দেশে'র সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে'র একজন শিক্ষকের উপর এমন আক্রমন জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জা'র। ভয়াবহ লজ্জা'র!
দুঃখজনক বিষয় হলো, তার উপর এমন আক্রমনের কারন ছিল তার কিছু লেখা! আশ্চর্য্যের বিষয় নয় কি?
তিনি প্রথাবিরোধী লেখক ছিলেন। কঠোর কিছু সমালোচনা করার জন্যই জাতীয় পর্যায়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন, তার সমালোচনায় বাঙালি জাতিয়তা এবং ইসলাম ধর্মের মত স্পর্ষকাতর বিষয় ছিল। যা দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা'র জন্ম দিয়েছিল।
আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে'র রাজধানীতে, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ক্যাম্পাসে সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন শিক্ষকের লেখা'র কারনে তার উপর বর্বরোচিত শারীরিক আঘাত কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না!
কিন্তু বিষয়টিতে আরেকটু গভীরে দৃষ্টিপাত না করলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণতা পায় না!বাংলাদেশের জনসংখ্যা ব্যাপক। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই বাঙালী মুসলমান। বিশ্বব্যাপীই ধর্ম একটি স্পর্ষকাতর বিষয়, এবং দক্ষিন এশিয়ায় একটু বেশিমাত্রাতেই। তার উপর বাংলাদেশের এই দরিদ্র জনগোষ্ঠি'র মাঝে অশিক্ষিতের হার ব্যাপক। দরিদ্র এবং অশিক্ষিত মানুষ দ্রুত উগ্র হয়ে উঠে, তার উপর যদি হয় গরিবের একমাত্র সান্তনা ধর্ম'র মত স্পর্ষকাতর বিষয় তবে তো আগুনে ঘি পরে! তাই ধর্ম সংশ্লিষ্ট বক্তব্য প্রদানে শিক্ষিত এবং জাতীয় পর্যায়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে বিশেষ দায়িত্বশীলতা কামনা করাই স্বাভাবিক।
কিন্তু ডঃ আযাদ পরিষ্কারভাবেই সমালোচনা'র ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ছিলেন না। তার অবস্থানের একজন শিক্ষকের বক্তব্যে যেই মানের দায়িত্ববোধের আশা আমরা করি তার বক্তব্যে মোটেও সেটা প্রকাশ পেত না। তার উপর, ওনার লেখাগুলোও উদ্দেশ্যমূলক প্ররোচনা'র দায়ে সমালোচিত ছিল দেশের শিক্ষিত সুশীল সমাজেও!
সমাজ পরিবর্তনে যারা নিজেদের দায়িত্ব পালনের কথা বলে সমাজে নিজেদের বক্তব্যে'র গ্রহনযোগ্যতা সম্পর্কেও তাদের সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
কিন্তু ডঃ আযাদ কোন এক অজানা কারনে বরাবরের মতই উস্কানীমূলক বক্তব্য এবং ততধিক উষ্কানীমূলক রচনা লিখে গেছেন! যা উনার কাছে কাম্য ছিল না! এই কারনে কাম্য ছিল না যে, ওনার বক্তব্য উষ্কানীমূলক বরং এই কারনে কাম্য ছিল না যে তিনি ছিলেন ডঃ হুমায়ুন আযাদ।
তিনি জানতেন তার লেখনীর কারনে তার জীবনের উপর ঝুঁকি তৈরী হচ্ছে, জাতি'র সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে শিক্ষকতায় নিয়োজিত একজন মেধাবী শিক্ষক হিসেবে উনার উচিত ছিল, পরিস্থিতি অনুধাবন করে আমাদের মাঝে থেকে আমাদের শিক্ষা দিয়ে যাওয়া। এত জ্ঞানী ডঃ আযাদ নিশ্চয়ই জানতেন যে, কিছু জ্বালাময়ী লেখা'র মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের সূচনা হয় কিন্তু পরিবর্তন সম্পন্ন হয় না। সেই পরিবর্তন সম্পন্ন করার জন্যই তাকে আমাদের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু প্রভোকেটিভ আচরন ত্যাগ করতে না পারা'র মূল্য শুধু তাকেই নয় বরং পরিবর্তনকামী গোটা জাতিকেই দিতে হয়েছে!
দুঃখজনকভাবে সেই আঘাতের পর ডঃ আযাদ সুস্থ হয়ে উঠলেও কিছুদিন পরই প্রবাসে মৃত্যুবরন করেন। একসময় তার উপর হামলাকারী জেএমবি সদস্যরা গ্রেপ্তার হয় এবং হামলায় নেতৃত্বদানকারী সানী নামের সেই আসামী'র ফাঁসিও হয়। এটি ছিল জাতি'র কলংকমোচনের জন্য সহায়ক কিন্তু তবুও ক্ষতটি আজো রয়ে গেছে
ডঃ আযাদের মত প্রথাবিরোধী লেখকদের কাছে অনুরোধ থাকবে দেশের বাস্তবতা মাথায় রেখে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করুন, যুক্তিগুলোকে উষ্কানীমূলক উপায়ে প্রচার না করে গ্রহনযোগ্যভাবে প্রচার করুন।
যেহেতু আপনারা যুক্তি'র মানুষ, আপনারা নিশ্চয়ই সামাজিক পরিবর্তনে'র লক্ষ্যে, আত্মঘাতি ব্যাবস্থা গ্রহন করে নিজ পরিবার ও আমাদের সামাজিক শান্তি নষ্ট করবেন না!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




