আমি আশা করি আমার এই লেখাটি লন্ডনের জামাতের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা লক্ষ্য করবেন কিংবা জামাতী যেসব সন্তানেরা আমার ব্লগে দিনরাত কর্মব্যাস্ত দিন অতিবাহিত করেন তারা জনাব মোল্লার কাছে পৌঁছে দিবেন। গত সোমবার ১৫ই এপ্রিল ২০১৩ তারিখে এটি এন বাংলা লন্ডনের মুক্ত সংলাপ অনুষ্ঠানে আপনি অনেক অ-সঠিক তথ্যের ভেতর দুইটি ভুল তথ্য দিয়েছেন যেটি অত্যন্ত দুঃখের। আপনি বাংলাদেশের আইন এবং আদালতের রায়কে এভাবে ভুলভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না জনাব। এটি ইচ্ছেকৃত নাকি জানার অভাব নাকি ভুল আমি এই ব্যাপারে মন্তব্য করব না। তবে আশা করব আপনি পরবর্তীতে এই জাতীয় তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। আপনার এই দুইটি অ-সঠিক তথ্য দিয়ে দিচ্ছি নীচে।
১) আপনি বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছেন যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালস আইন-১৯৭৩ এ শাস্তির যে বিধান রয়েছে সেখানে শুধুমাত্র দুইটি শাস্তির কথা বলা রয়েছে। (ক) মৃত্যুদন্ড (খ) যাবজ্জীবন। আপনার এই বক্তব্য একেবারেই সত্য নয়। আসুন আমরা দেখি আমাদের আইনে আসলেই কি লেখা রয়েছে- এই আইনের ২০(২) ধারাতে লেখা রয়েছে- Upon conviction of an accused person, the Tribunal shall award sentence of death or such other punishment proportionate to the gravity of the crime as appears to the Tribunal to be just and proper.
যার মানে দাঁড়াচ্ছে যে, এই আইনের উক্ত ধারাবলে ট্রাইবুনাল দোষী বলে প্রতীয়মান ব্যাক্তিকে হয় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করবেন, তা না হলে এমন শাস্তি দিবেন যেটি তার অপরাধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যেটি বিচারপতিদের বিচারে সঠিক। সুতরাং আদালত চাইলে কিংবা তাদের বিচারে মনে করলে অপরাধীকে শুধু মৃত্যুদন্ড-ই নয় যে কোনো মেয়াদের শাস্তি দিতে পারেন অথচ আপনি আপনার বক্তব্যে ভুল তথ্য দিয়ে শুধু মাত্র দুটো শাস্তির বিধান আছে, এটি বলে সবাইকে জানিয়েছেন।
আপনি ২য় যেই তথ্যটি দিয়েছেন সেটি হোলো, আপনি বলেছেন যে এই রায়গুলোতে নাকি অপরাধীর অপরাধ প্রমাণ করবার জন্য প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলো না। এটিও একটি ভুল তথ্য। সাঈদীর রায় যদি আপনি লক্ষ্য করেন তবে সেই রায়ের ৭০ এবং একাত্তর পৃষ্ঠায় আপনি দেখবেন ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার অভিযোগ [অভিযোগঃ৮]-এর ক্ষেত্রে সাক্ষী-৭ এর সাক্ষ্য।
সাক্ষী-৭ মফিজুদ্দিন পসারী হচ্ছেন এমন একজন সাক্ষী যিনি ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করতে দেখেছেন এবং সেই হত্যাকান্ডে সাঈদীর ভূমিকা কি ছিলো তাও তিনি বর্ণনা করেছেন। আদালত তাকে একজন আই উইটনেস হিসেবে পরবর্তীতে পরিগনিত করেছেন এবং রায় দিয়েছেন।
আবার এমন প্রত্যক্ষ সাক্ষী কাদের মোল্লার রায়েও রয়েছে। সেই প্রসিকিউশন সাক্ষীর নাম্বার হচ্ছে ৩, সাক্ষীর নাম মোমেনা বেগম। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ-৬ [সাক্ষীর পিতা হযরত আলী ও তাঁর পরিবারকে হত্যা এবং ধর্ষনের অভিযোগ, প্যারা ৩৪১ দ্রষ্টব্য]
এখানে সাক্ষী বর্ণনা করেছেন যে তাঁর পিতা হযরত আলীকে কাদের মোল্লা কিভাবে তাঁর বাবাকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন ড্র্যাগ করে তা তিনি কটের (cot) পেছনে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছেন।
উপরের উদাহরণ, যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ এবং রেফারেন্স দিয়েই প্রমাণ হয় যে লন্ডনের জামাতের মুখপাত্র জনাব ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা লাইভ টিভিতে এই ট্রাইবুনালের আইন এবং রায় নিয়ে সম্পূর্ণ ভুল-ভাল তথ্য দিয়েছেন। আশা করি তিনি এই ব্যাপারে ক্ল্যারিফিকেশন দিবেন যে কেন তিনি আদালতের রায় ও আইনকে ভুল ভাবে সকলের সামনে উপস্থাপন করছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৫:৫২