রাত ৯ টা। আমি আর সরব বসে আছি ধানমন্ডি লেকের পাশে। হঠাৎ হঠাৎ সরব ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠে। প্রিয়া কিছুই না জানিয়ে সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আশেপাশের মানুষদের প্রশ্নবিদ্ধ মুখ আমাকে অপ্রস্তুত করে। আমি মাথা নিচু করে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইট পাথরের টুকরো গুলো দেখি।
------------------
মধ্যদুপুর। অসাধারন মুখরোচক এক মধ্যাহ্নভোজের পর আমি আর ফয়েজ দুবন্ধু আবার জম্পেস আড্ডায় মেতে উঠি। এবছর নাকি পদার্থ বিজ্ঞানে ৩ জন নোবেল পাচ্ছে?, কানস্ ফ্লিম ফেস্টিভেলে নওমি ক্যাম্পবেলের কোন মুভিটা যাচ্ছে এবার?, আগামী সপ্তাহের ছুটিতে কোথায় যাচ্ছি?, সুমনের নাকি নতুন ভিডিও এসেছে বাজারে? - আমরা ইন্টারনেটে বসি।
- তবুও আমি একটু অস্বস্তি বোধ করতে থাকি। গত রাতে ফয়েজের প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী ডাক্তার। সেতুলনায় ফয়েজ এখনও পড়াশুনার পাঠও চুকায়নি। আসলে কিছুই করার ছিলনা। দুজনে পালিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিল। সময় পাওয়া যায়নি।
আমি কিছু জিজ্ঞেস করবনা করবনা করেও প্রশ্নটা করে ফেললাম। জবাবে ফয়েজ বলল, মহিব আমার হাসি মুখ দেখে আমার ভিতরটাকে ভুল বুঝনা।
------------------
দুপুর ৩ টা থেকে শিমুল দাড়িয়ে আছে বাস ষ্ট্যান্ডে। এতক্ষন টং-দোকানে বসে ছিল। বেলার এখানেই তো আসার কথা। ওর ফোনটাও বন্ধ। আগে বেলা অভিমান করে মাঝে মাঝে ফোনটা বন্ধ করে রাখত। কিন্তু আজকে ফোনটা বন্ধ রাখার কারনটা কি? অজানা এক আশংকা আর ভয়টা শিমুল মন থেকে জোড় করে তাড়িয়ে দেয়। বেলা অবশ্যই আসবে। আসতে ওকে হবেই।
রাত ৯ টা। মাসুম এসেই একটা সিগারেট ধরায়। তার মুখ দেখে শিমুল কিছু আচ্ঁ করার চেষ্টা করে। মাসুম কিছু বলে না। শিমুল কিছু ভাবতে পারছে না। আচ্ছা ঠান্ডা মাথায় ভাবা যাক কি ঘটতে পারে। বেলা আসার সময় ওর মায়ের হাতে ধরা খেয়েছে। এরপর সবাই রাগারাগি করেছে। মারধরও করতে পারে। তাহলে পরিস্থিতি ঠান্ডা হওয়ার জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
হঠাৎ মাসুম ওর ফোনটা এগিয়ে দেয় - "ধর, বেলা কথা বলবে।"
--হ্যালো....
ওপাশে একটু নিরবতা। বেলা কি কাঁদছে?
--হ্যালো শিমুল। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমাকে ভুল বুঝ না। আমি তোমাকে আগেই বলতে চেয়েছিলাম। আই এম সরি। আমি আস.....
শিমুল বেড়িয়ে যায় দোকান থেকে। ৭ দিন পর পুলিশ কুষ্টিয়া থেকে অর্ধপাগল শিমুলকে উদ্ধার করে।
------------------
কোরবানী ঈদের আগের রাত। ইতালি থেকে দেশে ঈদ করতে আসা বন্ধুর সাথে অনেকদিন পর দেখা। সবাই ঠিক করলাম আজ সারারাত আড্ডা দিব। পুরনো সব বন্ধুদের বাড়িতে বাড়িতে ঢু মারব। নিজেরা রান্না করব। রাতে মুভি দেখব সবাই মিলে। তো রাত ৩ টা বাজতেই সবাই যে যার মতো ঘুমোতে শুরু করল। আমি আর সুব্রত বারান্দায় গিয়ে বসি। সুযোগ পেয়ে প্রশ্নটা করে ফেলি।
-- বিয়েথা কবে করছিস?
-- দোস্ত তমাকে ভুলতে পারছিনা এখনও।
-- সে তো বহুদিন আগের কথা।
-- হ্যা তা তো ৭/৮ বছর হয়ে গেল। সত্যিকারের প্রথম প্রেম যাকে বলে আরকি।
আমরা হাসি। আমি বলি, ঠিক আছে, বিয়ের পর ভাবির সাথে আবার প্রেম করিস।
-- দোস্ত আমি মেয়েদেরকে এখন আর বিশ্বাস করতে পারি না...
আমি সিগারেটের ধোঁয়ায় আমার ভাবনাগুলোকে জড়িয়ে যেতে দেই। আর গুন গুন করে গাইতে থাকি
আমার হাড় কালা করলাম রে
ওরে আমার দেহ কালার লাইগা রে
আমার অন্তর কালা করলাম রে
দুরন্ত পরবাসী....
যে কথা বলিনি কাউকে - সিরিজ লিন্ক।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




