জুলিয়াস সিজারকে মন্ত্রীসভার সবাই এক এক করে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছিল। সবার শেষে শহরের সবার কাছে সন্মানিত ও সিজারের বন্ধুপ্রতিম ব্রুটাস তার দেহে ছুরি বসিয়ে দেয় তখন সিজার অস্ফুট স্বরে বলেছিল "ব্রুটাস তুমিও?"
ব্রুটাসের প্রতি সিজারের ধারনা ছিল অনেক উচ্চ। সেজন্যই ব্রুটাসের হেন আচরন সিজারকে সবচেয়ে কষ্ট দিয়েছিল।
মানুষ বলে যে, "কাউকে মন দিলে সেই সাথে মনে আঘাত করার সুযোগও তাকে দেয়া হয়"
আমাদের দেশের নেতৃস্থানীয় মানুষ যারাই আছেন তাদের ৯৭% এর উপর থেকে দেশের ৯৯% মানুষের কোন আশা নেই। আমরা সবাই জানি নেতা ও বুদ্ধিজীবিরা নিজ নিজ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজ করে,করেছে এবং করবে। তারপরও দু-একজনের কাছে অনেক আশা করে থাকি যে তারা হয়তো আমাদের জন্য কিছু করবেন।
সেরকমই একজন ডঃ জাফর ইকবাল। দেশে ফিরে আসার পর থেকেই তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল অনেক মানুষ,সেই অনেকের মাঝে আমিও ছিলাম। একটা সময় তাবলিগের দাওয়াত দেয়ার মত করে বন্ধু-বান্ধবদের তার লেখা পড়ার জন্য জোর করতাম। একজনকে পড়তে দিয়ে সেই বই নিয়ে আরেকজনকে দিতাম।ভাবতাম যে ওনার লেখা পড়ে সবাই সহজ সরল ভাবে সচেতন হবে। এবং হয়েছেও!
গত জোট সরকারের আমলে পত্রিকায় ওনার লেখাগুলো ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং সেসব পত্রিকা কেটে নিজ দায়িত্বে সবার কাছে বিলি করতাম।সরকারের প্রচন্ড তীব্র সমালোচনা আমাদের অনেক সচেতন করেছে নিঃসন্দেহে।তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আমলেও ওনার কলম ছিল সচল।
কিন্তু বর্তমান সরকার আসার পর তিনি বেশ কিছু জাতীয় কমিটি'র সদস্য হবার পর থেকেই শুরু হল বিপত্তি। বিগত দিনগুলোতে সরকারের একের পর এক ব্যার্থতা ও দায়িত্বহীনতার ধারাবাহিক প্রদর্শনী সত্ত্বেও ওনার কলম লেখকের হাত খুজে পাচ্ছে না! এত দিন ছিলেন একদম নিশ্চুপ মাঝে মাঝে যা লেখেন সেগুলোও অন্য রঙ্গের কালি দিয়ে লেখেন। সরকারের ব্যার্থতার কোন কথা তো থাকেই না এবং সমাধান চাওয়ার তো প্রশ্নই উঠের না বরং কুমিরের গল্পের মত ওনার সব লেখাই বি,এন,পি ও জামাত পর্যন্ত পৌছে যাচ্ছে!
উগ্র জাতীয়তাবাদে ভরপুর হয়ে উঠছে তার সাদাসিধে কথা। যেই বিভাগের অধ্যাপকই হোন না কেন, উগ্র জাতীয়তাবাদ কি জিনিস সেটা ওনার অবশ্যই জানা আছে বলে মনে করি।
আমি বলছিনা যে জাফর ইকবাল দেশের ভাল চিন্তা করছে না। ব্যাক্তিগত ভাবে তিনি হয়তো এখনো আগের মানুষই আছে কিন্তু দেশের অসুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশে আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবি হয়ে গিয়ে তিনি আগের সেই "জনগনের বুদ্ধিজীবি" পরিচয়ে সংশয় তৈরী করেছে।
আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল,তারা রাজনীতিতে সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে ডঃজাফর ইকবালের মত ব্যাক্তিত্বকে নিজেদের বলে প্রচার করতে চাইবে। অন্য কোন দলও চাইতো স্বাভাবিক ভাবেই।
কিন্তু আমরা সাধারন মানুষ তো আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সকল দলকেই চিনি এবং জানি সাথে এটাও দেখেছি যে কিভাবে অতি ভাল ভাল মানুষগুলোও দলীয় রাজনীতি'র ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে!
বাংলাদেশকে যদি একজন আক্রান্ত ব্যাক্তি রূপে কল্পনা করেন তাহলে দেখবেন, শত শত দলীয় বুদ্ধিজীবি এর শরীরে ছুরি বসাচ্ছে আর বাংলাদেশ বলছে " জাফর ইকবাল তুমিও?"
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১১ ভোর ৪:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




