একটা দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে যদি সন্ত্রাস আর রাজনীতির কাল থাবার আক্রমনের শিকার হয় তবে সেই দেশে শিক্ষার মান যেমন কমতে থাকবে তেমনি ভবিষ্যৎ শুধু অন্ধকারের পথেই হাঁটতে থাকবে। বর্তমানে আমাদের দেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে জ্ঞান চর্চার মুল কেন্দ্র হওয়ার কথা, মেধাবীদের কলকাকলিতে মুখর থাকার কথা সেখানে সেগুলো পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে, যেখানে মানুষের জীবনের কোন গ্যারান্টি কেউ বহন করেনা। একে একে তো অনেক হল, এভাবে চুপ করে বসে থাকলে দেখা যাবে আমরাই কোনদিন তাদের কড়াল থাবার তোপে পড়ে আমাদের মা বাবার বুক খালি করে দিব। দেশের কথা বাদ, দশের কথা বাদ, নিজের জন্যে হলেও বোধহয় আমাদের কিছু একটা এখন করা উচিৎ। কেউ আমাকে আবার দেশদ্রোহী ভেবে বসবেন না, মূল কথা হল আমরা যদি কারো কোন ক্ষতি না করে নিজের উন্নতির দিকে নজর দেই তাহলে পরিবার। সমাজ দেশ সবকিছুতেই সেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে বাধ্য। তাই আমি বলছি, আসুন আমরা নিজের জন্যেই না হয় কিছু করার চেষ্টা করি।
ছাত্র রাজনীতির পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা শুনেছি এবং এও বুঝতে পেরেছি হঠাৎ করে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা যাবেনা অথবা দেশ যারা চালায় তারা নিজেদের স্বার্থেই তা বন্ধ করতে দিবেন না। আবার রাজনীতি না করলে সাধারণ কোন ছাত্রের হাতে ক্ষমতাও থাকেনা কোন কিছুর প্রতিবাদ করার। তাই আমি রাজনীতির একটা ভিন্ন পন্থার কথা চিন্তা করেছি। পন্থাটা ভাল না মন্দ তা বিচার করার ভার আপনাদের হাতে দিলাম, কারন এমনিতেও আমার একার পক্ষে কিছুই সম্ভব না।
আমার প্ল্যান হল সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারন ছাত্রের একটা সংঘ করা যা হবে অরাজনৈতিক। এখানে অবশ্যই তাদেরকেই আসতে হবে যারা একা না হউক দশে মিলে যেনো অনেক সাহসী গর্জন দিতে পারে এবং অনেক সাহসী কাজ করতে পারে। ভিতরে ভিতরে এই সঙ্ঘের কার্যক্রম চালনা করে সাধারন ছাত্রদের এই সঙ্ঘের সাথে ঐক্যবধ্য করার চেষ্টা করা হবে। মোটামুটি ৩০০ জনের একটা গ্রুপ ও যদি করা যায় তবেই আত্মপ্রকাশ করবে স্ব ব্যানারে, রাজনৈতিক দল্গুলোর সাথে এবং প্রশাসনিক ব্যাক্তিদের সাথে আলোচনা করে তাদের লক্ষ ও উদ্দেশ্য জানিয়ে দিবে। এখন কথা হল লক্ষ ও উদ্দেশ্যগুলো কি কি হবে? আমি আমার মত চিন্তা করে কিছু লক্ষ ও উদ্দ্যেশ্য বের করেছি, কেউ যদি নতুন কিছু এ্যাড করতে চান তা জানাবেন, মতামতের ভিত্তিতে তা সংযোজন করে দেওয়া হবে এখানে।
১)যে কোন দলের যে কোন উন্নয়নমূলক কাজে আমরা তাদের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের সাহায্য করবো, সেটা যে দল ই হউক।
২) জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে যে দল এগিয়ে আসবে, আন্দোলন করবে তাদের সাথেও আমরা একাত্ব হয়ে আন্দোলন করবো সেটা যে দল ই হউক। তবে কোন প্রকার হিংসাত্মক আন্দলনে আমরা নিজেদের জড়াবোনা।
৩) সাধারন ছাত্র যারা রাজনীতির সাথে জড়িত নয় তাদের যেকোন প্রকার হয়রানী অথবা অত্যাচারের ক্ষেত্রে সাধারন ছাত্রটিকে সাহায্য করবো এবং তাদের যাতে অত্যাচারিত কেউ না করতে পারে সেই ব্যাপারে নিজেরা দরকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
৪)সঙ্ঘটি হবে সারা বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের সঙ্ঘ, যাদের ভিতরে অন্তঃযোগাযোগ ও সহযোগীতার দৃঢ় সম্পর্ক থাকবে, ফলে এককভাবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাধারন ছাত্রের সঙ্ঘ কোন বাধার সম্মখীন হলে যেনো সারাবাংলাদেশজুড়ে তার প্রতিবাদ শুরু করা যায়।
৫)পড়ালেখার ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের ভিতর অন্তঃসম্পর্ক গড়ে তুলব, কর্মক্ষেত্রেও একই ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো, যে কারো সমস্যায় সবাই যার যার সামর্থ্যমত সবার আগে প্রাধান্য প্রদানপূর্বক সাহায্য করতে বাধ্য থাকব। মোটকথা সঙ্ঘের সবার মাঝে আত্মিক বন্ধন তৈরীর প্রচেষ্টায় সর্বদা তৎপর থাকবে এই সঙ্ঘ। এতে করে সকল দিকে আমাদের দক্ষতা ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য।
৬) এই সঙ্ঘের প্রধান কেউ থাকবেনা তবে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অথবা দুইজন থাকবে যারা নেতৃত্বে থাকবেন কর্মপরিকল্পনা গ্রহনের জন্য এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সঙ্ঘের ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য। এই নেতৃত্ব সেই সঙ্ঘের স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে একটি সাধারন নির্বাচনের মাধ্যমে। সাধারন নির্বাচন বলতে মিটিং ডাকা হবে, উপস্থিত দের মধ্যে যারা নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী তারা একে একে দাঁড়াবেন এবং সবাই প্রত্যক্ষ ভোট দিবেন, একজন একাধিক ভোট ও দিতে পারবেন। এই ভোটাভুটি ৬ মাস পরপর হবে এবং স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যদের এক তৃতীয়াংশ অনাস্থা প্রকাশ করলে সাথে সাথে পুনঃ নির্বাচন হবে যাতে চলমান নেতা অংশগ্রহন করতে পারবেননা।
এইটুকো আপাতত মাথায় এসেছে। আরো কিছু আপনাদের মাথায় আসলে জানাতে পারেন, সংযুক্ত করার যোগ্য হলে করে নিবো।
আমি প্রথমেই বলেছিলাম এই সঙ্ঘের সদস্য হতে হবে সাহসী কারন এর সদস্য হলে অনেক অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হবে হয়তো, সেই বাধাকে অতিক্রম করতে চাইলে নিজেকে অবশ্যই শোক্ত থাকতে হবে মনোবলের দিক দিয়ে। একবার ভেবে দেখুন, প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কমপক্ষে ৩০০ জন ছাত্র একাত্ব থাকে তাহলে কোন রাজনৈতিক দলের কি কিছু করার ক্ষমতা থাকবে? রাজনীতি করা ছাত্রের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশি না এটা ভাল করে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পারি, তার উপর তারা নানা দল উপদলে বিভক্ত থাকে, ফলে ৩০০ টা ছেলে যদি এক মন্ত্র নিয়ে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে আমার মনে হয় না কেউই কোন ক্ষতি করতে সাহস পাবে এই সঙ্ঘের।
আমি আমার একান্ত ব্যাক্তিগত চিন্তাগুলোর কথা বললাম, হয়তো অনেক না বুঝেই কথা বলেছি, হয়তো বোকার মত কথা বলেছি; কিন্তু কি করবো আমি যে আর পারছিনা। একটা সময়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য কিছু করার, নিজের জন্যে কিছু করার; কিন্তু এখন আমি আর কোন কিছুতেই সাহস পাইনা। যাদের কাছে একটা সময়ে আমি ছিলাম সাহসের এক লিজেন্ড, তাদের কাছেই আমি এখন শান্ত শিষ্ট ভদ্র আ**ল মার্কা ছেলে। আমি কি করতে পারি? বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার পর এসব কালো হাতের সংস্পর্শে এসে কতিপয় ভোলাভালা ছেলেদের এরকম বিধ্বংসী হয়ে উঠা দেখে আর নিজেকে মানাতে পারিনা। অনেককেই আমি ছোটবেলা থেকে চিনি যাদের কলেজে উঠার পর ও তাদের আম্মু/আব্বু আঙ্গুল ধরে কলেজ এ আনা নেওয়া করেছে, তাদের এই অবস্থা দেখে আমি সংকিত, আতঙ্কীত। আপনারাই বলুন আমার এখন কি করা দরকার? আমরা চাইলে কি পারবো দেশটাকে একটু সুখের স্বপ্ন, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতে?
আমার কোন ভুল হলে দয়া করে সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, জেনারেল হওয়ার পর সামুতে এটাই আমার প্রথম ব্লগ। সবাই ভাল থাকুন, এই কামনা।
বিঃদ্রঃ আমি কাউকে ছোট করতে এই লিখা লিখিনি। মনের কথাগুলো লিখেছি কেবল।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



