somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢোল সমুদ্র দীঘির পাড়ে

০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকেল বেলা ঘুরতে বের হওয়া আমার অনেক দিনের অভ্যাষ। এখনো বের হই। চাকরিতে শিফটিং ডিউটির জন্য সপ্তাহে পাঁচটি বিকেল বের হতে পারি। দুই দিন কাটে অফিসের বদ্ধ রুমে। এসির হাওয়া শীতলতা দিতে পারে কিন্তু নদীর পাশ ঘেঁসে বয়ে যাওয়া বাতাসের মত আন্তরিক ভালো লাগা দিতে পারে না। তখন আমি ঝিনাইদহে আমি থাকতাম পাগলা কানাই মোড়ে। ২০০৬ সালের দিকে। অনেকটা মফস্বল এলাকা। বাসার কাছেই একটা মাঠ ছিলো। একলা বিকেল গুলো সবুজ ধান খেতের পাশে বসে কাটাতাম। মোবাইলে থাকা গানগুলো বারবার শুনতাম। তখন থেকেই মূলত আমি রবীন্দ্র সংগীতের প্রেমে পড়ি। মনে হত রবীন্দ্রনাথ গান গুলো শুধু আমারই জন্য লিখে গেছেন। বিশেষ করে এই গানটা বেশী শুনতাম , আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে...

একজন সঙ্গী সাথী পেলেই ঘুরতে বের হয়ে যাই। পাগলা কানাই রোড ধরে গ্রামের ভিতর চলে যাই। গাছপালা ঘেরা নিবিড় এক গ্রাম। ঢোল সমুদ্র দীঘি এই পথেরই বাঁকে অবস্থিত। ঢোল সমুদ্র দীঘিতে প্রথম যাই রুমমেট শাহিনের সাথে। এই জীবনে অনেককে পেয়েছি রুমমেট হিসেবে। অনেকের কথা ভূলে গেছি। কিন্তু দুই তিনজন রুমমেটের কথা আমি হয়তো কখনো ভূলতে পারবো না। তাদের স্বার্থপরতার জন্য। শাহিন হলো আমার প্রথম কোন স্বার্থপর রুমমেট। নিজের স্বার্থের ব্যাপারে সে এক চুল ছাড় দিতে রাজি হত না। অপ্রয়োজনীয় স্বার্থটুকু আদায় করতে সে যে কি করত তা মনে পড়লেও আজো আমার হাসি পায়।

শাহিন আর আমি দুজন মিলে হেটে চলে যাই ঢোল সমুদ্রের দীঘির পাড়ে। ঝিনাইদহ সদর থেকে ঢোল সমুদ্র দীঘি ৪/৫ কিলোমিটারের মত হবে। আমার বাসা থেকে তিন কিলোমিটারের মত পথ। গল্প করতে করতে চলে যেতাম। ৫২ বিঘা জমির উপর বিশাল দীঘি। দীঘির টলটলে জলের দিকে চেয়ে বসে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। পাড়ে নানান প্রজাতির গাছে। গাছের ছায়ায় বসে থাকতাম। কে কবে এই বিশাল দিঘী খনন করিয়েছিলো জানিনা। শাহিনের কাছ থেকে জানতে পারলাম মুটুক রাজা নামে কোন জমিদার এই দীঘিটা খনন করেন।

আমি জানতাম না আমি একটা ঐতিহাসিক স্থানে বসে আছি। মুটুক নয়, মুকুট রায় নামে এই স্থানে দিল্লী সালতানাতের যুগে এক রাজা ছিলেন। তিনি খুব জনহিতৈষী রাজা ছিলেন। প্রজাদের জলকষ্ট নিবারণে তিনি এই বিশাল দীঘিটা খনন করেন।

জনশ্রুতি আছে রাজা পানির জন্য এই বিশাল দীঘি খনন করেন। মাটিয়ালরা দিনরাত মাটি কেটে চলেছে। দীঘির গভীরতা বাড়ে কিন্তু পানি ওঠে না। স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে রানী পূজা দিতে পুকুরের মাঝে নামলেন। ইষ্টদেবতাকে স্মরন করা মাত্র পুকুরে পানি উঠতে শুরু করলো। প্রজারা উচ্চ্বসিত আনন্দে ঢোল বাদ্য বাজিয়ে উল্লাস করতে লাগলো। ঢোলের আওয়াজে রানীর চিৎকার কেউ শুনতে পেলো না। সবার অলক্ষ্যে রানী দীঘির জলে তলিয়ে গেলেন।

রানীর স্মৃতিকে স্মরন করতে দীঘির নাম রাখা হলো ঢোল সমুদ্র দীঘি। মুকুট রায় প্রতাপশালী রাজা ছিলেন। তার বিশাল গোশালা ছিলো বাড়ীবাথানে , বেড়বাড়ীতে ছিলো বাগান বাড়ী, তার কোড়াদারেরা থাকত কোড়াপাড়ায়। ঝিনাইদহে এখনো বেড় বাড়ী, কোড়াপাড়া, বাড়ীবাথান এখনো বর্তমান।

মুকুট রাজার আরো একটি ঘটনা আছে। দ্বিল্লীশ্বর মুকুট রাজার বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। মুকুট রাজার বাহিনীর কাছে দিল্লীর সেনাবাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। মুকুট রাজা আনন্দে অভিভূত হয়ে তার একজন সৈন্যকে কালীর মন্দিরে বলি দিতে আদেশ করেন। এতে তার বাহিনীর পাঠান সৈন্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে দিল্লীর বাহিনীতে যোগ দেয়। এরপরে দিল্লীর বাহিনীর হাতে মুকুট রাজা পরাজিত ও বন্দী হন। দিল্লীর শাসক রাজার বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাকেমুক্তি দেন। রাজা বাড়ি ফিরে দেখেন সম্ভাব্য পরিনতি চিন্তা করে রাজকন্যা, রানী, রাজ পুরোহিত আত্মহত্যা করেছে। তার কন্যার আত্মহত্যার স্থান কন্যারদহ, স্ত্রীর আত্মহত্যার স্থান দুই সতীনে এবং পুরোহিতের আত্মহত্যার স্থান দৈবজ্ঞদহ নামে আজো পরিচিত।

সূর্য্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। এবার ফেরার পালা। ঢোল সমুদ্র দীঘির পাড় থেকে নেমে আসি। সতেজ মন নিয়ে পাগলা কানাই মোড়ের দিকে হাঁটা শুরু করলাম


আমার নিজস্ব ব্লগঃ http://www.frahaman.com

বেড়াতে আসতে ভূলবেন না কিন্তু।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৫৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×