somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ ও কোরবানি...

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের ছোট বেলার ঈদটা ছিল একেবারেই অন্য রকম। গ্রামে সাত ভাগে একটি গরু কেনা হতো। তাতে আমাদেরও একটি ভাগ থাকতো। একেক ভাগে খরচ পড়তো এক হাজার থেকে বারো শ টাকা। সেই টাকা যোগাড় করতেও অনেক কষ্ট হতো। অনেক সময় আব্বা ঢাকা থেকে টাকা পাঠাতে দেরি করতেন। কিংবা বলতেন, "এবার বোধ হয় পারবো নাহ"।

একটা আশঙ্কায় কাজ করতো ভেতরে। কোরবানি দেওয়া হবে কি না......। আমার লৌহমানবী দাদি জানের হাতে তখন সংসারের দায়ভার। তিনি বাজারে কিছু ধান পাঠিয়ে দিতেন বিক্রির জন্য। সেই টাকা দিয়ে আমাদের কোরবানি হতো কোন কোন বছর।

ঈদের আগের দিন কনফার্ম করা হতো যে, হ্যা আমাদেরও একটি নাম থাকবে।

ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে এসে গরু জবাই দেয়া হতো। বরাবরই চামড়া ছিলার সময় গরুর পেছনের একটা পা ধরে দাঁড়িয়ে থাকার দায়িত্ব পড়তো আমার উপর। বেশ উপভোগ করতাম বিষয়টা।

আব্বা আগের দিন রাতের লঞ্চে রওনা দিয়ে ঈদের দিন ফজরের পর পর বাড়িতে পৌছতেন।

বাড়ির সামনের কাছারি ঘরে কলাপাতা বিছিয়ে মাংস ভাগাভাগি করতে করতে বিকেল হয়ে যেত। আনন্দ চিত্তে মাংস নিয়ে ঘরে ফিরতাম। সেসময় গ্রামে কোন ফ্রিজ ছিল না। ফ্রিজ জিনিসটা যে কি, সেটাই আমাদের জানা ছিল না। জাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণ করা হতো। সারা বাড়ি মাংসের ঘ্রাণে ভরে যেত।

কারো ঘরে আগে রান্না হলে ডাক দিয়ে বলতেন, "আয় আমগো রান্না শেষ একটুকরা খাইয়া যা।"

আনন্দ-বেদনা মিশ্রিত সেই সব ঈদগুলো বেশ ছিল......

এখন আমাদের কম করে হলেও দু-তিনটা গরু ও গোটা দু-তিনেক খাসি কোরবানি দেয়া হয়। মহান আল্লাহ তালা আমাদের সেই তৌফিক দান করেছেন। দিন পনেরকের খাবারের মতো মাংস রেখে বাকি সব মাংস আব্বা নিজ হাতে আমাদের সেই সব আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় পাঠিয়ে দেন, যাদের কোরবানি দেবার সামর্থ্য হয় নি। তারপর বাকিটুকু প্রতিবেশি ও অন্যান্যদের মাঝে বিলি করা হয়।

আমাদের অনেক দূর সম্পর্কের আত্মীয় রয়েছেন, ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে আব্বা তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে তালিকা করেন। গতবার খুঁজে বের করলেন, আমার দাদি জানের জ্যাঠাতো ভাইয়ের এক ছেলে টঙ্গী থাকেন। আমাকে একটা মাংসের পোটলা দিয়ে তার বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হলো.....। তারা কেউই আমাকে চিনেন না। অনেক সময় ধরে পরিচয় দেবার পর চিনতে পেরে বুকে জড়িয়ে ধরলেন....।

ছোট বেলার ঈদের আনন্দটা ছিল এক রকম। আর এখনকার আনন্দটা অন্য রকম। কোনটার চে কোনটা কম নয়..... ছোট বেলায় আতঙ্কে থাকতাম, শেষ মেষ কোরবানি দেয়া হবে তো! আর এখন আশঙ্কায় থাকি, ইস্ আমাদের কোন আত্মীয় কিংবা প্রতিবেশি ভুল করে তালিকা থেকে বাদ পড়লো না তো!!.....






সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪৩
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×