somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন যাক দু একটা, তবু রুখে দিন নামকরণের জন্য মরিয়া এই ম্যানিয়াকদের

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুলে ভাষণ দিতে গিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী গতকালও সেই একই শিবের গীত গাইলেন এই বলে- 'একটি কুচক্রী মহল বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করতে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ও মহাজোট সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন থামিয়ে দিতে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।'

সেই একই রেকর্ড...
শুনে আসছি গত দু বছর ধরে। সরকার, বলা ভালো আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কেউ অবস্থান নিলেই 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতেই' কিংবা 'ধারাবাহিক উন্নয়ন থামিয়ে দিতেই এই অপচেষ্টা' বলে হুঙ্কার ছাড়েন সরকারের প্রধান থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও। প্রতিমন্ত্রীর দেখছি অতো সাহস নেই। আড়িয়ল বিলের দিকে যেতে পারছেন না। উস্কানিমূলক বক্তব্য-টক্তব্য দিয়ে ঘুরে আসছেন আশেপাশের এলাকা থেকে। তার আগেই আড়িয়ল বিলে মানুষের পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে। নারীরা ঝাড়ু নিয়ে তৈরি, তরুণদের মাথায় কাফনের কাপড় আর হাতে লাঠি, এমনকি যে বৃদ্ধার চলার শক্তিও নেই তিনিও দা হাতে পাহারা দিচ্ছেন নিজেদের ভূমিটুকু। এদের কারোরই রাজনৈতিক পরিচয় নেই, বেশিরভাগই নির্দলীয়। এই লোকগুলোর সামনে দাঁড়ানোর সাহস নেই সরকারের। তারা পারছে শুধু নিরীহ মানুষগুলোর ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিতে, নিরীহ মানুষগুলোকে মামলার পর মামলা দিয়ে হয়রানি করতে। সবমিলিয়ে সরকারের অবস্থান জনতার বিপক্ষে, জনমতের বিরুদ্ধে। আচরণ পুরো মাফিয়ার মতো।

অথচ ভালো যুক্তি নেই একটিও
দেখবেন, বিমানবন্দর স্থাপনের পক্ষে সরকারের হাতে ভালো যুক্তিও নেই। বিমানসচিব যুক্তি দেখিয়েছেন, ঢাকায় যেহেতু একটিমাত্র রানওয়ে, ফলে কোনো বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে। আর 'সমস্যা' হবে বলে ঢাকা বিমানবন্দরের পাশেই দ্বিতীয় আরেকটি রানওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ না নিয়ে ২৫ হাজার একর ভূমি নষ্ট করে ১০ লাখ মানুষকে কর্মহীন করে দিয়ে আরেকটি বিমানবন্দর বানাতে হবে, তাও ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে? এমন তো নয় যে, ঢাকা বিমানবন্দরের পাশে জায়গা নেই। জায়গা যথেষ্টই আছে, নইলে পাশের ১৩০ একর জমি শ্রেফ লুটেপুটে খাওয়ার জন্য কিভাবে তুলে দেওয়া হল নামসর্বস্ব এক প্রতিষ্ঠানের কাছে? আর রানওয়ের অজুহাত যদি জীবিত রাখাও হয়, তাহলে উদাহরণ হিসেবে জানানো যায়, জাপানের নারিতা বিমানবন্দরেও রানওয়ে একটি। নারিতার তুলনায় ঢাকা বিমানবন্দর নিতান্তই মফস্বলস্থানীয়। ফলে বোঝা যায়, এটা কোনো ভালো কাজ নয়, বরং জনগণের অর্থের অপব্যবহার। এদিকে আমরা দেখছি, বিমানবন্দরই শুধু নয় নিরীহ কৃষককে আরো বিপদে ফেলে বিশাল 'বঙ্গবন্ধু সিটি' করারও উদ্যোগ আছে সরকারের।

যেখানে মানুষের চেয়ে পরিবার বড়ো
আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর স্থাপনের এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক একটি ইচ্ছা - তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। শুধু পিতার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য শেখ হাসিনা ও তার সরকার কয়েক শত বছরের ঐতিহ্যবাহী জলাশয় ও আড়িয়ল বিলকে বিপন্ন করতে চাইছে। বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর আর বঙ্গবন্ধু সিটি যদি বাস্তবায়িত হয়েই যায়, হাজার হাজার মানুষ যে নিজেদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের শিকার হবে তা শুধু নয়, ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জ জেলার তিন উপজেলায় বিস্তৃত মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় জলাধারটির প্রায় পুরোটা শেষ হয়ে যাবে। ঢাকার আশপাশে বন্যার প্রকোপও আরো বাড়বে। সরকার সেসব নিয়ে ভাবছে না।
শীতটা কেটে গেলেই আবার নামবে ভ্যাপসা গরম। বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদা। উৎপাদন যেহেতু মোট চাহিদার ভগ্নাংশের সমপরিমাণ, সুতরাং জনজীবনে শীঘ্রই নেমে আসবে সেই পুরনো হাহাকার। সরকারের নজর সেদিকে নেই। বিদ্যুতের টাওয়ারের নাম তো আর বঙ্গবন্ধুর নামে করা যায় না, শোভনও নয়! সুতরাং বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, বানাও বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর, বানাও ফজিলাতুন্নেসা নৌবন্দর...

জনতার বিপক্ষে জনমতের বিরুদ্ধে
বঙ্গবন্ধুকে আমরা শ্রদ্ধা করি, বাংলাদেশের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়ের নায়ক ছিলেন তিনি। কিন্তু গরিব মানুষের ভিটেবাড়ি কেড়ে নিয়ে যে বঙ্গবন্ধুর 'নাম প্রতিষ্ঠা'র উদ্যোগ নিতে হয়, সেই বঙ্গবন্ধুকে আমরা চিনি না, সেই বঙ্গবন্ধু আমাদের লোক নন! যে সরকার জনতার বিপক্ষে জনমতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, সেই সরকারও আমাদের নয়।

জীবন যায়, যাক দু একটা, তবু রুখে দিন নামকরণের জন্য মরিয়া এই ম্যানিয়াকদের।
৪২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×