somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুয়া সাক্ষী নিয়ে এসে হাতেনাতে ধরা খেলো নিজামীর আইনজীবি

২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নানাবিধ আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত জামাতের প্রাক্তন আমীর মতিউর রহমান নিজামীর আইনজীবি মিজানুল ইসলাম নিজামীর পক্ষে ভুয়া সাক্ষী, যিনি কিনা এনলিস্টেড সাক্ষী নন, সেরকম একজন সাক্ষীকে নিয়ে এসে হাতে নাতে ধরা পড়েছেন। এই সাক্ষীর নাম কে এম হামিদুর রহমান। তিনি পাবনার একজন আইনজীবিও বটে!! একজন আইনজীবি হয়ে তিনিও কি করে ভুয়া সাক্ষী দিতে এসেছেন এটাও বাংলাদেশের আইন জগতে এক ধরনের বিষ্ময়ের ঘটনা।

গত ২৫ শে মার্চ ২০১০ সাল থেকে এই বিচার শুরু হবার পর থেকেই জামাত সহ অন্যান্য বিচার ও স্বাধীনতাবিরোধীরা এই ট্রাইবুনালের সামালোচনা করে আসছিলো এক যোগে। বার বার তারা বলছিলো এই ট্রাইবুনাল অস্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নয়, আন্তর্জাতিক নয় ইত্যাদি। অথচ যে সাক্ষীর নাম লিস্টেই নেই সেই সাক্ষীকে নিয়ে এসে নিজামীর পক্ষে সাফাই গাইতে নিয়ে এসে এত ভয়াবহ জালিয়াতি করেছে নিজামীর আইনজীবি। আনতে ইচ্ছে করে এই জালিয়াতি কতটা আন্তর্জাতিক কিংবা নিরপেক্ষ বা স্বচ্ছ হয়েছে।
বাংলামেইল ২৪ এর একটি প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় যে-
সোমবার সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যীক্রম শুরুতে নিজামীর সাফাই সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন অ্যাডভোকেট কে.এম হামিদুর রহমান। পরে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী তাকে জেরা শুরু করেন।এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলামের কাছে জানতে চান যে, অন্য সাক্ষীরা ট্রাইব্যুনালে হাজির আছেন কিনা। জবাবে তিনি বলেন, না। ট্রাইব্যুনাল বলেন, গতকালই (রোববার) বলে দেয়া হয়েছে আপনারা একাধিক সাক্ষীকে হাজির রাখবেন। তখন মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গতকাল ছিলাম না, ভুল হয়ে গেছে।’

এর এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি মোহাম্মদ আলী আদালতে অভিযোগ করে বলেন, ‘জবানবন্দি দিয়েছেন কে.এম হামিদুর যার নাম আসামির সাক্ষীর তালিকায় নেই। তখন আদালত প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসামীর আইনজীবীকে উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি একজন সিনিয়ার আইনজীবী, আপনার কাছ থেকে এমনটি আশা করিনি, আপনি ডিফেন্স সাক্ষী নিয়ে ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে ফ্রট (প্রতারণা)করেছেন ‘ এ সময় আদালত ট্রাইব্যুনালের এজলাশ থেকে ডিফেন্সের সাক্ষী অ্যাডভোকেট কেএম হামিদুর রহমানকে সাক্ষীর কাঠগড়া থেকে নেমে যেতে বলেন। ওই সময় সাক্ষী কাঠগড়া থেকে নেমে যান।

এ সময় আদালত মিজানুল ইসলামকে বলেন, ‘আপনি একজন সিনিয়ার ল’ইয়ার, আপনার কাছ থেকে এমনটি আশা করিনি। আইনজীবী বলেন, আই এম ভেরি সরি, ইট ইজ ক্লারিক্যাল মিসটেক।’ আদালত বলেন, ‘আপনারা আদালতের সাথে মিথ্যা কথা বলেছেন, আপনাদের তালিকায় আছে আব্দুল হামিদ আর আপনি দিলেন কে.এম হামিদুর রহমান, এটা আইনজীবী হিসেবে আদালতের সাথে প্রতারণা।’

পরে উপস্থিত নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘আপনি একজন ব্যারিস্টার, আপনাকে অনেক দূর যেতে হবে। কিন্তু পেশার শুরুতে এটা কি করলেন? তখন নিজামীর ছেলে আদালতকে বলেন, এটা ক্লারিক্যাল মিসটেক, আমি বুঝতে পারিনি যে ট্রাইব্যুনালের কাছে দেয়া পাঁচ জনের তালিকায় ওনার নাম নেই।’ তখন আদালত বলেন, ‘আপনারা সাক্ষীর তালিকায় মিস্টার এ, মিস্টার বি, মিস্টার এক্স, মিস্টার ওয়াই এসব নাম উল্লেখ করেছেন, এটা কোন সাক্ষীর তালিকার নাম হতে পারে না। এমন নাম আমরা জীবনেও দেখিনি। আপনারা কে. এম হামিদের বিষয়ে আদালেতে আগেও বলতে পারতেন। কিন্তু তা বলেননি কেন?

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘একেক সময় একেক নাম আসামীপক্ষ উপস্থাপন করছেন। সাক্ষীর তালিকায় যে নাম দেয়া হয়েছে সেই ব্যক্তি এখানে নেই। তাই এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘আসামীপক্ষ আদালতের সময় নষ্ট করতেই সাক্ষীর নাম নিয়ে এ ধরনের আচরণ করছেন।’

এভাবেই জালিয়াতি করে রাজাকার আর আলবদরদের বাঁচিয়ে দেবার পাঁয়তারা করছে এই স্বাধীনতাবিরোধীরা। একদিকে তারা বলে নিরপেক্ষ আর স্বচ্ছ বিচারের কথা, অন্যদিকে ভুয়া সাক্ষী নিয়ে এসে আদালতে উপস্থাপন। এই এতবড় জালিয়াতির পরেও কিন্তু আদালত নিজামীর এই সাক্ষীকে এলাউ করেছেন শেষ পর্যন্ত কেননা নিজামীর জালিয়াত আইনজীবি মিজানুল প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে এই জালিয়াতির জন্য। এরপরেও কি এই ট্রাইবুনালের বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়? এটা যদি আজকে পৃথিবীর অন্য কোথাও হোতো তবে নিজামীর আইনজীবির বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যাবস্থা নিয়ে তার লাইসেন্স বাতিল করা হোতো।

এই জালিয়াতির ঘটনার পরে এখন আর কথা নেই ডেভিড বার্গম্যান কিংবা টবি ক্যাডম্যান দের মুখে। ট্রাইবুনালের সমালোচনাকারী আসিফ নজরুল আর পিয়াসরা এখন মুকে স্কচ টেপ দিয়ে রেখেছে। এত কিছুর পরেও জানি, এই স্বাধীনতা বিরোধিরা এই ট্রাইবুনাল নিয়ে কুৎসা রটাবে। বেঈমানী যাদের রক্তে মিশে আছে তাদের কাছে কোনো কিছুই প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু এই জালিয়াতির এত বড় ঘটনা এই ট্রাইবুনালে রেকর্ড হয়ে রইলো তা বলাই বাহুল্য।

৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×