somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কথা বলিনি কাউকে - ৭ (খাওয়া-দাওয়া)

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় খাওয়া দাওয়া নিয়ে বেশ বাড়াবাড়ি ছিল আমার। এটা খাব না। ওটা খাব না। শুধু রুটি ছাড়া কিছু খাব না। বাটারবন, ক্রিম রোল এসব হলেও চলবে। একটু বড় হয়ে ভাতের সাথে শুধু ডাল হলেই চলবে। তিতা করলা, স্বাধহীন লা্উ, মিষ্টি গাজর এসব চলবে না। সব সময় এরকম ছোক ছোক করতাম। মা আমার খাওয়াদাওয়া নিয়ে মহা বিরক্ত।

পরে অবশ্য খাওয়া দাওয়া নিয়ে সমস্যা মিটে গিয়েছিল। মনে হত বাঁচার জন্য খেতে হবে। বিভিন্ন সবজি নিয়ে এখন আমি নিজে নিজে কিছু এক্সপেরিমেন্ট করি। এই যেমন, আমার চশ্‌মার পাওয়ার ছিল -৩। হঠাৎ করে কি মনে করে টানা ১ মাস প্রতিদিন ১ টা করে গাজর খাওয়া ধরলাম। ১ মাস পর মনে হল আমি চোখে একটু ঝাপসা দেখছি। ডাক্তারের কাছে গেলাম। পাওয়ার মেপে বললেন -১.৫। B-)

তো, অবশ্যই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রান্না আমার মা করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর মা রান্না করা ভুলে গেলেন। ভালবাসার মানুষ হারানোর শোকের শক্তি কতটুকু এখন আমি বুঝতে পারি।

আর আমার দুজন বন্ধুর মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ আমি কখনও ভুলবনা। আমি আক্ষরিক অর্থে তাদের বাসায় গিয়ে বসে থাকতাম খাওয়ার জন্যে। একজন বন্ধুর মা রান্না করতেন স্পাইসি খাবার। আরেকজন করতেন আমাদের সনাতন বাঙালি খাবার। যিনি স্পাইসি খাবার রান্না করতেন তিনি একবার ১লা বৈশাখে পান্তা - ইলিশ করলেন। খেয়ে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এরপরের কোরবানী ঈদে অবশ্য পুষিয়ে গিয়েছিল।

তো শুধু খাওয়ার লোভে বসে থাকার ভুত একদিন এক ঘটনায় সেরে গেল। স্পাইসি খাবারের লোভে এক ছুটির দিন ঠিক দুপুরে বন্ধুর বাসায় গিয়ে উপস্থিত। দুপুর বেলায় গিয়েছি তাই খেয়ে যেতে বলল। আর আমি তো এজন্যেই এসেছি ;)। ১৫ মিনিটে টেবিলে খাবার দেয়া হল। ভাত, ভুনা মাংস। খাওয়া শেষ করে বন্ধুর রুমে দরজা লাগিয়ে আরাম করে সিগারেট ধরালাম। সিগারেটে কষে দুটান দিয়ে বন্ধুকে বললাম, "দোস্ত থাক। আমি ফুটি। ভার্সিটি যাওয়া লাগব।" এরপর বন্ধু আমাকে যা বলল তার জন্য আমি ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না। বলল, "নোয়াখাইল্যাগর মতো খাওয়া শেষে যাই যাই করস কেন?" আমার দাদার বাড়ি সত্যিই নোয়াখালী। এরজন্য বন্ধুরা ক্রিটিসাইজ করতে ছাড়তনা। কিন্তু ঐসব বন্ধুদের কথা কখনও গায়ে লাগেনি কারন তারা আমার প্রানের বন্ধু ছিলনা। এই বন্ধুটির সাথে আমার গলায় গলায় সম্পর্ক। অন্যদের সাথে সারা জীবনে আর দেখা হবে কি হবে না তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। কিন্তু এই বন্ধুটির সাথে বিকেলে বা সন্ধ্যায় একবার আড্ডা না দিলে মনে হত কি যেন মিস করলাম। যাই হোক, আমি মনে ব্যাথা পাইনি। রাগও করিনি। কিন্তু কি যেন এক লজ্জায় আমি আর কখনও ওর বাসায় খেতে পারিনি। পরে আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে যোগাযোগও কমে গেল। শুধু এখানেই শেষ হয়নি। আমার মধ্যে সাইকোলজিকেল কি যেন ঘটে গেল। দাওয়াত ছাড়া হুট করে আমি কারওর বাসায় খেতে পারি না। দাওয়াত নিলেও একটু অস্থিরতা কাজ করে আমার মধ্যে। বুঝতেই পারছেন। :|

একটা সময় বেশ অল্প বেতনে চাকুরি করতাম। বিএফসি, হেলভেসিয়া এসবে ঢুকার সাহস আর সামর্থ্যের কোনটাই ছিলনা। মনে আছে, এক বিকেলে উত্তরার হেলভেসিয়ার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমি ওকে বলেছিলাম আমার বেতন যখন ১০ হাজার পাড় হবে তখন আমরা এখানে খেতে আসব।

যাই হোক, খাবার নিয়ে রাতে স্বপ্ন দেখেছেন কেউ? আমার বন্ধুরা তাদের গার্লফ্রেন্ডদের স্মৃতি মাথায় নিয়ে রাতে ঘুমুতে যায়। স্বপ্নেও হয়তো তারা থাকে। আর আমি স্বপ্ন দেখি খাবারের। আমার ইন্দোনেশিয়ান বন্ধুর ধারনা, ইচ্ছে মতো না খেতে পেয়ে আমি এখন রাতে ঘুমিয়েও খাবারের স্বপ্ন দেখি......




যে কথা বলিনি কাউকে - সিরিজ লিন্ক।


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৫৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×