somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গা গতর দেইখা মানুষের গুনাগুন বিচার করা আহাম্মকি ছাড়া আর কিছুই না

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কসাইর চেহারা দেইখা আমরা বাপ-পুতে ভীষণ খুশি। ইয়া পালোয়ানের মতন দেহ। গায়ের রঙও মাশাল্লা একেবারে তেল চিটচিটে। হয়তো বাসার থেইকা বাইর হওনের আগে পুরা গতরে খাঁটি সরিষার তেল মালিশ কইরা আসছে। ভিতরে ভিতরে আনন্দের বাতাস বইতে লাগল- যাক আল্লাহ তালার রহমতে কসাই একখান পাইছি বটে এইবার।

টকটকে লাল সেন্ডুগেঞ্জি পরিহিত কসাই কদম ফেলছে তো তার পদাঘাতে তলার মাটি খানিক কেঁপে কেঁপে ওঠছে।
আগের বছরের নাকানি-চুবানির কথা মনে করে প্রতি বছর কোরবানির আগে আব্বা আর আমি ওয়াদা করি, পার্টটাইম কসাই দিয়া আর না, এইবার ভালো মানের জাত-কসাই লাগামু। ট্যাকা কিছু বেশি গেলে যাক। কিন্তু শেষে পর্যন্ত ওয়াদা মতো জাত-কসাই আর আমাগো লাগানো হয় না। তয় এইবার বোধহয় ওয়াদা রক্ষা হয়েছে, জাত-কসাই একখান পাওয়া গেছে।

আমি মুখমণ্ডলে মৃদু হাসি ঝুলাইয়া কসাই সাহেবের সামনে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ায়া ধরলাম। "ভাইজান তো বহুদিন যাবত কসাই পেশায় নিয়োজিত আছেন, তাই না?"
আমার প্রশ্নের জবাবে খানিক হাসলেন তিনি।
হাসির ধরন দেইখা বুঝে নিলাম, ইনি সত্যিই কসাই বংশের পোলা এক্কেবারে ‍‍‌‌‌'জাত-কসাই'। "যদি কিছু মনে না করেন, আপনার নামটা জানা দরকার- আমরা নামের লিস্ট করবো তো তাই।"

"মোসলেম।" ঠোঁটে ঝুলন্ত হাসির সহিত জবাব দিলেন কসাই।

আমার গাড়ি চালক রাসেল এইবার কসাই ঠিক করার দায়িত্ব নিয়েছিল। আব্বা রাসেলকে কাছে ডেকে বললেন, "একটা কাজের কাজ করছো তুমি, অর মতোন জাত-কসাই বাইর কইরা নিয়া আসছ। তোমার পুরস্কার আছে।" দাড়োয়ান খবির উদ্দিন কসাই দেইখা বলল," এইবার হইবো। হেব্বি গরুর লাইগা হেব্বি কসাই।" আব্বার গাড়ি চালক সেকান্দর কসাইর জন্য এক খিলি পান জোগাড় কইরা নিয়া আসল। সাথে কাঁচা সুপারি ও বাবা জর্দা।

রাসেল দূর থেইকা এই সব কীর্তিকাণ্ড দেইখা মুচকি মুচকি হাসছে। আর বাকিদের বলছে, "ঐ ব্যাটারা তাড়াতাড়ি কর, তাড়াতাড়ি কর। দেরি হইয়া যাইতাসে সবার আগে আমগো গরু ফালাইতে হইব।" আমি বললাম, "একটু রাখো, মোসলেম ভাইর পানটা শেষ হওক। ওনাকে শান্তি মতোন পানটা একটু খাইতে দাও।"

গরুর গোসল পর্ব শেষ। এবার শোয়ানোর পালা। সবার দৃষ্টি মোসলেম কসাইর দিকে, কি কায়দা কানুন অবলম্বন করে সে গরু শোয়ায় এটাই এখন দর্শনীয় বিষয়। রসি দিয়ে গরু পেছানো হচ্ছে। মোসলেম একটু দূরে দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে তা দেখতাছে। আব্বা বললেন, "যাও মোসলেম তুমি হাত লাগাও, তোমার হাত ছাড়া হইব না। গাঁধাগুলান ঠিক মতো রসি প্যাঁচাইতে পারতাছে না। তুমি ছাড়া এইখানে বাকি সবগুলা মনে হইতাছে জীবনে মুরগিও জবাই দেয় নাই।"

মোসলেম করুণ দৃষ্টিতে আব্বার দিকে তাকায় রইল। আব্বা মোলায়েম সরে জিজ্ঞেস করলেন, "কি মিয়া তুমি দাঁড়ায় আছ ক্যান? যাও হাত লাগাও।"

"আমার ডর করে ছার, গরু যদি উইট্টা গুতা মারে? হাতির লাহান গরু!" আমরা আসমান থেকে ধপাস করে মাটিতে পড়লাম।

"কও কি তুমি, তোমার ডর করে!"

"হ ছার।"

"তুমি একজন জাত-কসাই হইয়া গরুর গুতারে ডরাও?"

"জে না ছার, আমি কসাই না, আমি ব্যানগাড়ি চালাই।"

"তুমি ভ্যানগাড়ি চালাও?"

"জে ছার"

আব্বা রাগে থর থর করে কাঁপতে লাগলেন। রাসেলকে কাছে ডাকলেন।

"ঐ মিয়া বাটপারি পাইছ, ভ্যানগাড়ির ড্রাইভাররে কসাই সাজাইয়া নিয়া আসছ? এটা কি বাটপারির জাগা হ্যা?"

"আমার দোষ নাই ছার, অরে যে ভাও কইরা দিছে, হেয় কইছে অয় কসাই। আমার তে ট্যাকাও নিছে দুইশ।"

আমি হায় হায় করতে লাগলাম। মনে চাচ্ছিল মোসলেমরে ধইরা কোরবানি দিয়া দেই।

অবশেষে গরু জবাই শুরু হলো। অর্ধেক জবাইর পর গরু উইঠা দাঁড়ায় গেল। আমরা পরি মরি কইরা দিলাম দৌড়। আব্বা রাগে প্রায় কেঁদে ফেললেন। বহু চেষ্টায় আবার গরু শোয়ানো হলো।

দ্বিতীয় দফায় জবাই সম্পন্ন হলো।

বিদ্র: শাস্তি স্বরূপ রাসেল রে দুই গরু আর দুই ছাগলের ভুড়ি পরিস্কার করতে দেয়া হলো।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×