সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুই বদলে যায়। পালাবদলের পালায় কোনভাবেই বিরামচিহ্ন দেয়া যায় না। আজ এবং আগামীর মাঝে এক "স্পেসবার" থাকবেই থাকবে। কেবলমাত্র প্রকৃতির বিধানগুলো চিরন্তন। আর সবকিছুই সময়ের চাকার সাথে ঘোরতে ঘোরতে কাঁদা ছিটানোর মত ছিটকে যায় কোন এক অতলান্তে, অনন্ত কালের জন্যে।
শিল্পীর কন্ঠে শুনেছিলাম " সাদা কাগজের মুল্যটা কত আর--- কালির আঁচর না টানা হলে বুকে তার-------।" সত্যি তাই, সাদা কাগজের বুকে কালির আঁচর টেনেই শুরু হয়েছিল সভ্যতার সুচনা। আজ হারিয়ে যাচ্ছে সেই কগুজে সভ্যতা--- তার স্থান দখল করে নিচ্ছে ইলেকট্রনিক মিডিয়া। কলমের বদলে "কীবোর্ড" এবং কাগজের বদলে ইলেকট্রনিক "স্ক্রিন" এর কাছে হেরে যাচ্ছে পুথি-পুস্তক। হয়ত এমন একদিন আসবে যেদিন আর হয়তবা ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়ার মতোও কোন পুথি-পুস্তক থাকবে না।
এখানে মাত্র কয়েকটি উদাহরণ টেনে একটু পরিষ্কার করার চেষ্টা করব। সংবাদপত্রকে বলা হয় আধুনিক সভ্যতার বাহক। যে জাতী যত বেশী সংবাদপত্র পাঠ করে - সে জাতী তত বেশী সভ্য। কিন্তু আজ সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা হতাশাজনক ভাবে কমে যাচ্ছ্। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যেখানে প্রচার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবার কথা - সেখানে পুর্বের প্রচার সংখ্যাও ধরে রাখা যাচ্ছে না। খোজ নিলে জানতে পারবেন, পাঁচ বছর আগেও একটি পত্রিকার যে সার্কুলেশন ছিল আজ আর তা নেই। কারণ, সকল পত্রিকাই অলাইন ভার্সনে মাত্র কিছু মেগা খরচ করে পড়ে নেয়া যাচ্ছে।
গল্প, উপন্যাস, কবিতা, যাহা হৃদয়ের খোরাক, চরম কাঙ্খিত, সেগুলোও সহজে পাওয়া যাচ্ছে ইলেকট্রনিক পর্দায়, আরো ঝকঝকে ভাবে। আরো অনেক সহজে। সহজেই একটি বই ডাউনলোড করে নেয়া যাচ্ছে। পড়া যাচ্ছে ইচ্ছেমত - তবে কেন আর আনেকগুলো টাকা গচ্চা দিয়ে একখানা বই ক্রয় করা? যে কোন লাইব্রেরীতে খোজ নিয়ে দেখুন, উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে বই বিক্রি। হয়ত কোন একদিন একখানা বই কেবল হয়ে যাবে "উপহার দেবার সামগ্রী।"
রইল কী আর বাকি? ও হ্যা, পাঠ্যপুস্তক। এখানেও অসনী সংকেত। সরকারী নীতি-নির্ধারকরা ইতিমধ্যে ঘোষনা দিয়ে বসে আছেন যে, আগামীতে সকল পাঠ্যপুস্তক হয়ে যাবে ডিজিটাল। অর্থাৎ প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীকে দেয়া হবে "টেব" অথবা অনুরুপ কোন ডিবাইস। তাহলে আর সাদা- কালো কাগুজে পুথির রইল বাকি কী?
সেদিন আর বেশী দুরে নয়, যেদিন হয়তবা আর কোন উপযোগীতা থাকবেনা একুশে বই মেলার মত বাংলার ঐতিহ্যবাহী বই মেলা পালনের।একখানা ছাপানো পুস্তককে সুন্দরভাবে সাজিয়ে পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার সেই সব কারিগরদের থাকবে না প্রয়োজনীয়তা। কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে আজকের প্রকাশনী সংস্থাগুলো। হয়ত ইহা সুদুরে নয়- অদুরেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৩১