somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"মে টিনক্যা ঠিকাদার হ্যাঁয় বাবুজী! আপক্যা ভাগক্যা প্যাঁয়সা আনতা হু !"

০৩ রা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এর আগে সিডরের সময় একটা খবর দেখেছিলাম। সিডরে , ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণের জন্যে যে টিন দেয়া হয়েছিল , এনজিওরা ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় সেই টিনও খুলে নিয়ে গিয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ আবারো , মাথার উপরের একটুকু ছাউনি না নিয়েই দিন পার করে দিচ্ছে। কি হৃদয়বিদারক ঘটনা।

সেবারের মত ভয়াবহ না হলেও , আজকে আরেকটি খবর দেখলাম। "কিস্তি শোধ না করায় , এক মহিলা দিনমজুরের বসতবাড়ি ভেঙ্গে বিক্রি করে দিয়েছে এক এনজিও"। এখন তাদের উপরে আবারো সেই নীল আকাশটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই। ঘটনাটা আগেরটার মতই , খুবই ধারাবাহিক!

খবরটা পড়ে যা বুঝলাম , সেই মহিলা গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল। মধ্য দিয়ে মার্চ আর এপ্রিল সহ মোটমাট তিনটা মাস গিয়েছে। এই তিনমাসের মধ্যে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে সেটা আবার শোধ করে দেয়া মোটামুটি অসম্ভব , একজন দিনমজুরের পক্ষে। আরও বড় কথা , ইন্টারেস্ট রেট। কত জানেন , আইডিয়া আছে ?

আমিও জানি না , তবে উইকিপিডিয়ায় দেখলাম , সেই এনজিও "আশা" এর ইন্টারেস্ট রেট এভারেজ - ৩২% ( যেটাই হোক , এটা ২৫% থেকে বেশি , এককথায় দেশের যেকোন ব্যাংক থেকে বেশি!)! তাহলে ১৫ হাজার টাকায় মোট সুদ আসছে তিন মাসে ১২০০ টাকার মত।

একটা হতদরিদ্র মহিলার পক্ষে দিনমজুরী করে এই ঋণ , এই বিশাল অঙ্কের সুদসহ পরিশোধ করা মোটামুটি অসম্ভব। বুঝাই যাচ্ছে , মহিলাটি এই ঋণ নিয়ে কোন উৎপাদনশীল খাতে খাটায়নি। খাটিয়েছে , অবকাঠামো নির্মান কিংবা অন্যান্য সাংসারিক খরচে।

একজন দিনমজুর মহিলা কিভাবে এই ঋণ শোধ করবে - এটা না ভেবেই কেন এনজিওটি ঋণ দিল। যার মাসিক আয় হতে পারে - মোটামুটি ৯ হাজার টাকা। এক মাসে অবশিষ্ট থাকতে পারে - সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। তাও তো , ঋণ পরিশোধ করতে ১৫ হাজার টাকার পাশাপাশি আর ৬/৭ হাজার টাকার সুদ পরিশোধ করতে হবে। সামান্য কটা আয়ের টাকায় , এতো বড় অঙ্কের সুদ কিভাবে দেয়া সম্ভব ! তাও , আবার উৎপাদনশীল খাতেও না।

উৎপাদনশীল খাতে হলেও - এই ঋণ পরিশোধ করে , হাতে আর কয় পয়সা থাকে , যে সেটা দিয়ে দরিদ্রতা দূর করা সম্ভব - সেটা বলতে গেলেও মিথ্যুক এনজিওগুলোও এই মিথ্যা কথা বলতে আবারো লজ্জা পাবে।

এরমানে ওরা জেনেশুনেই এই লোন দিয়েছে। ওরা শিক্ষিত মানুষ , ওরা খুব ভালো করেই জানেন , মহিলাটাকে টাকা দিয়ে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। তবু তারা টাকা দিয়েছে , কারণ তারা এর আগে সিডরের মাঠে ড্রিল করে এসেছে , কিভাবে ঘরের টিন খুলে টাকা নিয়ে নিতে হয়। আবারো , বাড়িঘর বেঁচে দিয়ে টাকা নিয়ে নিল। উল্টো , মহিলাটি যে কয়েকমাসের কিস্তি দিয়েছিল , সেটাও দেয় নি। অন্তত যে টাকা লোন দিয়েছে , সেই টাকার আরো বেশি টাকা এনজিওটি পেয়েছে।

আর যৎসামান্য লোন অফিসারের , এই কাজ করার সাহস কিংবা ইচ্ছা কোনটাই হবে না , যদি না উপর থেকে নির্দেশ আসে। তাহলে ... কি দাঁড়ালো? এরাই , আবার গর্বের সাথে বুক ফুলিয়ে ফুলিয়ে বলে বেড়ায় - আমাদের ঋণখেলাপির হার খুব খুব কম। এটাই আমাদের সাফল্য। ( টিন বেঁচে , গরু-ছাগল বেঁচে , ঘরের হাড়ি-পাতিল বেঁচে - এই সাফল্য আনা হয় আরকি ?)

আমার মতে এনজিওগুলোর এই ঋণ দেয়ার ধরণ বদলাতে হবে। প্রত্যেকটা ঋণ দেয়ার আগেই , কাগজে কলমে নিজেদেরই বের করে নিতে হবে এই ঋণ দেয়ার পর , শোধ করে কিভাবে ঋণগ্রহীতা স্বাবলম্বী হতে পারবেন। যদি , কাগজে কলমে এই হিসেবে , তারা দেখাতে ব্যর্থ হন , তাহলে তারা ঋণ দিতে পারবেন না। সরকার এই বিষয়টার জন্যে প্রত্যেকটা জেলায় একটি মনিটরিং সেল ঘটন করবে। সেখানকার সরকারী লোন অফিসার যদি কাগজপত্র , এবং নিজেদের সরকারী স্টাফরা সরোজমিনে দেখে সন্তুষ্ট হয় - তাহলেই এপ্রূভ করবে। তারপরেই , ঋণ দেয়া যাবে। নইলে নয়। এরপরেও , যদি কোন কারণে , সেই ঋণ শোধ না দিতে পারে , তাহলে প্রথমত সময় বাড়ানো হবে। কয়েকবার সময় না বাড়িয়েও যদি না পারে , তাহলে সুদহীন আদায় কিংবা আংশিক আদায়ের জন্যে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। যদি সেটাও সম্ভব না হয় , তাহলে মওকুফ করতে হবে। কারণ , দোষটা তাদের যারা সঠিকভাবে সম্ভাব্যতা হিসেব না করে ঋণ দিয়েছে। তবে , যেহেতু এরা হতদরিদ্র এবং ঋণের পরিমাণ খুবই অল্প , সেক্ষেত্রে মোটেও বাসস্থানের দিকে হাত বাড়ানো যাবে না। আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী যদি , এই নিয়ম না মেনে ঋণ না দেয় , তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যাবস্থা নিতে হবে। এটা একজন নিতান্তই সাধারণ মানুষের মতামত , সরকার কি করবে জানি না , তবে এটি শুধুই সাধারণ মানুষের মতামত হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।

আবার , এই টিন বেঁচা ব্যবস্থাকে যারা ইনিয়ে বিনিয়ে সমর্থন করে , কিংবা বেনিফিসিয়ারি তাদের মনে মনে বলি -
"The world's poorest people pay the world's highest interest rate in this so called micro-finance program ! So , shut the fuck off !"

মনে মনেই বলতে হয় , কারণ তারা অনেক বিজ্ঞ মানুষ। কিছু বলতে গেলেই সার্টিফিকেট বের করে দেখিয়ে বলবে - "তুম কন হো?"

তখন ভাবছি , আমি সাহস করে বলবো - "মে টিনক্যা ঠিকাদার হ্যাঁয় বাবুজী! আপক্যা ভাগক্যা প্যাঁয়সা আনতা হু !"


---------------------
---------------------
খবরঃ কিস্তি শোধ না করায় ঘর ভেঙে নিল এনজিও

ফেসবুকে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৫ রাত ১২:৪৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×