somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কথা বলিনি কাউকে - ৯ (ধুমপান)

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জীবনের প্রথম ধুমপান করার কথা স্পষ্ট মনে আছে। অনেক ছোট বেলার কথা। বয়েস মনে নেই। কোন এক শীতে নানার বাড়িতে গিয়েছি। সকাল বেলায় মামাদের সাথে লাঠি হাতে গরুর পেছন পেছন ছুটতে ছুটতে গড়ের মাঠে হাজির। হাল দেয়া শেষে মামা ক্ষেতের আইলে বসে জিরোচ্ছে আর কয়েকজন পরিচিত নানা বসে হুক্কা টানছে। আমি পাশে দাড়িয়ে দেখছি। ছোট্ট কালো রংয়ের চ্যাপ্টা মতন একটা বল। একদিকে লাগানো লম্বা একটা ডাটির মাথা থেকে ধোঁয়া উঠছে। ঐ বল টাতে একটা ছোট্ট ফুটাও আছে। নানা কয়েক সপ্তাহের না কাটা সাদা দাড়ি-মোছ ওয়ালা ঠোট গোল করে ফুটার উপর চেপে ধরে কষে টান দিচ্ছে। আর বলের ভেতর থেকে ভারি শব্দের একটা গড়গড় আওয়াজ বেরুচ্ছে। কুয়াশা ঢাকা শীতের সকালে শুনা ঐ শব্দে আমি সম্মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ নানা জিজ্ঞাসা করলেন আমিও টানতে চাই কিনা। আমিও হ্যা সুচক মাথা নাড়লাম। নানা কাছে টেনে নিলেন। :):D

এরপর পুরোপুরি ধুমপান ধরি ইন্টারমিডিয়েটে উঠে। হোষ্টেলে থাকতাম। রুমের আর বাকি সব বিড়ি ফুকে। আর আমি বাবু সেজে বসে থাকি। কিছুদিন পর আমারও ধ্যান ভাংল। মনে আছে, একবার কারওর পকেটে টাকা নেই। কোথা থেকে খুজে পেতে ১ টাকা পাওয়া গেল। বিড়ি গবেষক একজন পরামর্শ দিল বিড়ি না কিনে সস্তায় বাজার থেকে পান খাওয়ার সাদা পাতা কিনে আনা যাক। তাই করা হলো। যখন দরকার সাদাপাতা লাইটের তাপে শুকিয়ে গোল করে কাগজে মুড়ে অনেকদিন পর্যন্ত ধুমপান করা গেল।

ভার্সিটিতে উঠে কলেজ বন্ধুর বাসায় হঠাৎ কবে যেন একবার গাজায় টান মারলাম। বন্ধু আমার আগে ঘুমের ঔষধ খেয়ে নেশা করত। ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমানোর কোন মানে হয়? তাই ওটা আমাকে দিয়ে হয়নি। কিছুদিন পর ফেন্সিডিল ধরল। আমাকে ও সবসময় ডাকত সাথে যাওয়ার জন্য। আমিও যেতাম। ফ্রি ফ্রি সিগেরেট পাওয়া যাবে। কয়েকবার আমাকে বোতলের অর্ধেকটা দিয়েছিল। ভালই। বন্ধুটি দেখতাম ঘুমে ঢলে পড়ছে। আর আমি মহানন্দে একটার পর একটা বিড়ি পোড়াতাম। সব ফ্রি।
সাথে করে কয়েকবার ঢাকা কলেজের বিপরীত দিকের এক পানশালায় নিয়ে গিয়েছিল। ঐ তিতা পানি আমার কখনই ভাল লাগত না। তবুও সময়টা ভালই কেটে যেত। এরপর কবে যেন বিড়ির মতো দেখতে একটা দোমড়ানো মোচড়ানো সাদা শলাকা হাতে ধরিয়ে দিল। গন্ধে আমার নাড়িভুরি উল্টে যাবার জোগাড়। সম্ভবত দ্বিতীয় দিন ঐ গন্ধে মাথা ঘুরে বমি করে দিয়েছিলাম।

এরপর টানা ছয় মাস শুধু ঘুমালাম। ঐ ছয় মাসের কোন স্মৃতি আমার নেই। কোন স্বপ্নও ছিল না। আপনারাই বলুনতো একজন মানুষ যে সবসময় তার জীবনের অনেকগুলো দিনের স্মৃতি হাতরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কিছুই মনে পড়ছে না। তার সময়গুলো এখন কেমন কাটছে?

মা মারা যাবার পর আমার নেশাটা কেটে গেল। হতাশায় ডুবে যাবার কথা ছিল। নেশাটাকে আকড়ে ধরার কথা ছিল। কিন্তু কেন যেন উল্টোটা ঘটল।

বাংলার মেয়েরা মনে হয় কেউ ধুমপান পছন্দ করে না। ভার্সিটিতে একটা মেয়ে প্রায় সময় আমার পাশে বসত। তার মনে অনেক দু:খ ছিল। ওগুলো আমার সাথে শেয়ার করত। আমিও ভাল শ্রোতা ছিলাম। এজন্যে মনে হয় কথা বলতে পছন্দ করত। যখন আমি বিড়ি ফুকে ডেস্কে ফিরতাম, ও অন্য দিকে ফিরে থাকত। আর এখন বাসায় তো চোর পুলিশ চোর পুলিশ খেলা চলে। মুখে গন্ধ পেলেই হল। সেদিন আর..... ;)

অনেকবার ধুমপান ছেড়ে দেবার চেষ্টা করেছি। যখন একা থাকি তখন মনে হয় একটু ভাবের জগত থেকে ঘুরে আসলে কেমন হয়? তাই আর ছাড়া হয়নি। এখন অবশ্য পয়সা বাচানোর চেষ্টায় আছি। আর দোয়া করছি। পকেটে আর একটু পয়সা হলেই কিনে আনব কয়েকটা শলাকা। এখানে বাসস্টপেজে আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা কোন সুন্দরী যখন সিগারেট ধরায় তখন বুকের ভেতরটা টন টন করে উঠে। একটা সুখটানের অভাব বোধ করি খুব তখন....



(আমার এই লেখাটি বন্ধুবর হাসান আর রাসেলকে উৎসর্গ করছি। আমার হাত ধরে যাদের ধুমপান করতে শেখা। পারলে ক্ষমা করিস। আর রাসেল ভাইকে। যিনি ঘন্টায় ঘন্টায় আমার ধুমপান করা দেখে আমার উপর মহাবিরক্ত ছিলেন.....)



যে কথা বলিনি কাউকে - সিরিজ লিন্ক।


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৫৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×