somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামকরণ আর আত্মীয়করণে উন্মাদপ্রায় এক প্রধানমন্ত্রী

১১ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে মাথায় একটি কালো স্কার্ফ উঠেছিল, মুখটা হঠাৎ করেই একটু সংযত, নিজে নিজে সনি ভায়ো নোটবুক চালু করাও কেমন করে যেন শিখে গিয়েছিলেন তিনি। ক্ষমতায় আরোহণের পর মন্ত্রিসভায় তরুণ ও নতুন মুখের প্রাধান্য দেখে আমরা মেতে উঠি তার প্রশস্তিতে । আমজনতা আশায় বুক বাঁধি- বাংলাদেশ তাহলে বদলে যাচ্ছে! কিন্তু না, শেখ হাসিনা আবার সেই পুরনো চেহারায় সগৌরবে ফিরেছেন। বিশ্বাসঘাতকতা শুরু করেছেন জনরায়ের সঙ্গে। নামকরণ আর আত্মীয়করণে এখন তিনি পাগলপ্রায়।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নামে রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা খারাপ কিছু নয়। স্বাধীনতার ঘোষক এমএ হান্নানের নামে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামকরণ হতেই পারে। একে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করাটা বিএনপির ‌'হারামি' বলেই গণ্য করি। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে কিশোরগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামের নামকরণ করাটাকেও অস্বাভাবিক মনে করি না। বরং সৈয়দ নজরুলের অবদানের তুলনায় এটা খুবই সামান্য প্রতিদান। পঞ্চগড় জেলার স্টেডিয়ামটি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেরাজুল ইসলামের নামে নামকরণ হতেই পারে। এটা তার প্রাপ্য।

নির্লজ্জতার বিএনপি স্টাইল
ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের মতোই বিএনপিও নির্লজ্জতার প্রদর্শনীই করেছে যথারীতি। ফলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল রাতারাতি হয়ে গিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়ার নামে। ফেনীর ফুলগাজি মহিলা কলেজ হয়ে গিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া মহিলা কলেজ। চন্দ্রিমা উদ্যান হয়েছে জিয়ার নামে। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনটি হয়ে গেছে শহীদ জিয়া মিলনায়তন। ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্টেডিয়ামও নিশ্চয়ই বিএনপির পাছায় জ্বালা ধরিয়েছিল, ফলে সেটি হয়ে গিয়েছিল শুধুই ফেনী জেলা স্টেডিয়াম। চামচাগুলোও বাদ যায়নি। সিলেট অডিটরিয়ামের নাম হয়েছে এম সাইফুর রহমান অডিটরিয়াম! এমনকি পুলিশের মনোগ্রামে নির্দোষ নৌকাটিও তুলে দেওয়া হয়েছিল।

পালা এবার শেখ হাসিনার
শেখ হাসিনার সরকার আগের বারের মতো এবারও নামকরণের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। গোপালগঞ্জ স্টেডিয়ামের নতুন নামকরণ হচ্ছে শেখ কামাল স্টেডিয়াম। জাতীয় যুবকেন্দ্র হতে যাচ্ছে শেখ হাসিনা জাতীয় যুবকেন্দ্র। এসটি খিজির ১, ২ ও ৩ ফেরির নাম আবার যথাক্রমে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের নামে। এসটি খিজির ৪ ফেরির নাম আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলের নামে এসটি শহীদ সুকান্ত বাবু ফেরি। কাজী মোতাহার হোসেন স্মৃতি মিলনায়তন দাঁড়াচ্ছে গোপালগঞ্জ শেখ ফজলুল হক স্মৃতি মিলনায়তনে। ভাসানী নভোথিয়েটার আবার বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের নামকরণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। বিবি আয়শা (রা.) মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমির নতুন নাম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমি। দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নামকরণ হচ্ছে শেখ রাসেলের নামে। কক্সবাজারে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের নাম বদলে হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ও বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়াম শেখ হাসিনার আত্মীয় আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নামে, খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম শেখ আবু নাছেরের নামে, ধানমণ্ডি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভ্রাতৃবধু সুলতানা কামালের নামে,

বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা কারো স্বীকার-অস্বীকারের ওপর নির্ভর করে না। তাকে কিছুতেই উপেক্ষা করা যায় না- এমনই তার অবদান। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পুরো আওয়ামী লীগই এখনো বস্তুত টিকে আছে শেখ মুজিবের ওপরই। কিন্তু এক ১৫ আগস্ট নিয়ে ত্যানা প্যাঁচানি আর কতো? ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শোকাবহ ও মর্মন্তুদ ঘটনা নিঃসন্দেহে। কিন্তু চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১১ জনকে যে পুড়িয়ে মারা হল, সেটাও কেন সমান শোকাবহ নয়? কেন তাদের নামে রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নামকরণ হবে না? নাকি বাংলাদেশ শেখ পরিবারের বন্ধকী সম্পত্তি?

অমর হওয়ার ভালো পদ্ধতি
মন্ত্রণালয়গুলো তারা নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে করে নিতে পারেন। অমর হওয়ার এটাই, আমার ধারণা, সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। যেমন শেখ কামাল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, শেখ জামাল অর্থ মন্ত্রণালয়, বেগম ফজিলাতুন্নেছা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, এমনকি শেখ হাসিনা নিজেও স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়টা নিজের নামে করে নিতে পারেন। তাছাড়া আজিমপুর গোরস্থান, মেঘনা সেতুও বোধহয় নামকরণ থেকে বাদ আছে।

যে প্রশ্নের উত্তর নেই
উত্তর পাবো না জেনেই কখনো প্রশ্ন করি না, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নির্ঘুম দিনরাত কেটেছিল যার, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের অপরাধ কী? বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ জামাল-শেখ কামালের চেয়ে কম কী কৃতিত্ব একজন তাজউদ্দিনের? এক সিলেট বিমানবন্দর ছাড়া মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে আর কোথাও দেখতে পাই না কেন? জানতে চাই না, দুঃসাহসী সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ কোথায়? প্রশ্ন তুলি না, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে কিংবদন্তী হয়ে ওঠা মেজর হায়দারের নামে কী হয়েছে এই বাংলাদেশে? মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ জগৎজ্যোতির অবদান কি এতোই নগণ্য যে, প্রথম আলোর ছুটির দিনে আর সামহোয়্যারইনের স্টিকি পোস্টেই কেবল ঠাঁই হয় অসমসাহসী এই গেরিলার?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৩:১২
৭৪টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×