শুরুটা হয়েছিল এয়ারপোর্ট থেকে..
গাড়িতে ওঠার পরই-
"দাদা খিদা লাগছে, নাস্তাটা সেরে নেয়া দরকার।"
"ওহ হে চলুন.. চলুন। উত্তরার দিকে ভালো রেস্টুরেন্ট আছে।"
"কি আর করবো বলুন, ঢাকার পরটা-ভাজির স্বাদটা কলকাতায় পাওয়া যায় না। তাই ভাবলাম ঢাকায় এসেই নাস্তাটা সারি।"
"একদম ভালো করেছেন।"
"বিল কিন্তু আমিই দিবো দাদা। এয়ারপোর্ট এ ডলার ভাঙ্গিয়ে টাকা করেছি।"
"তা দেখা যাবে..।"
নাস্তা শেষে-
"দাদা, বিলটা কি আমি দিয়ে দিবো?"
"দিতে তো চেয়েছিলেন।"
"নাহ্ মানে আপনি আবার মাইন্ড করবেন না তো? বলবেন না তো, যে দাদা এসে খুব টাকার গরম দেখাচ্ছে!"
আমি হাসলাম। বললাম, "আপনি পরে দিয়েন আমিই দিয়ে দিচ্ছি।"
"আমি জানতাম দাদা আমি দিলে আপনি মাইন্ড করবেন। তাই-"
নাস্তা শেষে গাড়িতে ওঠে-
"দাদা মোবাইলে পঞ্চাশটা টাকা ভরতে হবে। বেশি দরকার নেই। কালই তো আবার চলে যাচ্ছি।"
মোবাইলে পঞ্চাশ টাকা ভরা হলো। কয়েকটি লোকাল কল করার পর মোবাইলের পঞ্চাশ টাকা শেষ!
তারপর-
"দাদা আপনার মোবাইলটা একটু দিবেন? দেখুন দেখি, টাকাটা ভরতে না ভরতে শেষ হয়ে গেল!! কম্পানিগুলো ডাকাতের মতো পয়সা কেটে নেয়। কোনো মায়াদয়া নেই। দিন তো একটু মোবাইলটা আপনার ভাবিকে একটা কল করবো।"
আমার মোবাইল নিয়ে প্রায় মিনিট সাতেক বউ এর সাথে গেজালেন।
গেজানো শেষে-
"দাদা আপনার মোবাইলে ইন্টারনেট চালু আছে?"
"আছে।"
তারপর সারাদিন আমার মোবাইলের ইন্টারনেট দিয়ে তার মোবাইলে ব্রাইজ করলেন।
একটু পর-
"দাদা সিগারেট হবে? আমার প্যাকেটটা ফেলে এসেছি ভুলে।"
বললাম "আমি তো সিগারেট খাই না।"
আমার ড্রাইভারকে ডেকে বললেন, " দাদা আপনার কাছে হবে একটা?"
ড্রাইভার ডানে-বামে মাথা নাড়লো।
তার কিছুক্ষণ পরই ব্যাগের সাইট পকেট হাতড়ে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে বললেন, "এহ হে দাদা একদম ভুলে গেছি, ব্যাগের পকেটেই তো ছিল।"
আবারও আমার ড্রাইভারকে ডাকলেন, "দাদা ম্যাচ হবে?"
ড্রাইভার আবারও ডানে-বামে মাথা নাড়লো।...
তারপর দেখি, পকেট হাতড়ে হুতড়ে একটা লাইটার বের করে এনে সিগারেটে আগুন লাগিয়েছেন।
মেইন রাস্তায় গাড়ি রেখে রিক্সায় করে এক গলির ভেতর ঢুকলাম। আমার কাছে ভাংতি ছিল না বলে বিশটা টাকা চাইলাম। বললাম, ভাংগিয়ে দিয়ে দিবো।
মুখ কালো করে মানিব্যাগ থেকে বিশ টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে বললেন, "আমার আবার টাকা-পয়সা কেউ ধার নিলে মনে থাকে না দাদা।"
"আমি মনে করে দিয়ে দিবো।"
রিক্সা থেকে নেমে হাঁটছি এমন সময় চিৎকার করে উঠলেন-
"দাদা, ওটা কি বিশটাকার নোটই ছিল?"
"হুম কেন?"
"না মানে, কেন যেন মনে হচ্ছে ওটা টাকা নয় "ডলার" ছিল!!"
আমি জোর গলায় বললাম, "আরে নাহ ওটা টাকাই ছিল। আমি দেখেছি ভালো মতো।"
"নাহ দাদা আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ওটা "ডলার" ছিল। আহ কি ভুলটাই না হলো দাদা। জীবনে এত বড় ভুল হয় নি আমার....। আহ্ কি ভুলটাই না হলো দাদা.... বিশটা ডলার চলে গেল দাদা।"
"আচ্ছা ঠিক আছে আমি "ডলার" ই দিবো। এখন চলুন...।"
বলে হাঁটতে লাগলাম।...........