somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন আমল পার করছি পুরনো শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে - ১

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে প্রায় সব সময়েই শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। পূর্ববতী শাসক বা শাসনব্যবস্থা নতুন করে গড়ে ওঠা দেশটির জন্য ইতিবাচক কোনোকিছু ইচ্ছাকৃতভাবে রেখে যেতে চায় যায় না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা ঘটেছে। বিদেশি শাসনের ধারাবাহিকতায় বৃটিশদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাকিস্তান আমলের বাংলাদেশ যা কিছু পেয়েছে, সার্বিক অর্থে তাকে কোনোভাবেই ইতিবাচক বলা যাবে না। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার পর নতুন বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা চলে। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, পাকিস্তান আমলে যেমন বাংলাদেশকে পুরনো বৃটিশ শিক্ষাব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নিতে হয়েছিলো, তেমনি স্বাধীন হওয়ার পর বর্তমানেও বাংলাদেশকে সেই পুরনো শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েই চলতে হচ্ছে।

বৃটিশদের তৈরি করা শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক না নেতিবাচক, সে বিষয়ে আলোচনা বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকখানিই নিরর্থক। কারণ বৃটিশরা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ওই শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশসহ তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে চালু করেছিলো, তা ছিলো পুরোপুরি তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। তাছাড়া সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক বলা গেলেও বর্তমান সময়ে তা কতোটা উপযোগী, সেটাও বিচার্য। ক্রমাগত পরিবর্তিত না হলে কোনো শিক্ষাব্যবস্থা একটি দেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে না। কিন্তু কিছু অবকাঠামোগত ও কৌশলগত পরিবর্তন ছাড়া বাংলাদেশে এখনো বৃটিশ ধাঁচের সেই একই শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান। সাম্প্রতিক সময়ে সেসিপ, প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পও আসলে বৃটিশ ধাঁচের মানসিকতার মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে। ফলে শিক্ষার নতুন নতুন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দিন দিন আমাদের শিক্ষানীতি বা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে যুক্ত হলেও কার্যত আড়াইশ বছরের পুরনো বৃটিশ মানসিকতায় গড়ে তুলছি নিজেদের।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নতুন করে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিলো। সে জন্য প্রথমেই গঠিত হয়েছিলো একটি নতুন শিক্ষা কমিশন। ড. কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে সেই কমিশন তৎকালীন সময়োপযোগী একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে সেটি আলোর মুখ দেখেনি। এরপর প্রায় প্রতিটি সরকারই তাদের মতো করে এবং তাদের পছন্দসই ব্যক্তিদের নিয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন করেছে এবং সেখানে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রতিফলিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। যদিও পরের প্রতিটি শিক্ষা কমিশনই ভূমিকা ও প্রারম্ভিক আলোচনায় কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের আলোকে তাদের রিপোর্ট প্রণয়নের কথা উল্লেখ করেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেগুলো কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের চেতনা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেছে। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্রমাগত স্থিতিহীনতা ও অস্থিতিশীলতার কারণে কোনো সরকারই তাদের শিক্ষানীতি চূড়ান্তরূপে বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

একটি সর্বজনীন শিক্ষানীতি না থাকার কারণে স্বাধীনতার কয়েক দশক পরও স্থিতিশীল কোনো শিক্ষাব্যবস্থা আমরা পাইনি। ফলে শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, সময়োপযোগী ও মানসম্পন্ন করার নামে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে প্রায় সবসময়ই। উন্নত দেশগুলোর আলোকেও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত করার প্রয়াসও বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ ওইসব দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন পদ্ধতি আমাদের দেশের অর্থনীতি-সমাজ বাস্তবতার নিরিখে কতোটুকু উপযোগী হবে, তা বিবেচনা না করেই খেয়ালখুশিমতো পদ্ধতি চালু করার রেওয়াজও স¤প্রতি শুরু হয়েছে।

ফলে স¤প্রতি সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জোরেসোরে। শিক্ষার প্রাথমিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞান অর্জন ও জীবিকা অর্জন। এই দুটি পরিপূরক বিষয়ের মধ্যে একদিকে বাদ দিলে বর্তমান বাস্তবতায় অন্যটি মূল্যহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনা করে দেখলে দেখা যাবে, দুটোর কোনোটিই এখানে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। জ্ঞান অর্জন শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য থাকলেও শিক্ষার্থীরা কতোটুকু জ্ঞান অর্জন করতে পারছে, তা যেমন প্রশ্নসাপেক্ষ; তেমনি প্রশ্নসাপেক্ষ জীবিকা অর্জনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োগকৃত কৌশল।

(একটি অ্যাসাইনমেন্টের অংশ হিসেবে এই লেখাটি তৈরি করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে তার কিছু অংশ ছাপা হয়েছিলো পাঞ্জেরী শিক্ষা সংবাদ-এ, আমার আসল নামে। তবে বর্তমান লেখাটি অনেকটাই সম্পাদিত। আগে প্রকাশিত লেখার সাথে কোথাও কোথাও দ্বিমতও থাকতে পারে।)
১৫টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×