সামান্য কজন লোক সবার চোখের সামনে শেয়ারবাজার থেকে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সর্বস্ব ছিনিয়ে নিল, সরকার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। ৩০ লাখ বিনিয়োগকারীর অনেকে হয়েছে পথের ভিখারী, মানসিক বৈকল্যের শিকার হওয়া অনেকে হয়তো সারাজীবনেও আর সুস্থ হবেন না, কান পাতলে অনেক ঘরে এখনো কান্নার শব্দ শোনা যায়। সরকার বাধ্য হয়ে একটি তদন্ত কমিটি করল। ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে সেই তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রতিবেদনও দিল। এরপরই শুরু হল সরকারের অবিশ্বাস্য লুকোচুরি। অর্থমন্ত্রী প্রথমে বললেন তদন্ত প্রতিবেদন থেকে কিছু নাম 'ডিলিট' করতে হবে। পরে সেখান থেকে সরে এসে বললেন, কিছু বিষয় পুনঃতদন্ত করতে হবে। এরপর চাপ বাড়তে থাকলে দোহাই দিলেন মুদ্রণকাজে দেরি হওয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তারও পরে আবার নতুন অজুহাত দেখালেন, এসইসি আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত লাগবে। আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ যে এসইসির বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর সব অভিযোগ আছে ইব্রাহিম খালেদের রিপোর্টে, সেই এসইসির টাউট কর্মকর্তাদেরও মতামত দরকার আমাদের অর্থমন্ত্রীর!
ডাকাত বাঁচাতে সরকারের অবিশ্বাস্য লুকোচুরি
তদন্ত প্রতিবেদনে শেয়ার ডাকাত হিসেবে যদি শুধু বিএনপির মোসাদ্দেক আলী ফালু কিংবা লুৎফর রহমান বাদলের নাম আসতো, তাহলে আমি নিশ্চিত শেয়ারবাজার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দ্রুততার সঙ্গে প্রকাশ করা হতো, ঢাকঢোল পিটিয়েই। কিন্তু সেখানে সবার আগে জ্বলজ্বল করছে একটি নাম - সালমান এফ রহমান, যিনি একইসঙ্গে শেখ হাসিনা এবং তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। এই বিশেষ কয়েকজন লোককে বাঁচাতে সরকার এখন ৩০ লাখ বিনিয়োগকারী তো বটেই, বলা ভালো জনগণের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে। ওই লোকগুলো কি দেশের চেয়ে বড়ো, দেশের মানুষের চেয়েও বড়ো? একটি প্রতারক প্রতিষ্ঠান বিডিথাই অ্যালুমিনিয়াম তদন্ত কমিটির প্রধানের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করতে পারে? একজন শেয়ার-ডাকাত রকিবুর রহমান কী ভয়ানক স্পর্ধায় হুমকি দিয়ে যেতে পারেন 'এবার খেলা আমিই জমাব!' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত ছিল প্রথমেই তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। এই লোক '৯৬ সালের কুখ্যাত শেয়ারবাজার ধ্বসেরও অন্যতম হোতা। কিন্তু কোথায় কী! গতকাল সালমান উল্টো হুঙ্কার ছাড়লেন, তার সম্পদের তথ্য কোনোভাবেই প্রকাশ করা যাবে না। করা হলে তিনি মামলা করবেন। সরকার শুধু সালমান এফ রহমানকেই নয়, দুর্নীতিগ্রস্থ এসইসিকেও বাঁচাতে চাইছে একইসঙ্গে। আবার সুযোগ থাকলেও ফালু-বাদল-রকিবুর-নূর আলীদেরও আটকানো যাচ্ছে না, কারণ ওরা সালমানেরই একান্ত সহযোগী। আর এদিকে ইব্রাহিম খালেদকে প্রতারক চক্রটি নানা দিক থেকে একের পর এক আক্রমণ করে যাচ্ছে। আমার ধারণা, এর পেছনেও সরকারের পরোক্ষ মদদ আছে।
জুজুর ভয় দেখিয়ে কতো আর!
অর্থমন্ত্রীকে আমি দোষ দেই না। এই দেশে পদত্যাগ করাকে ভালো চোখে দেখা হয় না পশ্চিমের মতো। অতীতে যতো খারাপ কাজই করুন না কেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল যখন দলে গণতন্ত্রায়নের কথা সাহস করে বললেন, তখন তাকে অভিনন্দন তো দূরের, খোদ বিএনপিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে তাকে ধুইয়ে দিল। অথচ মার্কিন মুল্লুকে আমরা দেখি, কী অবলীলায় ডেমোক্র্যাট দলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে দ্বিধায় ভোগেন না সিনেটররাই। সেজন্য কেউ তাদের দুয়ো দেয় না। আমাদের দেশে এই সংস্কৃতি নেই। কাজেই পদত্যাগ না করায় দোষ দেখি না অর্থমন্ত্রীর। তিনি চলেন ওপরের নির্দেশে। এই ওপরমহল থেকে এখন এমনও বলা হচ্ছে যে, শেয়ারবাজারের তদন্ত রিপোর্ট নাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রস্থ করবে। আওয়ামী লীগ এই এক জুজুর ভয় দেখিয়ে আসছে ক্ষমতায় আরোহণের শুরু থেকেই। কিন্তু কতো আর! সবকিছুতেই যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্থ হয়, তাহলে মানুষের হাঁটাচলা, যানচলাচল - সবকিছুই বন্ধ করে দিন!
জনতার বিচার সামনে
যদিও বলা হয়ে থাকে, জনগণই যদিও সকল ক্ষমতার উৎস, তবে বাংলাদেশে দু পেয়ে মানুষের চেয়ে তুচ্ছ আর কিছু নেই। তবু জানেন আশা করি, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জনতার বিচার একটু ভয়াবহই হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আর খুব বেশি হলে দু বছর!
সংযুক্তি
শেয়ারবাজারের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জনতার বিচার ভয়াবহই হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।