somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোয়াখালী জামে মসজিদ, ধর্মপ্রাণ মানুষের তীর্থস্থান

১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নোয়াখালীর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে এক অপূর্ব স্বর্গীয় ভাবাবেগ নিয়ে অবস্থান করছে মাইজদী জামে মসজিদ। মাইজদী বড় মসজিদ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। প্রতিদিন শতশত ধর্মপ্রাণ মুসল্লী নিয়মিত এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। পুরাতন নোয়াখালী শহর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার পরে মাইজদীতে নতুন শহর গড়ার সময়য়েই ১৯৫০ সালে মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয়। দিনে দিনে নানান প্রতিষ্ঠান ও নানান জনের অনুদান আর নোয়াখালী বাসীর প্রতিদিনের মানতের টাকায় গড়ে উঠছে অনন্য সুন্দর এই মসজিদ। এর পশ্চিমে রয়েছে একটি বড় পুকুর, দক্ষিনে জিলা স্কুল উত্তরে ষ্টেশান রোড এবং জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও জেলা সড়ক বিভাগের ভবন, পূর্বে গণপূর্ত বিভাগের ভূমি। এই মসজিদের সীমানা ৩ একর ৮০ ডিসিমেল। এই মসজিদটি তৈরির সময় ছোট এক তলা ভবনে অপরুপ মুসলিম ও দেশী লোকজ শিল্প সৌন্দর্যে লতাপাতা আর নানা কোরআনের আয়াত ও উপদেশ বাণী উৎকীর্ণ করে নির্মান করা হয়। মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৩০ ফুট ও প্রস্থে ৮০ ফুট আয়তনে মূল ভবনে তিনটি সুর্দৃশ্য গম্বুজ ও নয়টি সুউচ্চ মিনার ইসলামী স্থাপত্যে নির্মিত হয়। পুরাতন শহর জামে মসজিদটি ছিলো সকল ধর্মের সকল মানুষের শ্রদ্ধাবনত উপাসনার পীঠস্থান। মূল নোয়াখালী শহর মেঘনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার সময় সেই মসজিদটিও নদীগর্ভে চিরতরে হারিয়ে যায়।

অনেক কিংবদন্তি ছিলো সে মসজিদকে ঘিরে। জনমনে বিশ্বাস ছিলো কেউ কোনো কিছু মানত করলে মহান আল্লাহতালা সে মানত কবুল করতেন। অনেক প্রবীনজনদের কাছে জানা যায়, বহু পুরাতন সে মসজিদের ভিতর কথা বল্লে এক প্রকার ঐশ্বরিক গুমগুম আওয়াজ করতো। গভীর রাতে সমস্ত পৃথিবী যখন নি:শব্দ হয়ে আসতো তখন কেউ কোরআন তেলওয়াত করলে কোরআনের সে বাণী অলৌকিক ভাবে মসজিদের দেয়াল থেকে গুরু গম্ভীর আওয়াজে আবার ফিরে আসতো। সে মসজিদটি যখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছিলো তখন প্রতিদিন দলে দলে মানুষ ছুটে গিয়েছিলো ভাঙন দেখতে। অনেকের বিশ্বাস ছিলো অলৌকিক কারনে উত্তাল সাগর থেকে হয়তো মসজিদটি রক্ষা পাবে। কিন্তু হাজার হাজার নারী পুরুষের বুকফাটা ক্রন্দন ছাপিয়ে অমিত ক্ষুধার্ত সাগরের উন্মত্ত ঠেউয়ের তোড়ে টুকরো টুকরো হয়ে মসজিদটি সাগরে বিলীন হতে লাগলো। তখন মানুষ প্রত্যক্ষ করলো যে, অসংখ্য মাটির ফাঁপা পিপা দিয়ে গাঁথা হয়েছিলো মসজিদের ভীত। সম্ভবত: এ শুণ্য মাটির পিপের ভীতের জন্যই শব্দ বিজ্ঞানের স্বাভাবিক নিয়মে মসজিদে কথা বল্লে প্রতিধ্বনিত হয়ে গুমগুম আওয়াজ করতো। সে মসজিদটি বিশাল ঠেউয়ের সাথে সাথে একএক বার একএক টুকরো হয়ে নদীতে বিলীন হয় গেলো। তবু বিশ্বাসে বদ্ধমূল মানুষজন ভাবলো পুরো মসজিদটি হয়তো অন্য কোথাও আবার পুরোপুরি ভেসে উঠবে। সাগর পাড়ে নদীর চরায় দূরে মসজিদটি আবার ভেসে উঠেছে এই গুজব কোথাও উঠলে মূহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ উর্দ্ধশ্বাসে ছুটতো সেদিকে। কিন্তু সকল জল্পনা কল্পনার অবসানঘটিয়ে মসজাদিটি সত্যি সত্যিই নদীগর্ভে চিরতরে হারিয়ে গেলো। পাঁজর ভাঙা মানুষের সেই বেদনা আর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য নতুন শহরে মানুষের নিজস্ব প্রচেষ্টায় ফের তিল তিল করে গড়ে উঠে এ মসজিদ। মসজিদের প্রবেশ পথে অনন্য সুন্দর গোলাপ বাগান যে কোনো ধর্মপ্রাণ রুচিশীল মানুষের হৃদয় পবিত্র স্নিগ্ধতায় ভরে দেয়। মসজিদের ভিতর উত্তর পূর্ব কোনে কালো পর্দায় ঘেরা দিয়ে মহিলাদের নামাজ পড়ার বিশেষ ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন অসংখ্য পর্দানশিন মহিলা সেখানে নামাজ আদায় করেন। এখানে আরো আসে হিন্দু খৃষ্টান সহ সকল ধর্মের সকল নারী পুরুষ, শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ভক্তি জানান তাঁরা। মানত করে দিয়ে যান খুশিমত উপঢৌকন। সকল ধর্মের সকল মানুষের এটি যেন এক মহামিলনের তীর্থস্থান। একটি মসজিদ কমিটির পরিচালনা বোর্ডের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মসজিদের সাথে আছে একটি এতিম খানা ও মাদ্রাসা। পাশেই আছে মসজিদের কবরস্থান। এখানে শায়িত আছেন প্রাক্তন সেক্রেটারী আনোয়ার উল্লাহ পেষ্কার, লেংটা হুজুর, নোয়াখালী পৌর সভার সাবেক চেয়ারম্যন মরহুম শহীদ উদ্দিন এস্কেন্দার (কচি) ও জেলার গন্যমান্য ব্যক্তিরা। এ মসজিদের অভ্যন্তরে আছে সুদৃশ্য ঝাড়বাতি। পুরানো মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার সময় ঝাড়বাতি, লোহার সুদৃশ্য গেইট ও অসংখ্য শ্বেত পথরের টুকরো রক্ষা করা গেছে। সেগুলো এখন বর্তমান মসজিদের শোভা বর্ধন করছে। মুসল্লিদের সার্বিক সুবিধার জন্য এখানে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে আধুনিক শৌচাগার, গোসলখানা ও ওজু খানা।

মসজিদের সাথে মানব কল্যান মজলিস নামে একটি জনহিতকর সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। যা আর্তমানবতার সেবায় মসজিদ ভিত্তিক একটি সংগঠনের রুপ নিয়েছে। সুপার মার্কেট, রেষ্ট হাউস্, পুকুর লিজের অর্থ, সমাজের দানশীল মহত ব্যক্তি আর অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুদানে দিন দিন শ্রীবৃদ্ধি পাচ্ছে এই মসজিদ। ১৮৪১ সালের পুরাতন নোয়াখালী শহরে মরহুম ইমাম উদ্দিন সওদাগর নিজের জমিতে যে জামে মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন দিনে দিনে নানান জনের নানান স্পর্শে তার সুখ্যাতি চতুর্দিকে বিকশিত হয়ে উঠেছিলো। কালক্রমে ভাঙাগড়া নোয়াখালীর পলিমাটিতে মসজিদটি দিন দিন আবার ঐশ্বরিক ঐশ্বর্যে শুশোভিত হয়ে উঠছে।

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রীল্যান্স সাংবাদিক
মুঠোফোন: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@ gmail.com
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০১
১৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×