ছোটবেলায় খাওয়া দাওয়া নিয়ে বেশ বাড়াবাড়ি ছিল আমার। এটা খাব না। ওটা খাব না। শুধু রুটি ছাড়া কিছু খাব না। বাটারবন, ক্রিম রোল এসব হলেও চলবে। একটু বড় হয়ে ভাতের সাথে শুধু ডাল হলেই চলবে। তিতা করলা, স্বাধহীন লা্উ, মিষ্টি গাজর এসব চলবে না। সব সময় এরকম ছোক ছোক করতাম। মা আমার খাওয়াদাওয়া নিয়ে মহা বিরক্ত।
পরে অবশ্য খাওয়া দাওয়া নিয়ে সমস্যা মিটে গিয়েছিল। মনে হত বাঁচার জন্য খেতে হবে। বিভিন্ন সবজি নিয়ে এখন আমি নিজে নিজে কিছু এক্সপেরিমেন্ট করি। এই যেমন, আমার চশ্মার পাওয়ার ছিল -৩। হঠাৎ করে কি মনে করে টানা ১ মাস প্রতিদিন ১ টা করে গাজর খাওয়া ধরলাম। ১ মাস পর মনে হল আমি চোখে একটু ঝাপসা দেখছি। ডাক্তারের কাছে গেলাম। পাওয়ার মেপে বললেন -১.৫।
তো, অবশ্যই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রান্না আমার মা করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর মা রান্না করা ভুলে গেলেন। ভালবাসার মানুষ হারানোর শোকের শক্তি কতটুকু এখন আমি বুঝতে পারি।
আর আমার দুজন বন্ধুর মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ আমি কখনও ভুলবনা। আমি আক্ষরিক অর্থে তাদের বাসায় গিয়ে বসে থাকতাম খাওয়ার জন্যে। একজন বন্ধুর মা রান্না করতেন স্পাইসি খাবার। আরেকজন করতেন আমাদের সনাতন বাঙালি খাবার। যিনি স্পাইসি খাবার রান্না করতেন তিনি একবার ১লা বৈশাখে পান্তা - ইলিশ করলেন। খেয়ে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এরপরের কোরবানী ঈদে অবশ্য পুষিয়ে গিয়েছিল।
তো শুধু খাওয়ার লোভে বসে থাকার ভুত একদিন এক ঘটনায় সেরে গেল। স্পাইসি খাবারের লোভে এক ছুটির দিন ঠিক দুপুরে বন্ধুর বাসায় গিয়ে উপস্থিত। দুপুর বেলায় গিয়েছি তাই খেয়ে যেতে বলল। আর আমি তো এজন্যেই এসেছি
একটা সময় বেশ অল্প বেতনে চাকুরি করতাম। বিএফসি, হেলভেসিয়া এসবে ঢুকার সাহস আর সামর্থ্যের কোনটাই ছিলনা। মনে আছে, এক বিকেলে উত্তরার হেলভেসিয়ার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমি ওকে বলেছিলাম আমার বেতন যখন ১০ হাজার পাড় হবে তখন আমরা এখানে খেতে আসব।
যাই হোক, খাবার নিয়ে রাতে স্বপ্ন দেখেছেন কেউ? আমার বন্ধুরা তাদের গার্লফ্রেন্ডদের স্মৃতি মাথায় নিয়ে রাতে ঘুমুতে যায়। স্বপ্নেও হয়তো তারা থাকে। আর আমি স্বপ্ন দেখি খাবারের। আমার ইন্দোনেশিয়ান বন্ধুর ধারনা, ইচ্ছে মতো না খেতে পেয়ে আমি এখন রাতে ঘুমিয়েও খাবারের স্বপ্ন দেখি......
যে কথা বলিনি কাউকে - সিরিজ লিন্ক।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




