somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা - বাবা নিয়ে আমার ৬টি কবিতা একসাথে - সকল সন্তানদের জন্য

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা - বাবা নিয়ে আমার ৬টি কবিতা একসাথে - সকল সন্তানদের জন্য।
---------------------------------------

১-
বাবা’কে ধার দিবেন প্রভু
---------------------------
প্রভু,
আমার মৃত বাবা’কে
সাতদিনের জন্য ফিরিয়ে দিন,
অথবা ধার দিন,
আপনি যে ভাবেই ভাবুন,
আমার কোনো কিছুতেই আপত্তি নাই,
তবুও আমার কাছে সাতদিনের জন্য জমা দিন আমার বাবা’কে,
আমি আমার মায়ে’র কসম খেয়ে বলছি,
সাত’দিন পর বাবা’কে ফেরত দিবোই।

প্রভু,
বাবা’কে যে’দিন ফিরিয়ে দিবেন,
দয়া করে একটু খেয়াল রাখবেন,
ভালো পোষাক পরে যেনো থাকে,
অনেক’দিন পর সংসারে ফিরবে
তাই একটু ভালো কাপড় পরা না থাকলে
আমার মা’য়ের মন খারাপ হবে।

প্রভু,
মা অনেক’দিন পর বাবা’কে দেখে লজ্জা পেতে পারে,
কিন্ত্তু বাবা’র পচ্ছন্দের সাদা পোলাও মা ঠিকই রান্না করবে,
আমি আড়াল থেকে উনাদের ভালোবাসা’র কথা শুনবো,
আমি জানি এটা ‌অন্যায় ,
তবুও আমি শুনবো,দেখবো,
আমি আমার মা’য়ের হাসি দেখি না অনেক’দিন,
সে’দিন আমি আসলে আমার মা’য়ের হাসি দেখবো।

প্রভু,
একদিন বাবা’কে নিয়ে শিশু পার্কে যাবো,
ছেলেবেলা বাবা সুযোগ পেলেই আমাদের সবাই’কে নিয়ে শিশু পার্কে ঘুরতে যেতো,
আসলে অল্প টাকায় এর চেয়ে ভালো ‘বেড়াতে যাওয়ার যায়গা’
আমাদের বোধহয় ছিলোনা।

প্রভু,
বাবা’র খুব শখ ছিলো একটা ভালো স্যুট বানানো,
গুলিস্তান থেকে পুরোনো একটা স্যুট কিনেছিলো আমার জন্মের ও আগে,
সেটা পরেই সব অনুষ্ঠানে যেতো,
মা প্রায়ই বলতো,
“একই কাপড় আর কতোদিন পরবে,”
বাবা বলতো” এই বছরই একটা দামী স্যুট বানাবো, দেখো,”
বাবা’র আর কখোনি দামী স্যুট বানানো হয়নি টাকা’র অভাবে,
মা’র তাই আর বাবা’র দামী স্যুট দেখা হয়নি,
আমি বাবা’কে একটা দামী স্যুট বানিয়ে দিবো এবার,
মা খুব খুশি হবে নতুন স্যুটে বাবা’কে দেখে।

প্রভু,
আমি বাবা’কে একটা দামী হোটেলে খায়াবো একদিন ,
সে’দিন মা, ভাই, বোন সবাই থাকবে,
বাবা’কে প্রায়ই আক্ষেপ করে বলতে শুনতাম,
“কিছু টাকা জমলেই সবাই’কে নিয়ে একদিন দামী একটা হোটেলে এক’বেলা খাবো,”
বাবা’র আর টাকা জমানো হয়নি,
প্রভু,
তার আগেই আপনি আমার বাবা’কে
আপনার কাছে নিয়ে গেলেন।

এক’দিন বিমানে করে বাবা মা সহ সমুদ্র দেখতে যাবো,
বিমানের আওয়াজ পেলেই বাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতো,
“ পরের বছর তোদের সবাইকে বিমানে করে সমুদ্র দেখতে নিয়ে যাবো,”
প্রভু,
সেই পরের বছর কখনো’ই আসেনি আমাদের পরিবারে,
বাবা থাকতে কখনো’ই আসেনি।

এক’দিন বাবা’কে নিয়ে সারা’দিন হাঁটবো,
বাবা’র হাত এক মুহূর্তের জন্য ও ছাড়বো না,
ছোটবেলা রাস্তায় হাঁটতে বের হলে বাবা শক্ত করে আমার হাত ধরে রাখতেন ,
যেনো হারিয়ে না যাই,
প্রভু,
আমিও বাবা’র হাত ধরে রাখবো ,
বাবা যেনো হারিয়ে না যায়।

এক’দিন বাবা’র কাছে ছোটবেলা’র সব মিথ্যা’গুলো স্বীকার করবো,
স্কুল ফাঁকি দেওয়া,
লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া,
না বলে পকেট থেকে ঘুড়ির টাকা নেওয়া,
ওজু না করেই নামাজ পড়া,
সব মিথ্যা’গুলো স্বীকার করবো,
আমি চাই মিথ্যার জন্য বাবা আমাকে শাসন করুক।
প্রভু,
আমাকে বকা দেওয়ার মানুষ একজনই ছিলো,
শুধু বাবাই বকতো,
মা কখনো কেনো যেনো বকে না!!!

প্রভু,
মা যদি বাবা’ কে আর যেতে না দেয়,
অথবা বাবা’ই থেকে যেতে চায়,
আপনার কি বিশেষ ক্ষতি হবে?
আপনার কাছেতো লক্ষ কোটি মানুষ,
আমারা না হয় আমাদের একজন’কে রেখেই দিলাম,
শাস্তি না হয় আমাকেই দিবেন,
কথা দিয়ে কথা রাখতে না পারার জন্য,
প্রভু,
সাত’দিন না হোক,
অন্তত এক’বেলার জন্য হলেও
আমার বাবা’কে ধার দিবেন।
————————————

২-
মা’ আর আমার বিষন্নতা
---------------------
সব মুখোশ খসে পরতো
মা’য়ের কাছে আসলেই
মা’ কিভাবে যেন বুঝে ফেলতো,
অবলীলায় বলে দিতো
“এতো মন খারাপ কেনো?
কি হয়েছে ‘বাবা’ তোর?”
অথচ, সারাদিন কতো রকম মুখোশ ছিলো যে মুখে
একজন মানুষ ও বুঝতে পারেনি,
আমার মনটা প্রচন্ড বিষন্ন,
বিষন্নতার পরতে পরতে নানা রংয়ের বিষন্নতা
আমি বুকে নিয়ে ঘুরেছি সারাদিন,
তখনই স্বার্থপরের মতো সব বিষন্নতা
মা’র বুকে দিয়ে দিতাম,
তারপর নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোতে যেতাম।

চেহারায় একেকদিন একেক রকম মুখোশ পরে থকি,
ভালো থাকার মুখোশ.
সুখি থাকার মুখোশ,
রাজনীতিবিদের মুখোশ,
মহাপুরুষের মুখোশ,
দয়ালু মানুষের মুখোশ,
নিষ্ঠুর মানুষের মুখোশ,
সাহসী মানুষের মুখোশ,
চরম ভীরুতার মুখোশ,
বোকা মানুষের মুখোশ,
দূর্ত মানুষের মুখোশ,
আবার নিঃসঙ্গতায় একাকী
কবি হওয়ার মুখোশ পরে থাকি।

সারাদিন কতো মানুষের সাথে ঘুরেছি,
কেউই বুঝলো না
বাবা’ও বুঝেতো না,
স্ত্রী,সন্তান,বন্ধু, পরিচিত ,অপরিচিত
কেউ বুঝেনি,
কোন মুখোশটা আমার নিজের।
সবাই বলে,“কি খবর, ভালোতো?”
অথচ, মা সোজাসুজি বলে দিতো
“এতো মন খারাপ কেনো.
কি হয়েছে ‘বাবা’ তোর?”
অথবা, ফোন করলে কন্ঠ শুনেই বলে দিতো,
আজোও সারাদিন না খেয়ে ঘুরাঘুরি করেছিস।

আমার মা’ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েনি কখনো,
পড়েনি কোন মনো বিজ্ঞান,
অথচ আমি যতোই লেখাপড়া করি
মা’ তারচেয়ে ও বেশী জ্ঞানী হয়ে যেতো কি ভাবে জানি!!

এখন মা’য়ের কবরের পাশে দাড়ালেই,
সব মুখোশ খসে পরে,
আমি স্পষ্ট শুনতে পাই
“এতো মন খারাপ কেনো.
কি হয়েছে ‘বাবা’ তোর?”
স্বার্থপরের মতো এখনো সব বিষন্নতা
মা’র কবরে দিয়ে দেই,
তারপর নিশ্চিন্ত মনে ফিরি মানুষের মাঝে।
---------------

৩-
পোষা ভয়
--------------------------------
ঈশ্বর,
আমি কষ্টে আছি,
আমাকে টেনে তোল,
দয়া করে টেনে তোল।

ঈশ্বর,
আমি অষ্ট প্রহর পোষা ভয়ে কুকড়ে থাকি
আমি ঈশ্বর , খোদা , ভগবান আর প্রভু
এক করে ফেলি
আমি মসজিদ,মন্দির, গির্জা আর পেগোডায় ধার্মিক দেখি লক্ষ কোটি,
ধর্ম দেখি মাত্র কয়েকজনের বুকে,
আমার বুকেও ধর্ম টের পাই না
টের পাই পোষা ভয়।

খোদা,
আমায় কেউ ভালোবাসে না
আমার কোনো প্রেমিকা নাই,
শুধু মা’ একটু বেশি ভালোবাসতো,
মা,কবরে বাস করে অনেকদিন হলো,
বাবা ও তার পাশাপাশি ঘরেই থাকে ।
বাবা শুধু বকতো ,
আর বলতো “মানুষ হও আগে”
খোদা ,
আমি ‘মানুষ’ হইনি
আমি কষ্টে আছি,
প্রতিদিন বুকটা খুলে
কষ্টগুলো মা’র কবরে শুইয়ে দেই,
আমি স্বার্থপর ,
মা’কে সারাজীবন কষ্টই দিয়ে গেলাম,
বাবা’র কবরে ভয়ে চোখ তুলে তাকাই না,
যদি ডেকে বলে ,
“এখোনো মানুষ হলি না”
খোদা,
আমাকে টেনে তোল।

ভগবান,
আমাকে একজন প্রেমিকা দাও,
তার ভালোবাসায়
যেনো আমার মরণ হয়,
তার প্রতারনায়
যেনো আমার মরণ হয়,
তার চোখে , স্তনে, নাভী ,আর ঠোঁটে
যেনো প্রতি মূহুর্তে মরণ হয়।
ভগবান ,
না হলো তুমি আমার প্রেমিকা হও,
আমাকে ভালোবেসে মেরে ফেলো
আমি একটুও প্রতিবাদ করবো না
আমি কষ্টে আছি
আমাকে টেনে তোল
তারপর মেরে ফেলো।

প্রভু,
আমার বুকে কেনো আমাকেই
ক্রুশ বিদ্ধ করেছ?
আমার বড্ড কষ্ট হয়
তুমি আমাকে ‘এক’ধর্মের
ঘরে জন্ম দিয়েছো,
অথচ আমার বুকের ঘরে
দিয়েছো হাজারো ধর্ম,
প্রভু,
আমার পোষা ভয়,
কবে দেখবে আমাকে
মুসলমান , হিন্দু,খ্রিষ্টান বৌদ্ধ
সবাই মিলে মেরে ফেলবে,
তারচেয়ে আমার বুকে
একটা ধর্মই দাও,
‘মানব ধর্ম’ দাও।

অন্তত বাবা’র কবরে দাড়িয়ে বলতে পারি
বাবা,
আমি মানুষ হয়েছি,
তারপর মরে গেলে মরে যাবো
বাবা’তো আর বকবে না।
—————————-

৪-
বাবার শেষ চিঠি
---------------------
পোষ্ট অফিস থেকে মাত্রই ফিরলাম,
হাতে একটা চিঠি,
রেজিস্ট্রি করা চিঠি,
বাবার পাঠানো চিঠি।
আমি বিশ্বিদ্যালয়ের হলে থাকি,
যেদিন বাবা আমাকে চিঠিটা লিখে পোষ্ট করেছিলো,
সেদিন রাতে হঠাৎ করেই বাবা ঘুমের মধ্যেই মরে যায়,
কাউকে বিরক্ত না করেই মরে যায়,
ডাক্তার বলেছিলো,বাবার বুকটা নাকি
ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ করে থেমে গিয়েছিলো।

বাবা সব সময়ই রেজিস্ট্রি করা চিঠি পাঠাতো,
উনার কেনো যে ধারনা হয়েছিলো
রেজিস্ট্রি না করলে চিঠি হারিয়ে যায়।
মা’র সাথে শোক ভাগাভাগি করে
কয়েকদিন পর আবার যখন হোষ্টেলে ফিরবো
তখন মা বাবার এই চিঠিটার কথা জানায়।

চিঠিটা খুলবো কিনা বুজতে পারছিলাম না,
মনে হচ্ছিলো চিঠির খামটা খুললেই
বাবার শেষ কথা গুলো শেষ হয়ে যাবে,
তারপর অনেকদিন চিঠির খামটা খুলিনি,
মাথার বালিশের নিচে নিয়ে ঘুমাতাম,
মনে হতো বাবার বুকেই শুয়ে আছি।

একদিন রুমমেট শাহেদ বললো,
“চিঠিটা, খুলে পড়ে ফেলিস,
ওখানে তোর বাবার শেষ কথাগুলো
আটকে আছে তোর জন্য,
না বলতে পেরে, উনি বোধহয় কষ্ট পাচ্ছেন”।

আমি আর দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে
চিঠির খামটা খুলে ফেললাম।
বাবা সব সময় যে ভাবে শুরু করতো
চিঠিটা শুরু হয়েছে সেই ভাবেই,
“ ভালো আছো তো,
আমরা ভালো,
কিছু দরকার হলে , আমাকে বলতে না পারলে
তোমার মা’কে বলবে”।
আমার আর পড়া হলোনা বাকীটুকু,
হঠাৎ হোষ্টেল কাঁপিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম
“বাবা আমার এখন তোমাকেই দরকার”,
শাহেদ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আরো জোরে চিৎকার করে বল,”
আমি বুকের সমস্ত শক্তি দিয়ে কেঁদে বললাম.
“বাবা আমার এখন তোমাকেই দরকার”।
-------------

৫-
একটা সাদা কালো ছবি
-------------------------------------
মা’র শোবার ঘরের দেয়ালে একটা ছবি টানানো আছে,
সাদা কালো ছবি,
স্টুডিও তে তোলা
বাবা - মায়ের মাঝখানে আমি বসে আছি।

আমার বয়স তখন দুই কি আড়াই বছর হবে
আমি খুব আশ্চর্য হয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছি,
আর মা বাবা দুজনই যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমার মাকে ঠিক সুচিত্রা সেন এর মত লাগছে,
মায়ের চুল কোমর ছাড়িয়ে
মাটিতে প্রায় লেগে যাবে মনে হচ্ছে,
বাবাকে উত্তম কুমারের চেয়ে কোন অংশে
কম লাগছে না,
আরেকটু বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে,
উচ্চতা উত্তমের চেয়ে বেশি
ছ'ফুটের চেয়েও লম্বা।

ছবিতে দেখে মনে হয়,
দু’জনই আমাকে শক্ত করে ধরে আছে,
যেন পালিয়ে যেতে না পারি উনাদের কাছ থেকে,
আমি আর মা ঠিকই সংসারে পরে আছি
অথচ বাবা আমার পালিয়ে গেলো।

ছ'ফুটের উপরে মানুষটা রাস্তা দিয়ে
যখন হেটে যেতো টান টান বুক করে
সবাই তাকিয়ে দেখতো,
অনেক দূর থেকেও বাবার মাথা দেখা যেত।
মাথা ভরতি চুল ছিল বাবার,
পিছনে টেনে আঁচড়াতেন,
বাবাকে নকল করে আমিও এখনো
পিছনে টেনে চুল আঁচড়াই,
বাবার মত যাতে লম্বা লাগে
সেই জন্য একটু বেশী উঁচু জুতো পরি,
অথচ আমার বাবা একদিনেই মরে গেলো
“বুকের অসুখে”।

যে বুকে এতো ভালোবাসা থাকে
সেখানে তো অসুখের জন্য আর কোন
জায়গা থাকার কথা না,
অথচ বুকের অসুখ গোপনে
আমার বাবার বুকের সব ভালোবাসা
থামিয়ে দিবে কেউ বুঝিনি,
মা'ও বুঝেনি,
আমি যখন আমার মৃত বাবার বুকের উপর
মাথা রেখে কাঁদতে ছিলাম,
মা কেন যে বলে উঠলো ?
“ তোর বাবা বুকে ব্যথা পাবে, শরীরের সব ভার দিসনে”
আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনি,
মৃত মানুষ কি ভাবে ব্যথা পায়?

আমি হয়তো অনেক কিছুই জানিনা,বুঝিনা,
মা'র কষ্টটাও হয়তো আমি ঠিক ভাবে
কখনো বুঝতেই পারিনি,
আমার কেন যেন মনে হয়
মা আমার দিন দিন প্রস্তুতি নিচ্ছে
বাবার কাছে যাবার।

মায়ের মাথার সেই চুলগুলো আর নেই,
মাথা প্রায় খালি হয়ে গেছে,
মা' প্রায়ই বলতো,
বাবা নাকি, মায়ের লম্বা চুল দেখে
পচ্ছন্দ করেছিল মা'কে
বাবা মারা যাবার পর
মা আর তার চুলের যত্ন কখনো করলোনা ঠিক মতো,
আমার চোখের সামনে আমার মা প্রস্তুতি নিচ্ছে, আমাকে ছেড়ে যাবার।

প্রতিদিন মা ছবিটার দিকে কোন এক সময়
অনেকক্ষন ধরে তাকিয়ে থাকে,
তারপর একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
ঘর থেকে বেরিয়ে আমার ঘরে চলে আসে,
চোখ তখন ভিজে থাকে,
আমি এটাও বুঝিনা ঠিকমতো,
মা বাবার জন্য কাঁদছে,
না আমাকে ছেড়ে যাবে, এই জন্য।

বুকের অসুখের তো আর বিশ্বাস নেই
একটা সাদা কালো ছবি আমিও রেখে যাবো।
-----------------------------------------------

৬-
বাবা
----------------------
আমি যতক্ষণ চোখ খুলে রাখি,
আমি যতক্ষণ বুক খুলে রাখি ,
আমি যতক্ষণ মন খুলে রাখি,
ততক্ষণই আমি অসহায় হয়ে থাকি,
ততক্ষণই আমি নির্বোধ হয়ে থাকি,
ততক্ষণই আমি নিঃস্ব হয়ে থাকি।।

বাবা,
আমিতো জানতাম না এই মানবিক পৃথিবী
তুমি ছাড়া মুহূর্তে অমানবিক হয়ে যাবে,
আমিতো জানতাম না তোমার মত ভরষার বুক
আমার পৃথিবীতে আর এক ইঞ্চিও নেই।

বাবা,
ছো্ট বেলায় একবার আমার দুরন্তপনায়
অতিষ্ট হয়ে আমাকে শাসন করার সময়
তোমার হাত কেটে রক্ত বের হয়ে ছিল,
তখন না বুঝে মনে মনে প্র্রতিষোধ ভেবে
আমি অনেক খুশি হয়ে ছিলাম,
বাবা ,এখন তোমার অভাবে আমার বুক দিয়ে
অনবরত কষ্টের অদৃশ্য রক্ত ঝরে।

বাবা,
তুমি সব সময়ই বলতে “মানুষ হও”
আমিতো “মানুষ” হতে পারিনি,
আমিতো তোমার মত আমার সন্তানকে
বলার মত যোগ্য হইনি, যে বলবো ,”মানুষ হও”।

বাবা,
প্রথম প্রথম সাকালে ঘুম ভাঙলে ভাবতাম,
হয়তো তুমি ডেকে বলবে, “নামাজ পড়েছিস”,
তারপর, একসময় দেখলাম কেউ আর ডাকেনা,
আগে তোমার ভয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠতাম
এখন তোমার অভাবে ঘুম ভাঙে ।

এক সময় আমি বুঝে গেছি
মৃত মানুষ কখনো ফিরে আসেনা,
মৃত মানুষ কখনো মন খারাপ করেনা,
মৃত মানুষ শুধু আপনজনদের বুকে
জীবন ভর হাহাকার হয়ে থাকে।

আমরা যারা বেচে থাকি তারা মন খারাপ করে
মৃত মানুষদের বুকে নিয়ে বেচে থাকি।
------------------------------------

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৪৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: সম্পত্তি

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৪



গল্প:
সম্পত্তি

সাইয়িদ রফিকুল হক

আব্দুল জব্বার সাহেব মারা যাচ্ছেন। মানে, তিনি আজ-কাল-পরশু-তরশু’র মধ্যে মারা যাবেন। যেকোনো সময়ে তার মৃত্যু হতে পারে। এজন্য অবশ্য চূড়ান্তভাবে কোনো দিন-তারিখ ঠিক করা নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

“রোজা” নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘ইউসোনরি ওসুমি’।

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৫০




‘রোজা’ ফারসি শব্দ, আরবিতে ‘সওম’। ভারতের রাজনীতিতে ‘অনশন’। ইংরেজিতে ‘ফাস্ট’। কিন্তু মেডিকেলের পরিভাষায় রোজার কোনও নাম ছিল না ও মেডিকেল বই গুলোতে রোজা’র বিশেষ কিছু গুণাগুণও উল্লেখ ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×