somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঁদছে অরক্ষিত সীমান্ত : সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে অবিশ্বাস

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেভাবেই হোক না কেন, যে কারণেই হোক না কেন- বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর একটি দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সেনাসদস্যদের সকলেই এই ঘটনায় চরম অপমানিত বোধ করছেন। এর মধ্যে অনেকে মনে করছেন, এক বা একাধিক মহল কৌশলে তৃতীয় শক্তির মাধ্যমে তাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছেন। তারা মনে করছেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তারসহ নানা কারণে এক বা একাধিক মহল সেনাবাহিনীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। পিলখানায় সেনাকর্মকর্তাদের ওপর নির্বিচার এ গণহত্যায় ওই মহলগুলোর ইন্ধন থাকতে পারে। ইতিমধ্যে ভারতের বিএসএফের দিকে সন্দেহের তীর উঠেছে। এমনিতে তো সাধারণভাবে ধারণা করা হয়ই যে, ভারতের প্রতি আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে সহানুভূতিশীল। সবমিলিয়ে অনেকে দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে চাইছেন।

সরকারের ওপর ক্ষোভ চার কারণে
১. ঘটনার শুরুতেই সেনাবাহিনী তাদের কর্মকর্তাদের বাঁচাতে বারবার পিলখানার ভেতরে ঢুকতে চেয়েছে। সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাসদস্যরা এখন প্রতিপক্ষকে আঘাত না করেও জিম্মিদের বের করে আনতে পারে। ফলে অনেকে যে অজুহাত দেখাতে চাইছেন, সেনারা প্রবেশ করলে সবাইকে হত্যা করা হতো। তা ঠিক নয়। এমনকি রেবও যদি সময়মতো পিলখানার ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেতো, তাহলেও বহু সেনাকর্মকর্তাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো।
২. গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বুধবার সকালে দরবার হলে বড়জোর ২০ থেকে ২৫ জন সেনাকর্মকর্তাকে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা হত্যা করে। আর বাকি সবাইকেই হত্যা করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরই। ঠান্ডা মাথার এ খুনের পর তাই বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা সংসদে ইমডেমনিটি পাশ করার দাবি জানিয়েছিল। এমনকি তারা অস্ত্রসমর্পণেও রাজি ছিল না। পরে মূলত সেনাবাহিনীর বেপরোয়া যুদ্ধপ্রস্তুতি দেখে বিদ্রোহীরা পিছু হটে।
৩. টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর খবরেই অনেকে দেখে থাকবেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও সাংসদদের তত্ত্বাবধানে আত্মসমর্পণের আগে ও পরে প্রচুর কালো কাঁচের অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাস পিলখানার ভেতরে ঢুকেছে ও বেরিয়েছে। সেনাসূত্র নিশ্চিত করছেন, এ যানগুলোতেই বিদ্রোহের মূল হোতারা নির্বিঘ্নে সরকারের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরে অবশ্য নিশ্চিতও করেছেন যে, বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা তাদের হেফাজতে আছে।
৪. অনেকেই মনে করছেন, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে বিডিআর বিদ্রোহীদের বক্তব্য জনগণের কাছে এমনভাবে পৌঁছানো হয়েছে, যাতে সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। প্রথম দুদিন সেটাই হয়েছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে জনতা উল্লাস প্রকাশ করছে- এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে।

সন্দেহের তীর তৃতীয় শক্তির দিকেই
পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতেও সামরিক বিশেষজ্ঞরা বারবারই বিদেশী শক্তির প্রতি আঙ্গুল তুলছেন। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমাণ্ডার ও সাবেক সেনাকর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী আজ এক টকশোতে বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহ ও সেনাকর্মকর্তাদের গণহত্যার কাজটি বিডিআর সদস্যদের একার কাজ হতে পারে না। মূল মদদদাতারা কৌশলে সাধারণ বিডিআরদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। প্রয়োজনীয় উস্কানি দেওয়ার কাজটি তারাই করেছে। এর সমর্থনে তিনি সেনাবাহিনীতে তার অতীত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। বিডিআরের মতো একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীতে বাইরের লোক ঢোকা কিভাবে সম্ভব- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা খুবই সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ইউনিফর্ম ও নকল পরিচয় বহন করে নবম ডিভিশনের ভেতরে এসে কেউ যদি নিজেকে অষ্টম ডিভিশনের লোক হিসেবে পরিচয় দেন, তাহলে তাকে শনাক্ত করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এভাবে সাধারণ সৈনিকদের সঙ্গে মিশে যাওয়া খুবই সম্ভব।
তিনি বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরে ছিনতাইকৃত জাপানি বিমান অবতরণের পর সশস্ত্র বাহিনীর যে আটজন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল, তাও এভাবেই হয়েছিল। বাহিনীর বাইরে থেকে লোক ঢুকে বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে চোখের পলকে সশস্ত্র বাহিনীর আট কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিল।

কাঁদছে অরক্ষিত সীমান্ত
সীমান্তের বিওপিগুলো এখন আক্ষরিক অর্থেই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এখন বিডিআরের সুবেদার মেজরদের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর একটি বাহিনী চলছে ঢিমেতালে। অবস্থা বোধহয় এমন দাঁড়িয়েছে যে, কলকাতা কি ত্রিপুরায় ভালো থাকা-খাওয়ার সুবিধা পেলে বিওপিগুলো শূন্য হয়ে যাওয়াও এখন অস্বাভাবিক নয়। এদিকে বিএসএফ গত পরশুও সীমান্তে এক বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে। যে কোনো বিচারেই জাতীয় নিরাপত্তার শেষ খুঁটি- সেনাবাহিনী ও বিডিআর। এর মধ্যে বিডিআরকে প্রায় শক্তিহীন করে দেওয়া গেছে।
সীমান্তের এই প্রহরীদের শক্তিহীন করে কার লাভ কী? তালপট্টি-মালপট্টি টাইপের ইনকিলাবীয় গৎবাঁধা প্রচারণায় সায় দেই না। বিএনপি-জামাতি কথিত বুদ্ধিজীবীদের কল্পিত ভারতীয় আধিপত্যবাদেও মন দেই না কখনোই। আমরা শুধু জানি, আমাদের বিডিআরের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বিডিআরের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া মানে সীমান্তকে অরক্ষিত করে দেওয়া। এখন আঘাতটা যখন গায়ের ওপর এসে পড়েছে, দেশের ওপরে এসে পড়েছে, তখন দেশের শত্রুদের চিহ্নিত করা আর জাতীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মাথার ওপর কলকাতা নেই, ইসলামাবাদও নেই। এই দেশটাই আমাদের সবকিছু- সুখে-শান্তিতে-বিদ্রোহে-সংগ্রামে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৩:২২
৪৮টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×