somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীতসন্ধ্যায় পল্টন থানায় এক বিরল প্রতিভার মুখোমুখি

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিস থেকে বেরুবো বেরুবো ভাবছি। তখনই আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ফোন। পল্টন থানায় তার কী যেন কাজ। সঙ্গে যাওয়ার কাতর অনুরোধ করেই ক্ষান্ত নয় বন্ধু, আধঘন্টার মাথায় গাড়িসমেত এসে হাজির, আমার অফিসের নিচে। অগত্যা যেতেই হল। থানা, সেটা যেখানেই অবস্থিত হোক না কেন, যাওয়াটা খুব সুখকর কাজ নয়। এমনিতে অনিয়মিত পর্যটক হয়েও বলে দিতে পারি, ঢাকার থানাগুলোর চেহারা খানিকটা বদলেছে, তবে খুব নজর কাড়ার মতো নয়। প্রত্যাশিত শ্রী খুঁজে পেলাম না যথারীতি পল্টনেও। যাওয়া ঢাকার ব্লগার মাত্রেই জানেন, রাজধানীর সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ থানাগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে এই পল্টন থানা।

বন্ধুর উদ্দেশ্য তার পুরনো মামলা হলেও আমার কৌতূহল ছিল অন্যত্র। এর আগে শুনেছিলাম, ঢাকার ৪০টি থানায় পুলিশের কাজ পর্যবেক্ষণের জন্য ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্তব্যরত কর্মকতাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার কক্ষ তো বটেই, এমনকি থানায় ঢোকার পথেও সেই ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে জানি। কথা ছিল, থানাগুলো থেকে ধারণ করা চিত্র ডিএমপি কমিশনার স্বয়ং দেখবেন। কিন্তু আস্ত ক্যামেরা-ট্যামেরা দূরের কথা, পল্টন থানায় সেরকম কিছুর লক্ষণই খুঁজে পেলাম না। শুনেছি, এর আগে দুয়েকটি থানায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই সেগুলোতে নাকি অনিবার্যভাবে 'যান্ত্রিক ত্রুটি' দেখা দিয়েছে। এ দিকটা ভেবে ক্যামেরা সংক্রান্ত যাবতীয় জিজ্ঞাসা মনেই চাপা দিয়ে রাখলাম। কাউকে জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিতে বা নিজে লজ্জা পেতেও ইচ্ছে হল না খুব একটা।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাকি বিস্তর ব্যস্ত। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। সেই ব্যস্ততার তোড়ে তার সহকারী নেইমকার্ড নিয়ে যেতে পর্যন্ত রাজি হল না। অগত্যা থানার ভেতরে একজন উপ-পরিদর্শকের সঙ্গে আলাপ জমানোর চেষ্টা চলল। আলাপ বলা ঠিক হবে না, মারেফতি লাইনের 'এই দেশের কী হবে গো' গোছের আর্তি কিংবা আর্তনাদই মিনিটদশেক ধরে অনুরণিত হল। এই করে করে যখন বিরক্তির প্রায় শেষ সীমায়, তখনই আশার প্রদীপ যেন দপ করে জ্বলে উঠল। টেবিলের ওপাশে হাতকড়া পরা এক লোক। হাত তুলে থানার সেই উপ-পরিদর্শক বৃত্তান্ত পেশ করলেন গর্বিত ভঙ্গিতে। এক লাখ টাকার চেক ঘষেমেজে এক কোটি টাকা করার মামলা!

ঘটনা তিন বছর আগের। কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের বিল বাবদ ১ লাখ টাকার একটি চেক নেন ছাপাখানা ব্যবসায়ী মাইনুদ্দিন আহমেদ। কর্মক্ষেত্র ছাপাখানা হলেও প্রতিভায় তিনি অসামান্য। সামান্য ঘষেমেজে দুটি শূন্য বাড়িয়ে ১ লাখ টাকার চেকটিকে তিনি মাত্র ১ কোটি টাকায় রূপান্তর করেন। তবে বেচারার দুর্ভাগ্য। চেকটি ব্যাংকে জমা দিতে গেলে ব্যাংক কর্মকর্তারা সন্দেহ করে বসেন। প্রতিভার চ্ছটা দেখিয়ে ব্যাংক থেকে তিনি বেরিয়ে আসেন বটে, তবে মামলা থেকে বেরুনোর সৌভাগ্য তার হয়নি। গত সোমবার পল্টন থানার পুলিশ অবশেষে তাকে প্রগতি সরণী থেকে গ্রেপ্তার করে।

দেহের ঘাম শুকানোর আগেই যেমন মজুরী প্রদান আবশ্যক, তেমনি এই ধরনের বিরল প্রতিভাকে তৎক্ষণাৎ স্বীকৃতি দেওয়াও প্রায় ফরজের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আসলেই প্রতিভার ছড়াছড়ি। বাব্বাহ্!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৩:৫২
৩০টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×