৩০. মে. ২০০৯. সন্ধ্যা ৫টা হয় নি তখনো।
প্রতিদিনের মতোই ছেলেটি শামসুন্নাহার হলে যেতে কালভার্ট-- তার পাশে খাজি (খালেদা জিয়া) হলের নামফলকের উপর বসেছিলো, তার বন্ধুদের সাথে। মেয়েটি সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো, একটা কাজে পার্শ্ববর্তী হল প্রীতিলতায়। আর ছেলেটা মেয়েটাকে টিজ করলো। একবার দুইবার তিনবার... এটা নিয়মিত, প্রতিদিনই টিজ করে ছেলেটা। আর মেয়েটা ঝামেলা এড়াতে নীরবে সহ্য করে। কিন্তু আজ মেয়েটির সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। মেয়েটি ছেলেটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, এবং প্রতিবাদ করলো। এবং এইরকম আর করতে বারণ করলো। তারপর মেয়েটি গন্তব্যে পা বাড়ালে। এবং সাথে সাথেই পেছন থেকে একটা বিশ্রী গালি তাকে শুনতে হলো।
সে স্পষ্ট শুনতে পেলো, ছেলেটি তাকে ডাক দিয়ে বললো, খানকি...
প্রিয় পাঠক, ওই অবস্থায় আপনি হলে কী করতেন?
মেয়েটি সাথে সাথে রি-অ্যাক্ট করলো। আর ছেলেটি দৌড়ে গিয়ে মেয়েটিকে কষে চড় মারলো, এবং ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলো। ছেলেটির বন্ধুরা ছেলেটিকে টেনে রিক্শায় তুলে দিলে, ছেলেটি বীরদর্পে রিকশা থেকে পুনর্বার লাফ দিয়ে নামলো এবং পড়া থেকে উঠতে থাকা মেয়েটির বুকে-পাঁজরে উপুর্জপরি লাথি মারলো। তারপর কোনোরকমে ছেলেটির সঙ্গীরা ছেলেটিকে নিয়ে যেতে পারলো।
মেয়েটি অভিযোগ করার জন্যে কাছে পিঠে কাউকে না পেয়ে টিচার্স ক্লাবে গেলো, এবং প্রক্টর সহ প্রক্টরিয়াল বডির অনেককেই পেলো, আর যখন প্রক্টরকে অভিযোগটি করলো-- তখন প্রক্টর মহোদয় বললেন, তোমরা সন্ধ্যা ৫টার পর বাইরে না এলেই তো পারো... ইত্যাদি।
মেয়েটি রাজনীতি বিজ্ঞান, মাস্টার্স।
ছেলেটি বিবিএ সেকেন্ড ইয়ার।
এটা হলো অতিসাম্প্রতিক ঘটনা তাই বিস্তারিত করলাম।
ঘটনা-২
এর আগে কলা অনুষদের ঝুপড়িতে কয়েকটা ছেলে ইভটিজিং এর পর কলা অনুষদের ডিনের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে ৪র্থবর্ষে পড়ুয়া মেয়ের গায়ে পানি ঢেলে দেয় এবং মারতে উদ্যত হয়।
ঘটনা-৩
তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহরগামী দুইটারশাটলট্রেনে চারুকলা ৪র্থবর্ষে পড়ুয়া তিনটি মেয়েকে উত্যক্ত করে, কারণ জিজ্ঞেস করলে, মুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ে এবং অশ্লীলভাষায় গান করে।
ঘটনা-৪
তার আগে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে একদল ছেলে একটা মেয়েকে ঢিল ছুড়ে মারে, কয়েকবারের পর মেয়েটি প্রতিবাদ করলে একটি ছেলে স্যান্ডেল খুলে মেয়েটির মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে স্যান্ডেল দিয়ে মারার হুমকি দেয়।
ঘটনা-৫
এর আগে ষোলোশহর স্টেশনে চারুকলা ৩য়বর্ষে পড়ুয়া একটা মেয়ের পিঠে পানি ছুড়ে মারে।
ঘটনা-৬
এর আগে একটা ছেলে ট্রেনে সিটে বসতে পারছে না তাই একটা মেয়ের কোলের উপর বসে যায়, পাশে বসা ছিলো মেয়েটির বন্ধু, বন্ধুটি প্রতিবাদ করলে পথিমধ্যে ট্রেন থামলে বন্ধুটিকে ট্রেন থেকে ছেলেটি এবং তার বন্ধুরা মিলে চড়-থাপ্পর মেরে নামিয়ে দেয়।
এইরকম কোনো ঘটনারই দৃষ্টান্তমূলক বিচার করে নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে আশ্বাস দেয়ার ব্যাপারে অকৃপণ। যেহেতু আশ্বাস দিলে আন্দোলন থেকে বিরত রাখা যায়। আর বিরতির ফলে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্থ হয়, একসময় থেমে যায়। কারণ হতে পারে এইসব ছেলেরা কোনো না কোনোভাবে বড় কেনো বুর্জোয়া রাজনৈতিকদলের সাথে যুক্ত। যারা প্রতিনিয়ত ছাত্ররাজনীতিকে কলুষিত করছে।
এই বিদ্যালয়ে আমি পড়ছি নয়বছর ধরে। এবং দেখছি একই ঘটনা ঘটছে প্রায় নিয়মিত (মাসে গড়ে ৪/৫টা) শাটলট্রেনে, স্টেশনে (বিশ্ববিদ্যালয় এবং ষোলোশহর),ঝুপড়িতে ইত্যাদি স্থানে। যেনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু ছেলে ভর্তিই হয় পড়াশোনার পাশাপাশি মেয়েদেরকে উত্যক্ত করার জন্যে। এদের মা-বোন আছে, কারো কারো হয়তো প্রেমিকাও আছে। তারপরও এরা মেয়েদের সম্মান দিতে জানে না। এরা মেয়েদের মানুষ মনে করে না, একতাল মাংস অথবা যৌনযন্ত্র মনে করে। এদের কাজ হলো: মেয়েদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল গান করা, বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করা, সিগারেটের ধোঁয়া ছোঁড়া, উড়না ধরে টান দেয়া, ঢিল এবং কাগজ ছুঁড়ে মারা, পানি ছুড়ে দেয়া, প্রতিবাদ করলে মুখের উপর গিয়ে অপমান করা এবং গায়ে হাত দেয়া, ফোননাম্বার যোগাড় করে ফোনে অযাচিত অশৈলী প্রস্তাব দেয়া এবং নোংরা কথা বলা ইত্যাদি।
ইভটিজিং একটি সামাজিক ব্যাধি। যা অনেক নিষ্ঠুর ঘটনার জন্ম দিয়েছে। সিমি, তৃষা এবং আরো অনেকে এর দৌরাত্বে তাদের সম্ভাবনাময় জীবনের আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।
এ সংক্রান্ত আইন এবং শাস্তি বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫০৯ নং ধারায় এবং নারী ও শিশুনির্যাতন আইনের ১০ নং ধারায় স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা থাকলেও প্রশাসন কতৃক প্রয়োজনীয় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়া এবং পারিবারিক সচেতনতার অভাবের ইভটিজিং-কারীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনোরূপ শাস্তির সম্মুখিন হয় না।
এমন একটি সামাজকি ব্যাধির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রস্তাবসমূহ:
১. শিক্ষাঙ্গনের সুস্থ ও সাবলিল পরিবেশ বজায় রাখতে ইভটিজিং বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
২. ইভটিজিং প্রতিরোধ কল্পে শাটলট্রেনের প্রতিটি বগিতে, ঝুপড়িতে, স্টেশনে (বিশ্ববিদ্যালয় এবং ষোলোশহর) ইত্যাদি স্থানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ইভটিজিং-কারীদের সনাক্ত করার জন্যে শাটলট্রেনের প্রতিটি বগিতে, ঝুপড়িতে, স্টেশনে (বিশ্ববিদ্যালয় এবং ষোলোশহর) ইত্যাদি স্থানে গোয়েন্দা সোর্স নিয়োজিত করতে হবে।
৪. ইভটিজিং-কারীদের সনাক্ত করার পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আমরা কার কাছে যাবো?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০০৯ রাত ১:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




