somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : কোলকাতার চৈত্র সেল !

০৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চৈত্রসেলে কিছু কেনাকাটা করতে বৌয়ের সঙ্গে মার্কেটে গেছি। কি ভীড়, কি ভীড়। এক দোকানদার জুতো বিক্রি করছে আর চেঁচাচ্ছে পাঁচশো টাকার মাল দুশো টাকায়, তো তার পাশেই আরেকজন নাইটি বিক্রেতা চেঁচাচ্ছে আড়াইশো, আড়াইশো। একজন ভদ্রমহিলা নাইটি নিয়ে দুশো টাকা দিয়েছে, দোকানদার বলে, -"দিদি আর পঞ্চাশ টাকা।" ভদ্রমহিলা তো রেগে বলে, "এই তো বললে দুশো টাকা।" নাইটি বিক্রেতা ছেলেটি বলে, -"দিদি ওটা জুতোর দাম শুনেছেন।" দুʼজনের মধ্যে তুমুল তর্কাতর্কি। দেখি, আমার মতো আরো কয়েকজন দাঁড়িয়ে পড়েছে।

সম্বিত ফিরলো বৌয়ের হ্যাঁচকা টানে, -"তোমার সবেতেই বেশি কৌতুহল। চলো আমার সঙ্গে ।" ভালো ছেলের মতো হাঁটা দিলাম। বৌ একটা দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলাম, -"এখানে আবার কি কিনবে?"

টি শার্ট দেখতে দেখতে বৌ উত্তর দিলো, -"বাবা আর ভাইয়ের জন্য টি শার্ট নেবো আর পছন্দ হলে তোমার জন্যও একটা নেবো।"

বুঝলাম না, আমার টি শার্ট, কিন্তু পছন্দটা কার? জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলাম না, কারণ মহাপুরুষরা বলে গেছেন বৌকে প্রশ্ন না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

এর মধ্যে বৌ তো টি শার্ট দেখছে। আমি বললাম, -"এ গুলো কিনবে?" বৌ ভ্রু কুঁচকে এমনভাবে তাকালো, যেন অবান্তর প্রশ্ন করে ফেলেছি। রেগে বললো, দেখতে পাচ্ছো না ফিফটি পারসেন্ট ডিসকাউন্ট। বললাম, -"আরে, ওরকম লেখা থাকে, ওগুলোর আসল দাম একই।"
--- তুমি বেশী বোঝো। বৌয়ের মৌখিক আস্ফালনের সামনে আর কিছু বোঝার বা বোঝাবার চেষ্টা করলাম না।
বেশ কিছু টি শার্ট আমার পিঠে ধরে মাপবার চেষ্টা করলো, কিন্তু বুঝলাম কোনোটাই আমার জন্য নয়, হয় শ্বশুর মশাই না হলে শ্যালকের জন্য। বৌয়ের এই কীর্তিকলাপের মধ্যেই আরো একজন মহিলা এসে বলেন কিনা, -"দাদা, একটু টি শার্টটা মেপে দেখবো? আমার হাজব্যান্ডের জন্য ।" ভদ্রতার খাতিরে সম্মতি জানালাম। ভদ্রমহিলা টি শার্টটা মেপে দোকানদারকে বললেন, -"না দাদা, এর পরের সাইজটা দিন, ইঞ্চি দুয়েক লম্বা লাগবে।"

এরপর তো একজন ভদ্রমহিলা কিছু না জিজ্ঞেস করেই
একটু মিষ্টি হেসে একটা জামা গায়ে ফেলে মাপ নিয়ে দোকানদারকে বললো, -"এক সাইজ ছোটো দেবেন।" মনে মনে ভাবছি, আমি কি সবার মাপার বস্তু হয়ে গেলাম।

এর মধ্যেই বৌ এসে বিড়বিড় করে কিছু না বলে এক ঝটকায় একশো আশি ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিয়ে পিঠে একটা টি শার্ট মাপতে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো, -"মুখে না করতে পারছো না?" আমি বলতে গেলাম, -"দেখো, ভদ্রতা..." কথা শেষ করতে না দিয়ে বৌ দাঁত চেপে বললো, -"যত ভদ্রতা শুধু বাইরেই। বাইরে কিছু বলতে পারে না, ঘরের ভেতরেই যত কথা ।"

বৌয়ের সঙ্গে কথা শেষ হতে না হতেই দোকানদার জিজ্ঞেস করলো, -" দাদা, আপনার কত সাইজের শার্ট লাগে?"ভাবলাম বৌ হয় তো শার্টের কথা বলেছে দোকানদারকে, খুব উৎসাহ নিয়ে বললাম, "বিয়াল্লিশ।" দোকানদার অন্য ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে বললেন, -"নিশ্চিন্তে নিয়ে যান, হয়ে যাবে। আমার দিকে দেখিয়ে বললো, ওনার থেকে তো মোটা নন।" আমি হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

এদিকে বৌও দেখলাম, খান তিনেক টি-শার্ট নিয়ে নিয়েছে । মনে মনে কিছুটা খুশী হলাম, যাক্, আমার ভাগ্যে একটা জুটেছে।

ইতি মধ্যে একজন বয়স্কা ভদ্রমহিলা আবার ঐ দোকানে তাঁর স্বামীর জন্য লুঙ্গি কিনতে এসে আমায় বললেন, -"বাবা, একটু মেপে দেখবো, আসলে আন্দাজ পাচ্ছি না।" বারণ করলে বয়স্কা মহিলা মনে দুঃখ পাবেন ভেবে না করলাম না। বললাম, -"মাসিমা, ঠিক আছে, মেপে দেখুন।" মাসিমা স্মিত হাসি হেসে বললেন, -"আচ্ছা বাবা। আসলে তোমার মেশোমশাই আবার বেশ লম্বা।"

এদিকে আমি মনে মনে ভাবছি বৌয়ের পাল্লায় পড়ে চৈত্রসেলে এসে কিনা অন্যের জন্য লুঙ্গির মাপও দিতে হচ্ছে, কি দিন এলো।

মাসিমা লুঙ্গি মেপে দোকানদারকে বললো , -" লম্বায় এর থেকে বড় নেই?" অন্যের শার্ট, লুঙ্গির মাপ দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে আমি তো দোকানের বাইরের টুলে বসে পড়েছি।

দেখলাম, বৌ ক্যাশ কাউন্টারের দিকে এলো, মানে অবশেষে কেনাকাটার শেষ পর্যায়ে এসেছে।

এর মধ্যে হঠাৎ কানে এলো একজন ভদ্রমহিলা ঐ দোকানে এসে জিজ্ঞেস করছে, -"দাদা, জেন্টস আন্ডারওয়ার আছে?"
দোকানদার জিজ্ঞেস করলো, -"কি সাইজ?"
--- "সাইজটা মানে", এই কথা বলতে বলতে ভদ্রমহিলা দেখি, এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন।
বিশ্বাস করুন, আমি আর রিস্ক নিই নি, তড়াং করে টুল থেকে উঠে বৌকে দোকানে রেখেই হন্ হন্ করে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। পেছন থেকে বৌয়ের গলা ভেসে এলো,-"ও গো, শুনছো, আরো কিছু কেনাকাটা বাকী আছে।"
মনে মনে বললাম, নিকুচি করেছে কেনাকাটার।
B:-)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৮
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×