somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগে সাহায্যের আবেদন আর নয়, বরং দুঃস্থ মানুষ আত্মহত্যা করুক

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকেই জানেন, প্রথম আলো তার সূচনাকালেই পত্রিকার মূল কাজের বাইরে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। সেই শুরু থেকে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, হররোজ গোলটেবিল বৈঠক, এসিডদগ্ধদের সাহায্যার্থে তহবিল গঠন, সিপিডির সঙ্গে দেশব্যাপী যৌথ সংলাপ- আরো কতো কী! মোটামুটি সবই সাড়া জাগিয়েছিল দেশজুড়ে। তবে সবাই যে এসব ভালোভাবে নিয়েছিল, তা নয়। স্বয়ং পত্রিকার ভেতরেই, মনে পড়ে, ভেতরবাড়ির এক বৈঠকে প্রবীণ একজন সাংবাদিক বলেছিলেন, ‌‌'মতি ভাই, আমি আশঙ্কা করছি, প্রথম আলো ধীরে ধীরে মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যূত হয়ে পড়ছে।' তার কণ্ঠে ছিল শঙ্কা, ‌'পত্রিকাবহির্ভূত কাজকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে আমরা কি আমাদের মূল লক্ষ্যকেই বিসর্জন দিচ্ছি কিনা তা ভাবতে বলি।' প্রবীণ সাংবাদিকের আশঙ্কা সত্যি হয়নি, মতি ভাই সফল হয়েছিলেন। তবে এর বিপরীত উদাহরণও আছে। তেজগাঁর ভেতরদিকে যায়যায়দিন মিডিয়াপ্লেক্স তার সাক্ষী। সংবাদপত্রবহির্ভূত কাজকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে (অন্য কারণও আছে অবশ্য) মুখ থুবড়ে পড়েছিল শফিক রেহমানের স্বপ্নের যায়যায়দিন। সম্ভবত বাংলা ব্লগেরও হয়েছে সেই দশা।

ব্লগ মূলত মতবিনিময় ও ভাববিনিময়ের জায়গা। লেখালেখি হবে, আলোচনা হবে, প্রতি-আলোচনা হবে- এটুকুই। কিন্তু আমরা দেখছি, ব্লগিংয়ের বাইরের ব্যাপারগুলোই এখানে মূখ্য হয়ে উঠছে। বিশেষ করে সামহোয়্যারইন ব্লগের প্রথম পৃষ্ঠা খোলার আগেই আতঙ্কে থাকি- কার না কার সাহায্যের আবেদন স্টিকি হয়ে লটকে আছে ব্লগের শীর্ষদেশে। উঠতে সাহায্য, বসতে সাহায্য, ডানে সাহায্য, বাঁয়ে সাহায্য। কী সকাল, কী দুপুর কিংবা রাতে ব্লগ খুললেই উদ্ভাবনের খবর নয়, সুসংবাদ নয়, আর এমনকি দুঃসংবাদও নয়- ঘুরেফিরে আছে সেই এক সাহায্যের আবেদন- ভিক্ষা চাই মাগো। কেবলই হা হুতাশ আর তথাকথিত মানবতার কান্নাকাটি। ব্লগ কি ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম? দুনিয়ার কোনো কমিউনিটি ব্লগে এই জিনিস নেই। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। বিগআড্ডাতে দেখিনি তো কোনোদিন সাহায্যের কোনো আবেদন-নিবেদন? এমন তো না যে, কেরালা কি দমদমে চিকিৎসার অভাবে মরছে না মানুষ। কিন্তু বাঙালি হল আবেদনপ্রিয় জাতি। তারা আবেদনে আবেদনে জীবন ক্ষয়ে ফেলে। সবচেয়ে বড়ো কথা, এইসব ভিক্ষাবৃত্তি দেখে দেখে মনটাই ছোট হয়ে থাকে। সাহায্যের এইসব আবেদন, তহবিল-তহবিল খেলা একদিক থেকে উপহাসও। আপনার-আপনাদের টাকা আছে, আপনারা পারেন সাহায্য সাহায্য খেলা খেলতে। আমি ছাত্র, আমি সেটা পারি না। আমি ছাপোষা মধ্যবিত্ত, আমার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। আমি স্বল্প আয়ের মানুষ, সাহায্য সাহায্য খেলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের এই অক্ষমতাকে উপহাস করার জন্যই যেন দুদিন পরপরই সাহায্যের আবেদন শোভা পায় ব্লগের শীর্ষভাগ আর ডানকোণার প্যানেলে। মানবতার এই চর্চা শেষপর্যন্ত মানুষকে ভিক্ষুকই করে তোলে এবং এইসব উদ্যোগ বরং সরকারের দায়িত্বকে হালকা করে দেয়।

দেখেছি, সাহায্যের আবেদনের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস হল দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধার জন্য সাহায্যের আবেদন। মুক্তিযোদ্ধারা এখন হয়ে উঠেছেন দারিদ্রের প্রতীক। কারো কিডনি নষ্ট, কেউ দিন কাটাচ্ছেন অনাহারে, কেউবা মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট গলায় ঝুলিয়ে দরজায় দরজায় হাত পাতছেন। শেখ হাসিনা জনগণের টাকা উড়িয়ে পুত্রকন্যাকে দেখতে না গেলেও কয়েকশো মুক্তিযোদ্ধা সচ্ছল হয়ে উঠতে পারেন। তারেক-কোকোর পাচার করা টাকা ঠিকমতো ফিরিয়ে আনা গেলে কোনো মুক্তিযোদ্ধাই আর অসচ্ছল থাকেন না, বিনা চিকিৎসায় অনেক নাগরিককে মরতে হয় না। সংসদে বেয়াই-বেয়াইনের আলাপে প্রতি মিনিটেই হাজার হাজার টাকা অপচয় হচ্ছে। আমাদের মন্ত্রী-আমলারা অর্থহীন বিদেশ সফরে যাচ্ছেন কোটি কোটি টাকা উড়িয়ে। কিন্তু সরকার, জীবনবাজি রেখে যারা স্বাধীনতা এনেছেন, সেই দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব নেবে না, তার নাগরিকের চিকিৎসার ভার নেবে না। আর সরকারের এই ভার, এই দায়িত্বকে হালকা করে আসছে দানবাক্সওয়ালারা। একইসঙ্গে তারা সরকারকে দায়িত্বহীনও করে তুলছে। টিনের দানবাক্স নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার জন্য, এমনকি যে কোনো মানুষের জন্য মার্কেটের সামনে দাঁড়ানোর চেয়ে লজ্জা আর কিছুই হতে পারে না। আমি বলি, দানবাক্স নিয়ে বেরুনোর আগেই বরং মুক্তিযোদ্ধারা আত্মহত্যা করুক, দুঃস্থ নাগরিকরা আত্মাহুতি দিক।

ব্লগের তহবিলবাদী ভাই-বোনেরা, সরকারকে দয়া করে বলুন তার দুঃস্থ নাগরিকের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে, সরকারকে চাপ দিন, সরকারকে বাধ্য করুন। দানবাক্স খুলে, ভিক্ষা চেয়ে চেয়ে, তহবিল-তহবিল খেলা খেলে সরকারের দায়িত্বকে হালকা করবেন না। এইসব ফকিন্নিসুলভ মনোবৃত্তি আমার মনে হয়, বাদ দেওয়া উচিত যথাদ্রুত- ব্লগে কিংবা বাইরে। বলাবাহূল্য, নিজে ফকির, কিন্তু ফকিন্নির স্বভাব ভালো লাগে না!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:৫০
২৭টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×