somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : একটি গর্ভপাত ও আমি ।

২০ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রিমা অ্যাবরশন টেবিলে যাওয়ার আগে আমার হাত দুটো ধরে বললো, আর একবার কি ভেবে দেখতে পারতে না ব্যাপারটা.? শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। তবু কোন রকমে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললাম, এখনই পিঠে বস্তা চাপানোর মতো সংসারের দায়িত্ব নিতে পারবো না আমি। কুমারী মা হয়ে থাকতে যদি তোমার কোন অসুবিধা না থাকে তাহলে তুমি অ্যাবরশন না করিয়ে থাকতে পারো। শুনে রিমা একবার আমার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর নিজে থেকেই এগিয়ে গেলো কাঁচে ঢাকা লাল নীল অপরেশান থিয়েটারে জন্মের আগেই তার পেটে এসেছে ভ্রুনটাকে চির দিনের মতো ঘুম পাড়িয়ে দেবে বলে।

এই সেই রিমা। ভালবাসার কিছু দিনের মধ্যেই কেমন করে যেন আমাকে আপন করে নিলো। শেষ বিকালে কোথাও ঘুরতে গেলে আমার হাতটাকে হাতের মধ্যে শক্ত করে ধরে রাখতো। যেন ছেড়ে দিলেই আমি বহুদূরে কোথাও পালিয়ে যাবো। বিষয়টা প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও এক সময় বিরক্ত হয়ে উঠলাম। কারণে অকারণে বকাবকি করতাম ওকে। ও রাগতো না। বরং রাগারাগির এক পর্যায়ে আমার কপালে হালকা একটা চুমু দিয়ে বলতো, এবার একটু বিশ্রাম করে নাও। তারপর আবার বকাবকি করো। শুনে আরো খানিকটা গরম হয়ে যেতাম আমি। একা ফ্লাটের দড়জা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তাম ওর শরীরে। কামড়ে খাঁমচে একাকার করতাম। ও যন্ত্রনায় চিৎকার করে উঠত। তবে কেন জানিনা প্রতিবাদ করতো না কোনদিন।

অনিয়ন্ত্রিত ভাবে দিনের পর দিন বিছানা বিলাস করবায় একদিন ওর পেটে বাচ্চা এলো। ও হাসি হাসি মুখে আমার গলা জড়িয়ে বললো, ভ্রুন পূর্ণতা পেলে তার নাম রাখবে গল্প। শুনে আমি কিছু সময় চুপ করে থাকলাম। তারপর একটুও ভনিতা না করে বললাম, আমি এখন তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। সামনে আমার ব্রাইট ফিউচার। আমার পরিচিত একজন ডাক্তার আছে। অ্যাবরশন করতে সমস্যা হবে না। কথাটা শেষ হতেই ও আমার পা জড়িয়ে ধরলো। চোখে এক প্রশান্ত জল এনে বললো, সে এই বাচ্চাটাকে নষ্ট করতে চায় না। কথাটা শেষ হতেই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না আমি। সপাটে ওকে একটা চর দিলাম। আমার পুরুষত্বের অহংকারের কাছে মুহূর্তে ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে গেলো ওর যা কিছু নারী সূলভ সব প্রতিবাদ। আমি মনে মনে একটু হাসলাম। তারপর বেড়িয়ে গেলাম বাইরে।

অ্যাবরশন করে বাড়ি ফেরার পর থেকে রিমা কেমন একটা বদলে গেলো। পাশের ফ্লাট থেকে তেমন একটা আমার ফ্লাটে আর আসতো না। সন্ধ্যায় ছাদে গিয়ে বসে থাকতো। গভীর রাতে কে অথবা কাদের সাথে যেন কাঁদতে কাঁদতে কথা বলে। আমি ছাড়া আর কেউ কাছে গেলে তার কানে ফিঁসফিঁস করে বলে, আঃ। চুপ করো। দেখছো না গল্প ঘুমাচ্ছে.? তোমার কথা বলার জন্য সোনা ছেলেটা আমার জেগে যাবে। ব্যাপার গুলোর কিছুই প্রথমে আমি জানতাম না। একদিন আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে বুকের ভেতরটা আমার কেমন একটা হাহাকার করে উঠলো। ওকে এনে নিজের ফ্লাটে রাখলাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, অনেক হয়েছে। আর না। এবার রিমা কে বিয়ে করে পুরুষ হয়ে জন্মাবার অহংকারে যে পাপ আমি করেছি তার কিছুটা হলেও খন্ডাবো।

একরাতে ঘুমের থেকে তুলে ওকে কথা গুলো বললাম। শুনে ও কিছু সময় চুপ করে থাকলো। পরক্ষনেই হো হো করে একটা হাসি দিয়ে চিৎকার করে বললো, গল্প শোন তোর বাবার কথা। তোর বাবা নাকি আবার আমাকে বিয়ে করবে। তুই কি তোর বাবার বিয়ে খাবি.? কথাটা শুনে আমার আর বুঝতে অসুবিধা হলোনা মানুষিক আঘাতটা এখন যে পর্যায়ে পৌছিয়েছে তাতে রিমা আর সুস্থ নেই। সে ঘোষিত একজন পাগল। সেই প্রথম রিমার কারণে চোখের কোনায় চিক চিক করলো আমার। ওর কাঁধ থেকে পরে গিয়েছে আঁচলটা ঠিক করে দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও রিমা। আমি যে করেই হোক তোমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবো। তার সাথে সাথে গল্পকেও।

এরপর থেকে রিমাকে সুস্থ করে তোলাটাই আমার কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালো। ওকে নিয়ে ডাক্তারের দরজায় দরজায় ঘুরলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলোনা। কে যেন একবার বলেছিল যখন কোন কিছুতে কাজ না হয় তখন প্রার্থনা তে কাজ হয়। চিরকাল ঈশ্বর নামক ভদ্রলোকের সাথে কোন রকম যোগাযোগ না থাকলেও নিয়মিত মন্দিরে যেতে লাগলাম। এ সময় রিমাকে রেখে আসতাম বাড়িতে। পাশের ফ্লাটের এক দিদি কে বলে আসতাম সে যেন একটু খেয়াল রাখে। ভদ্র মহিলা ভালো মানুষ। না করতেন না কোন সময়। আমার তবুও চিন্তা কিছুতেই কমতো না। বারবার শুধু মনে হতো এই আস্ত একটা পৃথিবীতে এই মেয়েটার বহুদিন ধরেই আমি ছাড়া আর কেউ নেই। মা বাবা ছোটবেলায় মারা গেছে। অনাথ আশ্রমে মানুষ। চিরকাল স্নেহবঞ্চিত মেয়েটা আমাকে পেয়ে খুব করে আঁকড়ে ধরেছিলো বাকি জীবন সরল সুন্দর ভালোবাসায় একটা জীবন কাটাবে বলে। আর আমি মন ভেঙে, জোর করে অ্যাবরশন করিয়ে তার বিশ্বাস ও শরীর নিয়ে ছেলেখেলা করেছি।

এক রাতে মন্দির থেকে ফিরবার সময় প্রচন্ড ঝড়ের কারণে আমি আটকে গেলাম রাস্তায়। মন কে বোঝালাম বৃষ্টি এখুনি কমে যাবে। কিন্তু তাতে দুঃশ্চিন্তা কমলো না। কিছু সময়ের ভেতরই পকেটে রাখা মোবাইল টা বেজে উঠতে স্বাভাবিক ভাবেই চমকে গেলাম। স্ক্রীনের দিকে তাকাতে দেখলাম ফোন করেছে সেই পাশের ফ্লাটের দিদি। সহসা আমার শরীরের ভেতর একটা শিহরণ খেলে গেলো। কাঁপা কাঁপা গলায় হ্যাঁলো বলতেই ওপাশ থেকে কান্না ভাঙা গলায় রিমার আত্মহত্যা করার কথাটা সে আমাকে জানালো। শুনে আমি কিছু সময় স্থম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। তারপর উদভ্রান্তের মতো ছুটতে থাকি রাস্তায়। বৃষ্টি আমার কান্না লুকাতে পারেনা। কোথাও একটা প্রচন্ড শব্দে বাজ পরে। আকাশের মাঝ বরাবর সাদা আলো। সেদিকে তাকিয়ে আমার কেন জানিনা মনে হয় জন্ম জন্মান্তরের মতো হারিয়ে যাওয়ার আগে কে যেন রিমার পেটের ভেতর থেকে আমাকে ডেকে বলছে, আগের বার না হলেও আমি এবার অন্তত তোমাদের পৃথিবীটা দেখতে চাই। আমার এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। খুব ভয় করছে। তোমার দুটি পায়ে পড়ি বাবা তুমি এক্ষুনি বাড়ি ফিরে এসো। লক্ষী বাবা আমার, এক্ষুনি এসো... এক্ষুনি...!!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:১৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×