somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাগৈতিহাসিককালে পত্রিকা অফিসে কয়েকটি 'ঠেলা'র গল্প

১৬ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'ঠেলা না দিলে তো নিউজ দেন না!'
ভদ্রলোক সম্ভবত কোনো এক এনজিও থেকে এসেছিলেন। অফিসে ঢোকার মুখে কে যেন আমার দিকে ইঙ্গিত করলেন। মধ্যবয়সী ভদ্রলোক এসে হাত বাড়িয়ে দিলেন। পরিচয়পর্ব সম্পন্ন হল, অতি বিনয় দেখাতে গিয়ে নেমকার্ড বিনিময়ও হল। ভদ্রলোক একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে চান, তবে এমনি-এমনি নয়, দিতে চান হাতে-হাতে, যেন মিস না হয়। তবে তাই হোক! কম্পিউটারে কম্পোজ করা দেড় পৃষ্ঠার বিজ্ঞপ্তি নিলাম। মানিকগঞ্জ কি নারায়ণগঞ্জে তাদের প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তার শাখা কার্যালয় পরিদর্শন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি। মনে মনে বলি, কার্যালয় পরিদর্শনের আবার বিজ্ঞপ্তি কী? তাও এক মধ্যম সারির কর্মকর্তার পরিদর্শন! তবে সেটা মুখে বলার প্রশ্নই আসে না। আকার-ইঙ্গিতে তাকে বোঝাই যে, এটা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউজ! এর ফল হল বিপরীত। ভদ্রলোক প্রেস বিজ্ঞপ্তি তুলে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করলেন না, এবার হাতে ধরিয়ে দিলেন ছোট একটি অ্যালবাম। সাত-আটটি ছবি- সবগুলোই ঝাপসা। বোঝা যাচ্ছিল খুব সাধারণ ক্যামেরায় তোলা। আমি বললাম, ছবিগুলো তো ভালো হয়নি। বিজ্ঞপ্তিটিই রাখছি। ভদ্রলোক নাছোড়বান্দা- ছবি যেতেই হবে। কিছুটা তার পীড়াপিড়ি আর বাকিটা ওঠার তাড়ায় একটি ছবি রাখি শেষমেশ। ভেতরে গিয়ে যথাস্থানে যথার্থ লোকের কাছে বিজ্ঞপ্তিটি দেই। ছাপা- না ছাপা তার এখতিয়ারে।

পরদিন ফোন। পরিচয় পেয়ে বুঝলাম, ফোনের অপরপ্রান্তে গতকালের সেই ভদ্রলোক। জানলাম, ছবি তো নয়ই, বিজ্ঞপ্তিটিও ছাপা হয়নি। আমি দুঃখ প্রকাশ করি। বুঝিয়ে বলি, বিজ্ঞপ্তির দায়িত্ব যার, তাকে আমি নিজের হাতে দিয়েছি। ভদ্রলোক কিছুতেই যেন বোঝেন না। রুক্ষ্ম কন্ঠ আরো রুক্ষ্ম হতে থাকে- আমার নিউজটা দিলেন না কেন? আমি এবারও বিনয়ের সঙ্গেই বলি, নিউজ দেওয়ার দায়িত্ব আমার নয়। ভদ্রলোকের স্বর চড়া হতে থাকে- আপনাদের তো ঠেলা না দিলে নিউজ দেন না। আমি কিন্তু অনেক উপর থেকে ঠেলা দেওয়ার ক্ষমতা রাখি।

কথা শুনে অবাকই হলাম। খুব কম মানুষকেই পত্রিকা অফিসে ফোন করে এই সুরে কথা বলতে দেখি। তবু বিস্ময় গোপন করে বললাম, আপনি কতো ওপর থেকে ঠেলা দিতে পারেন? ভদ্রলোক বললেন, প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পারি। তখন বিএনপি সরকার মাত্র ক্ষমতায় গেছে। ঠেলা দেওয়ার ক্ষমতা হয়তো ভদ্রলোকের থাকতেও পারে। আমার বয়স কম তখন। মেজাজও সেরকমই। অগ্রপশ্চাৎ ভাবা হয় না। হুট করেই রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। বললাম, তাহলে আপনি ঠেলাই দেন। যতো ওপর থেকে পারেন, দেন। শুনে ভদ্রলোকের কণ্ঠও আরো চড়া হয়- আপনি কতোক্ষণ আছেন অফিসে? জানালাম, রাত নয়টা-দশটা পর্যন্ত থাকবো। ঠিক আছে বলে ঝটাং করে ফোন রেখে দিলেন।
সহকর্মী কাউকেই বলিনি কিছুক্ষণ আগের উত্তাপের কথা। সেই রাতে এগারোটা পর্যন্ত ছিলাম। ভদ্রলোক আর আসেননি।

সম্পাদকের 'জোর'
আরেক ভদ্রলোক কোন্ কুক্ষণে কাকে যেন কী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গিয়েছিলেন। যথারীতি সেটি ছাপা হয়নি। এবারও ভদ্রলোকের রোষের শিকার আমি। এর পেছনে সহকর্মীদের কারো "সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র" আছে কিনা- ভেবেছি বারদুয়েক। নইলে শ্লার আমিই কেন বারবার! অবশ্য বিড়ি টানার জন্য ঘন ঘন বাইরে যেতে হলে প্রবেশপথে আগন্তুক কর্তৃক পাকড়াও হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই।
যা হোক একথা-সেকথার পর ভদ্রলোক হঠাৎ উত্তেজিত। বললেন, আসলে ভুল আমারই হয়েছে। আমি সরাসরি সম্পাদককে বলতে পারতাম। আমি কি উনাকে বলবো এখন?
এইবার আমার মাথা ঠাণ্ডা। ঘড়িটা একঝলক দেখে তাকে পরামর্শ দেওয়ার ভঙ্গিতে বললাম, সম্পাদকের তো বের হয়ে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। আপনি এখনই ফোন না করলে হয়তো উনাকে নাও পেতে পারেন।
কী যে হল, ভদ্রলোকের মুখের ভঙ্গি আচমকা কোমল হয়ে এল। আমি বুঝলাম, তিনি লাইনে চলে এসেছেন। রাজ্যের হতাশা নিয়ে অনুযোগের সুরে বললেন, এইগুলা ঠিক না ভাই। আমি বললাম, কোনগুলা? তিনি বললেন, এই যে নিউজ দিলে নিউজ ছাপা হয় না। আমাদের অফিসে আপনাদের পত্রিকা রাখি। অথচ আমাদের নিউজ আপনারা দেন না। আমি বললাম, আপনি তো ভাই এইটা বলতে পারতেন। বেশি জরুরি হলে অনুরোধ করতে পারতেন। কিন্তু আপনি সম্পাদককে ফোন করার কথা বললেন কেন?
মনে হল, বেশ লজ্জাই পেলেন তিনি। হাসলেন, হেসে ফেলি আমিও।

উপসংহার :
যে কোনো ঝুঁকি বা সাহস দেখানোর জন্য ব্যাচেলর জীবনের চেয়ে উত্তম আর কিছু নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৩:১৪
১৯টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×