somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিয়েলিটি

০৩ রা জুন, ২০১৩ দুপুর ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আরেকটু জোরে হাঁটতে গিয়ে থেমে যায় রেশমা। জুতাটা ছিড়ে গেল না তো! ঠিক আছে দেখে আশ্বস্ত হয়ে স্বাভাবিক গতিতেই হাঁটতে শুরু করে। আবার বড় মামার ফোন। চাপা কন্ঠে অগ্নি ঝড়ে পড়ে তার
- কিরে ওরা কি তোর জন্য অনন্তকাল বসে থাকবে? ফাজিল মেয়ে!
- মামা, এই তো আসছি, রিক্সা পাইনি খুঁজে ( মিথ্যা বলে রেশমা)

রিক্সা পেয়েছিল সে, কালকের টিউশনিতে যাবার বাস ভাড়া খরচ করার সাহস তার হয়নি। তাছাড়া এমন দেরিও সে করেনি যার জন্য এমন করে বকা দিতে হবে। অবশ্য তার গা সওয়া হয়ে গেছে এই ধরনের কথাগুলো। শুধু তার নয়, তার মা সহ দুই বোনেরও।

দুই বছর আগে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা মারা যান, অনেক কষ্টের টাকায় কেনা গাজীপুরের এক চিলতে জমিটুকু বন্ধুর প্রতারনায় হাতছাড়া হবার কষ্টটা তার দুর্বল হার্ট সইতে পারেনি। তিন মেয়ে সহ স্ত্রীকে একদম কপর্দকশুন্য করে রেখে চলে গেলেন পরপারে। কোম্পানিতে চাকুরী করা লোকের কোন ভাতা বা কিছু ছিল না স্বাভাবিকভাবেই, এরপর রেশমাদের ঠাঁই হয় তার স্বচ্ছল বড় মামার বাড়িতে। রেশমার ভাগ্যটা এমন কেন কে জানে। তার বাবা বেঁচে থাকতে আর্থিক টানাপোড়ন থাকলেও একটি কটু কথা সে জীবনেও শোনেনি।তার ধারনা গল্প উপন্যাসেও এমন কথা লিখতে লেখকের কষ্ট হবে! যা সে এই দুই বছরে তার মামা মামীর কাছে শুনেছে। এইসব শুনে বাবাকে ভীষণ মনে পড়ে তার।

অনার্স ২য় বর্ষে থাকার সময় বাবার বিদায়, পরিবারের বড় সন্তান রেশমা এরপর থেকে কতভাবে যে উপার্জনের চেষ্টা করছে, তার ইয়াত্তা নেই। একটি এনজিও তে বেশ ভালো বেতনের জব মিলেছিল, সমাজকর্মের মেধাবী ছাত্রী সে, কাজও ভালো করছিল। বসের “নজর” তার জবটা ছেড়ে দেওয়াতে বাধ্য করল। মাকেও বলতে পারেনি কেন চাকুরীটা করতে পারলো না। দুঃখিনি মায়ের আরেকটু কষ্ট বাড়িয়ে কি লাভ।

এখন দৌড়াদৌড়ি করে তিনটি টিউশনি করে। আজ আগেই বের হতে পারত, নয় বছর বয়েসের ছাত্রীর মা বললেন বেতন দিবেন আজ, এই বলে আধাঘন্টা আরো পড়াতে বললেন। এর মাঝেই নাকি গৃহকর্তা এসে পড়বেন। টাকাটা অসম্ভব দরকার তার, চল্লিশ মিনিট অপেক্ষা করে খালি হাতেই ফিরতে হলো রেশমাকে। এই অপেক্ষাটা না করলে তাকে ঘার্মাক্ত, ক্লান্ত শরীর নিয়ে যেতে হতো না লোকগুলোর সামনে, বাসায় ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে যেতে পারত।

প্রথম প্রথম তাদের সাথে দেখা করা ব্যপারটা উত্তেজিত করতো রেশমাকে। হয়তো দুই একবার মনের অজান্তে সুখস্বপ্নও দেখে ফেলতো জেগে জেগে। সেই দিনের পর সব অনুভুতি পানিতে মিশে গেছে।

ওরা তিনজন এসেছিলেন, মামা স্বম্পর্কের কেউ হবেন, আর্থিক ব্যপারে অনেক বেশি কথা জিজ্ঞাসা করছিলেন। মুখের আঁধার দেখেই বুঝা যাচ্ছিল তার মনঃপুত হচ্ছেনা কিছুই। শেষে বড় মামার এক কথায় রাগ হয়ে লোকটি সকল ভদ্রাতা ভুলে যা তা বলা শুরু করলেন,
- মেয়ের ঢঙ্গী ছবি পাঠিয়ে তো আমাদের ডাকলেন এখানে, এসে দেখি মেয়ের গায়ের রং ফর্সার দিকে তো দুরের কথা, এই মেয়েকে কালো ছাড়া কি বলবে! আর টাকা পয়সা বলতে তো কিছুই নেই, ভিখিরির মত আপনার পরিবারে থাকে! একটা ভাই থাকলে তবু কথা ছিল, তিনতিনটা বোন, জীবনে ছেলে সন্তান হবে কিনা এই মেয়ের কে জানে!
আরো এমন কিছু কথা শুনে রেশমা থরথর করে কাঁপতে থাকে। রেশমার বড় মামা ধরে রেষ্টুরেন্ট থেকে বের করে নিয়ে আসে তাকে।

এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত, বিষন্ন মেয়েটির চোখ ভিজে আসতে চায় অসম্ভব যন্ত্রনায়! নাহ, কান্না করা যাবে না, মামা বলেছিলেন কাজল চোখে দিতে, কাজল লেপ্টে গেলে আরো বকা খেতে হবে মামার কাছে। উড়নার কোন দিয়ে চোখের সাদা অংশে চেপে পানিটুকু মুছে ফেলে রেষ্টুরেন্টের সিড়ি টপকায় রেশমা স্বর্তপর্ণে পা ফেলে । জুতাটা বেশ পুরোনো যে………
৪২টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×