somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্রেফ, একটি প্রেমের গল্প

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আচমকা কোন কিছু ঘটেনি। সত্যি কথা বলতে কি। আজকের দিনের জন্য প্রস্তুত ছিল বিনীতা। বিনীতা জানত। এই দিন তাঁর জীবনে আসবে। সেইজন্য নিজেকে প্রস্তুতও করেছে। একটু একটু করে। যেভাবে একজন ব্রাইট স্টুডেন্ট গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রিপারেশন নেয়। কিন্তু পরীক্ষার দিন। আর পরীক্ষা আসছে। এই ব্যাপারটার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। বিনীতা হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছে। হুটহাট চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। তবে এখনও সবাই ঘুম থেকে ওঠেনি। এই যা রক্ষে। কিন্তু আর কতক্ষণ ? ভোর দ্রুত সকালের দিকে ছুটছে। সকাল ছুটবে দুপুরের দিকে। এটাই নিয়ম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল বিনীতা। পাঁচটা তিরিশ। একটু পরেই শাশুড়ি মা উঠে হাঁটতে যাবে। শ্বশুরমশাইও যান। তবে ইদানীং হাঁটুর ব্যথার জন্য ডাক্তার হাঁটতে বারণ করেছে। হাঁটাহাঁটির বদলে তিনি এখন যোগব্যায়ামের ওপর নির্ভর করে আছেন। একটু পরেই ছাদে সেসব শুরু হবে। অনিকেত অঘোরে ঘুমোচ্ছে। সাতটায় উঠবে। শুধু শীতকালে না। বিয়ের পর থেকেই বিনীতা দেখছে। অনিকেতের এটাই বাঁধাধরা টাইম। অনিকেতের ডানদিকে মেঘলা শুয়ে আছে। মেঘলার দিকে তাকিয়ে বিনীতার চিন্তা আরও বেড়ে গেল। বড়দের চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও। শিশুদের কাছ থেকে নিজেকে গোপন করা সহজ ব্যাপার না। ছয় বছরের মেঘলাকে কি করে ফাঁকি দেবে সে ? সেই চিন্তায় বিনীতা অস্থির হয়ে উঠল। সকালের দিকে স্কুলে যায় বটে। কিন্তু সেতো সকালেই মিটে যায়। মেঘলার মর্নিং স্কুল।

বিনীতার এখন একজন পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলা দরকার। স্বামী মারা গেছে বিনীতার। হ্যাঁ বিধানকে তো সে মনে মনে স্বামী হিসেবেই মেনে নিয়েছে। শাস্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী শ্রাদ্ধের কাজ করতে চায় বিনীতা। ইন্টারনেটেও নিয়মাবলী পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মন খুঁতখুঁত করল বিনীতার। সরাসরি একজন পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলতে হবে। অনিকেত অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই বিনীতাও বেরিয়ে পড়ল। এলাকার পুরোহিত দিয়ে তো আর এই কাজ হবে না। মফস্বল এলাকা। পাড়া কালচার এখানে এখনও বেঁচে আছে। সবাই সবাইকে চেনে। পরিচিত কোন পুরোহিতকে যদি বিনীতা বলে। সে স্বামীর শ্রাদ্ধের কাজ করতে চায়। তাহলে সেই পুরোহিত প্রথমে আকাশ থেকে পড়বে। তারপর ফোন করবে অনিকেতকে। ফোনে বলবে--"অনিকেত শোনো অফিস-টফিস পরে হবে। তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসো। তোমার স্ত্রীর মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে।"

সাতদিন হয়ে গেল। আর কয়েকটা দিন। তারপরেই শ্রাদ্ধের কাজ। বাড়ির সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বিনীতা এই অশৌচ পালন করছে। খুব কষ্ট হচ্ছে বিনীতার। এতগুলো মানুষের চোখকে ফাঁকি দেওয়া সহজ ব্যাপার না। অনিকেত এমনিতে ভোলাভালা মানুষ। বাড়ির সবকিছুর খোঁজ রাখেনা। সেই অনিকেতেরও চোখে পড়েছে। বিনীতা কদিন ধরে আমিষ খাবার খাচ্ছে না। ইচ্ছে করছে না বলে এড়িয়ে গিয়েছে বিনীতা।

এই কদিনে বিনীতা অনেকবার ভেবেছে। বিধানের জন্য এতকিছু কেন করছে সে ? কেন ? কেন ? কেউতো তাঁকে জোর করেনি। তবুও বিনীতাকে করতে হচ্ছে। আসলে বিনীতা ভালবাসে বিধানকে। এখনও। বিধানও তাঁকে চরম ভালবাসত। অথচ এই বিধানকে ছেড়ে একদিন চলে আসতে হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেছিল বিনীতা। কিন্তু কিছুতেই সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পারল না। দুটো মানুষ। পরস্পরকে প্রচন্ড ভালবাসে। অথচ তাঁরা এক হতে পারল না। এই জন্য বিধান দায়ী। বিনীতা কোনদিন বিধানকে ক্ষমা করতে পারবে না।

তখন সদ্য ফার্স্ট ইয়ার। গ্রাম থেকে কলকাতায় পড়তে এলো বিধান। একই কলেজ। তারপরও আরেকটা কারণে বিনীতা আর বিধান দ্রুত কাছাকাছি চলে এলো। বিনীতাদের বাড়ির কয়েকটা বাড়ি পরেই একটা মেসবাড়ি। সেই মেসেই বিধান থাকে। সেকেন্ড ইয়ারে পৌঁছনোর আগেই প্রেম তুঙ্গে। পরস্পরকে চোখে হারানোর অবস্থা। বিনীতার মাঝে মাঝে মনে হত। পৃথিবীটা আসলে স্বর্গ।

দিন এইভাবে কাটল না। বিনীতার স্বর্গে নরকের কালো ছায়া হয়ে দেখা দিল বিধানের নেশা। গ্রাম থেকে আসা বিধান হারিয়ে গেল। কলকাতার রঙিন গোলক ধাঁধায়। বিনীতা অনেক চেষ্টা করেছে। বেশ কয়েকবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে, নেশার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে গেল বিনীতা। তাঁকেই দূরে চলে আসতে হল বিধানের জীবন থেকে। বিধান বেছে নিল মরণের পথ। নীল মৃত্যু অপেক্ষা করতে থাকল বিধানের জন্য।

সাতদিন আগে। রাতের দিকে বিধান মারা গেল। এগারো বছর বিধানের সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই। কিন্তু বিনীতা প্রতিদিন ফেসবুকে ফলো করেছে বিধানকে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বিধান খুব এক্টিভ ছিল। কবিতা লেখার হাত ছিল দারুণ। প্রতিদিন বিধানের কবিতা পড়ত বিনীতা। শুধু বিধানকে ফলো করার জন্য ফেসবুকে একটা ফেক আইডি খুলে ছিল বিনীতা। বিনীতা একটা কথা ভেবে এখনও আশ্চর্য হয়ে যায়। নিজে নেশার অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ সেই মানুষটা কি করে এতো জীবনমুখী কবিতা লেখে !! এবং আরও অবাক করার মত ঘটনা। বিধানের শেষের দিকে কবিতায়। বেশি বেশি করে জীবনকে ভালবাসার কথা বলা হয়েছে।

শ্রাদ্ধ-শান্তি মিটে গেল। ফিরে গেল বিনীতা তাঁর জীবনের নিজস্ব ছন্দে।

এখন। মাঝে মধ্যে ফাঁকা ফাঁকা লাগে। বিনীতার বুকের ভেতর হু-হু বাতাস বয়। বিল বাওড়ের মতন। সেই বাতাসে চাপ-চাপ কাঁন্না লেগে থাকে। বিধান নেই। এই পৃথিবীর কোন কোনায় বিধান নেই !! বিনীতার চোখ থেকে হুটহাট জল গড়িয়ে পড়ে। বিনীতা তখন স্বামী সন্তানকে বলে-"চোখে কি যেন পড়ল। বোধহয় ধুলোবালি হবে। জলের ঝাপটা দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।"

আজকাল বিনীতার চোখে খুব ধুলোবালি পড়ে। জলের ঝাপটা দিলেই একটু পরে ঠিক হয়ে যায়। বাড়ির লোকজন আর এই নিয়ে আলাদা করে চিন্তা করে না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×