.....টি এসসির বা পাশের রাস্তার ব্যারিকেড পার হতেই। একজনকে দেখলাম- ফুটপাতে দাঁড়ায়া প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন করছেন। নাকে রুমাল চেপে কাছে গিয়ে বললাম- "ভাই সাহেব?"
বেচারা ভাই সাহেব শুনে অর্ধেক কর্ম সেরে বিরক্তিভরা দৃষ্টিতে আমার মুখে দিকে তাকিয়ে রইলেন।
"কি সমস্যা কিছু বলবেন?"
"জ্বি না।"
"তো ডিস্টার্ব করতেছেন কেন?"
"জ্বি মানে... বড় দুর্গন্ধ। এইভাবে যদি আপনারা...।"
"যান এখান থেইকা, নিজের রাস্তা মাফেন। যত্তসব...."
আমি নিজের রাস্তা মাফতে লাগলাম। ভাই সাহেবের ভাবমূর্তি ভালো নয়। তাছাড়া এত বৃহৎ একটি মূত্রালয়ে দাঁড়িয়ে থাকাও সম্ভব হচ্ছিল না।.... একটি বিষয় পরিষ্কার। দুু'পায়া প্রাণী হলেও বাঁকা লেজঅলা চার পায়া প্রাণীর কিছু কিছু স্বভাব সদা লুকায়িত থাকে আমাদের কারও কারও মাঝে।...
মেলার মূল গেটের দিকে হাঁটছি। এমন সময় পরিচিত এক আপুর সাথে দেখা হয়ে গেল। মোটা একটি ব্যাগ হাতে হেলদুলে হেঁটে হেঁটে আসছেন আপু।
"আরে আপু কেমন আছেন?"
"আরে তুমি? হ্যা ভালো আছি। তুমি কেমন আছে?"
"জ্বি্ ভালো। অনেক বই কিনলেন মনে হয়?"
আপু মিষ্টি করে হাসলেন। "নাহ অনেক বই আর কই- মাত্র দুইটা বই কিনলাম।"
"ও আচ্ছা আচ্ছা। রচনা সমগ্র? কার?"
"আরে না। বাংলা একাডেমি অভিধান। একটা আমার জন্য। একটা তোমার দুলাভাইর জন্য।"
"ও আচ্ছা আচ্ছা।"
"অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা। আসো তোমাকে কিছু খাওয়াই।"
"জ্বি না... কি খাওয়াবেন আপু....এইটা কি খাওয়ার জায়গা...।"
"আসো বেলপুরি খাওয়াই।"
"জ্বি আমার পেটের অবস্থা ভালো না।"
"তা হলে আসো চিংড়ির মাথা খাওয়াই।"
"জ্বি... না ...মানে...।"
"আচ্ছা তাহলে ভুট্টাভাজা খাও। নাইলে নারকেল-চিড়া খাও..।"
"পেটের অবস্থা সত্যিই....।"
"মুড়লি খাবা? মুড়লি আর রসকদম্ব?"
আপু নাছোড় বান্দা। মুড়লি কিনে হাতে ধরিয়ে দিলেন।.....
মুড়লি খেতে খেতে সামনে হাঁটছি। দেখে প্রাণটা ভরে গেল। কতো জমজমাট বইমেলা......। কেউ বাচ্চাদের জন্য দোলনা কিনছেন। শার্ট পিছ প্যান্ট পিছ কিনছেন। একজনকে দেখলাম- লুচনি কিনলেন একগাদা। মাছভাজার খুন্তি, ডাল ঘোটনি, মারগালনিও..... কিনছেন কেউ কেউ।
আরেকটু এগুতেই ভুভুজেলার মতো বাঁশির পোঁ পোঁ শব্দে কান ঝালাপালা। পাখির মতো দেখতে একপ্রকার বাঁশির নতুন আমদানি হয়েছে এবার। পোঁ পোঁ শব্দ শুনে মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। বাঙালি সত্যিই বড় উৎসব প্রিয় জাতি....শুধু কাণ্ডজ্ঞানের একটুখানি অভাব এই যা।
গেটে ঢুকবো এমন সময় একজন জিজ্ঞেস করলেন- ভাই সাহেব এইখানে "বদনা" কিক্রি হয় কোনদিকে একটু বলতে পারেন?"
বেচারা হয়তো আমাকে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা ভেবেছেন।
বললাম, "জ্বি ঐ দিকটায় একটু খুঁজে দেখুন। ঐ যে এ দিকটায়....।" ....একবার মনে হলো একাডেমির ডিজি সাহেবের ফোন নাম্বারটা ধরিয়ে দিয়ে বলি- নিন এই নাম্বারে যোগাযোগ করুন।
"ধন্যবাদ ভাই। বাসা থেকে বলে দিয়েছে আজ যেন "বদনা" না নিয়ে বাসায় না ফিরি। আজ অনেক দিন হলো ভাঙ্গা বদনা দিয়ে কাজ চালিয়ে যা্চ্ছি। সময় পাই না ভাই। বুঝেন ই তো ব্যস্ত মানুষ...।"
মেলার মূল গেটে আসতে আসতেই মাথাটা ঝিম মেরে উঠলো। দীর্ঘ একটা নি:শ্বাস নিয়ে সামনে এগুতে লাগলাম...। এখনও অনেক বই কেনা বাকি।
আমার বোধগম্য হচ্ছে না। বাংলা একাডেমি এই মেলার নাম "বইমেলা" কেন রেখেছে...???