somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিছা-গল্পঃ ছয় শিয়ালের মরাকান্না (রবিঠাকুরের থেকে অণুপ্রাণিত)

২৯ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রতিকী ছবিঃ দ্য হেরাল্ড

হেডনুটঃ ( ;) অপজিট টু ফুটনোট) গল্প তো গল্পই! পুরাটাই মিথ্যা! তবে থাকে মজা! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গল্প থেকে অণুপ্রানিত হয়ে আমিও একটা গল্প লিখে ফেললাম। কিন্তু এটা পড়ে যদি আপনি গাঁজাখুরি গল্প বলেন তাইলে আমার কিছু করার নাই।

কেবল খেয়ে দেয়ে সেন্ডু গেঞ্জিটা পাশের ছোট টেবিলের ওপর রেখে, ভারী পা দুটো কষ্টে সৃষ্টে বিছানায় তুলে ঠিকঠাকমত আয়েশ করে ভাতঘুমের জন্য দাদু শুয়েছেন। এমন সময় পাপ্পু এসে দাদুকে ডাক দিল। (পাপ্পু কিন্তু আমাদের বিলেতী কুত্তাটা)

-দাদু! ও দাদু! শিবুরাম এসেছে! তোমার সাথে নাকি দরকার!

নাম শুনে এতক্ষণে আপনারা হয়ত ভাবছেন কোন মহাশয় বুঝি এসে গেছেন! আদতে কিন্তু তা নয়। শিবুরাম মনুষ্যকূলের কোনো সদস্য নয়। তিনি একজন শিয়াল! ঐ যে শিয়াল পন্ডিৎ বলে না তেমন আর কি। যার ওপর আমি যারপরনাই বিমুখ! পন্ডিত বেচারা সেই আসামের ছেংগেহিসন থেকে এসেছেন মাস তিনেক হল। এরমধ্যে শালা শিয়াল আমার মনে বিরক্তির এক পর্বত গড়ে তুলেছে।

যেদিন সে এ দেশে এলো, বাংলাদেশের বন দেখে বেচারা যারপরনাই বিস্মিত, ক্ষুদ্ধ, হতাশ! আমার এখনো চোখে ভাসে- আসার দিন সে আমাদের স্কুলের বারান্দায় থানার দারোগার লাঠিটা, লেজ দিয়ে পেঁচিয়ে, উড়াধুড়া বালি উড়িয়ে কি কান্ডটাই না করল। মোটামুটি জাতিসংঘের মহাসচিবের মতো করে সে বলল-
"তোমরা বাংলাদেশের মানব-রা এমন কেন? খালি খাই আর খাই। বন খাই, ফল খাই, শীম খাই, গাজর খাই.. ব্লা ব্লা ব্লা"
আর বলার রুচি নেই বাবা! খাবার থেকে শুরু করে একেবারে পরিবেশ-সমাজ-সংষ্কৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্য! কিছুই বাদ রাখেনি। শিয়ালের কান্ডকারখানা দেখে যতটা না টাস্কিত তার চেয়ে ততক্ষণে বিরক্ত! যাবার জন্য পা বাড়াতেই বলে-

"এই দেখেন, দেখেন! মানবজাতির এক সদস্যের আক্কেল!"
হয়তো জানেনও( যদি আমার মতো গাঁজাখুরি ভাবনা ভাবতে পারেন), ঐ সভার মধ্যমণি হয়ে ছিল শালা। যাইহোক, বনত্যাগী মানবসমাজে বসবাসকারী সেই সাহসী শিয়ালের নাম ছিল শিবুরাম! (আবারো মনে করিয়ে দিলাম। পাছে ভুলে যান।) যদিও সে গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল প্রকৃতির তবুও বড় ধরণের পরামর্শ করতে হলে দাদুর কাছে আসে সে। আর দাদুও এত লাই দিয়েছেন- যখন-তখন সে এসে বাড়িতে মাতব্বরী চালে ঢুকে পড়ে!

মায়ের হাত থেকে আমি কিছু ফল আর পানি নিয়ে তার জলখাবারের উদ্দেশ্যে যেতে গিয়ে পথের মধ্যে বেশ কয়েকটা আঙুর গিলে ফেললাম। এটা ঐ ধূর্ত শিয়াল কিন্তু ট্রের দিকে তাকিয়ে বুঝে ফেলেছে। আমাকে সে ব্যাপারটা বুঝিয়ে না দিয়ে ছাড়বে ভেবেছেন?
সাধু, সাধু! শয়তানটা চোখ বাঁকা করে বলে- হেই গেমু, তুই কি জানিস না? আঙ্গুর ফল টক! আর শিয়াল জাতি কি টক মাল খায়? মুর্খ কোথাকার! ইস্কুলে মাস্টার মশাই কি এসব এখনো শেখায়নি?
আমি মনে মনে তাকে "কুত্তার বাচ্চা, ইতরের বাচ্চা, শিয়ালের বাচ্চা.." এই সেই গালি দিতে দিতে মোটামুটি তের চৌদ্ধ গুষ্টি উদ্ধার করতে থাকলাম। দাদু আমার দিকে একগাল হেসে বললেন, পানিটা রেখে বাকি সব নিয়ে যা গেমু, শিয়াল-মামু এত কিছু খাইবেক না।
ততক্ষণে হাটতে হাঁটতে শিয়াল আমার হাত থেকে আপেলটা মুখে দিয়ে বলল, রাজা সাহেব, আপনার ঘরের ফল তো সিরাম মাজা! মাজা আ গেয়া! হ্যেরে কন পুরা টিরে রাখুক, আমি খাইতে চাই! (ট্রে = টিরে)
দাদুর সাথে কি পটর পটর করলো কি জানি না। তবে আমাকে বাড়িছাড়া করার অভিপ্রায়েই কি-না কে জানে। পাঁজিটা গলা ছেড়ে কান ঝালাপালা করা গান ধরল।
হু হুক্কা হুয়া আমি গাই গান গলা ছাড়িয়া
রাজা সাহেবে শুনেন তাহা বসিয়া বসিয়া
তুই যাইস-না, যাইসনা-রে তোর বাড়ি থাকিয়া....(এটা আমাকে টিজ করছে)

ইচ্ছা করছিলো হাক দিয়ে ওর কানের কোটরে বলি, সে যদি মানবসমাজে গান গাইবার মত যোগ্য হইতে চায় তাহলে যেন লোকালয় ছেড়ে মন খুলে বিজন পাহাড়ের চুড়ায় যেমন লাউয়াছড়ার গহীন বনে গিয়ে রুটিন করে প্রাকটিস করে এবং কমপক্ষে ১০ বছর যদি সেটা চালিয়ে যেতে পারে তাহলেই হয়ত কানে সহ্য করার মতো কোন একটা সুর সে বের করে নিতে পারবে। নিরীহ অবলা গাছগুলো মনোযোগী শ্রোতা হলেও হতে পারে তবে যদি বিরক্ত হয়ে ওকে বেঁধে গাছের ডাল খুলে পেটানো শুরু করে অবাক হবার কিছু নেই। মানুষের কোন বাচ্চা এই শিয়াল মামার গানের শ্রোতা হবে আমি ভাবতে পারছি না। তার সুখের গানেও গগন-জোড়া আহাজারি থাকে। স্বভাবতই এইসব হুহু মার্কা গানের সুর শুনে হাতের কাজ ফেলেও মা চৌধুরী বাড়িতে অলরেডি পাপ্পুকে নিয়ে চলে গেলেন। আর অবশ্যই কানে আঙুল দিয়ে উপস্থিত যন্ত্রণা থেকে বাঁচার চেষ্টাটাও বাদ রাখেন নি।

এই শিবুরামের যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ট হয়ে আছি অনেক দিন যাবত! বনে শতশত শিয়াল বাস করে অথচ বেটা এই মানবসমাজে এসে পন্ডিতি ফলাচ্ছে দেখে আমার মতো অনেকেই ভেতরে ভেতরে ক্ষুদ্ধ! কিন্তু কোন এক কারণে কেউ-ই এই শিয়ালকে কেউ কিছু বলে না। মুরগি চুরিতে ধরা পড়ে কত শিয়ালকে গণধোলাই দিয়ে পুঁতে দিয়েছি আমরা অথচ এই বেটা একদিন একটা মুরগিও চুরি করে খায় না! খেলেই না হয় আমরা ধরে বেটাকে বেঁধে বস্তায় ভরে মনের সুখে লাত্থি-কিল-ঘুষি দিয়ে ভুবনছাড়া করতে পারতাম! কিন্তু সে তো এমন না, এই হল সমস্যা!

দাদু যে কিভাবে এই শিয়ালকে সহ্য করেন সেটা আল্লাই জানে। যাক, কিছুদিন পরের কথা। শিয়াল মশায় আর আমাদের বাড়িতে আসে না। আমি তো মহাখুশি! আর মুর্খ, অমানুষ এইসব অসার শব্দগুলো আমাকে শুনতে হচ্ছে না!
এর আরো কয়েকদিন পর আমাদের বিদ্যালয়-বার্ষিক-সভা অনুষ্ঠিত হল। পন্ডিত শিয়ালকে সেখানে বিশেষ অতিথি করা হলো, জেলা প্রশাসক সাহবেকে প্রধান অতিথি!
আমাদের চেয়ার থেকে হটিয়ে আসাম থেকে বেড়াতে আসা পাঁচ-টা শিয়ালকে সেখানে বসিয়ে দেওয়া হলো। আরো দুঃখের কথা হলো যখন খাবার বিতরণ হয় তখন দেখা যায় বিরিয়ানির প্যাকেট কম পড়েছে! পড়বে তো পড়, মাত্র তিনটা!
এখন কোন তিনজনকে বাদ দিয়ে প্যাকেট দেয়া হবে? আমি কিন্তু হেডমাস্টার স্যারের সাথে শিয়াল মশায়ের কানাকানি লক্ষ্য করলাম। এরপর দেখি স্যার মাইকে আমাদের তিনজনের নাম ঘোষণা করলেন।

কিম, গেমু ও রানী! তোমাদের বাঁদরামির জন্য হিসেবমত তিনটা প্যাকেট দৈবকর্তা কম পাঠিয়েছেন। আমাদের গণনাও সেটাই বলছে। তাই আজকের বাদ পড়ে যাওয়া তিনটা প্যাকেট তোমাদের জন্য!
ঘটনা এই পর্যন্ত হলেও ঠিক ছিল। এরপর আমাদের হাত লাগাতে হলো স্যারদের এই-সেই জিনিসপত্র এনে দেওয়াতেও! আসলে আমরা তিনজন খুব বেশি দুষ্টুমি করতাম, এই যেমন মোল্লা স্যারের প্রেজেন্টেশন সিডি (হুবহু লেভেলের) চেঞ্জ করে পর্নভিডুর সিডি দিয়ে দেওয়া আর সেটা দেখে স্যারের সে-কি তব্দা খাওয়া দশা! শান্তা ম্যাডামের ব্যাগে তেলাপোকা ঢুকিয়ে রাখা, হেডমাস্টার স্যারের ঢুকার আগে টেবিলের ওপর পাইথন সাপ(প্লাস্টিকের) রাখা, সঞ্জু স্যারের ঘুমের সময় প্যান্টের ঐ জায়গায় বেসনের মত ধুতরা পাতার গুঁড়ো স্প্রে করা আর তারপর স্যারের ঘুম থেকে ওঠে সে কি নাচানাচি! বাসিদ স্যারের সাইকেলের চাকার পাম্প ছেড়ে দেওয়া, আরেকদিন মধুমিতা ম্যাডামের ছেলেকে চড়থাপ্পড় দেওয়া..। আর কত বলব! কিন্তু এরা প্রত্যেকেই কোন না কোন অপরাধ করেছিল আমাদের বিরুদ্ধে!

তো যাক এইসব কথা। হাইস্কুলে আমাদের যখন এত বদনাম; তখনও কিন্তু আমরাই সেরা ছাত্র! তিন সেকশনে আমরা তিনজনই সেরা! বি সেকশনে আমি, এ সেকশনে রানী আর সি সেকশনে কিম!
জেলা প্রতিযোগিতায় আমরা তিনজনই নানান প্রতিযোগিতায় প্রাইজ নিয়ে ফিরলাম। আর সেটা দেখে সবাই কত খুশি!! কিন্তু কেবলমাত্র শিয়াল মামা আর তার বন্ধুদের কাউকে তেমন খুশি হতে দেখলাম না।

একদিন হয়েছে কি, আমাদের ক্লাসের গত ২ বছর ধরে ফেইল করা আরিসা আমাদের রানীকে নিয়ে একটা ব্যাঙ ছড়া লিখে রাখলো দেওয়ালে। বেচারী রানী ব্যাপারটায় গেল ক্ষেপে! ক্ষেপে গিয়ে জুতা খুলে তিন-চারটা লাগিয়ে দিল! আর যায় কোথায়! কাঁধ ঘুরে আমরা তাকিয়ে দেখি বন থেকে মানে গ্রামের বাইরে বাস করা ছয় শিয়াল হৈ হৈ রৈ রৈ করে ছুটে আসছে! আমি আর জিম ততক্ষণে পুরো ব্যাপারটা ধরে ফেলেছি। আর দেরি না করে আমরা তিনজন আপাতত বাড়ির পথ ধরলাম।

যেতে যেতে শুনলাম চুচা নামের শিয়াল বলছে- দেখো! মানব জাতির অধঃপতন! এই ছোট মেয়েটাকে ক্যামনে? ক্যামনে ম্যান ক্যামনে? ক্যামনে পারলো? এভাবে জুতা দিয়ে পিটাইতে?
অনার্প নামের হেঁড়ে গলার শিয়ালটা বলে- এর একটা বিহীত করতেই হবে। না হলে এই শেরেস্টু জাতি মানবজাতির বড়ই অকল্যাণ হইবু।
আরেকটা শিয়াল হু-হুক্কা হুয়া বলে বললো- এই মেয়েটা যতই বিশিষ্ট হোক, এর মধ্যে মানবজাতির যাবতীয় অকল্যাণ নিহিত। আমরা এদের কারণেই মূলত মানবসমাজে আসি না। এইরকম ঘৃণ্য মানুষের যদি উপযুক্ত বিচার না হয় তাহলে শিয়াল সমাজ এই মানবসমাজকে বয়কট করা শুরু করব। অতিসত্বর বিচার চাই!

এরপর যা হলো সেটা অবিশ্বাস্য! পরেরদিন ঘুম ভাঙল মিছিলের শব্দ শুনে! বিচার চাই, বিচার চাই, বিশিষ্ট তিন ছাত্রের অন্যায়ের বিচার চাই! বিচার চাই!
আমি এত সকাল সকাল তো ঘুম থেকে উঠি না। কিন্তু এদের কোলাহল আর মরাকান্না আমাকে বাধ্য করল, ঘুম থেকে উঠতে।

জীবনে যা কেউ দেখেনি এমন ঘটনা! রাজাবাড়ির সামনে মিছিল! হেনরী আংকেল থ্রি-নট থ্রি রাইফেল নিয়ে এগুতেই দেখি এ-ওকে ঠেলাঠেলি দিতে লাগল। তারপর পিঠ টান।

পিঠটান মানে সেই-ই ব্যাপার। যেইসকল এলাকার ছেলে পুলেরা এসেছিল তাদের বেশিরভাগই দৌড় লাগিয়ে পালাল। এরপরও যারা বাকি ছিল তারা ব্যাখ্যা না শুনে যাবেই না। কিন্তু শিয়ালদের কান্ডকারখানা ছিল খুব মজার! একটা উস্টা খেয়ে গিয়ে পড়লো ড্রেনের ওপর! সেখানে মোটামুটি হাফগ্লাস নোংড়া পানি তার মুখের ভেতরে ঢুকেই গেছে। আরেকটা কারেন্টের পিলার ধরে উপরে ওঠবার চেষ্টা করতে গিয়ে কারেন্ট শক খেয়ে চিৎপটাং হয়ে রইল। বাকিগুলোর অবস্থাও তথৈবচৈ ছাড়া ভাল কিছু না।

এরপর
এরপর অনেক দিন চলে গেছে। রানী এসএসসি পাশ করল আমাদের সাথে। এখন কলেজে পড়ছি আমরা। কলেজে নতুন অনেকেই যুক্ত হলো আমাদের সাথে। মিচু বিড়াল, পিকু নামের হুলো, ম্যাঁ নামের ছাগল, পু নামের একটা চাইনিজ মেয়ে, চিউ নামের চিল, ইক্ষু নামের একটা চামচিকা, হুঁদো নামের একটা বলদ, খুকু নামের চমৎকার মায়াবীনী একটা মেয়ে আর আরো অনেকে।
তবে উক্কা নামের এক শিয়ালের বাচ্চা আমাদের সাথে ভাব জমাতে আসত প্রায়ই। কলেজের প্রথম অনুষ্ঠানে আমরা সবাই নাম দিলাম। তিন বাঁদরই(!) অন্তত একটা করে ফার্স্ট প্রাইজ পেয়ে গেছি। বাজে ব্যাপার হলো, এটা দেখে অনেকেই হিংসা করছে। যেমন, আমার চোখে পড়ল উক্কার মুখ। শিয়ালের বাচ্চাটা সে-ই মুখ গোমড়া করে বসে আছে।

মাসকয়েক পরের ঘটনা, আমরা কলেজ গেটের পিলারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় বুড়াধুরা শিয়াল মামা আর সাথে কুঁফা_না কুঁই কুঁই করে আমাদের সামনে দিয়েই ঢুকল কলেজে। শিয়ালের মেয়ে কুঁফা_না এটার নাম হলেও আসলে এই শিয়ালী একটা আস্ত কুফা। গত রবিবার ঐ মেয়ে লাইব্রেরি ঘর জ্বালিয়েই দিয়েছিল যদি রশিদ মিয়া না দেখত।

সে যাক, এতদিন পরে কুফা শিয়ালী আর তার বাবা কেন যে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে দেখা করতে গেল আমরা জানি না, জানার আগ্রহও নাই। তবে জানতে বেশি দেরি হল না। ফুকুর ফাকুর করে শিয়াল মামা চলে যাবার পরপরই পিয়নকে দিয়ে স্যার রানীকে ডেকে পাঠালেন।
ঘটনা হইলো, রানী যে কবিতাটা আবৃত্তি করে পুরস্কার পেয়েছে সেটা ছিল আয়ারল্যান্ডের কবি থমাস মুর'এর। তো কবিতাটা কার সেটা সে জানত না সে জন কিটস'এর কবিতা বলে সে পুরস্কারটা পায়। ইংরেজি ম্যাডামও সেটা নিয়ে আপত্তি করেন নি। এখন শিয়াল মামা প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে কপিরাইট আইনের নথিটা দিয়ে গেছে। কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এত বড় জোচ্চুরি ক্যামনে হল সেটা নিয়ে শিয়াল সমাজ বিস্মিত, স্তম্ভিত।
আমাদের চোখ কপালে ওঠল যখন দেখলাম মামলাটা করেছে রানীরই এক বান্ধবী তৃণা! তৃণার তো মামলা করার কথা না, তাই আমরা সবাই মিলে তার বাসায় গেলাম। ও-মা সেখানে দেখি সাংবাদিকেরা ভীড় করে আছে। আর তাদের সামলাতে বেচারীর বাবা হিমশিম খাচ্ছেন। এখন ওরা এসে ঘিরে ধরলো আমাদের, বিশেষ করে রানীকে। কিন্তু আমি খুব বেশি বাধা দিয়ে আপাতত নতুন বিপদ থেকে বাঁচলাম। এই সাংবাদিকের দল তিলকে তাল বানাতে যে ওস্তাদ তাতে আমার ভাল রকমেরই খেয়াল আছে। এদিকে কৌশলে আমরা পৌঁছে গেলাম তৃণার কাছে। কিন্তু সে আমাদের দিকে চেয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিল। রানী নিজে গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করল- কি ঘটনা??
সে জবাব না দিয়ে আদালতে দেখা করতে বললো।

আমি মনে মনে বলি- ওরে কেউ আমারে ধর! এও বুঝি দেখার বাকি ছিল?
তৃণাকে গিয়ে আমি বললাম আমাকে বলতো তুই কেন এই ঘটনা ঘটিয়েছিস? সে জবাবে রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে আমার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলল- তোমরা আর আমরা দুই দল, তুই ওদের নিয়ে চলে যা।
মনে বুঝলাম অরণ্যে রোদন করে লাভ নাই। তিনজন সেদিনকার মত ফিরে গেলাম।

আমি ভেবে পাই না কিছুদিন পরপর রানী'র ওপর একটা না একটা বিপদ আসে কেন। এই গেল সপ্তাহেই খান পরিবারের ছেলে গলায় দড়ি লাগিয়ে বললো- আমি রানীকে না পাইলে এখুনি মরে যাব!
পুলিশ এসে পড়ায় দুর্ঘটনাটা আর ঘটেনি কিন্তু শহরের যতসব ছোটলোক ইতরের দল তো রানীকেই দোষারোপ করতে লাগল। রানী আমাকে বলল- বুঝলি গেমু, এই দুনিয়ায় কালো হওয়া যেমন পাপ, সুন্দর হওয়া আরেকটা পাপ! এরপর খান ফ্যামিলির বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগা আর শেষমেশ মুখ চুন করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়া!

এর আগের জুন মাসের ঠাঁটফাটা গরমে আরেক মেয়ের অভিযোগ, তার লিপিস্টিক হুবহু কেন রানী ব্যবহার করে? আমি মনে মনে বলি এটা যেন উনার পেটেন্ট করা ব্যাপার! আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।
এককথায় রানীর ওপর ছোটবেলা থেকেই অভিযোগের অন্ত নেই! যার অধিকাংশই বেচারি নিজেই ভিক্টিম! এরমধ্যে পেপারে খবর বেরুলো "রানী নামের মেয়ের কান্ড, বলিউডের নায়িকাদেরও হার মানায়!"
এই যখন অবস্থা, তখন আমরা আর কি করতে পারি! কিম বললো- তোদের দেশের মানুষ এত মধ্যযুগীয় মানসিকতার কেন?
আমার রাগ হয়, জাতির বিবেক কতিপয় সাংবাদিকও ক্রস চেক করে দেখে না, একটা মেয়ের এত খ্যাতির কি দরকার? সে কি নিজে থেকেই এইসকল আলোড়ন জাগানো ঘটনা ঘটায় নাকি ওর ওপর ঘটানো হয়? আর তার পক্ষে দাঁড়ানো সবাই হয়ে যায় একটা ভিন্ন গোষ্টী!
বাংলা স্যার মোজাম্মেল হক সাহবে তো প্রকাশ্যে বললেন এই মেয়ের যদি বিঃখ্যাত হবার এত লোভ থাকত তাহলে আজ আপনারা ওর পা চাটতেন। ওর মধ্যে যে মেধা আছে সেটা ও ঠিকমত কাজে লাগায় না। কয়টা মেয়ে আছে এই শহরে ওকে ছাপিয়ে কবিতা লিখতে পারবে? কয়টা মেয়ে আছে ওর মতো বক্তৃতা করতে পারে? কয়টা ছেলে আছে ওর মতো ভাল মার্ক পেয়ে পরীক্ষায় পাস করেছে?

রানী নিজেও জানে, বুঝে ওর বহুমুখী গুণ-ই ওর বিরুদ্ধে লাগার কারণ! হিংসায় অনেকেরই গা জ্বলে পুড়ে মরে! সেটায় প্রলেপ লাগাতেই ওর বিরুদ্ধে দল করার অভিযোগ আনা হয়। বলা হয় ওর কারণেই কলেজে যেতে ঘেন্না লাগে অথচ ওর সামনে গেলে একেকটা যেন পুজো করাটাই কেবল বাকি রাখে। কিন্তু পিছনে কত কথা যে বলে তার ইয়ত্তা নেই! কলেজের ক্লাসে ওর জন্য কোন কথা বলতে পারে না, সে স্যারদের সাথে যুক্তিতর্ক কেন করবে? গেমু আর কিম এর সাথে সে কেন এত মিশবে? সে কেন হাসবে? সে কেন নিয়মিত কলেজে আসবে? সে কেন ক্রিকেট খেলে? ? সে কেন কুকুর পুষে? এই সেই... এককথায় অভিযোগের অন্ত নাই!

আমরা মাঝে মধ্যেই কফিশপে বসে আড্ডা দিলে এইসব নিয়ে হাসি। এরা যে কুয়ায় বাস করা ব্যাঙের মতো নিজেদের কুপমন্ডুক হিসেবে তৈরি করছে, মনটাকে সংকোচন করতে করতে একেবারে দুর্গন্ধা ইঁদুর বানিয়ে ফেলছে সেটা কি আদৌ খেয়াল করে?

তাদেরই মুখে আবার বড় বড় বুলি শোনা যায়; কলেজে এখন গ্রুপিং চলে, স্যারেরা ক্লাস নেন না, ছেলে মেয়েরা প্রেম করে বেড়ায়, কলেজে অপসংষ্কৃতিতে ভরে যাচ্ছে। কলেজের সবকিছু হালকা করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ এর কলেজে আসে কালেভদ্রে একবার। আর এসেই আমাদের দেখে মাথা নিচু করে থাকে। আমরা নিয়মিত যারা আসি তাদের উপর যেন এদের আজন্ম শত্রুতা!

তো যেকথা বলছিলাম, থমাস মুর'এর কবিতাকে কেন জন কিটস এর কবিতা বললো এ নিয়ে কলেজে একটা বিরাট থমথমে অবস্থা তৈরি হল। এটা দেখে কয়েক শিয়াল সামনের দুই পা নিচে রেখে পেছনের দুই পা আর লেজ আকাশে তুলে নাচাতে নাচাতে কলেজের দিকে আসল।

যাক, কবিতা ইস্যু নিয়েও আমরা মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে থাকলাম। মোটামুটি একটা বড় বিতর্ক হয়ে গেল। একদিকে শিয়াল পন্ডিত আর তার ছাত্রী তৃণা, আরেকদিকে আমরা তিনজন! আসলে হিংসুকের দল অপেক্ষায় থাকে, এই যেমন শিয়ালরা এক হয়েছে তৃণার এই কান্ডের পর থেকে! তা না হলে এরা কেন আসবে এমন সময়? যেখানে কলেজে কালেভদ্রে দেখা যায় না তাদের, সেখানে কোন গোলমাল হলেই দেখা যাবে কলেজে এসে জল ঘোলা করে গাধার মতো পানি খাওয়া ছাড়া আর কোন কাজ নাই এদের।

আসলে কলেজেও যে আসে ঠিক তা না। গেটের বাইরে টং দোকানে বসে বসে নানান ফোঁড়ন কাটা, কুটনামী, ছল, হাসি-তামাসা করাই এদের কাজ। আর ঝামেলা শেষ হলেই লেজ গুটিয়ে বনের ভেতরে যে যার গর্তে গিয়ে আবার মুখ লুকোয়!

কিন্তু এবার আমি কিন্তু একটা মেগা প্লান করেছি। শিয়ালদের কান্ডকারখানা নিয়ে একটা এপিক স্টোরি লিখব যেখানে তাদের কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যাবে। এই প্লানটা আসলে অনেক আগে থেকেই করার ইচ্ছে ছিল আমার। শিয়ালদের বিভিন্ন সদস্য যে কি পরিমাণ বিরক্তিকর ও খারাপ সেটা প্রমাণ করতে দাদুর সাথের শিবুরামের ফিরিস্তি দিয়ে লেখা শুরু করলাম।

এরপর ফায়ারফক্স নামক শয়তানটার এওয়ার্ড চুরি করার প্রচেষ্টা নিয়ে লিখলাম! সেই শয়তানটা ২ বছর আগে কলেজের অফিস থেকে ট্রফি চুরির জন্য সিঁদ কাটছিল। আমি রাফিকে নিয়ে তাকে হাতে নাতে ধরে সেই-ই পরিমাণ থাপরানি দিলাম যে সে জন্মেও ভুলবে না।
এর ঘটনা কি কেবল একটা? মোটেও না। গম চুরি, ক্ষেত থেকে আলু চুরি করতে গিয়ে মজিদ মিয়ার হাতে ধরা পড়া, মুরগি চুরি করতে গিয়ে শিলার বোনের বাড়ি ধরা পড়ার পর থানা পুলিশের সাহায্যে গণধোলাই থেকে বেঁচে ফেরা.. এইরকম কত ঘটনা আছে এটার।

এরপর চুচা নামের ঐ নির্বোধ শয়তান শিয়ালটা। বেচারা জরিনা বেগমের পার্সব্যাগ চুরি করতে গিয়ে বাসে দাঁত খোয়ায়। এই খবর জরিনা নিজেই পাড়ায় পাড়ায় বলে মাতিয়ে বেড়িয়েছিল অনেকদিন। ঐ শিয়াল আরেকবার আমাদের বাসায় বেড়াতে এসে আমার ভাগ্নের এরোপ্লেন চুরি করে নিয়ে যায়, আর সেটার খোঁজ বকুল হাতে নাতে প্রমাণ করে দেয়। তাকে অবশ্য আমরা কিছু করিনি কিন্তু খালেক চাচার খাউজানি মলম চুরির শাস্তি তাকে পেতেই হয়েছে। কান ধরে টানা ছয় ঘন্টা মানুষের বাচ্চার মতো দাঁড়িয়ে থেকেছে।
শুধু শিয়ালরাই যে এইরকম কান্ড করে চলেছে এমন না। শিয়ালীরাও কি কম যায়? কুঁফা_না মেয়েটার কান্ড কীর্তি তো বললামই। এই মেয়েটা শান্তা ম্যাডাম এর ব্যাগ থেকে মোবাইল চুরি করে পরে কুড়িয়ে পেয়েছি বলে ফেরত দিতে বাধ্য হয়। কুটনামী করে বেড়ায় সারাক্ষণ। স্বয়ং প্রিন্সিপাল স্যারের বিরুদ্ধে সে কুটনামী করেছিল সোসিওলজি স্যারের কাছে। পরে দুইজন মিলে তাকে পাঁচঘন্টা নিলডাউন করে রাখেন। আরেকবার ইন্দিরা ম্যাডামের ব্যাপারে প্রিন্সিপাল স্যারকে কি যেন বলেছিল। পরকীয়া টাইপ কিছু একটা। এ নিয়ে তুলকালাম কান্ড হয়েছিল।

এই শিয়ালরা আমাদের কলেজের পরিবেশটা নষ্ট করতে সবসময়ই চেষ্টা করে। এদের অন্তর্দহন কেন আমরা এত পটর পটর করি, কেন ঐ বিশিষ্ট ছাত্রীর সাথে সবসময় আড্ডা দিই, বিতর্ক করি, সময় কাটাই, সৃজনশীল ব্যাপারে কেন আমরা একসাথে থাকি। কেন আমরা তাদের মতো মুখ গোমড়া করে প্রাকৃতিক কর্ম ত্যাগ করি না। সে তো মহাপন্ডিত হয়েই আছে কলেজে এসে আর কি হবে? ইরেগুলার হয়ে সে বিশ্বের অকাল তত্বজ্ঞানী শিয়ালপন্ডিত হয়ে গেছে সেই ব্যাপারটা কেন আমরা স্বীকার করি না বরং সামনে পেলেই উপহাস করি এ নিয়ে!
জানেন? গোখো নামের এক শিয়াল ছিল আমাদের কলেজের পাশের পাহাড়ে। সে দিনরাত গোখরো সাপের গুণকীর্তন করত। আর দেখলেই পালাত। তার এই আচরণের কারণ আমরা কেউ জানতাম না। একদিন গোখরোকে জিজ্ঞেস করলে সে বললো- এই ইতর আমার কিছু পেলেই আগে বনের এ মাথা ও মাথা অন্য শিয়ালদের নিয়ে কুটনামী করে বেড়াত। তো একদিন আমরা কি করেছি জানেন? একবার আমি তাকে জোর করে পেঁচিয়ে আমার পায়খানা গিলিয়ে ফেলেছিলাম। এরপর থেকে সে খুব সাবধানে থাকে আমাদের সাপ সমাজের কোনকিছু নিয়ে কথা বলতে। কারণ উল্টাপাল্টা কিছু করলেই গু খাইয়ে দেই আমরা।

তো আমি বুঝলাম, এদের সিদা বানাবার তরিকা আমাকে বের করতে হবে। এ জন্য ইদু শিয়াল নামের একটাকে পাকড়াও করলাম। এটার মুখ দেখতে ধেড়ে ইঁদুরের মত। লেজ বেঁধে ওপরের দিকে ঝুলিয়ে দিলাম! ও মা! এরপর দেখি সে কুঁকড়ে মুঁকড়ে কাঁদতে কাঁদতে সে কিরা কাটতে লাগল। "খুদার কসম করে কইতাসি মামু, মামীরা! আর জীবনেও আমি এই ভুল কইত্তান্ন। মানব সমাজ ছাড়ি ছলি যামু! আঁড়ে ছাইড়া দেন। আঁড়ে মারি ফালান তাও এইভাবে লেঞ্জুর দিয়া ঝুলাই রাইকেন না। আঁই মরি যামু....।"

কুটনা শিয়ালী তৈলাক্ষী সেদিনও সেলিম চাচার দোকানে বসে চা খাচ্ছিল আর আমাদের তিনজনের নামে কুটনামি করছিল। আমাদের পটর পটর নাকি তার সহ্য হয় না আর। রানী'র নাকি অনেক বেশি বাড় বেড়েছে। এই মেয়েটার জন্যই নাকি তার এ+ টা মিস হয়ে গেল। এর জন্য তার কলেজে যেতেই ইচ্ছে হয় না। এই করেছে সেই করেছে,..
আমি আর কিম যে দোকানের পেছনে বসা সেটা বেচারী দেখতে পায়নি। আমি তো বের হয়েই ওর লেজে ধরে দোকানের বাঁশে বেধে ফেললাম। আর এরপর ওর প্রতিটা কথা সত্য কিনা জেরা করতে লাগলাম। আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে দেখতে লাগল কুটনা শিয়ালি'র এই দশা! কয়েকটা ছেলে টুইডলিং ড্যান্স দিয়ে আমাদের এই কর্মকান্ডে সায় দিল। পুরো এলাকাজুড়ে একটা আলোড়ন উঠে গেল।

শেয়াল সমাজ খুব হতাশ হলো যখন দেখলো মামলায় তৃণা হেরে গেল। বেচারি তৃণা ভেবেছিল এই সুযোগে এই বেটিকে ধোলাই করা যাবেই যাবে। কিন্তু তুচ্ছ কারণটাকে এত বড় করায় যে পাবলিক উল্টো তার ওপর ক্ষুদ্ধ সেটা সে ভাবেনি। নামে বেশকম ভুলেও তো হতে পারত, তা না। উনি সেটা নিয়ে রাজ্যজয় করতে নেমে গেলেন। টাকা পয়সা তো গেলই গেল কিন্তু দুজনের বন্ধুত্বটা যে নষ্ট হয়ে গেল সেটা তো আর জোড়া লাগানো সম্ভব হবে না।

এদিকে আমাদের নিপু ভাইকে দিয়ে পুরো ব্যাপারটা পত্রিকায় দিয়ে দিলাম। এরপর আর যায় কোথায়! শেয়ালদের বিরুদ্ধে পাবলিক গেল সেই মাত্রার ক্ষেপে! এমনকি সংসদ অধিবেশনে পর্যন্ত এই শেয়াল নিয়ে তুমুল বিতর্ক হলো!
শেয়ালধিকার সমিতির সেক্রেটারি তো টিভি চ্যানেলের সামনে এসে দুঃখে একেবারে মুখ থুবড়েই পড়ে গেলেন। কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। বেছে বেছে ছয় শিয়ালকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো। অবশ্য কে কিভাবে মরতে চায় সেটা জানানোর জন্য দশদিন সময় দেওয়া হলো।
এখন দারুণ সমস্যা যেটা হলো- এরা কেউই মরতে চায় না। আমাজন বনে হলেও যেন পাঠিয়ে দেওয়া হয় এমন মরাকান্না শুরু করলো। এত জোরেসুরে এরা কান্না শুরু করলো যে সারাদেশ ছেয়ে গেল।
বেঁচে থাকার জন্য শেয়ালদের এত আহাজারি বিলাপ দেখতে হবে সেটা কল্পনাও করিনি। জানি না, মরে যাবে ভেবেই পালা করে বিলাপের পাশাপাশি ফাঁসির আসামাির জন্য বরাদ্ধ স্পেশাল খাবার চেটেপুছে শেষ করলো হয়তো। মানে এত বড় সংকটের সময়ও ওরা পেট পুরে খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করে আবার বিলাপ করছে। জেলে যারা দ্বায়িত্বে ছিল তারা সবাই যেন পাগল হয়ে গেল এদের বিলাপ অত্যাচারে। এর মধ্যে আবার বাকি শিয়াল, মানে যাদের ফাঁসি দেয়া হয়নি তারা সবাই লেজ উঁচিয়ে বনের দিকে পালাল। কিন্তু ছয় শেয়াল তো আমাদের দেশটাকে একেবারে নরক বানিয়ে ফেলছে? এদের কি হবে? মৃত্যুদন্ড মওকুফের আবেদন সবাই করেছে। সেটা আসবে যেকোনদিন কিন্তু এদের কান্নার অত্যাচারে তো আমরা শেষ!
যদি পারতাম তাহলে গুলি করে একেকটাকে এখানেই শেষ করে দেই। কিন্তু সেটা তো আর হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:১২
৩৭টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×