somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজকের পরিবহন নৈরাজ্য কোথা থেকে শুরু হয়েছিল?

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেউ নিজের দায় নিতে চায় না।
তবু মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদের মৃত্যুতে চাপা থাকা আমাদের পরিবহন নৈরাজ্য আবার উদোম হয়ে গিয়েছে। এই নৈরাজ্যের শুরু ১৯৮৩ সালে। মনজুরুল আহসান খান যখন সিপিবির শ্রমিক সংগঠন "ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র" এর হয়ে সড়ক পরিবহন ট্রেড ইউনিয়নের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও একছত্র নেতা। সেই মনজুরুল আহসান খান নিজেই বিডিনিউজ২৪ এর মতামত-বিশ্লেষণ বিভাগে (“সড়ক পথে নৈরাজ্য ও দুর্ঘটনা”, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১”) এক কলাম লিখেছেন। প্রসঙ্গ পরিবহন: তারেক-মিশুক মুনীরের অকাল মৃত্যু, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই ইত্যাদি প্রসঙ্গে।
ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে একজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতার ভুমিকা কী, বিশেষত কমিউনিস্ট নেতার? কেবল শ্রমিকের দাবী দাওয়া ও মজুরী ইত্যাদির পক্ষে কথা বলা? পণ্য হিশাবে শ্রমিকের মজুরি বেচাবিক্রি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য দেনদরবার করবার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন ভূমিকা রাখে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হিশাবে সেই দর কষাকষিতে শ্রমিকের স্বার্থ দেখা কর্তব্য? কিন্তু সেটাই কি সব? নাকি আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে? বিশেষত যদি ট্রেড ইউনিয়ন নেতা একইসঙ্গে কমিউনিস্ট নেতা হন? তাঁকে তখন সুযোগ পেলে শ্রমিকের দাবি তুলতে হবে এমন ভাবে যাতে সেটা সমাজের সব শ্রেণীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সকলের কাজে লাগে। পরিবহন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মনজুরুল আহসান খান নিজেই বিডিনিউজে (“সড়ক পথে নৈরাজ্য ও দুর্ঘটনা”, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১”) এক কলাম লিখেছেন। প্রসঙ্গ পরিবহন: মিশুক মুনীরের অকাল মৃত্যু, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই ইত্যাদি প্রসঙ্গে।

বিপ্লবের অস্পষ্ট স্বপ্ন-ছবি ও ট্রেডইউনিয়ন-ইজম
ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে একজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতার ভুমিকা কী, বিশেষত কমিউনিস্ট নেতার? কেবল শ্রমিকের দাবী দাওয়া ও মজুরী ইত্যাদির পক্ষে কথা বলা? পণ্য হিশাবে শ্রমিকের মজুরি বেচাবিক্রি ও নানান সুযোগ সুবিধার জন্য দেনদরবার করবার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন ভূমিকা রাখে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হিশাবে সেই দর কষাকষিতে শ্রমিকের স্বার্থ দেখা কর্তব্য? কিন্তু সেটাই কি সব? নাকি আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে? বিশেষত যদি ট্রেড ইউনিয়ন নেতা একইসঙ্গে কমিউনিস্ট নেতা হন? তাঁকে তখন সুযোগ পেলে শ্রমিকের দাবি তুলতে হবে এমন ভাবে যাতে সেটা সমাজের সব শ্রেণীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সকলের কাজে লাগে। যেমন, শ্রমিকসহ ঐ ট্রেডে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে কভার করে এমন আইনের পক্ষে কথা বলা। বাংলাদেশের কমিউনিষ্টদের মাথায় ঝাপসা অস্পষ্ট হলেও একটা না একটা নিজের কল্পিত বিপ্লবের স্বপ্ন আছে। যদিও ক্রমশই সেই স্বপ্নের ছবি ফিকে হয়ে আসছে টের পায়। তবু কোন একদিন এটা হবে এমন ধারণা দেখা যায়। কবে কোন কালে কীভাবে হবে সেই আগামী আকাঙ্খিত বিপ্লবী রাষ্ট্র তা বাস্তব হোক না হোক, অন্তত ওর ড্রেস রিহার্সেল হিসাবে এখন কেমন আইন হওয়ার দাবি করব তা বলার ভিতর দিয়ে নিজের 'অগ্রগামী' চিন্তার পরীক্ষা ঐ কমিউনিষ্ট নেতা দিয়ে নিতে পারেন। ওর মধ্য দিয়ে নিজ চিন্তার সঠিক বেঠিকতা যাচাই পরখের সুযোগ তিনি নিতে পারেন। এই পরীক্ষা দেবার সুযোগ আবার সবাই পায় না। মনজুরুল আহসান খান পেয়েছিলেন এবং এখন বলা বাহুল্য হবে না যে তিনি ফেল করেছিলেন। ট্রেড ইউনিয়নিজমের ভিতরে থেকেও কমিউনিষ্ট নিজের চিন্তা 'অগ্রগামী' কী না সে পরীক্ষা দেয়া ও পরীক্ষা করার যে সুযোগ থাকে তা তিনি সম্ভবত বুঝতেই পারেননি, ফলে পরীক্ষা দেবার প্রশ্নেরও বালাই থাকেনি। আজকের পরিবহন নৈরাজ্য একদিনে সৃষ্টি হয়নি। আজকের এক্সিডেন্টে মৃত্যুর ভয়াবহতা দেখে আমরা আজাহারি করছি কিন্তু পরিবহন শ্রমিক নেতা হিসাবে এই ট্রেডের নৈরাজ্য সৃষ্টির পিছনে তাঁরও দায় ও ভুমিকা আছে। কারণ, আশির দশকে একচ্ছত্র ভাবে পরিবহন ট্রেড ইউনিয়নের একজন প্রভাবশালী নেতা মনজুরুল আহসান খান। বাংলাদেশের পরিবহণ ট্রেডের ব্যবসা তাঁর হাতেই সে সময় আকার পেয়েছিল, জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), ১৯৮৩।

ছাত্র আন্দোলন ১৯৮৩
এটা ভাল লাগছে যে '৮৩ এর প্রভাবশালী বড় পরিবহন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মনজুরুল আহসান খান নিজেই এখন কলম ধরেছেন। একটা ছোট রেফারেন্স দিয়ে তিনি সেখানে লিখছেন, "অতীতে ড্রাইভারদের শাস্তি বৃদ্ধি করার জন্য আইন করা হয়েছিল, ফাঁসির দাবি উঠেছিল কিন্তু তাতে সড়ক দুর্ঘটনা কমে নি"। সেখান থেকে কথা শুরু করছি। ধরে নিচ্ছি, তিনি এরশাদের আমলের শুরুর দিকের (১৯৮৩) এক সামরিক অধ্যাদেশের কথা বলছেন; ওর বিধানে বলা হয়েছিল, গাড়ী চাপায় কারও মৃত্যু হলে আদালত ড্রাইভারের শাস্তি মৃত্যদণ্ড দিতে পারে। এর বিরুদ্ধে শ্রমিকরা এক জোট হয় এবং যতদুর মনে পড়ে, প্রায় সপ্তাহ ধরে সে সময় পরিবহন ধর্মঘট চলছিল। এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে ১৯৮৩ এর ২৮ ফেব্রুয়ারীতে মিছিলের উপর পুলিশের ট্রাক ঊঠিয়ে দেবার লোমহর্ষক ঘটনাটা ঘটেছিল ঐ পরিবহন ধর্মঘটের পটভুমিতে, পুরানো গুলিস্তান বাসষ্টান্ডের (এখন যেখানে বঙ্গবাজার এই পুরা এলাকাটা ছিল সেই বাসষ্ট্যন্ড) পাশের মেন রাস্তায় দমকল অফিসের একটু পরে। ঐদিনের বিকেলে লোমহর্ষক ঘটনার কারণ, ধর্মঘটে থাকলেও সামরিক আইনের কারণে শ্রমিকরা কোন মিছিল বের করতে পারছিল না। ফলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলকে (ঐদিনের মিছিল খুবই লড়াকু ও জঙ্গী মনোভাবের ছিল) যখন শ্রমিকরা গুলিস্তান অতিক্রম করতে দেখে তখন তারা গগনবিদারী শ্লোগান ও হাততালি দিয়ে স্বাগত জানাতে শুরু করে। এতে সেখানে এমন এক আবহ তৈরি হয় যেন ছাত্র-শ্রমিক এই মহামিলনে বাংলাদেশের নতুন এক পালটা রাষ্ট্রশক্তি উত্থান ঘটে গিয়েছে। অদম্য এই শক্তির সামনে এরশাদের সামরিক রাষ্ট্রক্ষমতা তুচ্ছ। আর ঠিক এর পরপরেই পিছন থেকে এবং প্রায় ষাট মাইল বেগে পুলিশের একটা ট্রাক মিছিলের উপর ঊঠিয়ে দেয়া হয়। মিছিলের বুকের উপর দিয়ে মাঝামাঝিতে ট্রাকটা এক মুহুর্তের জন্য থেমে গিয়েছিল। কারণ লাশ ট্রাকের চাকায় আটকে গিয়েছিল। পর মুহুর্তেই টান দিয়ে পিশে হত্যা করে ট্রাক মিছিল পার হয়ে পালিয়েছিল। ঘটনার সামাজিক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এত তীব্র হয় যে এরশাদ শ্রমিক নেতাদের সাথে দ্রুত আপোষের পথে যেতে বাধ্য হয়। ঐ শ্রমিকদেরই একচ্ছত্র নেতা ছিলেন মনজুরুল আহসান খান।

বিআরটিএ জন্মের আগেঃ
পরিবহন শ্রমিকদের সেই আন্দোলন খুবই জোটবদ্ধ ও তীব্র ছিল। কেবল এক্সিডেন্টে ড্রাইভারের মৃত্যুদন্ডের সামরিক বিধান দেয়া হয়েছিল সেজন্য নয়। ঐ বিধানের আগে বিগতদিনেই পরিবহন শ্রমিক এবং মালিকেরা চরম বিক্ষুব্ধ ছিল। কারণ গাড়ীর লাইসেন্স, রুট পারমিট, ফিটনেস সার্টিফিকেট ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি কোন কিছুই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইস্যু করার কোন সুষ্ঠ নিয়মনীতি অর্থাৎ সরকারের পরিবহন অথরিটি অফিস বলতে কিছুই ডিফাইন করা ছিল না। এরও মুল কারণ, বাংলাদেশে “সড়ক পরিবহণ” ট্রেড গড়ে উঠেছিল স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে, প্রাথমিকভাবে সব ট্রেডই নেহায়ত এক ব্যবসা হিসাবে চাহিদার ভিত্তিতে যেমন গড়ে উঠে। রাষ্ট্রের অথরিটিটিভ এবং কন্ট্রোল ভুমিকা সেখানে কেন দরকার, তা কী হওয়া উচিত, কেন হওয়া উচিত এইসব নিয়ে কোন ভাবনা চিন্তা পরিকল্পনা থেকে এটা গড়ে উঠেনি। অথবা বলা যায় গড়ে উঠার সাথে সাথে তাকে পরিকল্পিত নিয়মনীতি আইনের অধীন করে নেয়া হয়নি। (বলা বাহুল্য আজও নাই) যেন আর পাচটা ব্যবসার মত এটাও একটা ব্যবসা, ট্রেড। ভোক্তা জনগণের পরিবহন চাহিদা বাড়ছে, একটা বাজার তৈরি হচ্ছে ফলে একটা খাতের ট্রেড সেখান গড়ে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। ভোক্তা জনগণের পরিবহন চাহিদা ও একই সাথে গড়ে ওঠা ট্রেডকে নিয়ন্ত্রণ ও বিধিবদ্ধ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বাধীনে নিয়ে আসা – এটাও একটা গণস্বার্থমূলক আকাঙ্খা। এই আকাঙ্খা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রকে ভাবনা চিন্তা পরিকল্পনা করে নীতি আইন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয়। ১৯৮৩ সালের আগে সেসবের কোন বালাই ছিল না। জেলার ডিসি অফিসের অধীনে রাখা এক ডেস্ক থেকে অপ্রতুল সার্ভিস ও অদক্ষ জনবল এবং অস্পষ্ট (যত অস্পষ্ট তত বেশি পরিমাণ ঘুষ) পরিবহন আইন দিয়ে নামকাওয়াস্তে এই কাজ চালানো হত। ফলে ঘুষ নিয়েও পরিবহন মালিক-শ্রমিককে ঐ ডেস্ক কোন সার্ভিস দিতে পারতো না। এটাই ছিল সেকালে পরিবহণ শ্রমিক এবং মালিকদের চরম বিক্ষুব্ধ থাকার কারণ। আর এর এই অক্ষমতার ওপরই “দুর্ঘটনা ঘটলে চালকের মৃত্যুদন্ড” - এরশাদের সামরিক বিধান – যাকে বলা যায় আগুনের উপর ঘি ঢালা হিসাবে কাজ করেছিল।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঐ মিছিল থেকে সেলিম, দেলোয়ার সহ সম্ভবত সাতজন ছাত্র মারা যায়, আর অনেকে আজও পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছেন। ঘটনার মধ্যে তাৎপর্যপুর্ণ ইঙ্গিত হলো, ছাত্রদের সাথে শ্রমিকদের আন্দোলন মিশে র‌্যাডিক্যাল হয়ে যাচ্ছে এবং সাধারণ জনগণ এদের প্রতি সহানুভুতিশীল হয়ে উঠছে, ছাত্র ও শ্রমিকদের সহমর্মিতাকে এরশাদের বিপরীত পালটা ক্ষমতার কেন্দ্র মনে করা শুরু করছে জনগণ। সেই সম্ভাবনাকে সেই সময়ের ক্ষমতাসীনরা বিপজ্জনক মনে করেছিল। সেইসময়ের সরকার তৈরি হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের সংস্কার কর্মসুচী বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাদখলের সরকার। ফলে ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ হবার বিপদ আঁচ করতে পেরে, ২৮ ফেব্রুয়ারী মিছিলে পুলিশের ট্রাক উঠিয়ে দেবার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে, দ্রুত পরিবহন শ্রমিকদের সাথে আপোষ করে ফেলে এরশাদ সরকার। তাৎক্ষণিক সামরিক আদেশে মৃত্যুদন্ড বিধান প্রত্যাহার করে নেয় এবং পরিবহন অথরিটি তৈরীর কাজ শুরুর অধ্যাদেশ জারী করে। এটাই আজকে আমরা যে বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) দেখছি তার জন্ম ও পেছনের ইতিহাস। এতদুর পড়ার পর পাঠকের মনে হতে পারে, বাহ বেশ এক বিজয়ের কাহিনী শুনলাম। কিন্তু আসলে ঠিক তা নয়। কাহিনী হয় উঠেছিল ভিন্ন কিছু।

ব্যবসা আর রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক
ব্যবসা আর রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক হলো, ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট সংকীর্ণ স্বার্থকে সামষ্টিক গণস্বার্থ ও নাগরিক অধিকারের অধীনস্থ করে ব্যবসা করতে বাধ্য করানো রাষ্ট্রের একটি কাজ। ব্যবসার উপর গণস্বার্থের প্রতিনিধি হিসাবে রাষ্ট্রের অথরিটি প্রয়োগ, তৈরি বিধিবদ্ধ আইনের অধীনে ব্যবসা করতে দেয়া, ইত্যাদি। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে রাষ্ট্র এই কাজটা করে মুলত দুটো ভিত্তি মেনে: এক) নাগরিকের কনষ্টিটিউশনাল মৌলিক অধিকারকে তার আইন প্রণয়ণের ক্ষমতার উৎস ধরে নিয়ে, দুই) ট্রেড অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট অথরিটি ও কন্ট্রোল করার এক কর্তৃপক্ষ তৈরী করে; যেমন, বিআরটিএ এবং তার সপক্ষে সংসদে আইন তৈরি করে অর্থাৎ একে আইনগত কর্তৃত্ত্ব দিয়ে। এই হিসাবে বিআরটিএ হচ্ছে এই ধরণের লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ। নাগরিক অধিকারকে নেহায়তই কাগুজে কনষ্টিটিউশনে কিছু লেখা হিসাবে না রেখে বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে আনার অথরিটি। তাই এর হওয়ার কথা সড়ক পরিবহন ট্রেডের গাড়ীর লাইসেন্স, রুট পারমিট,ফিটনেস সার্টিফিকেট ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি সব বিষয়ে লাইসেন্সিং বা অনুমতি দেয়ার জন্য রাষ্ট্রের পক্ষে অথরিটি ও পরিবহন খাত কন্ট্রোল করার কর্তৃপক্ষ। এটা অনেকটা একই মানুষের দুটা সত্ত্বা। একদিকে এই কর্তৃপক্ষকে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকের আইন ও বিধিবিধানের মধ্যে নিয়ে এসে তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে হচ্ছে অন্যদিকে নাগরিকদের সাধারণ স্বার্থ রক্ষা করাও তার দায়িত্ব। আবার পরিবহণ শ্রমিক বা মালিক একইসঙ্গে নাগরিকও বটে। প্রত্যেক পরিবহন শ্রমিক বা মালিক তাদের এই বিশেষ সত্ত্বাকে বিধিবিধানের অধীনস্থ করেই সামষ্টিক নাগরিক স্বার্থের অধীনে নিয়ে আসতে রাষ্ট্র বাধ্য করে। রাষ্ট্রের দিক থেকে “নাগরিকের স্বাভাবিক মৃত্যু হোক” - এই অধিকার নিশ্চিত করার এটা প্রাথমিক বাস্তব পদক্ষেপ। নিশ্চয় কোন পরিবহন ড্রাইভার বা মালিক আর পাঁচটা সাধারণ জনগণের মত চাইবে না নিজেই কোন বেআইনী সড়ক ব্যবস্থাপনার শিকার হন, গাড়ি চাপা পড়ে মারা যান। নিজে পরিবহন ড্রাইভার বা মালিক হওয়া সত্ত্বেও গাড়ি চাপা পড়ে মরা বা পঙ্গু হওয়া তার স্বার্থ হতে পারে না। একজন পরিবহন শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের নেতা, বিশেষত তিনি যদি আবার কমিউনিষ্ট হন তবে ব্যবসা আর রাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্কের দিকটা সম্বন্ধে তিনি ওয়াকিবহাল থাকবে্‌ এটাই আমাদের আশা করার কথা । তিনি কেবল পরিবহণ শ্রমিকদের স্বার্থের নেতা নন অথবা অন্যভাবে বললে তিনি কোন নাগরিকের কেবল পরিবহন শ্রমিক বা মালিক সত্ত্বার প্রতিনিধি হতে পারেন না। তাহলে তিনি আর কিসের নিজের “অগ্রগামী” চিন্তার ঢাক বাজান? শ্রমিকের স্বার্থ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কিভাবে তিনি সমাজের সার্বজনীন স্বার্থ বাস্তবায়ন করেন তার মধ্যেই ট্রেড ইউনিয়নে সক্রিয় একজন কমিউনিস্টের তৎপরতার বিচার আমরা করতে পারি।
আগেই বলেছি ড্রাইভারের মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালুর বহু আগে থেকেই শ্রমিক এবং মালিকেরা চরম বিক্ষুব্ধ ছিল। কারণ একদিকে রাষ্ট্রের লাইসেন্সিং অথরিটি অফিস বলতে কার্যকরী কিছু ছিল না অপরদিকে উপযুক্ত লাইসেন্স অনুমতির অভাবে রাস্তায় পুলিশের ঘুষ, হয়রানির শিকার হতে হত তাদের।। আবার সারা বাংলাদেশের ব্যবসার দিক থেকে পরিবহণের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকরা রাজনৈতিক ক্ষমতার দিক থেকে এত শক্তিশালী ছিল না যে তারা রাষ্ট্রকে বিধিবদ্ধ একটা পরিবহণ অথরিটি গড়তে বাধ্য করতে পারে, যদিও রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব ছিল নিজেই সেকাজ করা। সে সময়ের রাষ্ট্র সবে সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্বব্যাংকের “সংস্কার কর্মসুচী” বাস্তবায়নের রাষ্ট্র হিশাবে গড়ে উঠছে। বিশ্বব্যাঙ্ক যা গড়ে নিয়েছিল এরশাদকে দিয়ে সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে, জনবিচ্ছিন্ন এক রাষ্ট্র কায়েম করে। এর ফলে পরিবহন শ্রমিকদের দিক থেকে দেখলে পরিবহন ট্রেডের ব্যবসায়ীর উপর এক বিধিবদ্ধ আইনী কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ ধরণের) রাষ্ট্র গড়ে দেক এই দাবি বা আকাঙ্খা করলেই চলছিল না বরং পরিবহণ শ্রমিকদের এমন দাবি ও আকাঙ্খা করতে হবে যেন রাষ্ট্র গণস্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে সক্ষম হয়ে ওঠে। এমন রাষ্ট্র হোক যার বিআরটিএ ধরণের বিধিবদ্ধ আইনী কর্তৃপক্ষ গঠনের ক্ষমতা আছে। শ্রমিকদের দরকার দু ধরণের ক্ষমতা: এক) অন্যান্য গণতান্ত্রিক শ্রেণীর সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা বা সামষ্টিক গণস্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য ক্ষমতা দুই) শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষার ক্ষমতা; যেমন, পরিবহন খাতে বিআরটিএ ধরণের বিধিবদ্ধ আইনী কর্তৃপক্ষ গঠনের ক্ষমতা। এদুটোর প্রথমটা না হলে দ্বিতীয়টা সম্ভব না। অর্থাৎ শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত। বিশ্বব্যাঙ্ক-এরশাদ-আমলা স্বার্থ - প্রভৃতির সমীকরণে গড়ে উঠা রাষ্ট্রক্ষমতা শ্রমিকদের বিআরটিএ ধরণের বিধিবদ্ধ আইনী কর্তৃপক্ষ গঠনের আকাঙ্খা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

পালটা গণক্ষমতার ভ্রুণ ও বিস্তারের লড়াই
ছাত্র আন্দোলন (১৯৮২-৮৩) প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে ও চৌহদ্দির মধ্যে এবং পরে সারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিজ কর্তৃত্ব কায়েম করেছিল, এরশাদের শাসন ক্ষমতা কর্তৃত্ত্ব যে জায়গায় অকেজো, অচল। এ এক পালটা ক্ষমতা, যেন সাময়িক দ্বীপ। আন্দোলন লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যা হয়ে উঠেছিল। নিজ ক্ষমতার বিরুদ্ধে এই চ্যালেঞ্জ হওয়া সত্ত্বেও এরশাদের পক্ষে একে আপোষে সহ্য করে নেয়া ছাড়া উপায় ছিল না, নইলে নিজ ক্ষমতার জন্য আরও বড় হুমকি, এমনকি সমুলে উৎখাত হয়ে যাবার বিপদ দেখা দিত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কর্তৃত্ব ছেড়ে দিয়ে একটা সাময়িক ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল সেখানে। ওদিকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদও নিজের কর্তৃত্ব এলাকা বৃদ্ধি ও সমাজের আরও বন্ধু সহযোগী শ্রেণী্র তালাশে ছিল যাতে নিজের সাময়িক ও ক্ষুদ্র পরিসরের ক্ষমতাকে আর একটু স্থায়ী ভিত্তি দিতে পারে ও বিস্তৃত করতে পারে। ৮৩’ ফেব্রুয়ারী শেষে এই পরিস্থিতিতেই, ধর্মঘটে থাকা পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে ছাত্রদের মিলন মুহুর্ত তৈরি হয়েছিল। এই তাৎপর্যপুর্ণ মিলন এরশাদের দিক থেকে চরম ভীতিকর। তাই মিছিলের উপর ট্রাক চালিয়ে দেয়া, সেলিম-দেলোয়ারসহ অনেকের হত্যা ও আহত পঙ্গু হয়ে যাওয়া। তবে এসব আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আর একটু শক্তিশালী ক্ষমতা হয়ে উঠতে পেরেছিলাম অবশ্যই। তাই এবার এরশাদের পরিবহন সেক্ট্ররের শ্রমিকদের দাবির প্রতি নত হওয়া ও বাধ্য হয়ে ওর ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মনজুরুল আহসান খান এর সাথে আপোষ টেবিলে বসা ঘটতে পেরেছিল। এটা স্রেফ টেবিলে এপারে ওপারে বসা নয়। টেবিলের এপারে বসে মনজুরুল আহসান খান নিজেকে ক্ষমতাবান হিসাবে নিশ্চয় নিজেকে অনুভব করতে পারতেন এবং করেছিলেন। তার পিছনে ছিল ছাত্র ও শ্রমিকদের ঐক্য জোটের এক পালটা ক্ষমতা। ভ্রুণ রূপ ও সাময়িক হলেও তা ছিল গণক্ষমতা। আর টেবিলের অপর পারে যারা ছিলেন তাদের ছিল আপোষের তাগিদ, ক্ষমতায় ছাড় দেয়া, যাতে বিধিবদ্ধ একটা পরিবহণ অথরিটি গড়ে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা যায়। প্রতীকীভাবে বলা যায়, টেবিলে বসে কথা শুরুর আগে মনজুরুল আহসান খান যেন ছাত্র ও শ্রমিকদের ঐক্য জোটের ক্ষমতা স্বরূপ এক পিস্তল পকেট থেকে বের করে টেবিলে রেখে কথা বলতে শুরু করেছিলেন। মনজুরুল আহসান খান নিশ্চয় এই নতুন ধরণের ক্ষমতার মজা স্বাদ অনুভব করেছিলেন কিন্তু ঐ গণক্ষমতার মর্ম বুঝতে পারেন নাই তা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।
পাঠকের মনে হতে পারে এরপর এথেকে মহা কিছু একটা গণস্বার্থের অথরিটি হিসাবে নিশ্চয় বিআরটিএ বা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি গঠিত হয়েছিল! দুঃখিত, তা হয়নি। হয়েছিল পর্বতের মুসিক প্রসব। গণস্বার্থের গণক্ষমতার সাথে জেনে বা না জেনে বেইমানী। এককথায় বললে, পরিবহন ট্রেডে আলাদা বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ হিসাবে বিআরটিএ একটা গঠিত হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা শুরু থেকেই হয়ে উঠেছিল পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিক ইউনিয়ন বাজার সওদা করার মত পছন্দ মাফিক গাড়ীর লাইসেন্স, রুট পারমিট, ফিটনেস সার্টিফিকেট ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি যেন “উপযুক্ত মুল্যে” খরিদ করতে পারেন এমনই এক প্রতিষ্ঠান। শ্রমিক-মালিকরা লাইসেন্সিং অথরিটি ও এর নিয়ন্ত্রণ, গণস্বার্থের রাষ্ট্রের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ বলতে বুঝেছিল ও মানে করে নিয়েছিল নিজেই নিজেকে লাইসেন্স দেয়া। তাতে সরকারী একটা সীল লাগে বটে তাই সেই সীল দেয়া কাগজ খরিদ করে নেয়ার জন্য ঘুষখোর সরকারী আমলার এক বাহিনী তৈরি করে নেয়া হয়েছিল যাতে ঐ সীল “উপযুক্ত মূল্যে” ওপেন সিক্রেটের মত কেনাবেচা করা যায়।

টেবিলে মনজুরুল আহসান খান কার প্রতিনিধি
মনজুরুল আহসান খান আন্দোলনে বাধ্য হওয়া এরশাদের আপোষ আলোচনার টেবিলে বসেছিলেন গণক্ষমতার প্রতিনিধি হিসাবে সম্মান ও নিজ ক্ষমতার বলে। সেটা এরশাদের অনুগ্রহ ছিল না, ছিল বাধ্যবাধকতা। কারণ, ছাত্র-শ্রমিকদের ঐক্য জোটের পালটা ক্ষমতা ততদিনে গণআকাঙ্খা ধারণ করে গণস্বার্থের প্রতিরূপ হিসাবে আবির্ভুত হয়ে গিয়েছিল। এই সাময়িক তবে গণক্ষমতাই মনজুরুল আহসান খানকে টেবিলে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ট্রাডেজি হলো মনজুরুল আহসান খান তা বুঝতে পারেন নাই। তিনি ভেবেছিলেন তিনি ট্রেড ইউনিয়ন নেতা কেবল পরিবহন শ্রমিকদের প্রতিনিধি। শ্রমিকরা লাইসেন্সিং ব্যবস্থাকে নিজের রুটিরুজির পথে একটা বাধা হিসাবে দেখেছিল। তাও হয়ত বাধা হিসাবে দেখত না যদি পুলিশ রাস্তায় নেহায়তই ঐ কাগজের অজুহাতে ঘুষ হয়রানি না করত। এটা শ্রমিকের এই অবুঝ স্বার্থচিন্তার সংকীর্ণতা। কমিউনিস্টদের কাজ এই সংকীর্ণতার বাইরে নিয়ে এসে আরো বৃহত্তর স্বার্থের সঙ্গে শ্রমিকদের পরিচিত করানো। কিন্তু সেটা ঘটে নি। ফলে শ্রমিকেরা শর্টকাট পথে বিআরটিএ নামে এমন এক দোকান চেয়েছিল যেখানে পয়সা (ঘুষ) দিলে লাইসেন্স বিক্রি হবে এবং তা অনায়াসে পাওয়া যাবে। পরিণতিতে বিআরটিএ হবে শ্রমিক ইউনিয়নের পদানত, ইউনিয়নের অধীন এক দোকান। জন্মের দোষে বিআরটিএ আজ সেটাই হয়ে আছে, পরিবহন ট্রেড নিয়ন্ত্রণকারী অথরিটি সে নয়। মনজুরুল আহসান খান শ্রমিকদের সাথে মিলিয়ে নিজেকে কেবল শ্রমিক প্রতিনিধি ভেবেছিলেন। যে নতুন গণক্ষমতা তাঁকে প্রতিনিধি করে পাঠাচ্ছে তিনি তার মর্ম এরশাদ বিরোধী গণান্দোলনের উত্তাল মুহূর্তেও ধরতে পারেন নাই। পরিবহন ট্রেডে গণস্বার্থ (নাগরিক) স্বার্থ আর বিপরীতে সংকীর্ণ শ্রমিক স্বার্থ এই দুইয়ের ফারাক মনজুরুল আহসান খান বুঝতেও চাননি, কর্তব্য করণীয় মনে করেননি। আমরা ধরে নিতে পারি এই বিষয়ে মনজুরুল আহসান খানের পালটা ডিফেন্স বক্তব্য আছে। হয়ত তিনি বলবেন, “পুরা রাষ্ট্রটা যেখানে গণবিরোধী (বুর্জোয়াদের!) সেখানে এক গণস্বার্থের বিআরটিএ কী গড়া সম্ভব?” – এইসব। এছাড়া আমরা খেয়াল করলে দেখব এধরণের কথা আরও অনেকেই বলবে। যেমন কমিউনিষ্ট বিপ্লবের একটা ভাবনা হলো - কোন একদিন একটা বিপ্লব ঘটবে এরপর তখন তাঁরা তাতে গণ আকাঙ্খার প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ার ব্যাপারে কী করা যায় তা নিয়ে ভাবতে বসবেন। এর আগে আমাদের এখনকার বাস্তব সমাজে বসে সেগুলোর চিন্তাভাবনা করা অহেতুক। এগুলোকেই বলে পরলোকবাদিতা। ইহলোকে পরলোক বেহস্ত কায়েমের জন্য কী করা যায় কী করা সম্ভব সে চেষ্টাটা নয়, বরং পরলোকে সব সমস্যার সমাধান হবে এই লোভ দেখিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা।

ব্যক্তি নয়, ঘটনার পর্যালোচনা
শ্রমিক নেতা মনজুরুল আহসান খানকে সমালোচনা এখান উদ্দেশ্য নয়, বরং কমিউনিস্ট হিসাবে ঐতিহাসিক মুহূর্তের সুযোগ না নিতে পারলে কী ধরণের পরিণতি ঘটে তার পর্যালোচনা। কোন ক্ষমতার বলে বলীয়ান হয়ে মনজুরুল আহসান খান আলোচনার টেবিলে যেতে পেরেছিলেন সেই উপলব্ধির অভাবে আন্দোলনের ভিতর দিয়ে কীভাবে পালটা ক্ষমতার আবির্ভাব ঘটে, তা গণস্বার্থের উপায় হাতিয়ার হয়ে উঠে সেই দিকগুলো নজরে আসে নি। এবং সুযোগ পাওয়ার পরেও তাকে কাজে খাটানো যায় নি। ভ্রুণ ক্ষমতাকে রক্ষা ও বাড়িয়ে স্থায়ী স্থিতি করার জন্য সংগ্রাম জারি রেখে সে পুর্ণাঙ্গ ক্ষমতা হয়ে উঠবার পথ বা প্রক্রিয়া বাংলাদেশের কমিউনিস্টদের চিন্তাচর্চায় অনুপস্থিত। এজন্যই সারাজীবন সবচেয়ে কঠিন কঠোর সীমাহীন আত্মত্যাগের পরেও এর পরিণতি পরলোকবাদিতা। গণক্ষমতার উত্থান বিষয়ক কোন তত্ত্ব ভাবনা বাস্তব অভিজ্ঞতা কিছুই এদেরকে স্পর্শ করে না। যেমন, ছাত্র-শ্রমিকদের ঐক্য জোটের পালটা ক্ষমতা মনজুরুল আহসান খানকে গণক্ষমতার প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছিল। তিনি সেখানে ভোল পালটে সংকীর্ণ শ্রমিক স্বার্থের প্রতিনিধি যদি না হয়ে যেতেন তাহলে কী হত? কী করতে পারতেন? নিজ ক্ষমতার মর্ম অনুধাবনের সাহসে তার উচিত হত বিআরটিএ কে একটা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলা। প্রতিষ্ঠান মানে হলো, পরিবহণ ট্রেডে জড়িত শ্রমিকদেরকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক দক্ষ জনশক্তি গড়ার মূল প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগুনো। আজ ২০১১ সালেও যারা আমাদের পরিবহন ব্যবস্থাকে চালিয়ে রাখছেন তাঁরা কিন্তু এই গরীব উপযুক্ত ট্রেনিং বা শিক্ষা স্বীকৃতি বঞ্চিত নীচের মানুষগুলোই। ড্রাইভার-ওস্তাদের বেগার খেটে গালমন্দ খেয়ে এরা নিজেরা ড্রাইভার পেশায় আসার চেষ্টা করছে। আজ যারা ড্রাইভারের তার প্রায় ১০০ ভাগই এভাবেই ড্রাইভার হয়েছেন। এক স্বতঃস্ফুর্ত ইভুয়েলশনারী প্রক্রিয়াতেই ড্রাইভার উৎপাদন চলছে। এখান থেকে আমরা পেশাদার দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে, আমাদের গণস্বার্থ প্রয়োজন মিটবে এটা আশা করতে পারি না। ফলে বিআরটিএকে যদি দক্ষ পরিবহণ শ্রমশক্তি গড়া ওর মূল লক্ষ্য মেনে সাজিয়ে তোলা যায় তবে এরপর ওর নিজের প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের লাইসেন্স প্রদান আর আলাদা কোন কাজ হয়ে থাকে না। তবে এর খরচ যোগানোর ব্যাপার আছে। রাস্তায় সে সকল গাড়ী চলাচলের অনুমতি পাবে ওখানে আলাদা ট্রেনিং ট্যাক্স আরোপ করে প্রতিষ্ঠান বা ট্রেনিং চালাবার ফান্ড যোগাড় করা যেতে পারে। এই অনুমতিদানকে সুষ্ঠ ও সহজ ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে পারলে এখন যে টাকা গাড়ীওয়ালারা অনুমতি পেতে ঘুষে খরচ করেন তাই ট্রেনিং ট্যাক্স হিসাবে খাত বদল হতে পারে, মালিকের উপর যা আলাদা বোঝা হবে না। এসব পরিকল্পনা কাজকে পরিবহন ট্রেডের ইউনিয়নের দাবি হিসাবে আন্দোলনের বিষয় করা সম্ভব ছিল । এতে আমলাতান্ত্রিক বাধা বহু ওজর আপত্তি মোকাবিলা করতে তিনি ছাত্র-শ্রমিকদের ঐক্য জোটের পালটা ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারতেন, ঐ সাময়িক ক্ষমতাকে বৃহত্তর পরিসরে গণভিত্তি দিতে পারতেন। ধরা যাক তাঁর পেশাদার দক্ষ জনশক্তি গড়ার জন্য বিআরটিএ সাজানোর প্রস্তাব পরিকল্পনা ব্যর্থ হত, ঠিক যেমন ছাত্রদের আন্দোলনও কায়েমী রাজনৈতিক দলের কাছে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তাতে কিছু এসে যেত না। কারণ আসল সমাধান তো একটাই, পেশাদার দক্ষ জনশক্তি গড়ার মুখী করে বিআরটিএ সাজানো। সেটা আজও হয়নি। আজ মিশুক-মুনীরের মৃত্যুর কারণে তাঁরা ভোকাল মধ্যবিত্ত গোত্রের বলে চলে আসা পরিবহণ নৈরাজ্য আবার আজ ইস্যু হয়েছে। এটা বার বার হতে থাকবে। শ্রমিক ইউনিয়নগুলোও যে সুখে শান্তিতে আছে তাও নয়। সে সময় বিআরটিএ সাজানোর নীতি কী হবে সে প্রস্তাব হাজির থাকলে সেদিন না হোক এতদিনে তা ইউনিয়নগুলোর মুখ্য সরব দাবী হতে উঠতে পারত। সেটা না হওয়াতে আমরা দেখছি এখন পরিবহন দরদী নেতা হয়েছেন মন্ত্রী শাজাহান খান। কিন্তু তাঁর সমাধান সেই একই সংকীর্ণ এবং টাকা কামানোর দাবী – বিআরটিএ কে কোন পরীক্ষা বা পদ্ধতি ছাড়াই লাইসেন্স দিতে হবে। এর সোজা মানে হলো, বিআরটিএ কে আরও শাজাহান খানের মত ছদ্ম শ্রমিক ইউনিয়ন নেতার পকেটে তুলে দিতে হবে। এটা মনজুরুল আহসান খানের যুগে যে পথ তিনি দেখিয়েছিলেন এরই আরও সহজ এক ভার্সন। তবে এবার মন্ত্রী শাজাহান খানের উল্লেখযোগ্য নতুন অবদান হলো তিনি নিরাপদ সড়ক জীবনের দাবি এই গণস্বার্থের বিরুদ্ধে শ্রমিকদেরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। যেন পরিবহন শ্রমিকেরা গণস্বার্থের শত্রু। এতে শ্রমিকদের দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে ওঠার সুযোগ ও সম্ভাবনার দিকটা অন্ধকার। গরুছাগল চিনলেই লাইসেন্স দিতে হবে – তাঁর এই দাবি শুনলে তাঁকে শ্রমিক দরদি শেয়াল মনে হতে পারে। ক্লাস ফাইভ বা এইট পাশ – এগুলো ড্রাইভার হওয়ার জন্য কোন বাধাই নয়। প্রয়োজন ট্রাফিক রোড সাইন ইত্যাদি দিকগুলো সঠিক বুঝতে ও বলতে পারা যেটা উপযুক্ত ট্রেনিং কোর্স কারিকুলামে শক্তভাবে অন্তর্ভুক্ত করলেই দক্ষ ড্রাইভার জনশক্তি করে তাদের গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু শাজাহান খানের লক্ষ্য সেদিকে নয়। শ্রমিক দরদী সেজে শ্রমিকরা যেমন অপেশাদার অদক্ষ অসম্মানজনক জীবনযাপন করছেন তেমনই রেখে দিতে চান তিনি যাতে শ্রমিকেরা তাঁর পকেটেই থাকেন।

মনজুরুল কী নিজের ট্রেড ইউনিয়ন রক্ষা করতে পেরেছিলেন?
আজ পরিবহন নৈরাজ্য বলে আমরা যা দেখছি তা মনজুরুল আহসান খানের দেখানো সর্টকাট পথ, বিআরটিএ কে শ্রমিক ইউনিয়নের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়ার পথ। যেটা আরও সর্টকাট করে গড়ার নায়ক হতে চান শাজাহান খান। এটা যতই শর্টকার্ট ততই তা গণস্বার্থ বিরোধী হয়ে উঠছে। পরিবহণ শ্রমিকদের আজ গণস্বার্থের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে। কিন্তু একচ্ছত্র ও সবচেয়ে বড় পরিবহন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মনজুরুল আহসান খান আজকে কোথায়? বিআরটিএ কে শ্রমিক ইউনিয়নের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়ার পথ দেখানোর পরেও কেন তিনি নিজের ইউনিয়নকে ধরে রাখতে পারলেন না? উপরে দেখিয়েছি, পরিবহণ শ্রমিকদের মূল সমস্যার সমাধান পেশাদার দক্ষ জনশক্তি হিসাবে নিজেদের গড়ে তোলা। সেই কাজ কখনই মনজুরুল আহসান খানের করণীয় কাজ হতে পারে নি। অথচ শ্রমিকদের এই স্বার্থ রক্ষার মধ্য দিয়ে সমষ্টির স্বার্থ রক্ষা করার সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। যে দিকটা তিনি কাজে লাগাতে পারেন নাই কারণ মাঠে ক্ষমতা তৈরি করা ও কীভাবে তা ঘটে – এককথায় “আন্দোলন ও ক্ষমতা” বিষয়টা আমাদের রাজনীতির মাঠে আজও অপরিস্কার। ওদিকে বিআরটিএ কে মনজুরুল আহসান খানের মাধ্যমে শ্রমিক ইউনিয়নের পকেটে ঢুকিয়ে দিতে এরশাদও ভয়ানক রাজী ছিলেন বলেই এটা সহজেই ঘটতে পেরেছিল। কারণ তাঁর তাগিদ ছিল শ্রমিক আন্দোলন ছাত্রদের সাথে মিশে র‌্যাডিক্যাল না হয়ে উঠুক। তাঁর ক্ষমতার হুমকিকে যত দ্রুত সম্ভব খামোশ করে দেয়াই তার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বিআরটিএ কে শ্রমিক ইউনিয়নের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়ার কাজে রাজী হয়েই এরশাদ বসে থাকেননি। এরই প্রথম মাঠের পদক্ষেপ হিসাবে তিনি সংগঠিত পরিবহণ শ্রমিক ভেঙ্গে দেবার কাজ হাতে নেন। মার্চ ১৯৮৩ এর প্রথম সপ্তাহে তিনি ঘোষণা দেন ঢাকা শহরের তখনকার একমাত্র বাসষ্ট্যান্ড গুলিস্তান বাসষ্ট্যান্ডই তুলে দেয়া হবে। এর বদলে গাবতলী, সায়েদাবাদ (পরবর্তীতে মহাখালী) তে বাসষ্ট্যান্ড থেকে পরিবহণ ব্যবস্থা চালু করা হবে। এতে গাবতলীই সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হিসাবে হাজির হয়। আর গাবতলীকে নিজের ক্ষমতার হাতিয়ার হিসাবে গড়ে তোলার ঠিকা দেয়া হয় বিউটি সিনেমা হলের মালিক আব্দুল খালেক বা মিরপুরের খালেককে এবং ডিজিএফআইয়ের আমিনুল ইসলামকে। (আমিনুল ইসলাম রিটায়ার করার পরও তার নামে নেতৃত্ত্বে এক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন টিকেছিল।) গাবতলী থেকে বাস পরিচালনার নিয়ম বানানো চাঁদা তোলা, সিটি বাস সার্ভিসের রূট ঠিক করা বাস নামানো সবকিছুর একক কর্তৃত্ত্ব আসে খালেকের হাতে। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এঘটনায় ইউনিয়নসহ সবকিছুর কর্তৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যাওয়া দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া মনজুরুল আহসান খান কিছুই করতে পারেননি। আন্দোলনের ফসল হিসাবে বিআরটিএ যদি শ্রমিক ইউনিয়নের পকেটে ঢুকে যায় তাহলে শ্রমিকদের আর একজন কমিউনিষ্ট ট্রেড ইউনিয়ন নেতার দরকার কী? এটাই ছিল বাস্তবতা। এই হিসাবে একজন খালেক বা আমিনুল ইসলাম তাদের উপযুক্ত নেতা। ওদিকে এরশাদের হয়ে খালেকের মাসলম্যান উত্থান, নতুন চাদাবাজির ঠিকা জায়গীরদারীতে লোকজন পোষা – এতে এরপর আর কখনই কোন পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন গণস্বার্থ আন্দোলনের পক্ষে থাকেনি। নানান পকেটে পকেটে ঘুরে এখন দেখা যাচ্ছে মাদারীপুরের শ্রমিক নেতা শাজাহান খান সবচেয়ে প্রভাবশালী। কিন্তু তাঁরও রাজনীতি সেই একই, বিআরটিএ ও লাইসেন্সকে শ্রমিকদের আরও হাতের মুঠোয় এনে দিব। পরিবহণ শ্রমিকদের চোখে শাজাহান খান হয়ত শ্রমিক দরদী। কিন্তু শ্রমিকরা যেমন অপেশাদার অদক্ষ জনশক্তি হয়ে ছিলেন, অসম্মানজনক জীবনযাপন করছিলেন তেমনই আছেন। বাড়তি মুকুট হলো, গণআকাঙ্খার বিপরীতে তাঁদের দাড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শ্রমিকদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:১৮
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×