১ম পর্বঃ তখন যুবকটি ১৫-১৬ বছরের ছিল। তাগড়া যুবক তাই রক্ত গরম। একটু বিশৃঙ্খলা প্রবণ তো বটেই, দাড়ি গোঁফ সবে উঠা শুরু করলো। আশেপাশের সবাই তখন তাকে ছাত্রলীগ হিসাবে জানতো এবং সম্বোধন ও করতো। যদিও এর পেছনে তার পারিবারিক পরম্পরা ও কাজ করে।
.
.
.
২য় পর্বঃ এটি অপেক্ষাকৃত জটিল অংশ। তখন যুবকটি তাবলীগের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং উগ্রতা কমিয়ে ধর্মকর্মে নিয়োজিত হয়। নামাজের পা বন্দী করতে থাকে এবং সহজে করনীয় সুন্নত সমূহ পালন করার চেষ্টা করতে থাকে। মাঝে মধ্যে দাড়ি কামানো হতো। ক্যাম্পাসে গেলে তখন ছাত্রশিবির সমর্থকরা বলতো, “কিরে, আহলে সুন্নতে নাম লিখাইসস নাকি?” আর বাড়িতে আসলে ছাত্রসেনার কর্মীরা বলতো, “দেখ শিবির আইসে”। যুবক কিছুই বলতো না খালি উভয় পক্ষকে ৪৫ ডিগ্রীর একটি হাসি উপহার দিত। এই সময় তার বয়স ছিল ১৭-১৮।
.
.
.
৩য় পর্বঃ যুবকটি প্রাইশয় তাবলীগে যায়, কয়েকবার বিশ্ব ইজতেমায় ও গিয়েছে। এখন, ছাত্রশিবির এবং ছাত্রসেনা উভয়ই বলে কিরে বেটা দাড়িতো রাখসস মাশাল্লাহ্ নাম ধাম কোথায় দিয়া আসলি? ছেলেটা সংগত কারণেই হেফাজতে ইসলাম কে সমর্থন করতো তাই তাকে হেফাজতি বলে ও ডাকা হতো। এই পর্যায়ে তার বয়স ২০-২২। চিন্তাধারায় পরিবর্তন হতে থাকে, ফরজ এর পাশাপাশি সুন্নতকে আকড়ে ধরতে থাকে, মুস্তাহাব সম্পর্কিত বিষয়াদি খুব কমই আদায় করে। যেহেতু তাতে তেমন কোন ক্ষতি নেই পারলে ভালো। আগে পায়ের পাতা অবধি প্যান্ট পরতো এখন কিছুটা মডারেট হয়ে প্যান্ট উপরে উঠে আস। থ্রি-কোয়াটার যাকে বলে আরকি, আর বাইরে বের হলেও প্যান্ট যথাসম্ভব পাতা এবং পায়ের জোড়ার উপরে পরতে চেষ্টা করে।
.
.
.
৪র্থ পর্বঃ এটি তার বর্তমান অবস্থা, দাড়ি মা-শা-আল্লাহ্ এক মুঠোর বেশী। কোন কাটিং-ছাটিং নেই তবে দাড়িতে দুটো বাদামি কালারের বিট রয়েছে দু পাশে। এখন এলাকায় আসলে বা ক্যাম্পাসে গেলে সবাই এক নাগারে বলা শুরু করে, “ঐ দেখ জঙ্গী বাহিনীর কমান্ডার আইসে”। কোন দ্বায়ীর সাথে দেখা হলে বলে, “মা-শা-আল্লাহ্ ভাই, কয় চিল্লা লাগাইসেন সময়?”। ছাত্রসেনা এবং ছাত্রশিবিরের কতিপয় ঘনিষ্ট বন্ধু আবার তারিফ করে এবং বাকি সুন্নত সমূহের ও তাগাদা দেয়। ভালোই লাগে। অনেকেই ভৎসনা করে “নিচে দিয়ে টেডি হইয়া উপরে সুন্নতগিরী দেখাইতাসে ঢং”। খারাপ লাগে যুবকের তবে সম্বল সেই ৪৫ ডিগ্রী হাসি। কখনো কেউ খেয়াল করেনা সে যুবক তার টেডি চাল চলেনের ভেতরেই সুন্নত আকড়ে ধরার চেষ্টা করে। এটা অবশ্য ঠিক যে পরিপূর্ণ সুন্নত পালন হচ্ছে না কিন্তু ইসলামের বিধি নিষেধ মেনে যে কোন কাপড়-চোপড় পরা ও যে এক প্রকার সুন্নত মানা তা তাদের বিকৃত মস্তিষ্কে আসে না। তাদের মাথা এমন যে সুন্নত যদি মানতে হয় তবে সব সুন্নত-ই মানতে হবে একটা দুটো বা অধিকাংশ মানলে সুন্নত হয় না। আবার মুখে ও চিল্লা-পাল্লা করে বলতে হবে যে আমি সুন্নী না হয় বেঈমান। কি আশ্চর্য!
.
.
.
উপরের পর্ব খন্ডন শেষ এখন সারমর্ম বলি, ঘটনাটি ভারতের কোন প্রদশের নয়। এটি ৮৫% মুসলমানের দেশ, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম নামক জেলার। কেউ ভুলে ও দাড়ি দেখে বললো না, “দেখ একজন মুসলমান আইতেসে”। আর দাড়িকে বানিয়ে দেওয়া হল রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিমাপের ভার্নিয়ার স্কেল। একজন মুসলমানের নয়। অথচ এই দাড়ি-ই একজন মুসলমানের চিহ্ন, নবী করিম (সঃ) দায়েমী সুন্নত। এখন কিছু মহল বলা শুর করবে, “হালা লোক দেখানো কাজ করেনা বইলা বইলা মাইকিং করতেসে নিজের একটিভিটির”। না ভাই আমি দেখানো জন্য ইহা দিই নাই, আমাদের হীনমন্যতা তুলে ধরার জন্য দিয়েছি। আমার আল্লাহ্ কারো হাতে আমার বা অপর কোন ব্যক্তির ঈমান পরিমাপের দ্বায়িত্ব এবং ক্ষমতা দেন নাই যে আপনারা কাউকে অযথা বেঈমান বললেই সে ঈমান ছাড়া আর ঈমানদার বললেই ঈমান ওয়ালা হয়ে যাবে। এমন যদি হতো তবে না লাগতো আল্লাহ্ নামক বিচারককে আর নাই বা লাগতো শেষ বিচারের দিন। তিনি সেই আল্লাহ্ যিনি ১০০ বছরের পরহেজগার ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত না করার কারণে নরকে এবং ২০ বছরের বেশ্যাকে সামন্য তৃষ্ণার্থ কুকুরকে জল খাওয়ানোর বিনিময়ে সবকিছু ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাত দিতে পারেন। ঈমান পরিমাপের ভার্নিয়ার স্কেল শুধু সেই মহান স্রষ্টার কাছেই আছে এবং তিনিই একমাত্র ক্ষমতাধর যিনি ঈমান পরিমাপের ক্ষমতা রাখেন। আমার কোন আপত্তি নেই আপনারা নিজেকে কি ভাবেন বা আমাকে কি ভাবেন কারণ আমার খোদাকে জওয়াব দিতে হবে আমাকে, আপনাকে নয় ঠিক তেমনি আপনার খোদাকে জওয়াব দিতে হবে আপনাকেই, আমাকে নয়। শুধু অনুরোধ এতটুকুই, যদি মুসলমান হয়ে থাকেন তবে আলোচনা-সমালোচনার আগে একটি কথায় চিন্তা করবেন, “একজন আছেন যিনি সব দেখেন এবং শোনেন, কেউ-ই পার পাবেনা”, চাই সে হেফাজতে ইসলামের সমর্থক হোক কিংবা ছাত্রশিবির, ছাত্রসেনা, আওয়ামিলীগ, বি. এন. পি। এটি শুধুই কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের ঘটনা নয়, বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই এমন হয়। যারা নাশকতা করে তাঁরা যদি ঢাল হিসাবে ইসলাম কে বা এর কোন অংশকে ব্যবহার করে তবে ঐ নাশকতার জন্য ইসলাম কেন দায়ী হবে? নিজেদের দৃষ্টি এবং চিন্তা চেতনাকে সংশোধন করুন। অপরাধ কে অপরাধ বলুন ব্যবহারিত অবয়ব কে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৮