমতে, “দোস্ত আমারই বুঝার ভুল হইছিল।রাব্বি একটা আস্তো লুইচ্চা!সে আমার সাথে ফ্লাট করতে চায়।আমারে উল্টা-পাল্টা কথা বলে”।
আমি বললাম, “তো সমস্যা কি?প্রেম করবি!এত ভাল ছেলেরে হাত ছাড়া করিস না”।
মিলা আমাকে একটা ঝাড়ি মেরে বলল, “হারামি তোর চেহারা দেখলে কে বুঝবো তুই এত বিটলা?আমার এতো বড় বিপদে তুই আমার লগে ফাইজলামি করস!!!!!”
এইসব কথা বার্তা বলে সে ফোন রেখে দিল।তারপর আমি পড়াশুনার চাপে তাদের কথা ভুলে গেলাম।কিছুদিন পর আবার মিলা ফোন দিল।হাহাকার করে বলল,দোস্ত,রাব্বি বিষ খাইছে!”
আমি বললাম,”কার জন্য?তোর জন্য নাকি আমার জন্য বিষ খাইছে?”
সে আমাকে বলল, “ফাইজলামি করিস না।রাব্বি আসলেই বিষ খাইছে”।
এবার আমি একটু সিরিয়াস হলাম।মিলার কাছে জানতে পারলাম, “মিলার কাছ থেকে বাশ খেয়ে নাকি সে কোন এক মেয়ের সাথে খাতির করেছিল।মেয়েও তাকে কিছুদিন ঘুড়িয়ে তারপর ছ্যাকা দিয়েছে।ছ্যাকার কারণ হিসাবে নাকি বলেছে-রাব্বির চরিত্র খারাপ।রাব্বি তার প্রমান চাওয়ার পর মেয়ে মিলাকে হাজির করেছিল।মিলা আবার সবিস্তারে সব কাহিনী বলে রাব্বির মুখোশ খুলে দিয়েছে।আর তাতেই লজ্জায় অপমানে রাব্বি বিষ খেয়েছে!এখন মিলার ভয় রাব্বি যদি মরার আগে কোনো নোট লিখে মিলার উপরেই আত্মহত্যার দায়ভার চাপিয়ে দেয় তাহলে মিলার কি হবে?”
আমি সব শুনে মিলাকে বললাম, “তুই নিশ্চিন্তে থাক!কিছুই হবে না।সামনে পরীক্ষা।ছলাকলা বন্ধ করে ভালোমত পরীক্ষা দে”।
মিলা ফোন রেখে দিল।এর কিছুদিন পর,ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর কে কোথায় হারিয়ে গেল!বালকের খোজ নিতেও ভুলে গেলাম।বালক বেচে রইল নাকি মরে গেল তারও কোনো খবর রাখলাম না।
তবে সেদিন নীলক্ষেতে বালককে দেখে আবার সেই কথা মনে পড়ে গেল।যা হোক বালক বেচে আছে।বালক বিষ খেয়ে অন্তত প্রমান করেছিল যে তারও লজ্জা-শরম আছে!!এটাই বা কম কিসে?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:০৮
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন-হাদিস অনুযায়ী তারা পাকিস্তান এবং অন্যরা অন্যদেশ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২১



সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬০। তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে, এছাড়া অন্যদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×