somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতা ও কষ্ট --

০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি আজ অনেক দিন পর আকাশের দিকে তাকালাম
আকাশের রং টা একেবারে ভুলে গিয়েছিলাম,
মাঝে মাঝে মনে হতো আকাশের রং বোধ হয়,
সাদা, নীল, সবুজ হয়তো বা বেগূনী,
নাকি প্রতিনিয়ত বদলে অন্য কোন রং হয়ে গেছে,
মনোলীনা, আমি উনিশ বৎসর আকাশের দিকে তাকাই না,
শুধু একটি কবিতার জন্য।

শুধু একটি কবিতার জন্য
আমি ঘরে বাস করেও গৃহত্যাগী হয়েছি,
অসংখ্য মানুষের ভীড়েও আমি সন্ন্যাস নিয়েছি,
মনোলীনা, আমি কারো কাছে কবি হওয়ার শপথ নেইনি,
কবি হওয়ার মতো কোন যোগ্যতা ও আমার ছিলনা।

তুমি যখন ক্যাম্পাসে প্রতিটি অনুষ্টানে কবিতা আবৃত্তি করতে
তখন তোমার প্রতিটি উচ্চারন,
আমার বুকে দ্ধিতীয় বার উচ্চারিত হতো,
তুমি যখন সুনীল, নির্মলেন্ধু, হেলাল হাফিজদের
কবিতা চোখ বন্ধ করে আবৃত্তি করতে,
তখন প্রচন্ড রকম হিংসা হতো কবিদের,
কি দরকার ছিল এতো দরদ দিয়ে কষ্টের কথা লেখা।

তোমাকে দেখলেই আমার মনে হতো,
মানুষের বুকের মাঝে যে গোপন সিন্ধুক থাকে,
তা থেকে একটা একটা করে প্রতিটি শব্দ তুমি,
খুব যত্ন করে সবাইকে দেখাতে, তারপর আবার লুকিয়ে ফেলতে,
কোন শব্দতে যেন ধুোলোবালি না লাগে, সে কি আদর,
তখন থেকেই আমি কবিতার প্রথম পংক্তি টুকু খুঁজছি।

আমার বন্ধু, বাপ্পা দত্তের কথা মনে আছে তোমার
অসম্ভব সুন্দর প্রেমের কবিতা লিখতো,
ওকে কখনো চুল আচড়াতে দেখিনি,
সারাদিন ছাইপাষ খেয়ে চোখ লাল করে রাখতো,
একদিন ওকে বললাম, “বন্ধু আমি কবি হতে চাই তোর মতো ’’
অনেকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো,
তারপর হাতের সিগারেটের ছাইটা তুড়ি মেরে ফেলে দিতে দিতে বলল,
“ভিতরে প্রচন্ড কষ্ট না থাকলে কবি হতে পারবিনা,
লিখতে হয়তো পারবি কিছু, কিন্ত্তু কবি হতে পারবি না”।

আমি সাথে সাথে বুকের ভিতর হাতরাতে শুরু করলাম কষ্ট খুজতে,
খুজে পেলাম কিছু ছোট ছোট কষ্ট,
ছোট বেলায় ধুপ খোলার মাঠে বৈশাখী মেলায়
জীবনের প্রথম পাওয়া পাঁচ টাকার আস্ত নোটটি হারিয়ে ফেলা,
কিশোর বেলা খুব সাইকেলের সখ ছিল,বাবা কিন দেইনি,
ঘুড়ি কিনার জন্য একবার মায়ের ব্যাগ থেকে দুই টাকা চুরি করেছিলাম,
আমার অন্য কোন বড় কষ্ট ছিল কিনা মনে পরে না,
তখন মনে হয়ে ছিল আমি অনেক অভাগা,
আমার বুকটা একেবারে সাধারন মানুষের মত,
আমার কেন বুক দুমড়ে মুচরে যাবার মত কষ্ট নেই,
আমি কেন কবি হওয়ার মত কষ্ট জমিয়ে রাখিনি এই বুকে,
আমার বোধ হয় এই জীবনে আর কবি হওয়া, হবেনা ।

তাপর থেকে কষ্ট খোজার দিন শুরু,
সারা দিন মনে মনে বিড় বিড় করে বলি,
“আয় কষ্ট আয়, আমার বুকের সব সুখ দুমরে মুচরে আয়,
তুবুও বাপ্পা দত্তের কথা মত বুকের ভিতর প্র্রচন্ড কষ্ট আসেনা।

এক কষ্ট খুজতে গিয়ে, প্রথমে ছাড়লাম তোমার আবৃত্তি শোনা,
তারপর একে একে বিশ্ববিদ্যালয়, বন্ধু, সব পরিচিত মানুষ.
তবুও বুকের ভিতর প্র্রচন্ড কষ্ট আসেনা,
তারপর কতো রাত রেল ষ্টেশনে, ফুটপাতে, পাহাড় জংঙ্গলে ঘুড়েছি,
এমনকি না খেয়েও থেকেছি অনেক দিন,
তবুও বুকের ভিতর প্র্রচন্ড কষ্ট আসেনা।

বাবা মারা যাবার পরও মৃত বাবার পাশে
দাড়িয়ে ও কবিতার কথা ভাবছিলাম
বাবাকে কিছুক্ষন পর চিরদিনের জন্য
কবরে নামিয়ে দেবো, তবুও বুকের ভিতর প্র্রচন্ড কষ্ট হয়নি,
তখন ও কষ্ট হচ্ছিল কবিতার পংক্তি টুকু লিখতে না পারার।

মনোলীনা, আমি কারো কাছে কবি হওয়ার শপথ নেইনি,
শুধু শপথ করেছি যে দিন কবিতার প্রথম পংক্তি লিখবো,
সেদিন থেকে আকাশের দিকে তাকাবো।

আজ অনেকদিন পর, চায়ের দোকানে বসে কষ্টের কথা ভাবছিলাম,
তখন ই পুরোনো একটা পত্রিকার পাতা উল্টাতে গিয়ে তোমার ছবি দেখলাম,
নীচে লেখা ছিল জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পীর গলায় ক্যান্সার ।
তার পর থেকেই বুক দুমড়ে মুচরে যাবার মত
কষ্ট টের পেলাম নিজের ভিতরে।

লিখলাম প্রথম কবিতা, একটি শব্দে “ভালবাসি”।
-----------------------
জি, এম, হারুন অর রশিদ
০২.১১.২০১৬

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×