তালেবানদের আন্দোলন হলো সুন্নি ইসলামি এবং পশতুন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। পশতুন আন্দোলন থেকেই মূলত তালেবান আন্দোলনের সূত্রপাত। ১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে তারা প্রসিদ্ধি লাভ করে। এই আন্দোলনের প্রথম সূচনা হয় ধর্মীয় সভা-সেমিনার থেকে, বিশেষ করে সৌদি আরব থেকে ধর্মের বাণী প্রচারের নামে বিভিন্ন দেশে অর্থপ্রাপ্তির পথ ধরে। তালেবানরা ক্ষমতায় গেলে পাকিস্তানের পশতুন এবং আফগানিস্তানে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং শরিয়া তথা ইসলামি আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার অঙ্গীকার করে। তারা ইসলামি বিচার-ব্যবস্থার কথা বলে জনসমর্থন আদায়ে সমর্থ হয়। শুধু তাই নয়, তারা সাধারণ মানুষকে ইসলামি শরিয়া প্রতিপালন এবং নারীদের জন্য বোরকা পরিধান বাধ্যতামূলক করে। একইভাবে তালেবানরা টেলিভিশন, গান, সিনেমা ইত্যাদি বন্ধ করে দেয় এবং আট বছর বয়স থেকে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করে।
তালেবানরা ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইরান-সীমান্তবর্তী হেরাত প্রদেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। এর এক বছরের মাথায় তারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলে নিয়ে নেয়। তত্কালীন আফগান প্রেসিডেন্ট বোরহানউদ্দিন রব্বানী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী আহমদ শাহ মাসুদকেও পরাজিত করে তারা। এরপর ১৯৯৮ সালের দিকে তারা আফগানিস্তানের ৯০ ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে সক্ষম হয়। তালেবানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্থাপনা ধ্বংসের অভিযোগ ওঠে। ২০০১ সালে তারা আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি লঙ্ঘন করে বামিয়ানে গৌতম বুদ্ধের ঐতিহ্যবাহী মূর্তি ভেঙে ফেলে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতাসীন থাকার সময়ে মাত্র তিনটি দেশ তাদের স্বীকৃত দিয়েছিল। দেশ তিনটি হলো—পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে সে সময় মানবাধিকার লংঘনের জন্য আফগানিস্তান জাতিসংঘের স্বীকৃতি হারিয়েছিল এবং ইরান, ভারত, তুরস্ক, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্য-এশিয়ার অধিকাংশ দেশ তালেবান শাসনের বিরোধিতা করেছিল এবং তালেবান-বিরোধী আফগান নর্দার্ন অ্যালায়েন্সকে সাহায্য করেছিল।
ক্ষমতায় থাকার সময় তালেবানরা এ যাবত্কালের সবচেয়ে কট্টোর মুসলিম শরিয়া-?ভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। নারীদের প্রতি বিরূপ আচরণের জন্য তারা আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দিতও হয়।
‘তালেবান’ শব্দের অর্থ ‘ছাত্র’। এ আন্দোলনের প্রধান ছিলেন মোল্লা মুহাম্মাদ উমার। উমারের পরেই ছিল সামরিক কমান্ডার ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের একটি মিশ্র ইউনিটের অবস্থান। এর পরে স্থান ছিল পদমর্যাদা অনুযায়ী পাকিস্তানের বিভিন্ন ধর্মীয় বিদ্যালয়ে পাঠ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের। দক্ষিণ আফগানিস্তানের পশতুন অঞ্চল এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলে তালেবান আন্দোলন সবচেয়ে ব্যাপক রূপ ধারণ করেছিল। এ ছাড়া ইউরোপ ও চীন থেকে কিছু স্বেচ্ছাসেবক সে সময় এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তালেবানরা বিভিন্ন উত্স থেকে ভারী অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ-সহযোগিতা লাভ করেছিল। পাকিস্তান সরকার বিশেষত ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স তালেবানদের সহায়তার জন্য অভিযুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের জন্য নির্মাণ করা মাদ্রাসাগুলো থেকে অনেকেই সশস্ত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিল জামিয়াত উলামা-ই-ইসলাম।
২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর ৭ অক্টোবর মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় এবং একই বছরের ডিসেম্বরে তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সে সময় তাদের নেতা মোল্লা মোহাম্মদ উমার, সিনিয়র তালেবান নেতারা, ওসামা বিন লাদেন এবং তার আল-কায়েদা সহযোগীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে।
বর্তমানে তালেবান-সমর্থকরা পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের উপজাতীয় অঞ্চলে ক্ষমতাসীন আফগান সরকার, অপারেশন এন্ডিউরিং ফ্রিডম-এ অংশগ্রহণকারী ন্যাটো সেনাবাহিনী এবং ন্যাটো পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাসিসট্যান্স ফোর্সের (আইএসএএফ) বিরুদ্ধে গেরিলা-যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
তথ্যসূত্র : এখানে।
আলোচিত ব্লগ
কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন
'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।