somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেজর খালেদ মোশাররফ

২০ শে মে, ২০১০ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের মার্চ মাস৷ উত্তাল বাংলাদেশ৷ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ হয়ে গেছে৷ পরিষ্কার হয়ে গেছে, পাকিস্তান টিকবে না৷ বছরের পর বছর ধরে বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর পাকিস্তানি সরকার যে শোষণ চালিয়েছে, তাতে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছিল সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনে৷ সে সময়ই জন্ম নেয় কয়েকটি শ্লোগান, যেগুলো আগুন জ্বালিয়ে দিত বাঙালির মনে, 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর'- ছিল সে রকমই একটি শ্লোগান৷ ইয়াহিয়া সরকার গোলটেবিল বৈঠকের নামে করছিল সময়ক্ষেপণ৷ ওদিকে পশ্চিম পকিস্তান থেকে নিয়ে আসছিল সেনাদের৷ নিয়ে আসছিল অস্ত্রশস্ত্র৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে অস্বস্তি ছিল তাঁদের৷ তাই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি বাঙালি সেনাদের নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনে যাচ্ছিল৷ গোপনে চূড়ান্ত হয়েছে বাঙালিদের আক্রমণ করার পরিকল্পনা৷ বাঙালি সৈন্যরা যেন জনগণের পাশে না দাঁড়াতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন কুট-কৌশল করে তারা৷

পাকিস্তান সেনা বাহিনীর তত্‍কালীন মেজর খালেদ মোশাররফকে নিয়েও পাকিস্তান বাহিনী বিভিন্ন কুট-কৌশলের আশ্রয় নেয়৷ কারণ তিনি ছিলেন বাঙালি৷ সেইসময় খালেদ মোশাররফ ছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে৷ সেখান থেকে তাঁকে ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের হেড অফিস কুমিল্লাতে উপপ্রধান হিসেবে বদলি করা হয়৷ তিনি ২২ মার্চ তাঁর পরিবারকে ঢাকায় ধানমন্ডিতে রেখে চলে যান৷ ইউনিটে পৌঁছার সাথে সাথেই তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর সৈন্যরা বেশ উদ্বিগ্ন৷ পাঞ্জাবিদের কমান্ডো এবং গোলন্দাজ বাহিনী বেঙ্গল রেজিমেন্টের চারপাশে পরিখা খনন করে মেশিনগান লাগিয়ে অবস্থান নিয়েছে৷ নির্দেশ পেলেই সবাইকে হত্যা করবে৷ সেনানিবাস রক্ষার অজুহাতে এসব পরিকল্পনা নিয়েছে তাঁরা৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের মনে তীব্র অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠেছিল৷ তিনি পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা জানতে চাইলেন এখন তাঁদের কী কর্তব্য? তিনি তাঁদের সতর্ক থাকতে বললেন ৷

২৪ মার্চ সকালে খালেদ মোশাররফ উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সময় লে. কর্নেল খিজির হায়াত খান তাঁকে ডেকে পাঠালেন৷ অফিসের ভিতর ঢুকে দেখলেন, তিনি বেশ উদ্বিগ্ন৷ তাঁকে জানালেন, সিলেটের শমসের নগরে নকশালপন্থিরা বেশ তত্‍পর হয়েছে এবং ভারত থেকে অনুপ্রবেশ ঘটছে৷ এসব কারণে ৪র্থ বেঙ্গলের একটি কোম্পানী নিয়ে আজই খালেদকে কুমিল্লা ছেড়ে যেতে হবে তাদের দমন করতে ৷ জবাবে তিনি বললেন একটা কোম্পানী যখন যাবে তখন কোনো জুনিয়র মেজরকে সেখানে পাঠানো যেতে পারে৷ সাধারণত কোনো উপপ্রধান একটি কোম্পানী নিয়ে যায় না৷ তাঁর কথায় তিনি অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, আপনি এখন যান ৷ কিছুক্ষণ পরে তিনি তাঁকে ব্রিগেড কমান্ডারের কাছে নিয়ে যান ৷ ব্রিগেড কমান্ডার তাঁকে বললেন, এটি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাই তোমাকে নির্বাচিত করেছি৷ আশা করি নিরাশ করবে না৷ তিনি বুঝলেন তাঁকে যেতেই হবে৷ শমসের নগরে যাওয়ার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্র জনতা তাঁকে বাঁধা দেয়৷ তাঁরা তাঁকে জানায় যে, পূর্ব বাংলায় পাক সেনারা গুলি চালিয়েছে৷ তাঁরা ইচ্ছা করেই বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের কুমিল্লা থেকে দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছে৷ তিনি তাদের বুঝিয়ে শান্ত করে আবার রওনা দিলেন শমসের নগরের পথে৷

২৫ মার্চে শমসের নগরে পৌঁছার পর তিনি দেখলেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক৷ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে আরও জানতে পারলেন সেখানে কোনো অঘটন ঘটেনি৷ কোথাও নকশালপন্থিদের কোনো চিহ্ন খুঁজে পেলেন না তিনি৷ বুঝতে পারলেন তাঁকে কৌশল করে এখানে পাঠানো হয়েছে এবং যা কিছু তারা বলেছিল তার সবটাই মিথ্যা৷ কারণ বাঙালি সৈন্যদের নিয়ে গঠিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের দেশের নানা অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য৷ যাতে আক্রমণ করলে বাঙালি সেনারা ঐক্যবদ্ধভাবে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারে৷

খালেদ মোশাররফ ওয়ারলেসের মাধ্যমে হেডকোয়ার্টারে শাফায়াত জামিল এবং ক্যাপ্টেন হায়দারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেন৷ অনেক কষ্টে পরের দিন যোগাযোগ হয় তাঁদের৷ তাঁরা জানান, ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় সান্ধ্য আইন জারি হয়েছে এবং ৪র্থ বেঙ্গলকে তা কার্যকর করতে বলা হয়েছে৷ লোকজন সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে মিছিল করছে৷ এ অবস্থায় কী করণীয়?

প্রায় ১শ মাইল দূরে অবস্থান করে তাঁর পক্ষে এ প্রশ্নের জবাব দেয়া কঠিন ছিল৷ একদিকে সামরিক শৃঙ্খলা আর কর্তব্য বোধ আর অন্যদিকে বিবেকের দংশন তাঁকে পীড়িত করছিল৷ এই উভয় সংকটে পড়ে তিনি চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেললেন৷ মেজর শাফায়াত জামিলকে তিনি বললেন, আমাকে কিছুটা সময় দাও৷

অবশেষে তাঁর বিবেক তাঁকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করল ৷ যদিও কোনো রাজনৈতিক নির্দেশ সেই মুহূর্তে ছিল না৷ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণার কথা তাঁর মনে পড়ে গেল৷ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, 'এবার ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল৷ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'৷ তিনি লে. মাহবুবকে বললেন, 'এই মুহূর্তে আমি স্বাধীন বাংলার আনুগত্য স্বীকার করলাম৷ স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে দাও৷ আর সব সৈনিকদের বলে দাও আজ থেকে আমরা আর কেউ পাকিস্তানের অনুগত নই৷' লে. মাহবুব যেন এই নির্দেশের অপেক্ষাতেই ছিলেন৷ তিনি দৌড়ে গিয়ে বাকি সৈনিকদের জানিয়ে দিলেন৷ কিছুক্ষণ পরেই খালেদ মোশাররফ শুনতে পেলেন বাঙালি সৈনিকদের শ্লোগান 'জয় বাংলা'৷
বাকী অংশ দেখুন-- http://www.gunijan.org.bd
বিপ্লবীদের জীবনী জানতে দেখুন http://www.biplobiderkotha.com
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×