somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় অন্ধতা এবং আমাদের বানরায়ন -১

০৫ ই নভেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
চারদিকে অন্ধতার পরিমান এত বেড়েছে,কোনোওভাবেই আর সত্যের দেখা পাওয়া যায় না ।আমি কোনো অবিশ্বাসী মানুষ না,কিন্তু তাই বলে চোখ বন্ধ করে থাকতে জানি না

এইসকল অন্ধতার একটা প্রধান ধারা হচ্ছে ধর্ম ।ধর্মের অপব্যাখ্যায় চার দিক ছেয়ে গেছে ।মুক্ত মনের চর্চা হয় না কোথাও ।বিদায় নিয়েছে বিজ্ঞানমনস্কতা,এবং অন্যান্য বুদ্ধিমত্তার উপহার ।মানুষ থেকে বিবর্তনের ধারার উল্টা পথে মনে হয় যেতে আর বেশী নেই ।পচা নোংরা বানরের দলে পরিনত হচ্ছি আমরা ।

২.
ইদানিং একজাতীয় "মাল্টিপারপাস" সর্বজ্ঞাণী,তথাকথিত বিজ্ঞান দার্শনিকের উদ্ভব হয়েছে,যাদের প্রধান কাজ হচ্ছে,ধর্মীয় পুস্তকে বিজ্ঞান খোজা,আমি বলছি না,ধর্মীয় পুস্তকে বিজ্ঞানের অস্তিত্ব নেই ।কিন্তু আমার আমার আপত্তি হচ্ছে এইসকল অর্ধশিক্ষিত(নৈর্ব্যত্তিক জ্ঞানের ব্যাপারে,কোনো কোনো ক্ষেত্রে "অর্ধশিক্ষিত " শব্দটি তাদের জন্যে কমপ্লিমেন্ট হয়ে যায়)
কাঠমোল্লাদের আধুনিক সংস্করনদের প্রতি ।
তবে সমস্যার গভীরে যাবার আগে কিছু বিষয়ে সংজ্ঞায়ন করাকরিভাবে করা দরকার ।
প্রথম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক তত্ব কিভাবে আত্নপ্রকাশ করে,
সকল বৈজ্ঞানিক তত্ব প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে "হাইপোথিসিস" ।
বিজ্ঞানী যখন হাইপোথিসিস দাড় করান,তখন তিনি কোনো একটি প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যার জন্যে কিছু গুরুত্বপূর্ন রাশির মাঝে সম্পর্কস্থাপনের চেষ্টা করেন ।একারনেই বৈজ্ঞানিক তত্ব ভীষনভাবে "দৃষ্টিকোন নির্ভর" ।
সমস্যা হচ্ছে আজকলের এই সব সবজান্তারা বিজ্ঞানকে অস্বাভাবিক(!) গুরুত্ব দিয়ে থাকেন( তিলমাত্র গানিতিক যোগ্যতা না থাকা সত্বেও) ।তারা মনে করেন ধর্মীয় পুস্তকে বিজ্ঞান খুজে পেলেই হলো,ধর্ম মহিমান্বিত হয়ে যাবে,অর্থাত্ বিজ্ঞানকেই সম্মানিত করা হল,এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি যে কতটা আত্ঘাতী তা মননশীল মানুষ মাত্রই বুঝতে পারে ।
বিজ্ঞানের কোনো তত্ব "পরম" নয়,কারন তত্বগুলো নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোন প্রসূত হাইপোথিসিসের ফলাফল মাত্র,তাই বিজ্ঞান সবসময় ই পরিবর্তনশীলতার মধ্য দিয়ে যায় ।চিরায়ত ধর্মের সাথে তার সমন্বয়ের চেষ্টা অবিশ্বাসীদের কাছে যেমন হাস্যকর,বিশ্বাসীদের কাছেও একরকম কটাক্ষের মত ।কারন ধর্ম ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস,অথচ এইধরনের কর্মকান্ড কর্তার বিশ্বাসের গভীরতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তোলে উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দিহান করে তোলে ।
৩.
আমি পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী,তাই কিছু তথাকথিত "দাবীকৃত" সাযুস্যের কথা বলছি।
সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ত নবীজীর মেরাজের ঘটনা(কুরআনে কোনোও অতিরন্জিত বর্ননা পাওয়া যায় না,কেবলমাত্র আলআকসা ভ্রমনের কথা বলা আছে,তা অবশ্য মেরাজের অন্যান্য ঘটনার তুলনায় শিশু)
যেসব ঘটনা দাবী করা হয় বিভিন্ন হাদীসে,তা কেবল মাত্র ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ছাড়া(যদিও সৃস্টিমুহুর্তের পর তার আর কোনোও কজের হদিস পাওয়া যায় না,মিথলজি ছাড়া) একেবারেই অসম্ভব ।এটা তবুও আমার মেনে নিতে অসুবিধা নেই যে ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপেই এটা হয়েছে,আমি বিশ্বাসী সুতরাং আমার অসুবিধা নেই ।(যদিও উদ্ভট মিথলজির অনুপস্থিতি ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য,এবং এই ঘটনা মিথলজির কাতারে পরে যায়)।কিন্তু আমার আপত্তি তৈরী হয় যখন মানুষজন এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় নেমে পড়ে ।সবচেয়ে বেশী উল্লেখ করা হয় আইনস্টাইন কে(যদিও যারা উল্লেখ করে তাদের মধ্যে অধিকাংশ,আপেক্ষিকতা তো দুরে থাক,আইনস্টাইন বানান পর্যন্ত করতে পারে না ।)
বলা হয় আইনস্টাইন মেরাজের ঘটনা প্রমান করে গেছেন ।(হাসব নাকি কাদব!)
প্রধানত আইনস্টাইনের ১৯০৫ এর "বিশেষ আপেক্ষিক তত্ব "
এই ঔদ্ধত্যের ভিত্তি ।সেই তত্বের গতিশীল স্থানাংক কাঠামোতে ঘড়ির শ্লথ হয়ে যাওয়া সম্পর্কিত প্রেডিকশান এই দাবীর মূল ।(আলোর গতিতে চলা সম্ভব হলে,পর্যবেক্ষক সাপেক্ষে স্থির হয়ে যায় )।কিন্তু একই সাথে পর্যবেক্ষকের ভর স্থির কাঠামোতে দাড়িয়ে থাকা অপর একজন পর্যবেক্ষকের তুলনায় অসীম হয়ে যায়,অসীম ভরের কোনো বস্তুকে গতিশীলের জন্যে দরকার অসীম বল,এবং অসীম সম্পাদিত কাজ ।এজন্যেই আপেক্ষিক তত্ব আলোর বেগ, ভর(স্থির ভর,কারন বিভিন্ন এনার্জি পার্টিকেল গতিশীল অবস্থায় ভর প্রদর্শন করে)সম্পন্ন বস্তুর জন্যে অনুমোদন করে না ।
মজা হচ্ছে বিশেষ আপিক্ষিক তত্ব শুধুমাত্র "জড়" প্রসঙ্গ কাঠামোতে প্রযোজ্য(যেসকল প্রসঙ্গ কাঠামো পরস্পরের সাথে সমদ্রুতিতে চলমান) ।তার মানে ত্বরনিত কাঠামোতে(যেখানে বেগের পরিবর্তন হচ্ছে) বিশেষ আপেক্ষিকতা প্রয়োগ করা যায় না ।করতে হয় জেনারেল রিলেটিভিটি(১৯১৫ সালে আইনস্টাইন কর্তিক আবিস্কৃত,প্রধানত এই তত্বের জন্যে তিনি কিংবদন্তিতে পরিনত হন ।.আর জেনারেল রিলাটিভিটিতে ঘড়ির শ্লথ আচরন এর প্রেডিকশান অনেক অন্যরকম(ত্বরনীত কাঠামোতে,অথবা মহাকর্ষ ক্ষেত্রে ঘড়ি শ্লথ আচরন করে ।এখানে আলাদা লিখলেও জেনারেল রিলেটিভিটি জড় ভর ও মহাকর্ষ ভরের ইকুইভ্যালেন্সের কারনে একসিলারেটেড বডি এবং গ্র্যাভিটেশনাল ফিল্ডের মাঝে কোনো পার্থক্য করে না)।আর আমাদের সবজান্তাদের দৌড় এই পর্যন্ত পৌছেনি(টেনসর আ্যানালাইসিস,নন ইউক্লিডিয়ান জিওমেট্রি,রীমেন সারফেস দিয়ে ফরমুলেটেড তত্ব টি আর যাই হোক,সবজান্তাদের জন্যে নয় )।
জেনারেল রিলেটিভিটিকে অস্বীকার করেও অবশ্য পাড় পাওয়া যায় না ।কারন নবীজী যখন যাত্রা শুরু করেন তখন শুন্যবেগে ছিলেন,আলোর বেগে পৌছাতে হলেও(যদিও অনুমোদিত নয়)
ত্বরন প্রোয়োজন এবং তখনই তা বিশেষ আপেক্ষিকতার হাত থেকে চলে গেছে ।উর্ধাকাশে গিয়ে ও তাকে থামতে হয়েছিলো ,অন্তত আরশে কুদসী দেখার জন্যে ।

৪।
নানা অন্ধতায় আমরা ডুবে থাকি,চারপাশে,শুধু হনুমানের বৃথা আস্ফালন,তবে মুক্তমনের জন্যে এগিয়ে যাবই আমরা ।
চলবে ।
২৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×