somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্পোরেট হেল্পাহেল্পি-১ : মোবাইল কম্পানি নিয়ে একটি গরুর রচনা

১৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কর্পোরেট সাহায্য পদ্ধতির (হেল্পাহেল্পি) দুরবস্থা নিয়ে কয়েক পর্বে আলোচনা করার আশা রাখছি। এ দফায় ইস্ট ইন্ডিয়া মোবাইল কম্পানিগুলো নিয়ে থাকলো কিঞ্চিৎ আলাপ।

উপক্রমণিকা
এমন না যে, বঙ্গদেশীয় মোবাইল কম্পানিগুলোর কাস্টমার কেয়ার সেন্টার (বা কলসেন্টার) এম্রিকা বা ইয়োরোপে। এমনও না যে, নরওয়ের কলসেন্টার থেকে জনৈক রবার্ট ক্লিপ কুষ্টিয়ার আবদুস সামাদকে মোবাইল সেবা দিচ্ছেন। খুব সম্ভব হয়তো ধোলাইখালের পাশে, হয়তো মহাখালীর দিকে দুটি রুম ভাড়া নিয়ে, হয়তো নিজেদের অফিসের হলঘরেই সেই কাস্টমার কেয়ার সেন্টার বসানো হয়েছে।

কাস্টমার কেয়ার অথবা মংলা সমুদ্রবন্দর
হয়তো ১০, বাড়িয়ে ধরলে ৫০ হাজার ইংরেজিভাষী পাবলিক মোবাইল ব্যবহার করছে 'এই ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে'। তার বিপরীতে কমপক্ষে দুই কোটি মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে, যারা বাংলাভাষী। চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়, এ দেশে মোবাইল গ্রাহকদের ৯৯ ভাগেরই মাতৃভাষা বাংলা। তারা ঘরে-বাইরে ২৪ ঘন্টা বাংলায় কথা বলে। কিন্তু ওরেব্বাপ, ভাবটা কী কাস্টমার কেয়ারের! দেখবেন, কী কাস্টমার কেয়ার, কী কলসেন্টার- সবগুলোই যেন একেকটি মংলা সমুদ্রবন্দর, যেখানে আংরেজির একেকটা জাহাজ এসে নোঙর ফেলেছে। যেন গ্রাহক আসিবামাত্রই নব্য সাহেব-সাহেবানরা আংরেজি খালাস করার জন্য প্রস্তুত। কর্পোরেট বণিকেরা বাণিজ্যের স্বার্থে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে মুটে মজুরকে তুলে আনবে, কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলার সময় আংরেজি মারাবে। নইলে যেন কর্তাদের মূত্রত্যাগে সমস্যার সৃষ্টি হবে, নইলে যেন মলত্যাগে বিঘ্ন ঘটবে সিইওদের।

শ্লার্পো!

হেল্পের হটলাইন পদ্ধতি
১২৩, ১১১ ছাড়াও আরো কী কী সব গ্রাহকসেবার হটলাইন আছে মোবাইল কম্পনিগুলোর, সেগুলোতে ফোন করলে আরেক বিপর্যয় এসে উপস্থিত হয়। দুই কোটি বাংলাভাষী মোবাইল গ্রাহকের জন্য যেসব কলসেন্টার, তারা সুন্দর বাংলা দিয়ে কথাবার্তা শুরু করতে পারে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, তারাও আংরেজি দিয়ে কথাবার্তা শুরু করবে। ভাষার কথা না হয় বাদই দিলেন, পকেট কাটার বিষয়টা তো আর ভোলা যায় না। হটলাইন সেবার নামে মোবাইল থেকে তরে তরে টাকা কেটে রাখার সব ব্যবস্থাই ফিট করে রেখেছে মোবাইল কম্পানিগুলো। আরে ভাই, তুমি কী প্যাকেজ দিবা না দিবা, টকটাইম খরচ করে আমি কেন সেটা শুনবো? আবার না শুনেও উপায় নেই। ১, ২, ৪, ৬- যা-ই চাপুন না কেন, বয়স্ক এক যান্ত্রিক নারীকন্ঠ কিছু না কিছু শুনিয়ে দেবে, যা প্রকারান্তরে ওই মোবাইল কম্পানির বিজ্ঞাপন।

'আ বিগ জিরো'
দেখা যায়, হটলাইন পদ্ধতিতে হেল্প পেতে হলে বাংলা-ইংরাজি-ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অপশন বেছে নিতে বলবে। ইতিপূর্বে অনেকে অবগত আছেন যে, এইসব ক্ষেত্রে ওই কন্ঠধারিণীর ওপরই চেপে বসার ইচ্ছা বহু কষ্টে দমন করেছি। তবে কন্ঠধারিণীর ওপর কেউ চাপতে চাইলে, তা গ্রাহকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে। এই জন্য অত্র লেখক দায়ী নয়। যা হোক, এই পর্যায়ে আপনাকে সম্ভবত ১ চাপতে হবে। তারপরের ফয়সালা হল- আপনি কি পোস্টপেইড নাকি প্রিপেইড। আমার নিজের ধারণা, পোস্টপেইড হল স্ত্রী আর প্রিপেইড হল বারবণিতা। কী একটা 'কি' চেপে সেই পাঠ শেষ করলে ঘোষিকা এবার ১০টি অপশন পড়ে শোনাবে। আবার 'কি' চাপলে আবার অপশন। আবার 'কি', আবার অপশন। অসীম ধৈর্য ধরে প্রক্রিয়াটা শেষ করার পর ফলাফল ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই 'আ বিগ জিরো'।
কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজারের সাহায্য পাওয়াও ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। প্রায়ই একটা স্বয়ংক্রিয় কণ্ঠ ভেসে আসবে। কন্ঠের মূল বাণী এইরকম- "দুঃখিত আমাদের (ক্ষুদ্র) কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সকল স্টাফ (কয়জন হবে রে?) এই মুহূর্তে ব্যস্ত (বা ছুটিতে বা ছাঁটাইয়ে) আছে। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে তেত্রিশ মিনিট ৫০ সেকেন্ড।" এই ধরনের প্রতারণার ঘটনায় একবার 'খোদা হাফেজ' উচ্চারণ করে মোবাইলটা রিস্টার্ট দিয়ে অন্য কাজে মন দেওয়াই উত্তম।

জাতীয় থাপ্পড় সপ্তাহের অপেক্ষায়
মোটের ওপর মূল কথা হল এই যে, আংরেজির জাহাজ এইসব নব্য সাহেবদের ধরে এলোপাতাড়ি চটকানো জাতীয় কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আমার ইচ্ছা আছে, এমনকি যদি কোনোদিন ‌‌"জাতীয় থাপ্পড় সপ্তাহ" পালিত হয়, তাহলে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নাম লেখাবো অবশ্যই। তারপর মোবাইল কম্পানির সার্ভিস সেন্টার ঘুরে দিবসটিকে সাফল্যমণ্ডিত করার নিয়ত আছে। "জাতীয় রুই মাছ সপ্তাহ" যেখানে এসে গেছে, থাপ্পড় সপ্তাহ আসার দেরি মনে হয় নেই।

উপসংহার
আসলে এসবও এক ধরনের অপমান, মোবাইল কম্পানিগুলো যা সচেতনভাবেই এই দেশের মানুষের সঙ্গে করে থাকে। যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক কোটির ওপরে, তারা বলুক যে ইংরেজিভাষী কয়টা লোককে তারা সার্ভিস দেয় আর বাংলাভাষী কয় কোটি লোক তাদের গ্রাহক। একটেল-বাংলালিংক-ওয়ারিদের কয়টা গ্রাহক আছে, যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি?

ভাব মারানো আর কাহাকে বলে!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৪:০৭
৪১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×