মাহমুদার বারোমাসী পেয়ারা গাছের পেয়ারা পোক্ত হয়ে গেছে। শফিক হাত বুলিয়ে দেখছে কোন কোন পেয়ারা পাড়া যাবে। মাহমুদা আবার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে : মালিকের অনুমতি ছাড়া ফল ছেড়া যাবে না। ওর আজন্ম শখ নিজের গাছ থেকে পেয়ারা পেড়ে খাওয়া। তাও আবার দেশী পেয়ারা হতে হবে। এজন্য শফিককে সেই কোথায় পিরোজপুরের নেছারাবাদে ছুটতে হয়েছে বারোমাসী দেশী পেয়ারা গাছের চারা আনার জন্য।
শফিকই দেখাশোনা করে এই বাগানের। মূলত ঢাকা শহরে পাঁচতলা বাড়িওয়ালা পিতার একমাত্র উত্তরসূরী হওয়াতে চাকরি-বাকরির ধার তো ধারেইনি; কোনো ব্যবসায়ও এখনো নামা হয়নি। ওর আব্বা নাতি দেখবেন বলে অনার্স শেষ হতে না হতেই ওকে বিয়ে করিয়েছেন। শফিক ভাবতেও পারেনি এতটা গুণবতী মেয়ে আজকাল থাকতে পারে। রান্না, পড়ালেখা, সূচিকাজ, সাংসারিক বুঝব্যবস্থা—সব ব্যাপারে মাহমুদার প্রশংসা সবখানে। ওর আব্বার নাতি দেখা অবশ্য হয়নি; মাহবুবের বিয়ের তিনমাসের মাথায় তিনি মারা গেছেন। আব্বা থাকতে কিছুটা বাইরে থাকলেও তিনি মারা যাওয়ার পর মাহবুবের কাজ ছিলো সারাক্ষণ মাহমুদার পেছন পেছন ঘোরা।
বাজারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে মাহমুদা যখন মাছ-তরকারি দেখছে, তখন কিনা শফিক পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবে। অথবা যখন রান্নায় ব্যস্ত, তখন এসে পেছন থেকে দিয়ে দিলো একটা চুমু।
মাহমুদা চিমটি দিয়ে চাপাকণ্ঠে শফিককে বলে, আম্মা দেখে ফেলবে তো। দিনের বেলা এসব কী? লজ্জা-শরম নেই?
শফিক ফিসফিসিয়ে বললে, লজ্জা-শরম না থাকলে তো রুমে নিয়ে দরজা আটকাতাম।
মাহমুদা ততক্ষণে ঘুরে দাঁড়িয়ে চোখ বড় করে ফেলে, কী বললে? ডাক দেবো আম্মাকে? আম...।
শফিক তখন মাহমুদার মুখ চাপা দিয়ে ধরে গালে একটা কামড় বসিয়ে চলে যায়।
মাহমুদা কি এতে রাগ করে? মনে হয় না। ও নিশ্চিত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কামড়ের দাগটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখে। হয়তো লজ্জা লাগে। আবার ভালো লাগা একটা অনুভূতিও নিশ্চয়ই ছড়িয়ে যায় সারা শরীরে।
রাতের বেলা অবশ্য মাহমুদা বলে, তুমি একদিক ফিরে ঘুমাবে; আমি আরেকদিক ফিরে।
কেন?
কেন আবার? আরেকটা অপকর্মের সুযোগ দেব নাকি? ছাদে কাপড় আনতে গিয়ে নিচতলার ভাবীর সামনে পড়ে গেছি। উনি...।
উনি কি তোমাকে হিংসা করেন স্বামীর কাছ থেকে আজ পর্যন্ত অমন একটা কামড় খেলেন না বলে?
মাহমুদা দুমদুম দুইটা কিল বসিয়ে দেয় শফিকের পিঠে।
ঘুমানোর পর সত্যিই শফিকের মুখ চেপে ধরে মাহমুদা। উঁহু, একটা শর্তে?
কাবিননামায় এজন্য কোনো শর্ত লেখা ছিলো না।
ফালতু কথা বাদ দাও। আমার দেয়া শর্ত রাখবে কি না বলো। আমি সিরিয়াসলি বলছি।
কী শর্ত?
না, আগে কথা দাও রাখবে।
আচ্ছা দিলাম। মাহমুদার দুটো হাত ধরে ফেলে মাহবুব। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার শক্তি নেই মাহমুদার। ওর বুকে মুখ রাখা অবস্থায়ই বলে, শুনছি; বলতে থাকো।
রাস্তায় রাস্তায় কোন ছেলেরা ঘোরে, সেটা দেখার দায়িত্ব তোমাকে কেউ দেয়নি। তুমি যে এলাকার সব লোক জড়ো করে বখাটেদের কান ধরে উঠবস করাও, ওরা যদি তোমার কোনো ক্ষতি করে ফেলে, তখন কি এলাকার লোকেরা ঠেকাতে পারবে?
আরে কী যে বলো না! ঐসব খয়রাতী পোলাপান করবে আমার ক্ষতি? শোনো, গার্লস স্কুলটা এই এলাকার মুরুব্বিরা মিলে করেছিলো। আর সেখানে আমার আব্বার অংশগ্রহণ ছিলো সবচেয়ে বেশি। তোমাকে হয়তো এখন পর্যন্ত বলা হয়নি—স্কুলের জমিটা আমাদেরই ছিলো। কোনো মেয়েসন্তান না থাকায় আব্বা ওটা দান করে দিয়েছেন। তিনি ভাবতেন স্কুলের সব মেয়ে তারই মেয়ে। মানে ঐ মেয়েগুলো আমার বোন। ওদেরকে দেখে এই খয়রাতীরা শিস দেবে, বাজে কথা বলবে; আর আমি চুপ করে থাকবো?
তা তুমি যে ওদেরকে ওয়াদা করাও : হয় কাজে যাবে না হয় লেখাপড়া করবে—তুমিই তো কোনো কাজ করো না। এরকমভাবে কোনো কাজ না করে বৌয়ের পেছনে ঘুরলে পুরুষ মানুষের মান-মর্যাদা থাকে না। তুমি কিছু একটা করবে বলো।
আচ্ছা ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো তো। তিনতলার যে খালাম্মা, ওনার তো এই নিয়ে চার মাস হয়ে গেলো ভাড়া বাকি। ওনাকে একটা নোটিশ দিয়ে দিতে হবে। চার মাসের ভাড়া একসাথ করলে তো সেই টাকা দিয়েই একটা ফুচকার দোকান শুরু করা যায়।
এই শোনো, তুমি আবার ঐ খালাম্মাকে আমি থাকতে বলতে যেও না। আমাদের বাসায় যাওয়ার পরে যা বলার বলো।
শফিকের খেয়াল হলো—তাই তো, আজই যদি মাহমুদা ওদের বাসায় যায়, তাহলে কিছু পেয়ারা দিয়ে দিতে হবে সাথে করে। যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ার মধ্যে মনে থাকবে না। মাহমুদাকে এখনি বলতে হবে পেয়ারা পাড়ার কথা।
২.
উত্তর যাত্রাবাড়ি এলাকাবাসী থানা ঘেরাও করে ফেলেছে। পথচারীরা উঁকি দিয়ে ঘেরাওকারী কারো কাছে জানতে চায়, কী ঘটেছে?
আরে ভাই বলবেন না। পুলিশগুলো এতটা খারাপ! কেউ কারো নামে ওদের কাছে অভিযোগ করলেই হলো। কোনোকিছু তদন্ত না করে সেই লোককে এনে হেস্তনেস্ত করা। আমাদের এলাকার সবচেয়ে ভদ্র ছেলে শফিক। ওর বাড়ির ভাড়াটিয়া মহিলা চার মাস ধরে ভাড়া দেয় না। সেজন্য তাকে নোটিশ দিয়েছে শফিক। মহিলা কতটা বদ চিন্তা করেন—থানায় ইভটিজিংয়ের অভিযোগ দিয়েছে। ত্রিশ বছরের ছেলের কাজ নেই পঞ্চান্ন বছর বয়সী মহিলাকে ইভটিজিং করতে যাবে। ছেলেটার বৌও গেছে বাপের বাড়ি। রাতে ওকে ধরে এনে সারারাত নির্যাতন চালিয়েছে।
৩.
এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় শফিক ছাড়া পায়। শফিকের ভেতরে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—মাহমুদার মনে যদি সন্দেহের সৃষ্টি হয়, সেই সন্দেহ কি মামলা, ঘুষ, আন্দোলন—কোনোকিছু দিয়ে দূর করা যাবে?
কয়েক মাস আগে আমারব্লগে প্রকাশিত। মূল ঘটনা সত্য। কেমন হলো জানাবেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



