আমার প্রোগ্রামার হওয়ার গল্প বলি। লাস্ট সেমিষ্টার। প্রতিদিন ভার্সিটিতে যাই। ক্লাশ থাকলে ক্লাশ করি। না থাকলে টং দোকানে বসে চা খাই, সিগেরেট ফুকি। বই-খাতার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। পরীক্ষার আগে আগে দেখা যাবে। কিছুদিন ধরেই মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। পাস করে করবটা কি? ক্লাশের এক বন্ধু গ্রামীন ফোনে কি যেন এক জব পেয়েছে। সে এখন ডুমুরের ফুল। আমরা সবাই আশায় আশায় থাকি। বন্ধুটি এসে আমাদেরকে যদি একটু নসিয়ত করে যেত। একদিন তার দেখা মিলল ঠিকই। কিন্তু তার ভাব চক্করে আমরা যে যেখানে ছিলাম সে সেখানেই দাড়িয়ে রইলাম। ওই শুধু এদিক ওদিক একটু দৌড়া দৌড়ি করে আবার হাওয়া হয়ে গেল। সেদিনের জন্য আমাদের হাটা চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়ে এল।
ভার্সিটিতে এক সেমিষ্টার ড্রপ দিয়েছিলাম। পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাত হয় মাঝে মাঝে। কয়েক জনের ব্যাংকে জব কনফার্ম। এখন শুধু পাস করা বাকি। খবরগুলো শুনি আর উদাস হয়ে যাই।
উপরের সেমিষ্টারের বড় ভাইদের অবস্থা খুব একটা খারাপ নয়। একজন ভার্সিটির টিচার হয়ে গেলেন। একজন একটি গ্রুপ অব কোম্পানির আইটি ম্যানেজার হয়েছেন। কয়েকজন সফ্টও্য়্যার ফার্মে চাকুরি করছেন। বাকিরা ভালোই আছেন। এসব দেখে আশায় আবার বুক বাঁধি।
হঠাৎ এক সন্ধ্যায় দুবন্ধু আমি আর হাসান চায়ের দোকানে সিগেরেট ফুকতে ফুকতে চিন্তা করলাম প্রোগ্রামিং শিখব। শুনছি সরকার সফ্টওয়্যার ফার্ম গুলোকে সুদ ছাড়াই ঋন দিচ্ছে। মনে হচ্ছে এখানে চাকুরি বাকুরি ভালোই পাওয়া যাবে। আর বিল গেটস্, স্টিভ জবস্ -এদের কথা কে না জানে। ভালো মতন প্রোগ্রামিং শিখলে চাকুরি মনে হয় একটা জুটানো অসম্ভব হবেনা? আর ভার্সিটির কয়েকজন প্রোগ্রামার বড় ভাইদের তো দেখছি। ওনাদেরকে সবাই সমিহ করে চলে দেখেছি।
তো যেই ভাবনা সেই কাজ। দৌড় ঝাপ মেরে সিস্টেকের কাটাবন শাখায় খোজ করলাম। কয়েকজন বড় ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। ভিবি৬ ল্যাংগুয়েজ শিখব ঠিক করলাম। এখানে একটু বলে রাখি। ভিবি৬ নাকি ডটনেট নাকি জাভা শিখব এই সিদ্ধান্তটা আমরা কারওর কাছ থেকে নেইনি। বড় ভাইদের কাছ থেকেও সঠিক কোন নির্দেশনা পাইনি। তখন যদি কেউ বলত, আরে বোকা ডটনেটের যুগে ভিবি৬ শিখবা কেন্? তাহলেই হয়তো আজকের দিনটা অন্যরকম হত। এই ভিবি৬ থেকে বের হতে আমার ৪ বছর সময় লেগেছিল।
যাই হোক, আমরা ৭ জন বন্ধু ভিবি৬ প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখলাম। তার মধ্যে আজকে আমরা ৪ জন এই প্রোগ্রামিং করেই রুটি রোজগার করছি। বাকি ৩ জনের ২ জনই ট্র্যাকের বাইরে। আর একজন নেটওয়ার্কিং লাইনে আছে।
মাঝে মাঝে আমরা বন্ধুরা আলোচনা করি - হঠাৎ আড্ডা দিতে দিতে প্রোগ্রামিং শিখতে চাওয়ার চিন্তাটা আমাদের জীবনে একটি টর্নিং পয়েন্ট ছিল। এই মুহুর্তের ভালো কোন চিন্তাই যে ৫ বছর পরের একটি ফসল তা সচেতন ভাবে কজনেই বা ভাবি.....
যে কথা বলিনি কাউকে - সিরিজ লিন্ক।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




