somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

না হাসিনা, স্বয়ং আপনার নেতৃত্বে এটা রাষ্ট্রীয় মাস্তানিই!

০৮ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকে নিয়ে শেখ হাসিনা যখন প্রসন্ন মনে ঘুরছিলেন বইমেলায়, তার কয়েক দিন আগে হাস্যকর সব মামলায় জামিন নিতে দৌড়াচ্ছিলেন ঘরের নোবেলজয়ী ইউনূস। হাসিনার হাসিমুখ দেখে মনে হচ্ছিল, ঘরের লোককে হেনস্তা করায় এতো সুখ!

ইউনূসের ওপর হাসিনার রোষ
২০০৬ সালে নোবেল জয়ের পর থেকেই শেখ হাসিনা কেন যেন রুষ্ট হয়ে পড়েন ড. ইউনূসের ওপর। কথামালায় তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল, তবে অতোটা নয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর ক্ষমতায় এসে হাসিনার মুখের ভাষা একটু একটু করে বিষ ছড়াতে থাকে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় ইউনূস একটি দল গঠনের চেষ্টা করেছিলেন, সেটা হয়তো একটি কারণ, তবে মূল কারণ নয়। যদি মূল কারণই হতো, তাহলে ফেরদৌস কোরেশীর এতোদিনে মৃত্যুদণ্ড হওয়ার কথা! নরওয়ে টেলিভিশনে গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল স্থানান্তর-সংক্রান্ত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচার হওয়ার পর হাসিনা ভদ্রতার মুখোশটা ফেলে স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হলেন। প্রধানমন্ত্রীই শুধু নন, তার অমাত্যবর্গও অশ্লীল অশোভন বাক্যবাণে বিদ্ধ করে চলছিলেন ইউনূসকে। ওই যে চাঁদাবাজ ছাত্রলীগ, এমনকি তারাও একপর্যায়ে মামার বাড়ির আবদার জানিয়ে বসল যে, ইউনূসের নোবেল পদক কেড়ে নিতে হবে। মাহবুবুল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল মুখপাত্র, ইউনূসের বুড়ো আঙ্গুলের নখের যোগ্যতা যার নেই এবং হবেও না এই জীবনে, সেই তিনিও ইউনূসের নামে প্রকাশ-অযোগ্য সব বক্তব্য দিতে লাগলেন। একসময় দেখা গেল, ইউনূসের পক্ষে নরওয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক বিবৃতির পরও সরকার ইউনূসের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে ফেলল। সেটা চলতে চলতেই ইউনূসকে জড়ানো হল একের পর এক হাস্যকর মামলায়, তাও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

আসলে কারণটা কী?
সর্বশেষ ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়া হল তার নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক থেকে। এমন অবস্থায় হঠাৎ দৃশ্যপটে নাজিল হলেন হাসিনা-পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। দেশ, দেশের ভাষা, সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই লোকের যোগাযোগ ক্ষীণ বললেই চলে। ইউনূসকে নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা তো তার নেই-ই। অথচ এই লোকটিই ইউনূসের কুৎসা গেয়ে দেশে-বিদেশে গণহারে ইমেইল বার্তা পাঠিয়ে চলেছে। জানতে ইচ্ছে করে, জয় এই সরকারের কোন্ পদে আছেন, ইউনূস বিষয়ে জনে জনে ইমেইল করে বেড়ানোর তিনিই বা কে? দৃশ্যত, এক ইউনূসকে হেনস্থা করার জন্য সরকার তার পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। আজ মঙ্গলবার দেখেছি, 'সম্ভাব্য গোলযোগ' দমনের নামে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখাগুলোর দখল নেওয়ার জন্য পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, ইউনূস নোবেল জিতেছিলেন বলেই তার ওপর যতো আক্রোশ হাসিনার। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির জন্য শেখ হাসিনা নিজে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার জন্য ব্যয়বহুল করে যাচ্ছিলেন অনেকদিন ধরেই - এই খবর খুব গোপন থাকেনি। অপ্রাপ্তবয়স্কেরও বুঝতে বাকি নেই, ইউনূসকে হেনস্তা করাটা হাসিনার ব্যক্তিগত আক্রোশ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটাও একবিন্দু মিথ্যা নয় যে, সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তার বিচারে শেখ মুজিবুর রহমানের চেয়ে অনেকগুণ এগিয়ে আছেন ইউনূস। এটাও কি অন্যতম একটি কারণ? কানাডা প্রবাসী এক বাংলাদেশী সেদিন বলছিলেন, ৯০ ভাগ কানাডিয়ান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নামও জানেন না, কিন্তু ড. ইউনূসের নাম তারা জানেন।

সরকারবান্ধব আদালত?
সরকার আইনের দোহাই দিয়ে ইউনূসকে সরিয়েছে, ইউনূসও সেই আইনের কাছেই তার বিচার চাইতে গিয়েছিলেন। টানা তিন দিন আদালতের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে ইউনূসের আইনজীবীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, ন্যায়বিচার তারা পাবেন না। ইউনূসের আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, যিনি নিজেই আওয়ামী লীগ ঘরানার, সেই তিনিই ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন গত সোমবার। আদালত টানা তিনদিন ধরে বিষয়টির ওপর শুনানি গ্রহণ করেছেন। অথচ কোনো রুল দেননি। দেশের সেরা আইনজীবীরা বলছেন, একটি রিটের ওপর এতো দীর্ঘ শুনানি গ্রহণ নজিরবিহীন। হাইকোর্টে সেই নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটেছে। আইনজীবীদের আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অপসারণের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা দুটি রিট খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ইউনূসের আইনজীবী সারা হোসেন বলেছেন, 'আজ বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি দুঃখের দিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অবৈধ নোটিশকে আদালত আজ বৈধতা দিলো। গত কয়েকদিন শুনানির সময় আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম, আজ রিট খারিজের মধ্য দিয়ে তা সত্যি প্রমাণিত হলো।' শেখ হাসিনা ও তার পারিষদ যখন নিজেই ড. ইউনূসের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন, তখন আদালতের কি বিপক্ষে যাওয়ার শক্তি কিংবা সাহস আছে? বিচার বিভাগ যদিও 'স্বাধীন', তবু সচরাচর সরকারকে তারা চটায় না। বিচার বিভাগ আলাদা হওয়ার পর এমন একটি উদাহরণও আমি খুঁজে পাচ্ছি না, যেখানে আদালত সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। হতে পারে, উদাহরণ খুঁজে না পাওয়াটা আমার নিজেরই অক্ষমতা।

আওয়ামীকরণ প্রকল্প
গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা আছে, অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো ভিত্তিহীনও নয়। তবু মনে রাখতে হবে, অনেক ত্রুটি-বিচ্যূতি সত্ত্বেও দারিদ্র বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের অবদান অসামান্য - সেটা শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও। বিশ্বের কোটি কোটি লোক এই গ্রামীণ ব্যাংক ও ইউনূসের মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের এই ক্ষুদ্র দেশটাকে চিনেছে। গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের অংশীদারিত্ব আছে বটে, তবে ব্যাংকটা একান্তই ইউনূসের ব্রেইন চাইল্ড, তার সারাজীবনের স্বপ্ন। সুতরাং গ্রামীণ ব্যাংকে ইউনূসের থাকা-না থাকা হেলাফেলার কোনো বিষয় নয়। ইউনূসের মতো লোকের জন্য বয়স কোনো অজুহাত হতে পারে না। সরকার নিজেদের ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থেও প্রচলিত বহু আইন সংশোধন করেছে ইতিপূর্বে, এই জায়গায় আইনও সম্ভবত সংশোধন করার প্রয়োজন পড়বে না, শুধু একটি আদেশই যথেষ্ট। সেটাও যদি সরকারের জন্য কষ্টকর হয়, তারা একজন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলবিজয়ীকে সম্মানজনকভাবে বিদায় দিতে পারতো। কারণ এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি যেমন, তেমনি গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত কয়েক কোটি মানুষের স্বার্থও জড়িত। এই ঘটনায় আমরা দেখলাম সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি বেশিরভাগ আওয়ামী সমর্থকও সরকারের পক্ষে নেই। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা ইতিমধ্যে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, সেটা অভূতপূর্ব। তবু লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে, গ্রামীণ ব্যাংককে পুরো আওয়ামীকরণ না করে এই সরকার থামবে না।

শেষপর্যন্ত এটা রাষ্ট্রীয় মাস্তানিই...
এই পোড়ার দেশে কৃতীর সম্মান নেই - এটা ঐতিহ্যবাহী প্রথা। নতুন করে সেটা আরো একবার জানা হল কেবল। এক ইউনূসকে সরানোর জন্য সরকার আইনের দোহাই দিচ্ছে, কুৎসা গেয়ে বেড়াচ্ছে দেশজুড়ে, কিন্তু না হাসিনা, আপনার নেতৃত্বে এটা রাষ্ট্রীয় মাস্তানিই এবং নিশ্চিতভাবেই আপনার ব্যক্তিগত আক্রোশ। অতিঅবশ্যই এটা আমরা মানছি না। আপনি জানেন, মনের ওপর আওয়ামী মাস্তানি অকার্যকর।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:০৩
১০২টি মন্তব্য ৭০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×