সন্ধ্যা নামলেই পাড়ার মোড়ে মোড়ে জেনারেটরের আকাশকাঁপানো চিৎকার বলে দেয়, কী দুর্ভোগের দিনরাত আমরা পার করছি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলী খান বলেছেন, গণতন্ত্রের চেয়েও বিদ্যুৎ জরুরি। আমি বলি, বিদ্যুতের কাছে আর সবকিছুই তুচ্ছাতিতুচ্ছ। প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় কিংবা দুর্যোগেও আসলে দেশের সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হয় না, কিন্তু বিদ্যুৎহীনতায় দেশের প্রতিটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটাই হচ্ছে। ছোট থেকে বড়ো ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী থেকে চাকরিজীবী, গৃহিণী থেকে মুটে-মজুর- সবারই পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। এতো আশা-প্রত্যাশা নিয়ে যে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে, সেই মানুষই এখন হতাশ, ক্ষুব্ধ। অথচ সরকারের কাছে কোনো সমাধানই যেন নেই। তাদের এমনকি কোনো প্রস্তুতিও নেই। কয়েকদিন আগেও চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ২০-৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। যে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ লোক খেতে পায় না, সেখানে এইসব বিলাসী দিবস পালন না করলে কী হয়?
টাকার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না- তাও নয়। টাকার অভাব তো অন্তত এই সরকারের নেই। রাজস্ব বোর্ড সময়ে-অসময়ে কুত্তাপাগল হয়ে মানুষের ঘরে ঘরে হানা দিয়ে ভ্যাট আর কর হাতিয়ে নিচ্ছে। যোগাযোগমন্ত্রী যখন সেই অর্থে নিজের জন্য কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি পছন্দ করেন, তখন অন্তত বুঝতে অসুবিধা হয় না, বাংলাদেশে টাকার অভাব খুব বেশি নেই। যদি টাকার অভাব থাকেও, উপজেলা চেয়ারম্যান আর মন্ত্রীদের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে পাজেরোর বহর কিভাবে কেনা হচ্ছে? মন্ত্রীর দফতর সাজাতে কিভাবে এক-দেড় কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে? রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আর প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক যে বিদেশে গেলেন চিকিৎসা নিতে, তাতে কি কমপক্ষে অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হয়নি রাষ্ট্রের? সুতরাং টাকার অভাব বোধকরি তেমন নয়, বরং অভাবটা হল সৎ ইচ্ছার। সরকারের সৎ ইচ্ছা নেই বলে, সরকার অতীতচারণায় ব্যস্ত বলে, সরকার মানুষকে মানুষ গণ্য করে না বলেই বিদ্যুৎ নিয়ে সামনে কোনোই সুসংবাদ নেই। আমার তো মনে হয়, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান আসলে কখনোই হবে না। আগামী চার-পাঁচ বছর পর যদি নতুন কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুও করা হয়, তাতেও কিছুই হবে না। সেই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে আরো মানুষ বাড়বে, চাহিদাও বাড়বে।
কৃষ্ণগহবরের কসম, এই বাংলাদেশের সামনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাই না। সূর্যটা ডুবে গেলে এই বাংলাদেশ এক অন্ধকার গ্রহ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের যা কিছু ঋণ, তা ওই সূর্যের কাছেই!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:৫৯